Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
১৯৪৮ সাল থেকে মিয়ানমারে বিদ্রোহ চলছে। বার্মা নামের এ দেশটি যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। সংঘর্ষটি মূলত জাতি ভিত্তিক, বেশ কয়েকটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী তাতমাডোর সাথে নিজ নিজ অঞ্চল স্বাধীন নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। ২০০৮ সালে অসংখ্য যুদ্ধবিরতি এবং স্বায়ত্তশাসিত স্ব-শাসিত অঞ্চল তৈরি করা সত্ত্বেও, অনেক সশস্ত্র গোষ্ঠী স্বাধীনতা, স্বায়ত্তশাসন বৃদ্ধি বা দেশের ফেডারেলাইজেশনের জন্য আহ্বান জানিয়ে চলেছে। সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে এই সংঘাতটি বিশ্বের দীর্ঘতম চলমান গৃহযুদ্ধ। [5] [6] [7]
মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
| |||||||
Combatants | |||||||
State Administration Council Supported by:
Former combatants:
|
National Unity Government
| ||||||
জড়িত ইউনিট | |||||||
Full list | Full list | ||||||
শক্তি | |||||||
৪,০৬,০০০[2] | Total number of fighters unknown[lower-alpha 5] | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
১,৬০,০০০+ হত্যাযজ্ঞ[lower-alpha 6] ৬,০০,০০০–১০,০০,০০০ বাস্তুচূত্য |
১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে একদল তরুণ বার্মিজ বুদ্ধিজীবী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক বিরোধী সংগ্রামের প্রস্তুতি হিসেবে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য জাপান গমন করে। [8] এই দলটি ত্রিশ কমরেড নামে পরিচিত। ১৯৪১ সালে বার্মায় ফিরে তারা মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বার্মা ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (বিআইএ) প্রতিষ্ঠা করে। [8] [9] ১৯৪২ সালে রেঙ্গুন দখল করে জাপানিরা একটি পুতুল রাষ্ট্র বার্মা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে এবং বিআইএ-কে এ রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী করে বার্মা ন্যাশনাল আর্মি (বিএনএ) হিসাবে পুনর্গঠিত করে। [8] তৎকালীন বার্মা রাজ্যের নেতা এবং ত্রিশ কমরেডদের একজন অং সান সময়ের সাথে সাথে যুদ্ধে জয়লাভ করার জাপানের সক্ষমতা নিয়ে ক্রমশ সন্দিহান হয়ে পড়ে এবং ১৯৪৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি পক্ষ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন। [8] জাপানি বাহিনী ১৯৪৫ সালের জুলাইয়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করে এবং ব্রিটিশরা অং সান এবং অন্যান্য বিশিষ্ট বার্মিজ নেতাদের সাথে বার্মার স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা শুরু করে। [9]
বার্মিজ স্বাধীনতার পূর্বে অং সান চিন, কাচিন এবং শান নেতাদের সাথে আলোচনা করেন এবং তাদের মধ্যে প্যাংলং চুক্তি হয়। চুক্তিটি তিনটি জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি দেয় যা স্বাধীনতার দশ বছর পর বার্মা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিকল্প হিসেবে গৃহীত পদক্ষেপ বা সুবিধা। [8] যাইহোক, অং সানকে কিছুকাল পরেই হত্যা করা হয় এবং প্যাংলং চুক্তিটি উ নু-র স্বাধীনতা-উত্তর সরকার দ্বারা গৃহিত হয়নি। [10] যা বামার জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং দেশের অনেক জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। [11]
৪ জানুয়ারী ১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বার্মার স্বাধীনতার পর দেশের দুটি বৃহত্তম বিরোধী দল ছিল কমিউনিস্ট, যার নেতৃত্বে ছিল বার্মা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি-বামার জাতীর) এবং কারেন জাতীয়তাবাদীদের নেতৃত্বে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ)। [9] [12]
