আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) (ইংরেজি: International Cricket Council) ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সর্বোচ্চ ক্রিকেট পরিচালনা পরিষদ।
সংক্ষেপে | আইসিসি |
---|---|
নীতিবাক্য | বাংলা: ভালোর জন্য ক্রিকেট। ইংরেজি: Cricket for good. |
পূর্বসূরী | ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স (১৯০৯–১৯৬৫) ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স (১৯৬৫–১৯৮৯) |
গঠিত | ১৫ জুন ১৯০৯ |
ধরন | আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থা |
সদরদপ্তর | দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত (২০০৫–বর্তমান) লন্ডন, যুক্তরাজ্য (১৯০৯–২০০৫)[1] |
সদস্যপদ | ১০৮ টি সদস্য |
দাপ্তরিক ভাষা | ইংরেজি |
জয় শাহ | |
ডেপুটি চেয়ারম্যান | ইমরান খাজা[2] |
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা | জিওফ অ্যালার্ডিস[3] |
আয় (২০২০[4]) | $ ৪০.৭ মিলিয়ন |
ওয়েবসাইট | ICC-Cricket.com |
১৫ জুন, ১৯০৯ সালে ইংল্যান্ডের লর্ডসে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়।[5] তখন এর নাম ছিল ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স। প্রতিষ্ঠাকালীন এর সদস্য ছিল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরুতে কেবলমাত্র কমনওয়েলথভূক্ত দেশসমূহই এত যুক্ত হতে পারতো।[6] পরবর্তীতে এতে যোগ দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট দল।
১৯৬৫ সালে সংস্থার নাম পরিবর্তিত হয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স নামকরণ করা হয়। পূর্বে কেবলমাত্র টেস্টখেলুড়ে দেশগুলোই এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসময় থেকে এসব দেশের বাইরে অন্য দেশকেও আইসিসি'র সহযোগী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা শুরু হয়।
১৯৮৯ সালে আবারো এর নাম পরিবর্তন করা হয়। এবার নামকরণ করা হয় 'আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল' যা অদ্যাবধি প্রচলিত।
আইসিসি’র বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১০৮: যার ১২টি পূর্ণসদস্য রয়েছে যারা টেস্টখেলুড়ে, ৯৬টি সহযোগী সদস্য[7] আইসিসি ক্রিকেটের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করে, যার মধ্যে ক্রিকেট বিশ্বকাপ অন্যতম। আইসিসি একই সাথে টেস্ট ক্রিকেট, একদিনের আন্তর্জাতিক এবং টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকের জন্য আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি নিয়োগ দেয়। আইসিসি, সংস্থার কোড অব কন্ডাক্ট মেনে চলে, যা আন্তর্জাতিক ম্যাচের পেশাদারী মান বজায় রাখে।[8] এছাড়া সংস্থার 'দুর্নীতি-দমন ইউনিট' (আকসু) এর মাধ্যমে দুর্নীতি ও ম্যাচ-গড়াপেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আইসিসি সদস্য দেশের মাঝে অনুষ্ঠেয় দ্বিপাক্ষিক সিরিজের (সকল টেস্ট ম্যাচ) সময়সূচী নির্ধারণ করে না। সংস্থাটি সদস্য দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ করে না এবং খেলাটির আইন প্রণয়ন করে না। মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব খেলাটির আইন প্রণয়নকারী সংস্থা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল ২০১২ সালে আইসিসির সভাপতি হিসেবে নিউজিল্যান্ডীয় অ্যালান আইজ্যাকের স্থলাভিষিক্ত হন।[9] ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর এপ্রিল, ২০১৫ সালে অসাংবিধানিক ও অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সংগঠন পরিচালনার অভিযোগ উত্থাপন করে তিনি পদত্যাগ করেন। আইসিসির বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার ডেভ রিচার্ডসন হারুন লরগাতের স্থলাভিষিক্ত হন।[10]
