Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আত্মা হলো কোনো জীবের অংশ যা কোনো শরীর নয়। দেহ যখন জীবিত থাকে, তখন এর ভেতরে একটি আত্মা থাকে। আর মৃত্যুর সময় আত্মা দেহ থেকে বেরিয়ে যায়।
আধ্যাত্মিক বিশেষজ্ঞগণ বিশ্বাস করেন যে, আত্মা মানুষের সাথে কথা বলতে পারে এবং পৃথিবীর যে কোন জিনিসকে বদলে দিতে পারে। অনেক ধর্ম এ ধরনের আত্মার সাথে সকল অবস্থায় যোগাযোগ করতে নিষেধ করে।
কিন্তু কিছু ধর্ম আবার একে তাদের রীতিনীতির অংশ হিসেবে চর্চা করে।
খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে স্বর্গে ও নরকে আত্মারা বসবাস করে। খ্রিস্টানরা মনে করেন যারা ভাল কাজ করবে তাদের আত্মা স্বর্গে যাবে। অপরদিকে যারা সারাজীবন পাপ কাজ করে থাকে তাদের আত্মা নরকে পতিত হবে।
ইসলাম ধর্মে আত্মাকে রুহ্ বলে। “রুহ্” একটি আরবি শব্দ [সূরা বনি ইসরাইল আয়াত নং ৮৫ ]। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তবে বাংলাদেশের মুসলমানরা আত্মাকে বাংলাতে “রুহ” বলেই অভিহিত করে [সূরা বনি ইসরাইল আয়াত নং ৮৫ ]।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] মুসলমানরা মনে করে প্রতিটি জীবের শরীরের ভিতরেই আত্মা বা রুহ্ বিদ্যমান। মৃত্যুর সময় প্রথমে আল্লাহ তাঁর নিজস্ব ক্ষমতায় রুহকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে নেন এবং প্রাণ বা জীবন কবজকারী ফেরেশতা আজরাইল জীবের শরীরের ভিতর থেকে প্রাণ বা জীবন বের করে নিয়ে যায়। মৃত্যুর পর কবরে আল্লাহ আবার রুহকে সংযোগ করেন এবং প্রাথমিক পর্যায়ে তিনটি প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে কবর জীবন থেকেই মানুষের পাপ-পুণ্য বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পুনরুত্থান দিবসে চুড়ান্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে জান্নাত বা জাহান্নামের ফয়সালা করা হবে ।
হিন্দু বিশ্বাসমতে "আত্মা" হলো চিৎকণা, যা সকল চৈতন্যময় জীবে পরিব্যাপ্ত। এই আত্মা জীবাত্মা ও পরমাত্মা এই দুই ভেদ রয়েছে। পরমাত্মা হল পরমেশ্বর ভগবান এর এক বিশেষ রূপ। প্রতিটি জীবের হৃদয়ে জীবাত্মা (আত্মা) ও পরমাত্মা উভয়ই বতর্মান। জীবাত্মার কারণে দেহে চৈতন্য লাভ করে। জীবাত্মা বহু হলেও এক অভিন্ন পরমাত্মা সকল জীবে অবস্থান করে তার পালন করেন। অদ্বৈতবাদিদের মতে জীবাত্মাকে পরমাত্মার অংশ বলা হয়। কিন্তু দ্বৈতবাদি ও ত্রৈতবাদিগণ ভিন্ন মত পোষণ করেন।
মনুষ্য অবস্থায় জীবাত্মার কৃতকর্ম অনুযায়ী তার কর্মফল ভোগ করার জন্য স্বর্গ-নরক ভোগ করে, অর্থাৎ জন্মান্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন যোনি ভ্রমণ করে স্থাবর-অস্থাবর দেহ প্রাপ্ত হয়ে সুখ-দুঃখ অনুভব করে। কিন্তু পরমাত্মা কর্মফল দাতা, তিনি কোনো ফলভোগ করে না। ঐ সময়ে জীবাত্মা তার পূর্ব জন্মে অর্জিত কর্মফল বিনষ্ট করে, এবং পুনরায় মনুষ্যদেহ লাভ করে। শেষে মোক্ষলাভের মাধ্যমে জীবাত্মা পরমাত্মাকে প্রাপ্ত হয়। মোক্ষলাভই সনাতন ধর্ম অনুযায়ী জীবের চূড়ান্ত লক্ষ হিসেবে বর্ণিত।
সনাতন ধর্ম অনুযায়ী আত্মা শাশ্বত এবং চৈতন্যস্বরূপ। আত্মার কারণে মন চিন্তার সামর্থ অর্জন করে। কিন্তু আত্মা স্বয়ং চিন্তা করতে পারে না। এই দর্শন অনুযায়ী আত্মার কোনো আকার নেই। একে প্রত্যক্ষ করা, ধরা, ছোঁয়া বা কোনো কিছু দিয়ে কাটা যায় না বলে মনে করা হয়। এর ফলে আত্মার দর্শন বা মৃত্যুর পর আত্মার সাথে যোগাযোগ করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না আর আত্মাকে কোন দিন ধ্বংস করা যায় না। জীবদেহের মৃত্যু হলেও আত্মার কখনো মৃত্যু হয় না।
আত্মা বলতে সাধারণ অর্থে এমন এক সত্ত্বাকে বোঝানো হয়, যারা অদৃশ্য এবং মানুষের শরীর ভিতরে বা স্বাধীনভাবে বসবাস করে। তবে এক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা ভিন্ন।
বিজ্ঞান আত্মার অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস করে না। বিজ্ঞানের মতে এটি মানুষের কল্পনা বা অনুভূতি। যারা দাবি করেন যে তারা আত্মা প্রত্যক্ষ করেছেন বা তাদের সাথে কথা বলেছেন, বিজ্ঞানের মতে এটি তাদের অনুভূতি বা কল্পনামাত্র। দৈনন্দিন জীবনে আত্মা, ধর্ম, ঈশ্বর ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস বা শ্রবণ করা এরকম ঘটনা মানুষের মস্তিষ্কতে গেথে যায়। ফলে মানুষ এমন ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার দাবি করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স:
চিকিৎসা বিজ্ঞান এ, নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স (Near death experience) বা "মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতা" (সংক্ষেপে "NDE) বলতে বোঝায় এমন পরিস্থিতিকে, যা আশু মৃত্যু বা অনেকগুলো সাম্ভাব্য অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত। এমন সময়ে মানুষের শরীরের সকল জৈবিক কার্যক্রম যেমন- হৃৃদ স্পন্দন, নাড়ির গতি, মস্তিষ্ক ইত্যাদির কার্যক্রমের হার শূন্যের কোটায় নেমে আসে। এ রকম পরিস্থিতিতে মানুষের যে অভিজ্ঞতা হয়, তাই নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স। যারা এ ধরনের অভিজ্ঞতা ভোগ করে তাদের বলে নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্সড (Near death experienced)।
প্রতিবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮-৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এধরণের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় বলে দাবি করেন।
বিজ্ঞান এর দৃৃষ্টিতে এই ধরনের পরিস্থিতি আর স্বাভাবিক মৃৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য হলো এই যে, মৃৃত্যুর পর মানুষ মারা যায়, আর নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্সের পর মানুষ মারা যায় না। মানুষ সুস্থ্য হয়ে উঠে। বিজ্ঞান এধরনের অভিজ্ঞতা ও স্বাভাবিক মৃৃত্যুকে প্রায় সমার্থক বলে মনে করে। কারণ বিজ্ঞানের নজরে মৃৃত্যু হলো দেহের সকল জৈবিক কার্যক্রম স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া। আর নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স হলো দেহের সকল জৈবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠিকই, তবে স্থায়ী ভাবে না। সাধারণত এই ধরনের অভিজ্ঞতার পরে বেশিরভাগ মানুষ বেঁচে উঠে। স্নায়ুবিজ্ঞানের মতে, মস্তিষ্কের টেম্পেরাল লোব এর অদ্ভুত আচরণ এবং মস্তিষ্কের ড্যামেজের কারণে এমনটি ঘটে।
NDE এর বৈশিষ্ট্য:-
এধরনের ঘটনা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান আত্মার ব্যাখ্যাটি দিয়ে থাকে। অর্থাৎ, এটি মানুষের কল্পনা বা স্বপ্ন। জীবনে আত্মা, পরলোক, দোজখ-বেহেশত ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি অত্যধিক বিশ্বাস ও মস্তিষ্কের জন্য এমনটা হয়ে থাকে বলে বিজ্ঞানের অভিমত। বিজ্ঞানের মতে, নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্সের সময় মস্তিষ্ক মনে করে সত্যিই হয়তো আমরা মারা যাচ্ছি। তাই তখন মৃৃত্যুর পরবর্তী জীবনের কথা আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন ধর্মে বলা হয়েছে মরার পর মানুষ স্বর্গে যাবে। তখন মস্তিষ্ক স্বর্গের একটি কল্পিত চিত্র আমাদের চোখ এর সামনে তুলে ধরে, আর আমরা ভাবি যে আমরা স্বর্গ দেকছি। এ বিষয়ে বিজ্ঞানের এই অভিমত। তবে ভবিষ্যত্বাণী করা আর তা সত্যি হওয়া, বিজ্ঞানের এক্ষেত্রে কোনো ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ।
ধর্মীয় দৃৃষ্টিকোণ থেকে, মৃৃত্যু বলতে দেহ থেকে আত্মা বেরিয়ে যাওয়াকে নির্দেশ করে। আর নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স নিয়েও ধর্মের ব্যাখ্যা একই। সৃৃষ্টিকর্তার নির্দেশে কোনো ভাবে আত্মা দেহ থেকে বের হয়ে স্বর্গ নরক ইত্যাদি পরিদর্শন করে। অন্যান্য আত্মাদের সাথে কথা বলে। মৃৃত আত্মীয়দের আত্মার সঙ্গে দেখা করে। আবার সৃৃষ্টিকর্তার নির্দেশে আত্মা দেহে ফিরে আসে। তখন মানুষ ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে উঠে।
আর ভবিষ্যত্বাণীর বিষয়টি ধর্মের দৃৃষ্টিতে একটা সংকেত। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানিয়ে দেয়ার সংকেত।
অধিকাংশ ধর্মেই নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স সম্পর্কে এই ধারণা প্রচলিত। এমনকি যেসকল ধর্ম সৃৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব মানে না সে সকল ধর্মেও এই তত্ত্ব প্রচলিত। শুধুমাত্র সৃৃষ্টিকর্তার বিষয়টি অনুপস্থিত।
বিভিন্ন সূত্রমতে এ ঘটনার পর বহু নাস্তিক ব্যক্তিরাও এই ধরনের ঘটনার ধর্মের দিকে ফিরে এসেছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.