রাষ্ট্রকূট রাজবংশ
From Wikipedia, the free encyclopedia
রাষ্ট্রকূট রাজবংশ হল খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ থেকে দশম শতাব্দীতে ভারতে রাজত্বকারী একটি রাজবংশ। রাষ্ট্রকূটদের সবচেয়ে পুরনো যে লেখটি এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, সেটি হল সপ্তম শতাব্দীর। এই তাম্রলিপি থেকে জানা যায়, আধুনিক মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের মালওয়া অঞ্চলের মানপুর তাঁরা শাসন করতেন। অন্যান্য কয়েকটি লেখ থেকে সমসাময়িক আরও কয়েকটি রাষ্ট্রকূট শাসকগোষ্ঠীর উল্লেখ পাওয়া যায়। এঁরা হলেন অচলপুর (অধুনা মহারাষ্ট্র রাজ্যের এলিচপুর) ও কনৌজের রাজা। রাষ্ট্রকূটদের উৎপত্তি, আদি নিবাস ও ভাষা নিয়ে একাধিক বিতর্কিত মত প্রচলিত আছে।
মান্যখেতের রাষ্ট্রকূট ರಾಷ್ಟ್ರಕೂಟ | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
৭৫৩–৯৮২ | |||||||||
রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্যের বিস্তার, ৮৮-৯১৫ খ্রিস্টাব্দ | |||||||||
অবস্থা | সাম্রাজ্য | ||||||||
রাজধানী | মান্যখেত | ||||||||
প্রচলিত ভাষা | কন্নড় সংস্কৃত | ||||||||
ধর্ম | হিন্দু জৈন বৌদ্ধ | ||||||||
সরকার | রাজবংশ | ||||||||
মহারাজা | |||||||||
• ৭৩৫–৭৫৬ | দন্তিদূর্গ | ||||||||
• ৯৭৩–৯৮২ | চতুর্থ ইন্দ্র | ||||||||
ইতিহাস | |||||||||
• প্রাচীনতম রাষ্ট্রকূট নিদর্শন | ৭৫৩ | ||||||||
• প্রতিষ্ঠা | ৭৫৩ | ||||||||
• বিলুপ্ত | ৯৮২ | ||||||||
|
রাষ্ট্রকূট সম্রাটগণ (৭৫৩-৯৮২) | |
দন্তিদূর্গ | (৭৩৫ - ৭৫৬) |
প্রথম কৃষ্ণ | (৭৫৬ - ৭৭৪) |
দ্বিতীয় গোবিন্দ | (৭৭৪ - ৭৮০) |
ধ্রুব ধারাবর্ষ | (৭৮০ - ৭৯৩) |
তৃতীয় গোবিন্দ | (৭৯৩ - ৮১৪) |
প্রথম অমোঘবর্ষ | (৮১৪ - ৮৭৮) |
দ্বিতীয় কৃষ্ণ | (৮৭৮ - ৯১৪) |
তৃতীয় ইন্দ্র | (৯১৪ -৯২৯) |
দ্বিতীয় অমোঘবর্ষ | (৯২৯ - ৯৩০) |
চতুর্থ গোবিন্দ | (৯৩০ – ৯৩৬) |
তৃতীয় অমোঘবর্ষ | (৯৩৬ – ৯৩৯) |
তৃতীয় কৃষ্ণ | (৯৩৯ – ৯৬৭) |
কোট্টিগ অমোঘবর্ষ | (৯৬৭ – ৯৭২) |
দ্বিতীয় কর্ক | (৯৭২ – ৯৭৩) |
চতুর্থ ইন্দ্র | (৯৭৩ – ৯৮২) |
দ্বিতীয় তৈলপ (পশ্চিম চালুক্য) |
(৯৭৩-৯৯৭) |
এলিচপুরের শাসকরা ছিলেন বাদামি চালুক্যদের সামন্ত। দন্তিদূর্গের রাজত্বকালে চালুক্যরাজ দ্বিতীয় কীর্তিবর্মণকে পরাজিত করে অধুনা কর্ণাটক রাজ্যের গুলবার্গ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্য। ৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ভারতে রাষ্ট্রকূটরা প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়। সেই সময় থেকেই এঁদের মান্যখেতের রাষ্ট্রকূট বলা হত। এই সময়ই পূর্ব ভারতে বিহার-পশ্চিমবঙ্গের পাল রাজবংশ এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে মালওয়ার প্রতিহার রাজবংশ প্রভাব বিস্তার করেছিল। আরবি গ্রন্থ সিলসিলাতুত্তাভারিখ-এর (৮৫১) মতে, রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বের প্রধান চারটি সাম্রাজ্যের একটি।[1]
অষ্টম থেকে দশম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গাঙ্গেয় উপত্যকায় কনৌজের দখল নিয়ে উক্ত তিনটি প্রধান সাম্রাজ্যের সংঘাতবাধে। মান্যখেতের রাষ্ট্রকূটদের সাম্রাজ্য উত্তরে গঙ্গা-যমুনা দোয়াব অঞ্চল থেকে দক্ষিণে কুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল। রাজনৈতিক ক্ষমতার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্যে স্থাপত্য ও সাহিত্যেরও বিশেষ উন্নতি ঘটেছিল। প্রথম দিকের রাষ্ট্রকূট রাজারা ছিলেন হিন্দু। পরবর্তীকালে তাঁরা জৈনধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন।
রাষ্ট্রকূট শাসনকালে জৈন গণিতবিদ ও পণ্ডিতেরা কন্নড় ও সংস্কৃত ভাষায় বহু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এই সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা প্রথম অমোঘবর্ষ কবিরাজমার্গ নামে একটি বিখ্যাত কন্নড় গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। দ্রাবিড় স্থাপত্য রাষ্ট্রকূট রাজত্বে বিশেষ উন্নতি লাভ করেছিল। এই স্থাপত্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হল ইলোরা গুহার কৈলাসনাথ মন্দির (অধুনা মহারাষ্ট্র রাজ্যে), কাশীবিশ্বনাথ মন্দির ও জৈন নারায়ণ মন্দির (অধুনা কর্ণাটক রাজ্যে)। এই সবকটিই এখন ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।