ইতিহাস
১৯০৯ সালের ১৫ জুন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিগণ লর্ড'সে বৈঠকে বসেন এবং ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভূক্ত টেস্ট ক্রিকেট খেলার উপযুক্ত দলগুলো এ সংস্থার পরিচালনা পরিষদের সদস্যপদ লাভ করার কথা বলা হয়। ১৯২৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও ভারত পূর্ণ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয় যার ফলে সদস্য দেশের সংখ্যা ৬ এ উন্নীত হয়। ঐ বছরই সংস্থাটি সদস্যপদের বিষয়ে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কেবলমাত্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভূক্ত দেশগুলোর পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক দলগুলো ইংল্যান্ডে গমন ও ইংল্যান্ড থেকে প্রেরণ করলেই সংস্থার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ সকল শর্তের আওতার বাইরে থাকায় দলটি সদস্যপদ লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।[11] ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হলে দলটিকে ৭ম সদস্যরূপে ১৯৫২ সালে টেস্ট খেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু, ১৯৬১ সালের মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা কমনওয়েলথ ত্যাগ করলে, তারা আইসিসির সদস্যপদ হারায়।
১৯৬৫ সালে ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্সের নাম পরিবর্তন করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স নামকরণ করা হয়। একই সাথে কমনওয়েলথের বাইরের দেশসমূহের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে অনুমোদন করা হয়, যা সংস্থাটির আন্তর্জাতিক পরিসর অনেকাংশে বৃদ্ধি করে। সহযোগী দেশসমূহ অন্তর্ভুক্তির পর, প্রত্যেক সহযোগী একটি এবং প্রতিষ্ঠাতা ও পূর্ণ সদস্যগণ দুইটি ভোটাধিকার সংরক্ষণ করত। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা ছিল।
১৯৮১ সালে শ্রীলঙ্কাকে পূর্ণ সদস্য হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরফলে টেস্টভূক্ত দলের সংখ্যা সাতে চলে আসে। ১৯৮৯ সালে নতুন নিয়মের প্রবর্তন করা হয় এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান নাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল এ প্রবর্তিত হয়। বর্ণবৈষম্য অধ্যায় শেষ হওয়ার পর ১৯৯১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পুনরায় পূর্ণ সদস্যরূপে হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়। এর পরের বছর ১৯৯২ সালে নবম টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে জিম্বাবুয়ে মর্যাদা লাভ করে। সর্বশেষ ২০০০ সালে বাংলাদেশ ১০ম টেস্টভূক্ত দল হিসেবে টেস্ট খেলার মর্যাদা লাভ করে।
অবস্থান
প্রতিষ্ঠার শুরুতে লর্ড'সে আইসিসির কার্যক্রম পরিচালিত হত। ১৯৯৩ সালে লর্ড'সের নার্সারি প্রান্তে অবস্থিত "ক্লক টাওয়ার" ভবনে আইসিসির কার্যালয় স্থাপিত হয়। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রধান প্রতিযোগিতা বিশ্বকাপ হতে অর্জিত রাজস্ব স্বাধীনভাবে আইসিসির কার্যক্রম চলতো এবং অধিকাংশ সদস্য দেশসমূহ ইংল্যান্ডের দ্বৈত-করনীতি সাথে একমত ছিল না, তাই আইসিসির রাজস্ব রক্ষার জন্য একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন পরে। তাই ১৯৯৪ সালে যুক্তরাজ্যের বাইরে মোনাকোভিত্তিক আইসিসি ডেভেলপম্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড বা আইডিআই নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়।
