ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম ফিল্ড মার্শাল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ফিল্ড মার্শাল স্যাম হরমুসজি ফ্রামজি জামশেদজি মানেকশ[২][৩] (৪ এপ্রিল ১৯১৪ – ২৭ জুন ২০০৮), যিনি স্যাম বাহাদুর ("সাহসী স্যাম") নামেও পরিচিত, ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল অফিসার। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন এবং ফিল্ড মার্শালের পদে উন্নীত হওয়া প্রথম ভারতীয়। তার সক্রিয় সামরিক জীবন চার দশকজুড়ে বিস্তৃত ছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তার সেবার মাধ্যমে শুরু হয়।
ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ মিলিটারি ক্রস | |
---|---|
![]() ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ (জেনারেলের চিহ্ন পরিহিত ছবি ১৯৭০ ) | |
ডাকনাম | স্যাম বাহাদুর |
জন্ম | অমৃতসর, পাঞ্জাব | ৩ এপ্রিল ১৯১৪
মৃত্যু | ২৭ জুন ২০০৮ ৯৪) ওয়েলিংটন, তামিলনাড়ু | (বয়স
সমাধি | |
আনুগত্য | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) ভারত (১৯৪৭ সালের পর) |
সেবা/ | ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনী |
কার্যকাল | ১৯৩৪–১৯৭৩, ২০০৮ (আমৃত্যু ফিল্ড মার্শাল)[১] |
পদমর্যাদা | ফিল্ড মার্শাল |
নেতৃত্বসমূহ | ![]() ![]() ![]() ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজ পরিচালক, সামরিক অপারেশন ইনফেন্ট্রি স্কুল,মাহো ![]() ৫ম গুর্খা রাইফেলস ৮ম গুর্খা রাইফেলস ![]() ![]() |
যুদ্ধ/সংগ্রাম | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৪৭ ভারত-চীন যুদ্ধ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯৭১ |
পুরস্কার | ![]() ![]() ![]() |
স্বাক্ষর |
মানেকশ ১৯৩২ সালে ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি, দেরাদুনে প্রথম ইনটেক যোগদান করেন। তিনি ৪র্থ ব্যাটালিয়ন, ১৩ তম ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি বীরত্বের জন্য মিলিটারি ক্রস পেয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর, তাকে ৮ গোর্খা রাইফেলসে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং হায়দ্রাবাদ সঙ্কটের সময় মানেকশকে একটি পরিকল্পনার ভূমিকায় সমর্থন দেওয়া হয়েছিল এবং ফলস্বরূপ, তিনি কখনও পদাতিক ব্যাটালিয়নের নেতৃত্ব দেননি। সামরিক অভিযান পরিদপ্তরে দায়িত্ব পালনকালে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত হন। তিনি ১৯৫২ সালে ১৬৭ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার হয়ে সেনা সদর দফতরে সামরিক প্রশিক্ষণের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।
ইম্পেরিয়াল ডিফেন্স কলেজে উচ্চ কমান্ড কোর্স শেষ করার পর, তিনি ২৬ তম পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডিং জেনারেল অফিসার নিযুক্ত হন। ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ সালে, মানেকশকে সেনা কমান্ডার পদে উন্নীত করা হয় এবং ১৯৬৪ সালে ইস্টার্ন কমান্ডে স্থানান্তরিত করে ওয়েস্টার্ন কমান্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর প্রধান ছিলেন। এ যুদ্ধে যৌথ বাহিনী জয়ী হয়, পাকিস্তান ৯৩ হাজার সৈন্যসহ আত্মসমর্পণ করে। এর মাধ্যমেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশের উত্থান ঘটে।[৪]
তিনি যথাক্রমে ভারতের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণ এবং পদ্মভূষণে ভূষিত হন।