স্বাধীনতার পর ক্রান্তিকালে প্রাথমিকভাবে শান্ত ছিল। কিন্তু ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিপিবি পেগু অঞ্চলের (বর্তমান বাগো অঞ্চল ) পাউককংগিতে সংঘর্ষের প্রথম গুলি চালায়। ১৯৪৯ সালে সিপিবি এর সর্বোচ্চ ১৫,০০০ যোদ্ধা ছিল। [13]
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কেএনইউ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে ছিল যা কারেন জনগণ দ্বারা শাসিত। প্রস্তাবিত রাষ্ট্রটি লোয়ার বার্মার (বাইরের মায়ানমার) কারেন রাজ্য এবং কারেননি রাজ্য (বর্তমান কায়িন রাজ্য এবং কায়াহ রাজ্য ) এর অঞ্চলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করবে। পরে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন তাদের দৃষ্টি সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থেকে সরকারে ন্যায্য কারেন প্রতিনিধিত্বসহ একটি ফেডারেল ব্যবস্থার অধীনে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দিকে স্থানান্তরিত করে । [14]
পরপর তিনটি সংসদীয় সরকার মিয়ানমারকে শাসন করার পর জেনারেল নে উইন এর নেতৃত্বে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ২রা মার্চ ১৯৬২ সালে একটি সেনা অভ্যুত্থান ঘটায়। যা সংসদীয় সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং সামরিক জান্তা শাসন শুরু করে। পরবর্তীতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয় এবং সংসদীয় সরকারের মন্ত্রিসভা ও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়। [15] এই সময়ের কাছাকাছি সময়ে অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলি বৃহত্তর বিদ্রোহী দল গঠন করতে শুরু করে। যেমন: কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি, নতুন সরকারের একটি ফেডারেল ব্যবস্থা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোর প্রতিক্রিয়ায়।
১৯৬৩ সালে নে উইনের সরকারের সাথে ব্যর্থ শান্তি আলোচনার পর অনেক বিদ্রোহী কমিউনিস্ট এবং জাতিয়তাবাদী গোষ্ঠী "জনযুদ্ধ" এর মাওবাদী ধারণাকে গ্রহণ করে। সিপিবি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল এবং চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রতিলিপি করেছে। [8] [16] সিপিবির চীনা মিত্রদের অনুকরণকে অনেক বার্মিজরা চীনের মাধ্যমে বার্মিজ বিষয়ে অনুপ্রবেশের একটি প্রচেষ্টা হিসাবে দেখে। এ অনুভূতি বার্মাকে ১৯৬৭ সালের চীন বিরোধী দাঙ্গার দিকে পরিচালিত করে। দাঙ্গার সময় ৩১ জন চীনা বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করা হয় এবং চীনের মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। [17]
দুই সেনা শাসনামলে একবার আটক রাখার সময় এবং পরে ১৯৭২ সালে নে উইন বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে শান্তি আলোচনা করেন। কিন্তু উভয় সময়ই তারা সির্ধান্তহীন এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এটি আংশিকভাবে নে উইনের একটি ফেডারেল বহু-দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অস্বীকার করার কারণে। সমঝোতা ব্যর্থ হওয়ার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী থেকে দলত্যাগকারীরা এবং জাতিগত বিদ্রোহীরা তাদের ঘাঁটিতে ফিরে যায়। যার শিরোনাম ছিল মায়ানমার জুড়ে বিখ্যাত লেখা ছিল "তারা ফিরে গেছে" সরকার কর্তৃক তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং বার্মিজ সোশ্যালিস্ট প্রোগ্রাম পার্টি (বিএসপিপি) ১৯৭৪ সালে একদলীয় ব্যবস্থার অধীনে দেশ পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। নে উইনের ২৬ বছরের একনায়কত্বে মিয়ানমার একটি বিচ্ছিন্ন সন্ন্যাসী রাজ্যে পরিণত