নব্বই দশকের বাকি সময় আইসিসির প্রশাসনিক কার্যক্রম সঠিকভাবে চলেছিল। কিন্তু ২০০১-২০০৮ পর্যন্ত আইসিসির বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজনের অধিকারসত্ত্ব, আইসিসির লভ্য রাজস্ব ও সদস্য সংখ্যার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির কারণে মোনাকোতে অবস্থিত আইডিআইয়ে বেশকিছুসংখ্যক বাণিজ্যিককর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু এরফলে লর্ডসে কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ তাদের বাণিজ্যিক সহকর্মীদের থেকে আলাদা হয়ে পরেন। তাই কাউন্সিল তাদের সকল কর্মকর্তাদের এক কার্যালয়ে একীভূত করা এবং একই সাথে বাণিজ্যিক আয় কর থেকে রক্ষার পথ খুঁজতে থাকে।
আইসিসি লর্ডসে তাদের সকল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইংরেজ ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের কাছে লন্ডনে পরিচালিত সকল কার্যক্রমের (বাণিজ্যিক কার্যক্রমসহ) জন্য বিশেষ কর মওকুফসংক্রান্ত ছাড়ের জন্য আবেদন করে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার আইসিসির জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরই প্রেক্ষিতে আইসিসি বিভিন্ন জায়গায় তাদের কার্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে তাদের কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৫ সালের আগস্টে আইসিসি মোনাকো ও লন্ডনে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দুবাইয়ে তাদের কার্যক্রম সরিয়ে নেয়, যা আইসিসির কার্যনির্বাহী বোর্ডের পক্ষে ১১-১ ভোটে পাস হয়।
দুবাইয়ে আইসিসির কার্যালয়ের বদলের প্রধান কারণ ছিল একটি কর সহনীয় জায়গায় তাদের সকল কর্মীদের একীভূত করা। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ এশীয় নতুন ক্রিকেট পরাশক্তি কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকা। আইসিসি যখন এমসিসি দ্বারা পরিচালিত হত তখন লর্ড’স ছিল পরিচালনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা (১৯৯৩ সাল পর্যন্ত)। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট বিশ্বে নতুন উঠতি শক্তি হিসেবে জানান দিলে কেবলমাত্র ব্রিটিশ সদস্য (এমসিসি) দ্বারা পরিচালনা অযৌক্তিক হয়ে দাঁড়ায়। তাই ১৯৯৩ সালে নতুন পরিবর্তনের পর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লর্ড'স থেকে আরো নিরপেক্ষ জায়গায় স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
বিধি ও নিয়ম-কানুন
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল সাধারণত খেলার অবস্থা এবং আইসিসির বিধি-বিধানসমূহ তত্ত্বাবধান করে থাকে। আইসিসি ক্রিকেটের আইন-কানুন পরিবর্তন করতে পারে না। কেবলমাত্র এমসিসি ক্রিকেটের আইন-কানুনের পরিবর্তন সাধন করতে পারে। যদিও বর্তমানে ক্রিকেটের বৈশ্বিক পরিচালনা পর্ষদে আলোচনা সাপেক্ষে পরিবর্তন সাধিত হয়। আইসিসির নিজস্ব কোড অব কন্ডাক্ট রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ম্যাচ চলাকালীন সকল দল ও খেলোয়াড়দের মেনে চলতে হয়। যদি নিয়মের ভাঙ্গা হয় তবে আইসিসি তার জন্য নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানা করে। ২০০৮ সালে আইসিসি ১৯জন খেলোয়াড়কে শাস্তি প্রদান করে।
আয়
আইসসিসির আয়ের প্রধান উৎস হল, তাদের আয়োজন বিভিন্ন প্রতিযোগিতাসমূহ বিশেষ করে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। আইসিসি তাদের আয়ের একটি বড় অংশ সদস্যদেশগুলোর মাঝে বণ্টন করে দেয়। ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতার স্পন্সরশীপ ও টেলিভিশনসত্ত্ব বিক্রির মাধ্যমে আইসিসি ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে, যা এখন পর্যন্ত তাদের আয়ের প্রধান উৎস। ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নয় মাস আইসিসি, সদস্য সাবস্ক্রিপশান ও স্পন্সরশিপ থেকে মোট ১২.৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। প্রতিটি প্রতিযোগিতার বিপরীতে আইসিসি ২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ থেকে অর্জিত ২৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারসহ, মোট ২৮৫.৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। আইসিসি এই সময়ের মধ্যে তাদের বিভিন্ন বিনিয়োগ হতে ৬.৬৯৫ মিলিয়ন ডলার মার্কিন আয় করে।
