সঞ্জয় লীলা ভণশালী[ক] (গুজরাটি: સંજય લીલા ભણશાળી, উচ্চারণ [ˈsənd͡ʒeː ˈliːlɑː ˈbʱəɳʃɑːɭiː]; জন্ম: ২৪শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৩), যিনি তার আদ্যক্ষর এসএলবি নামেও পরিচিত, হলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক ও সুরকার।[১] তিনি খামোশি: দ্যা মিউজিক্যাল দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালনা শুরু করেন। পরবর্তীতে তার পরিচালিত হাম দিল দে চুকে সনম (১৯৯৯), দেবদাস (২০০২), ব্ল্যাক (২০০৫) ও বাজিরাও মাস্তানি (২০১৫) ব্যবসায়িকভাবে সফল হয় ও সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে। ভণশালী চলচ্চিত্র পরিচালনা, প্রযোজনা ও চিত্রনাট্য রচনার জন্য একাধিক পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থানের প্রাক্তন ছাত্র।[২] ভণশালী তার মা লীলা ভণশালীর নাম থেকে “লীলা” নামটি গ্রহণ করেছেন। তিনি ১৯৯৯ সালে ভণশালী প্রোডাকশন্স নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৫ সালে তিনি ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মানসূচক পুরস্কার পদ্মশ্রী লাভ করেন। ২০২৪ সালে তিনি ভণশালী মিউজিক নামে নিজস্ব রেকর্ড লেবেল চালু করেন।[৩]
সঞ্জয় লীলা ভণশালী | |
---|---|
સંજય લીલા ભણશાળી | |
উচ্চারণ | [ˈsənd͡ʒeː ˈliːlɑː ˈbʱəɳʃɑːɭiː] |
জন্ম | সঞ্জয় ভণশালী ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৩ বোম্বে, মহারাষ্ট্র, ভারত |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা |
|
কর্মজীবন | ১৯৮৯–বর্তমান |
আত্মীয় | শারমীন সেগল (ভাগনি) |
সম্মাননা | পদ্মশ্রী (২০১৫) |
স্বাক্ষর | |
প্রাথমিক জীবন
ভণশালী ১৯৬৩ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি ভারতের মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বইয়ে একটি গুজরাতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চলচ্চিত্র নির্মাতা নবীন ভণশালী এবং মাতা লীলা ভণশালী। তার “লীলা” নামটি তিনি তার মায়ের নাম থেকে গ্রহণ করেন। নবীন ভণশালী অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়েন এবং একেবারে হাল ছেড়ে দেন। ভণশালীর বোনের নাম বেলা সেগল।
কর্মজীবন
সঞ্জয় লীলা ভণশালী তার কর্মজীবন শুরু করেন বিধু বিনোদ চোপড়ার সহকারী পরিচালক হিসেবে। বিনোদ চোপড়ার সহকারী হিসেবে তিনি পরিন্দা, ১৯৪২: এ লাভ স্টোরি ও করিব্ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তার পরিচালনায় অভিষেক হয় ১৯৯৬ সালে খামোশি: দ্যা মিউজিক্যাল চলচ্চিত্র দিয়ে। ছবিটি ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করতে না পারলেও সমালোচকের প্রশংসা লাভ করে। তার পরিচালিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী হাম দিল দে চুকে সনম ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায়। এতে প্রধান তিন চরিত্রে অভিনয় করেন সালমান খান, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন ও অজয় দেবগন। ছবিটি ব্যবসায়িক ভাবে সফল হয় এবং বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করে। ভণশালী এই চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরস্কার, আইফা সেরা পরিচালক পুরস্কার,[৪] জি সিনে সেরা পরিচালক পুরস্কার,[৫] ও জি গোল্ড সেরা পরিচালক পুরস্কার লাভ করেন।
তার পরবর্তী চলচ্চিত্র দেবদাস ২০০২ সালে মুক্তি পায়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন শাহরুখ খান, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন ও মাধুরী দীক্ষিত। এটি ২০০২ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র ছিল। ছবিটি সেবছর সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে একাডেমি পুরস্কারের জন্য ভারতীয় নিবেদন ছিল। এটি শ্রেষ্ঠ হিতকর বিনোদন প্রদানকারী জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার, সেরা চলচ্চিত্রের জন্য স্ক্রিন পুরস্কার,[৬] এবং বনশালি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরস্কার, ও আইফা সেরা পরিচালক পুরস্কার লাভ করেন। দেবদাস টাইম ম্যাগাজিনের করা "শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ১০ চলচ্চিত্র" তালিকায় আটে অবস্থান করে।
