'অস্ট্রেলিয়ার মহাদেশীয় পাতের উপর অবস্থিত ভূখণ্ডগুলিকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ গঠিত। অস্ট্রেলিয়া নামক দেশ ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের পার্থক্য নির্দেশ করার জন্য কখনও কখনও পারিভাষিক সাহুল, অস্ট্রেলিনিয়া অথবা মেগানেশিয়া নামগুলিও ব্যবহৃত হয়। অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ড, তাসমানিয়া এবং পাপুয়া নিউ গিনি ও দু’টি ইন্দোনেশীয় প্রদেশ নিয়ে গঠিত নিউ গিনি দ্বীপ এই মহাদেশীয় ভূখণ্ডের অন্তর্গত।[1] ওশেনিয়ার ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত এই মহাদেশটি ইংরেজি ধারণা অনুযায়ী সাতটি প্রথাগত মহাদেশের অন্যতম।

দ্রুত তথ্য আয়তন, জনসংখ্যা ...
অস্ট্রেলিয়া
Thumb
আয়তন৮৬,০০,০০০ কিমি (৩৩,০০,০০০ মা) (৭ম)
জনসংখ্যা৩৮,০০০,০০০ (২০১৯-এ অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, পাপুয়াপশ্চিম পাপুয়ার আনুমানিক জনসংখ্যা, ৬ষ্ঠ)
জনঘনত্ব৪.২/কিমি (১১/বর্গমাইল)
জাতীয়তাসূচক বিশেষণঅস্ট্রেলীয়
দেশসমূহ৩ (অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউ গিনিইন্দোনেশিয়ার অংশবিশেষ)
ভাষাসমূহইংরেজি, ইন্দোনেশীয়, টোক পিসিন, হিরি মোটু, ২৬৯টি আদিবাসী পাপুয়ানঅস্ট্রোনেশীয় ভাষা এবং প্রায় ৭০টি আদিবাসী অস্ট্রেলীয় ভাষা
সময় অঞ্চলসমূহজিএমটি+১০, জিএমটি+৯.৩০, জিএমটি+৮
ইন্টারনেট টিএলডি.au, .pg and .id
বৃহত্তম শহরসমূহজনসংখ্যা অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার শহরগুলির তালিকা
জনসংখ্যা অনুযায়ী পাপুয়া নিউ গিনির শহরগুলির তালিকা
তালিকা
বন্ধ

এই মহাদেশটি একটি মহাদেশীয় সোপান নিয়ে গঠিত। এই সোপানটি একাধিক অগভীর সমুদ্র দ্বারা নিমজ্জিত। এই সমুদ্রগুলি সোপানটিকে একাধিক ভূখণ্ডে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। উদাহরণস্বরূপ, আরাফুরা সাগরটরেস প্রণালী কর্তৃক নিউ গিনি এবং বাস প্রণালী কর্তৃক তাসমানিয়া অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ১৮,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ প্লেইস্টোসিন হিমযুগে (শেষ হিমবাহ ম্যাক্সিমাম সহ) যখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কম ছিল, তখন এই অঞ্চলগুলি শুষ্ক ভূখণ্ড দ্বারা সংযুক্ত ছিল। বিগত ১০,০০০ বছরের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিম্নভূমিগুলি প্লাবিত হয় এবং কম উচ্চতায় অবস্থিত শুষ্ক থেকে প্রায়-শুষ্ক মূল ভূখণ্ড এবং নিউ গিনি ও তাসমানিয়ার দু’টি প্রকাণ্ড দ্বীপের সৃষ্টি হয়।[2]

ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পাতের (অধিকতর নির্দিষ্টভাবে বললে অস্ট্রেলীয় পাতের) অংশ অস্ট্রেলিয়া মহাদেশটি হল পৃথিবীর নিম্নতম, মসৃণতম ও প্রাচীনতম ভূখণ্ড। [3] এই ভূখণ্ডের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসও তুলনামূলকভাবে সুস্থিত। নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অংশ নয়। এটি জিল্যান্ডিয়া নামে একটি পৃথক নিমজ্জিত মহাদেশের অংশ।[4] তবে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া উভয়েই অস্ট্রালেশিয়া নামে পরিচিত ওশেনিয়ান উপ-অঞ্চলের অংশ। অন্যদিকে নিউ গিনি মেলানেশিয়ার অংশ।