আইসিসি দ্বি-পাক্ষিক আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলো (টেস্ট ম্যাচ, একদিনের আন্তর্জাতিক, টুয়েন্টি২০) হতে কোন ধরনের আয় করে না, কেননা এসকল ম্যাচের সত্ত্বের মালিকানা সদস্যদেশগুলোর এবং তাদের দ্বারাই পরিচালিত হয়। তাই বিশ্বকাপের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে আইসিসি নতুন নতুন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি সুপার সিরিজ অন্যতম। যদিও এসকল প্রতিযোগিতা আইসিসির আশানুরূপ সফল হয়নি। আইসিসি সুপার সিরিজ চরমভাবে ব্যর্থ হয় এবং পুনরায় আয়োজন করা হয়নি। ২০০৬ সালে ভারত, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পুনরায় না আয়োজন করার আবেদন করে। ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে উইজডেন ২০০৫ সালের সংস্করণে "টার্কি অব ক্রিকেট" ও "চরম ব্যর্থ" হিসেবে আখ্যায়িত করে। যদিও নতুন ফরম্যাটের কারণে ২০০৬ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অনেক সফল হয়।
২০০৭ সালে প্রথম আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ চালু হয়, যা ছিল একটি সফল প্রতিযোগিতা। আইসিসির বর্তমান পরিকল্পনা প্রত্যেক বছর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা এবং প্রতি দুইবছর অন্তর অন্তর আইসিসি টুয়েন্টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজন করা। একই সাথে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতি চার বছর পর পর আয়োজিত হবে।
পরিচালনা পরিষদ
সভাপতি
আইসিসি সভাপতির পদটি অন্যান্য পদের প্রেক্ষাপটে অনেকাংশেই সম্মানিত পদ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু ২০১৪ সালে আইসিসি’র গঠনতন্ত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। তার সাথে সভাপতি পদের অবসান ঘটে ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদের সূচনা হয়।
সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সভাপতি ছিলেন - জগমোহন ডালমিয়া, এহসান মানি ও শরদ পওয়ার ।
পাকিস্তানের সাবেক ব্যাটসম্যান জহির আব্বাস ১২তম ও শেষ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।[12] তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও আইসিসি’র সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামালের স্থলাভিষিক্ত হন। কিন্তু আইসিসি’র বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক ও অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় পরিচালনার অভিযোগ উত্থাপন করে মোস্তফা কামাল এপ্রিল, ২০১৫ সালে পদত্যাগ করেন। উল্লেখ্যে যে, ২৬ মে, ২০১৪ তারিখে ১১শ সভাপতি হিসেবে তিনি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি ও আইসিসি’র সাবেক সভাপতি অ্যালান আইজ্যাকের স্থলাভিষিক্ত হন।[13]
চেয়ারম্যান
এই পদ সংস্থার পরিচালনা পরিষদের প্রধান হিসেবে সর্বোচ্চ পদবীবিশেষ। ২০১৪ সালে আইসিসি’র ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক রদ-বদল ঘটিয়ে ও পুণর্গঠনের মাধ্যমে এ পদ সৃষ্টি করা হয়।