২০০৫ সালে মুক্তি পায় ভণশালী পরিচালিত চতুর্থ চলচ্চিত্র ব্ল্যাক। হেলেন কেলারের জীবনী আশ্রিত ছবিটিতে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন ও রানী মুখোপাধ্যায়। এই চলচ্চিত্রটিও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে এবং টাইম ম্যাগাজিনের করা "২০০৫ সালের শ্রেষ্ঠ ১০ চলচ্চিত্র" তালিকায় পাঁচে অবস্থান করে। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার, ও আইফা শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে এবং ভণশালী এই চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরস্কার, আইফা সেরা পরিচালক পুরস্কার,[৭] ও জি সিনে সেরা পরিচালক পুরস্কার[৮] লাভ করেন। দুই নবাগত রনবীর কাপুর ও সোনম কাপুরকে নিয়ে নির্মিত তার পরের চলচ্চিত্র সাওয়ারিয়া (২০০৭) নেতিবাচক সমালোচনা লাভ করে এবং বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
২০১০ সালে তার পরিচালিত গুজারিশ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। এতে অভিনয় করেন হৃতিক রোশন ও ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন। এই ছবির মধ্যে দিয়ে তার সঙ্গীত পরিচালনায় অভিষেক হয়। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৯] ২০১২ সালে তিনি তেলুগু চলচ্চিত্র বিক্রমার্কুদুর হিন্দি পুনঃনির্মাণ রাওড়ি রাঠোর প্রযোজনা করেন। প্রভু দেবা পরিচালিত ছবিটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন অক্ষয় কুমার। ২০১৩ সালে বনশালি উইলিয়াম শেকসপিয়রের রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট অবলম্বনে ভারতীয় চিত্রনাট্যে রাম-লীলা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এতে প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেন রণবীর সিং ও দীপিকা পাড়ুকোন। বনশালি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরস্কার,[১০] আইফা সেরা পরিচালক পুরস্কার, ও সেরা পরিচালক হিসেবে স্ক্রিন পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ২০১৪ সালে তিনি ম্যারি কম এবং ২০১৫ সালে গব্বার ইজ ব্যাক চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন।
২০১৫ সালে তার পরিচালিত ঐতিহাসিক-রোমান্টিক চলচ্চিত্র বাজিরাও মাস্তানি মুক্তি পায়। ছবিটি পেশওয়ার বাজিরাও ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মাস্তানির প্রেমের গল্প অবলম্বনে নির্মিত। এতে নাম চরিত্রে অভিনয় করেন রণবীর সিং ও দীপিকা পাড়ুকোন এবং বাজিরাওয়ের প্রথম স্ত্রী কাশিবাই চরিত্রে অভিনয় করেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। ছবিটি ২০০৩ সালে নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পর এতে সালমান খান, শাহরুখ খান, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, কারিনা কাপুর, ও রানী মুখোপাধ্যায়দের অভিনয় করার কথা শোনা যায়। ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে এবং ২০১৫ সালের সেরা ছবি হিসেবেও বিবেচিত হয়। পাশাপাশি বক্স অফিসেও সফল হয়।[১১] ভণশালী শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার,[১২] ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরস্কার, ও আইফা সেরা পরিচালক পুরস্কার[১৩] অর্জন করেন।
চলচ্চিত্র
সাল | চলচ্চিত্র | পরিচালক | প্রযোজক | লেখক | সম্পাদক | সঙ্গীত-পরিচালক | সহপরিচালক |
---|---|---|---|---|---|---|---|
১৯৮৯ | পরিন্দা | হ্যাঁ | |||||
১৯৯৪ | ১৯৪২: এ লাভ স্টোরি | হ্যাঁ | |||||
১৯৯৬ | খামোশি: দ্যা মিউজিক্যাল | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||||
১৯৯৮ | করিব্ | হ্যাঁ | |||||
১৯৯৯ | হাম দিল দে চুকে সনম | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |||
২০০২ | দেবদাস | হ্যাঁ | |||||
২০০৫ | ব্ল্যাক | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||||
২০০৭ | সাওয়ারিয়া | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |||
২০১০ | গুজারিশ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||
২০১১ | মাই ফ্রেন্ড পিন্টো | হ্যাঁ | |||||
২০১২ | রাওড়ি রাঠোর | হ্যাঁ | |||||
২০১২ | শিরি ফারহাদ কি তো নিকাল পাড়ি | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||||
২০১৩ | গোলিয়ো কি রাসলীলা রাম-লীলা | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |
২০১৪ | ম্যারি কম | হ্যাঁ | |||||
২০১৫ | গব্বার ইজ ব্যাক | হ্যাঁ | |||||
২০১৫ | বাজিরাও মাস্তানি | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |||
২০১৮ | পদ্মাবত | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ |
টেলিভিশন
- ২০১৩ – সরস্বতীচন্দ্র (প্রযোজক)
মঞ্চ
টেলিভিশন অনুষ্ঠান বিচারক
- ঝালাক দিখলা জা ১
- এক্স ফ্যাক্টর ইন্ডিয়া
পাদটীকা
- এই গুজরাতি ব্যক্তিনামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় গুজরাতি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.