গোড়ায় ওশেনিয়া শব্দটি বিশ্বের একটি "বৃহৎ বিভাগ" হিসাবে প্রযোজ্য হত। ১৯৫০-এর দশকে এটির পরিবর্তে অস্ট্রেলিয়ার ধারণাটি গৃহীত হয়।[5] বর্তমানে ওশেনিয়া শব্দটি প্রায়শই অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ, জিল্যান্ডিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত ও সপ্ত-মহাদেশ মডেলের অন্তর্গত নয় এমন দ্বীপগুলি নিয়ে গঠিত একটি অঞ্চলকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।[6][7]

এই মহাদেশের অন্তর্গত অন্যতম দেশ পাপুয়া নিউ গিনি সাংস্কৃতিক ও ভাষাগতভাবে সারা বিশ্বে সর্বাধিক বৈচিত্র্যসম্পন্ন দেশগুলির অন্যতম।[8] এই দেশের জনসংখ্যার মাত্র ১৮ শতাংশ শহরাঞ্চলের অধিবাসী।[9] ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম পাপুয়া প্রদেশে আনুমানিক ৪৪টি বিচ্ছিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস।[10] এই মহাদেশের বৃহত্তম ভূখণ্ড অস্ট্রেলিয়া উচ্চ হারে নগরায়িত দেশ।[11] এই দেশটি বিশ্বের ১৪শ বৃহত্তম অর্থনীতিমানব উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী এই দেশটির স্থান বিশ্বে ২য়[12][13] এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসী জনসংখ্যা বিশ্বের মধ্যে ৯ম স্থান অধিকার করে।[14][15] ৫০,০০০ থেকে ৩০,০০০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া, নিউ গিনি এবং তার পূর্বদিকের বড়ো দ্বীপগুলিতে প্রথম মানুষের জনবসতি স্থাপিত হয়েছিল।[16]

নাম-ব্যুৎপত্তি

Thumb
অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডে মহাদেশীয় সাহুল সোপানের (হালকা নীল) অবস্থান। এই সোপানটি উত্তরে নিউ গিনি দ্বীপ, উত্তরপশ্চিমে টিমোর দ্বীপ এবং দক্ষিণে তাসমানিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।

এই অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক পরিভাষা বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকের আগে একক প্লেইস্টোসিন যুগীয় ভূখণ্ডটি পরিচিত ছিল অস্ট্রালেশিয়া নামে। শব্দটির উৎপত্তি লাতিন অস্ট্রালিস (australis) শব্দটি থেকে, যার অর্থ "দক্ষিণ দিকের"। তবে এই শব্দটি অধিকাংশ স্থলেই এমন একটি বৃহত্তর অঞ্চলের নাম হিসাবে ব্যবহৃত হয়, একই মহাদেশীয় সোপানের উপর অবস্থিত না হয়েও নিউজিল্যান্ডের মতো ভূভাগ যে অঞ্চলের অন্তর্গত। ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে প্লেইস্টোসিন যুগীয় মহাদেশটির ক্ষেত্রে বৃহত্তর অস্ট্রেলিয়া শব্দটি চালু হয়।[17] ইতিপূর্বে সাহুল নামটি শুধুমাত্র সাহুল সোপানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হত। ১৯৭৫ সালের একটি সম্মেলনে এবং পরবর্তী প্রকাশনায়[18] এই নামটির প্রয়োগের ব্যাপ্তি ঘটে এবং সমগ্র মহাদেশটিকে এই নামে অভিহিত করা হয়।[17]

১৯৮৪ সালে ডব্লিউ. ফাইলউড প্লেইস্টোসিন মহাদেশ ও বর্তমান ভূখণ্ড উভয়ের ক্ষেত্রেই মেগানেশিয়া নামটি ব্যবহারের প্রস্তাব রাখেন। এই শব্দটির অর্থ মহাদ্বীপ অথবা মহাদ্বীপপুঞ্জ[19] নামটি জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে বহুলভাবে গৃহীত হয়।[20] অন্যান্যেরা ম্যাগনেশিয়া শব্দটিকে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করেন। ভ্রমণ সাহিত্যিক পল থেরক্স তার সংজ্ঞায় নিউজিল্যান্ডকেও অন্তর্ভুক্ত করেন।[21] অন্যেরা এটিকে ব্যবহার করেন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও হাওয়াই বোঝাতে।[22] অপর জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডওকিনস ২০০৪ সালে অস্ট্রালিনিয়া শব্দটি প্রবর্তন করেন।[23] এগুলি ছাড়া অস্ট্রেলিয়া-নিউ গিনি শব্দবন্ধটিও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।[24]