২৬ জুন, ২০১৪ তারিখে সংস্থাটি বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এন. শ্রীনিবাসনকে আইসিসির প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করে।[14] ২২ নভেম্বর, ২০১৫ থেকে শশাঙ্ক মনোহর এই পদে আসীন হন। ১৫ মার্চ, ২০১৭ তারিখে চেয়ারম্যানের পদ থেকে শশাঙ্ক মনোহর ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করলেও [15] পরবর্তীতে তা ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বহাল হন। [16] সিঙ্গাপুর ক্রিকেট আসোসিয়েশন এর প্রাক্তন সভাপতি ইমরান খেয়াজা হন উপ-চেয়ারম্যান।[17]
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার ডেভ রিচার্ডসন-এর পর বর্তমানে স্টার স্পোর্টস-এর প্রাক্তন পরিচালন অধিকর্তা মানু সাহোনি আইসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।[18] ভারতীয় বৈদেশিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
ক্রিকেট কমিটি
এই কমিটি সংস্থার মূল ক্রিকেট বিষয়ক শাখা। অনিল কুম্বলে এই কমিটির চেয়ারম্যান।
সদস্য
আইসিসি দুই স্তরবিশিষ্ট সদস্যের ব্যবস্থা রেখেছে। পূর্ণাঙ্গ সদস্যভূক্ত ১২টি ক্রিকেট পরিচালনা বোর্ডের দলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের অধিকারী। সহযোগী সদস্যভূক্ত ৯৬টি পরিচালনা বোর্ডের স্থায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ও ক্রিকেট খেলা আয়োজন করে থাকে; কিন্তু তারা পূর্ণ সদস্যের পর্যায়ে পড়ে না।
পূর্ণ সদস্য
সাম্প্রতিককালে আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তান আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ অর্থাৎ টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে।[19] ১২টি পূর্ণ সদস্য দেশ হলো:
সহযোগী সদস্য
বর্তমানে ৯৬ টি সহযোগী দেশ আছে। পূর্বে অনুমোদনপ্রাপ্ত সদস্য নামে আরেকটি স্তর ছিলো ।২০১৭ সালে তা বাতিল করে দেওয়া হয়।সকল অনুমোদনপ্রাপ্ত দল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সহযোগী সদস্য হয়ে যায়।
আঞ্চলিক পরিষদ
নিম্নবর্ণিত আঞ্চলিক সংস্থাগুলো ক্রিকেট পরিচালনা, উৎসাহিতকরণ ও উন্নয়নের সাথে জড়িত:
- আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন
- এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল
- আইসিসি আমেরিকাস
- আইসিসি পূর্ব এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল
- ইউরোপীয় ক্রিকেট কাউন্সিল
আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার ফলে আরও দু'টি আঞ্চলিক পরিষদের বিলুপ্তি ঘটে:
প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার
র্যাংকিং
- আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (টেস্ট ক্রিকেটের জন্য র্যাংকিং)
- আইসিসি ওডিআই চ্যাম্পিয়নশিপ (ওডিআই ক্রিকেটের জন্য র্যাংকিং)
- আইসিসি টি২০আই চ্যাম্পিয়নশিপ (টি২০আই ক্রিকেটের জন্য র্যাংকিং)
প্রতিযোগিতা
আইসিসি বিভিন্ন ধরনের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট, একদিনের আন্তর্জাতিক ও টুয়েন্টি২০ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা পরিচালনা করে থাকে:
পূর্বেকার ১২ মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দেরকে স্বীকৃতি ও সম্মাননার জন্য আইসিসি কর্তৃক আইসিসি পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছে। ৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৪ তারিখে লন্ডনে উদ্বোধনী 'আইসিসি পুরস্কার' প্রদানের আয়োজন করা হয়।
আইসিসি প্লেয়ার র্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সাম্প্রতিক ক্রীড়াশৈলীর উপর ভিত্তি করে র্যাঙ্কিং করা হয় যা বিশ্বের সর্বত্র স্বীকৃত। ২০১৫ সাল পর্যন্ত রিলায়েন্স মোবাইল কর্তৃপক্ষ আইসিসি'র সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পাদন করে।[20]
আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেট কাউন্সিল