হয় এবং বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলির কাতারে চলে যায়। ১৯৮৮ সালে দেশব্যাপী ছাত্র বিক্ষোভের ফলে বিএসপিপি এবং নে উইনকে ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং একটি নতুন সামরিক শাসন স্টেট পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ ছাত্ররা রেঙ্গুনে (বর্তমান ইয়াঙ্গুন) নে উইনের সর্বগ্রাসী শাসন এবং তার বার্মা সোশ্যালিস্ট প্রোগ্রাম পার্টি (বিএসপিপি)-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। [18] বিক্ষোভ দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিএসপিপি সরকারকে বহুদলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাপ দেওয়া হয়। [19] ১৯৮৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একটি সামরিক অভ্যুত্থানে বিএসপিপি সরকার উৎখাত হয়। সামরিক বাহিনী তখন স্টেট ল অ্যান্ড অর্ডার রিস্টোরেশন কাউন্সিল (এসএলওআরসি) প্রতিষ্ঠা করে এবং প্রতিবাদকারীদের উপর সহিংসভাবে দমন-নিপীড়ন শুরু করে। ১৯৮৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমস্ত বিক্ষোভের লাগাম টেনে ধরে। [20]
মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ দাবি করে প্রায় ৩৫০ জন নিহত হয়। [21] [22] যেখানে বিরোধী দল দাবি করেছে সামরিক বাহিনীর হাতে বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। [23] [24] [25] দ্য ইকোনমিস্টের মতে, বিক্ষোভে ৩,০০০ জনের বেশি মানুষ নিহত। [26] ৮৮৮৮-এর বিদ্রোহের সহিংস দমন সত্ত্বেও নতুন সামরিক জান্তা বিক্ষোভ বন্ধ হওয়ার পরে কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়।
অং সান সু চি ৮৮৮৮-এর বিদ্রোহ থেকে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হন।তিনি দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) এর নেতৃত্ব দেন। সামরিক জান্তা ১৯৯০ সালে একটি সংসদীয় সাংবিধানিক কমিটির সদস্যদের নির্বাচন করতে একটি সাধারণ নির্বাচন ব্যবস্থা করে যার মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণীত হবে। এনএলডি আসনগুলির একটি বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা জিতে। কিন্তু সামরিক জান্তা ফলাফলে বিস্মিত হয়ে ফলাফলগুলি স্বীকার করতে অস্বীকার করে এবং অং সান সু চিকে গৃহবন্দী করে। [27] [28]
১৯৯০ সালের নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করার পর সামরিক জান্তা মিয়ানমারের উপর তাদের শাসনকে সুসংহত করে। এসএলওআরসি ১৯৯৭ সালে বিলুপ্ত করা হয় এবং রাজ্য শান্তি ও উন্নয়ন কাউন্সিল (এসপিডিসি) দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যার মধ্যে এগারোজন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা ছিল। [29]
৯০-এর দশকে মিয়ানমার সেনাবহিনী জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে তাদের মারাত্মকভাবে দুর্বল করে তাদের বেশিরভাগ ঘাঁটি এবং দুর্গ ধ্বংস করে। [30]
২০০৬ সালে মিয়ানমার কাচিন এর সশস্ত্র শাখা কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (কেএনএলএ) এর বিরুদ্ধে একটি বড় আকারের সামরিক আক্রমণ শুরু করে। সংঘর্ষের ফলে ঐ রাজ্যের কয়েক লাখ বেসামরিক লোক বাস্তুচ্যুত হয়। অনুমান অনুসারে সরকারী বাহিনী এবং কেএনএলএ মধ্যেকার লড়াইয়ের কারণে এবং সরকার কর্তৃক জোরপূর্বক গ্রাম স্থানান্তরের কারণে প্রায় অর্ধনিযুত লোক বাস্তুচ্যুত হয়। [31] [32]
২০০৭ সালে কয়েক হাজার ভিক্ষু সামরিক জান্তার শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এবং অবাধ নির্বাচন, সংখ্যালঘু অধিকার এবং রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির আহ্বান জানায় যা এখন জাফরান বিপ্লব নামে পরিচিত। [33] সিএনজি প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য সরকার কর্তৃক ভর্তুকি অপসারণের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদটি মূলত শুরু হয়। [34]