১৯৩৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে শ্যাম ভারতীয় সেনা একাডেমীর মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ শেষ করেন, তার সেনা কমিশন দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হিসেবে নথিতে লিখা হয়েছিলো ১৯৩৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি।[৫] শ্যাম কমিশন পেয়েছিলেন ১২তম ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টের ৪র্থ ব্যাটেলিয়নে, কমিশন পাওয়ার পরেই তিনি তার ইউনিটে যোগ দিতে পারেননি, তাকে একটি ইংরেজ সেনাদলে (রয়্যাল স্কটস) কাজ শিখতে হয়েছিলো।[৬][৭][৮]
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজিত হলে শ্যামের রেজিমেন্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনী পেয়ে যায়, শ্যাম তখন ভারতীয় রেজিমেন্ট ৮ম গোর্খা রাইফেলসে যোগ দেবার আদেশ পান। ভারতের স্বাধীনতার আগে ১৯৪৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্যাম মেজর হন এবং তিনি সেনাবাহিনী সদর-দপ্তরের সামরিক অভিযান পরিদপ্তরে জেনারেল স্টাফ কর্মকর্তা ১ (জিএসও ১) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।[৯] ১৯৪৭ সালের শেষে শ্যাম ভারপ্রাপ্ত লেঃ কর্নেল হন এবং একটি ব্যাটেলিয়নের (৫ম গোর্খা রাইফেলসের ৩য় ব্যাটেলিয়ন) অধিনায়ক হন, ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তাকে কর্নেল পদবীতে পদোন্নতি দিয়ে ১৬৭ ব্রিগেডের অধিনায়ক করা হয়।[১০] খুব শীঘ্রই তিনি ভারপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার হন এবং এমহাউয়ের পদাতিক বিদ্যালয়ের আদেশদানকারী প্রধান কর্মকর্তা হয়ে যান। ১৯৫৭ সালে তিনি ভারপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার থেকে প্রকৃত (স্থায়ী) ব্রিগেডিয়ার হন এবং ব্রিটেনে যান ইম্পেরিয়াল ডিফেন্স কলেজে অধ্যায়ন করতে।[১০][১১]
দেশে ফিরে এসে ২০ ডিসেম্বর ১৯৫৭ তারিখে শ্যাম ভারপ্রাপ্ত মেজর-জেনারেল হিসেবে ২৬তম ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) নিযুক্ত হন।[১২] তখন সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল কে এস থিমাইয়া। ১৯৫৯ সালের ১ মার্চ শ্যাম স্থায়ী মেজর-জেনারেল হন এবং স্টাফ কলেজ, তামিলনাড়ুতে প্রধান (আদেশদানকারী প্রধান কর্মকর্তা বা কমান্ড্যান্ট) হিসেবে যোগ দেন।[১৩]
১৯৬২ সালে শ্যাম ভারপ্রাপ্ত লেঃ জেনারেল হয়ে ৪র্থ কোরের কোর-কমান্ডার হন যেটার সদর আসাম প্রদেশের তেজপুরে ছিলো।[১৪] চীনের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধের পর জেনারেল শ্যাম এই কোরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন এবং সৈনিক সংখ্যা একেবারেই কম ছিলো এটা নিয়ে তিনি অনেক কথা বলেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধানের সাথে। ১৯৬৩ সালের ২০শে জুলাই শ্যাম স্থায়ী লেঃ জেনারেল হন।
১৯৬৯ সালে জেনারেল পরমশিব প্রভাকর কুমারমঙ্গল লেঃ জেনারেল শ্যামের নাম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেন যে শ্যাম খুব দক্ষ একজন সেনাপ্রশাসক এবং সৈনিক; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও তার অবদানের কথা বলা হয় যেখানে শ্যাম আহত হয়েছিলেন; সেনাপ্রধান হবার পূর্বে শ্যাম পশ্চিম সেনা কমান্ডের কমান্ডার ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ৮ জুন ইন্দিরা গান্ধী শ্যামকে সেনাপ্রধান ঘোষণা দেন।[১৫]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.