১৯৫৮ সালে মহিলাদের ক্রিকেট সংস্থারূপে আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেট কাউন্সিল গঠিত হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে মহিলাদের ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা - এই চারটি দেশের মধ্যেকার ক্রিকেট খেলা প্রচলিত ছিল।[21] পরবর্তীতে ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেট কাউন্সিলকে আইসিসি'র সাথে একীভূত করা হয়। এরফলে একই ক্রীড়া সংস্থারূপে ক্রিকেটের মানোন্নয়নে সহযোগিতা ও পরিচালনা করা আরো সহজতর হয়।[22]
আকসু
বৈশ্বিকভাবে শীর্ষ ক্রিকেটারদের মাদকদ্রব্য সেবন, জুয়া কেলেঙ্কারী ইত্যাদিতে জড়িত বিষয়াবলী তদারকীতে আইসিসি কাজ করছে। বৈধ-অবৈধ পন্থায় জুয়াড়ীদের সাথে জড়িত থাকার পরপরই আইসিসি দূর্নীতি বিরোধী ও নিরাপত্তা কমিটি বা আকসু গঠন করে। ২০০০ সালে গঠিত এ কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কমিশনার লর্ড কন্ডন। সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হানসি ক্রনিয়ে কর্তৃক ভারতীয় জুয়াড়ীদের কাছ থেকে অর্থগ্রহণ অথবা নির্দিষ্ট খেলায় পূর্ব-নির্ধারিত ফলাফলের মাধ্যমে এ কমিটি গঠনের সূচনা করে। একইভাবে সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন এবং অজয় জাদেজা’র বিরুদ্ধে খেলা গড়াপেটার কারণে ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণে আজীবন নিষেধাজ্ঞা ও খেলা থেকে কমপক্ষে পাঁচ বছর দূরে থাকার সুপারিশ করা হয়েছিল। আকসু দূর্নীতির কোনরূপ প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে তা পর্যবেক্ষণ ও তদন্তে নামে। এছাড়াও খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুমে মোবাইল টেলিফোন ব্যবহারের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারী করে।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পূর্বে তৎকালীন প্রধান নির্বাহী ম্যালকম স্পিড যে-কোন ধরনের দূর্নীতির বিরুদ্ধে আইসিসি’র অবস্থানের বিষয়টি অবগত করেছিলেন।[23] ২০১০ সালে মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ আসিফ ও সালমান বাট - এ তিনজন পাকিস্তানি খেলোয়াড়দেরকে খেলায় অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্যে যথাক্রমে ৫, ৭ ও ১০ বছরের জন্যে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে আইসিসি।
বৈশ্বিক ক্রিকেট একাডেমি
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই স্পোর্টস সিটিতে বৈশ্বিক ক্রিকেট একাডেমি গঠন করা হয়েছে। দু’টি ডিম্বাকৃতি মাঠের প্রত্যেকটিতে ১০টি টার্ফ পীচ, আউটডোর টার্ফ, কৃত্রিমভাবে অনুশীলনের সুবিধাদিসহ অভ্যন্তরীণভাবে অনুশীলনের সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি হক আই প্রযুক্তির ব্যবহার ও ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট জিমন্যাসিয়ামের ব্যবস্থাদি রয়েছে। একাডেমির কোচিং পরিচালক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেট-রক্ষক রড মার্শ। ২০০৮ সালে একাডেমি গঠনের পরিকল্পনা করা হলেও ২০১০ সালে এর কার্যক্রম শুরু হয়।
আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড শিরোনামের একটি সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান টেলিভিশনে সম্প্রচার করছে। স্পোর্টব্র্যান্ড কর্তৃক এটি পরিচালিত হচ্ছে। ৩০ মিনিটের এ অনুষ্ঠানে সর্বশেষ ক্রিকেট সংবাদ, টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিকসহ সাম্প্রতিক ক্রিকেটের বিশেষ মূহুর্ত এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে। এছাড়াও, মাঠের বাইরে ও স্বাক্ষাৎকার আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডে রয়েছে।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.