ভূতত্ত্ব

এই মহাদেশটি প্রাথমিকভাবে ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান পাতের উপর অবস্থিত। ভূ-গাঠনিক পাতের কেন্দ্রস্থলে এই মহাদেশের অবস্থান। সেজন্য এখানে কোনো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি নেই। এটিই একমাত্র মহাদেশ যেখানে কোনো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি নেই।[25] ৯ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগে পাত সঞ্চরণ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া মহাদেশীয় ভূখণ্ডটি দক্ষিণাঞ্চলীয় মহা-মহাদেশ গন্ডোয়ানার অংশ হিসেবে আন্টার্কটিকার সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারপর সুদীর্ঘ সময় অস্ট্রেলিয়া-নিউ গিনি একক ভূখণ্ডের উপর অবস্থিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১০,০০০ অব্দে সমাপ্ত শেষ হিমবাহ পর্যায়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে বাস প্রণালী সৃষ্টি হয়। সেই সময় তাসমানিয়া মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। খ্রিস্টপূর্ব ৮,০০০ থেকে ৬,৫০০ অব্দের মাঝে উত্তরাঞ্চলের নিম্নভূমিগুলি সমুদ্র কর্তৃক প্লাবিত হয়ে নিউ গিনি ও আরু দ্বীপপুঞ্জকে অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

নিউ গিনি উচ্চভূমি, রাজা আমপাট দ্বীপপুঞ্জহালমাহেরা নিয়ে গঠিত উত্তরের ধনুকাকার দ্বীপাঞ্চলটি অস্ট্রেলিয়ার উত্তর দিকে সঞ্চরণ ও প্রশান্তীয় পাতের উচ্চতা হ্রাসের জন্য উত্তরে সরে গিয়েছে। মহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আউটার বান্ডা আর্ক (টিমোর, টানিমবারসারেম) বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছিল।[26]

জৈব-ভূগোল

Thumb
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ভূগোল, উত্তর অঞ্চলের ভূগোল, অস্ট্রেলিয়ার ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র, নিউ সাউথ ওয়েলসের ভূতত্ত্ব, কুইন্সল্যান্ডের ভূতত্ত্ব, তাসমানিয়ার ভূতত্ত্ব, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ভূতত্ত্ব।

অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ আন্টার্কটিকা থেকে উত্তরে সরে যাওয়ার পর এই মহাদেশে স্বতন্ত্র প্রাণী, উদ্ভিজ্জ ও ছত্রাক জন্মাতে শুরু করে। মারসুপিয়ালমোনোট্রিম অন্যান্য মহাদেশেও দেখা যায়, কিন্তু প্লেসিন্টাল স্তন্যপায়ীদের অস্ট্রেলিয়া-নিউ গিনিতেই দেখা যায় এবং এখানেই তারা প্রধান। পাখির প্রজাতিগুলি এখানে দেখা যেতে শুরু করে। বিশেষত, গ্রেট প্যাসারাইন অর্ডারের পূর্বপুরুষদের। পরবর্তীকালে এরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এরাই বিশ্বের অর্ধেক পক্ষীপ্রজাতির পূর্বপুরুষ। ছত্রাকের বিভিন্ন প্রজাতিও জন্মাতে শুরু করে। এখানকার কিছু ছত্রাককে নিউ জিল্যান্ড, আর্জেন্টিনাচিলি ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না।[27]

জনবসতি

৪৫,০০০ বছর আগে পূর্ব ওয়ালাশিয়া (টিমোর সহ, যা সেই সময় সাহুলের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল), সাহুলের অবশিষ্টাংশ ও সুন্দার বিসমার্ক দ্বীপপুঞ্জে প্রথম জনবসতি গড়ে ওঠে। এই সময় কয়েকশো লোক অপেক্ষাকৃত উন্নত জলযানের মাধ্যমে এখানে এসে জনবসতি গড়ে তুলেছিল।[28]

আরও দেখুন

  • অস্ট্রেলিয়ার রূপরেখা
  • প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ
  • প্যালেওক্লাইমেটোলজি
  • টেকটনিক পাত

পাদটীকা

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.