রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বাঙালি সাহিত্যিক / From Wikipedia, the free encyclopedia
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এফআরএএস (৭ মে ১৮৬১ – ৭ আগস্ট ১৯৪১; ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ – ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)[1] ছিলেন একাধারে বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক।[2] তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়।[3] রবীন্দ্রনাথকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায় ভূষিত করা হয়।[4] রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ,[5] ৩৮টি নাটক,[6] ১৩টি উপন্যাস[7] ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন[8] তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প[9] ও ১৯১৫টি গান[10] যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে।[11] রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত।[12] এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন।[13] রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি প্রথম অ-ইউরোপীয় এবং প্রথম এশীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন।[14][15]
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | |
---|---|
জন্ম | (১৮৬১-০৫-০৭)৭ মে ১৮৬১ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) |
মৃত্যু | ৭ আগস্ট ১৯৪১(1941-08-07) (বয়স ৮০) জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) |
সমাধিস্থল | কলকাতা |
ছদ্মনাম | ভানুসিংহ ঠাকুর (ভণিতা) |
পেশা | |
ভাষা | বাংলা, ইংরেজি |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারতীয় |
সময়কাল | বঙ্গীয় নবজাগরণ |
সাহিত্য আন্দোলন | প্রাসঙ্গিক আধুনিকতা |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | গীতাঞ্জলি (১৯১০), রবীন্দ্র রচনাবলী, গোরা (১৯১০), আমার সোনার বাংলা, জনগণমন, ঘরে-বাইরে |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (১৯১৩) |
দাম্পত্যসঙ্গী | মৃণালিনী দেবী (বি. ১৮৮৩–১৯০২) |
আত্মীয় | ঠাকুর পরিবার |
স্বাক্ষর | |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[16][17][18][19] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতৃপুরুষের আবাসভূমি বাংলাদেশের খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার অন্তর্গত ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ গ্রামে।[20][21][22] বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।[23] আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন।ক[›][24] ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার "অভিলাষ" কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা।[25] ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান।[26] ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়।[26] ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন।[26] ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করেন।[27] ১৯০২ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয়।[27] ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।[27] ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে 'নাইট' উপাধিতে ভূষিত করেন।[27] কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।[28] ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।[29] ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়।[30] দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন।[29] ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তার মৃত্যু হয়।[31]
রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা।[32] রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক।[33] ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তার রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল।[34] কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন।[35] সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র মানুষ কে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন।[36] এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।[37] রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন।[38] সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন।[39] রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি।[40] তার রচিত জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ও আমার সোনার বাংলা গানদুটি যথাক্রমে ভারত প্রজাতন্ত্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।[41] মনে করা হয় শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত শ্রীলঙ্কা মাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হয়ে লেখা হয়েছে।[42][43][44][45][46]