২০০৯ সালে জান্তা বাহিনী কোকাং আক্রমণ করে। যার ফলে এমএনডিএএ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং প্রায় ৩০,০০০ শরণার্থী প্রতিবেশী চীনের ইউনানে পালিয়ে যায়। [35]
২০১০ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ডিকেবিএ-৫ এর সাথে সহিংস সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। যার ফলে প্রায় ১০,০০০ শরণার্থী হিংসাত্মক সংঘাত থেকে বাঁচতে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যায়।
সরকার ২০০৮ সালে একটি নতুন সংবিধান প্রবর্তন করে এবং ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত রাজনৈতিক সংস্কারের সময়কালের আশ্বাস দেয়। অং সান সু চি সহ হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের সংবিধান ছয়টি জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য পাঁচটি স্বায়ত্তশাসিত স্ব-শাসিত অঞ্চল এবং একটি স্ব-শাসিত বিভাগ তৈরি করে। [36] ২০১৪ সালের নভেম্বরে এনএলডি সংবিধানে সংশোধনী আনার চেষ্টা করে। এ ধারার প্রতিক্রিয়ায় অং সান সু চিকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি হওয়ার অযোগ্য করে তোলে যদি তার দল নির্বাচনে জয়ী হয়। যদিও এই সংশোধনীগুলি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। [37]
২০১৩ সালে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে বড় ধরনের মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতা সায়াদাউ ইউ উইরাথুর নেতৃত্বে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী ৯৬৯ আন্দোলনের উত্থানের সাথে মিলে যায়। [38]
২০১৫ সালে রাজনৈতিক সংস্কারের সমাপ্তির পর সরকার সংঘাতের অবসানের আশায় বেশ কয়েকটি শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করা শুরু করে। এই প্রচেষ্টাগুলি যুদ্ধবিরত গোষ্ঠীগুলির দ্বারা আনা প্রধান প্রস্তাবগুলিকে সুরাহা না করার জন্য এবং দেশের বৃহত্তম বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে বাদ দেওয়ার জন্য সমালোচিত হয় ৷ [39] [40] সরকারের সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছেন যে মিয়ানমারের বর্তমান সংবিধান সামরিক বাহিনীকে অত্যধিক ক্ষমতা প্রদান করে এবং যা দেশটির শান্তি ও গণতান্ত্রিক সংস্কার অর্জনে বাধা[41] [42] সেনাবাহিনীর ভূমিকা বিরোধীতা দরুণ সূ চি সরকারের অনেক রাজনীতিবিদ ও কর্মীকে হত্যা করা হয়। যেমন: সাংবিধানিক আইনজীবী কো নি হত্যা, যিনি সামরিক প্রভাব কমানোর জন্য রাজনৈতিক সংস্কারের আহ্বান জানানোর পর তাকে হত্যা করা হয়। [43]
শান রাজ্যে ২০১৫ সালের কোকাং আক্রমণের সময় সামরিক বাহিনী এমএনডিএএ-এর সাথে জড়িত ছিল।
৯ অক্টোবর ২০১৬-এ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বার্মিজ সীমান্ত চৌকিতে প্রথম আক্রমণ শুরু করে। এতে নয়জন সীমান্ত অফিসার নিহত হয়। [44] এটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে উত্তর রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক "ক্লিয়ারেন্স অপারেশন" শুরু করতে অনুপ্রাণিত করে। যা ২৫ আগস্ট ২০১৭-এ আরসা কর্তৃক দ্বিতীয় বৃহৎ আকারের আক্রমণের পর তীব্রতর হয়। [45] [46] [47] পরবর্তী সহিংসতা আন্তর্জাতিক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এটিকে জাতিগত নির্মূল হিসাবে বর্ণনা করেছে। [48] [49]
২০১৬ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে চারটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত হয় উত্তর জোট।এগুলো হচ্ছে আরাকান আর্মি (এএ), কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)। উত্তর শান রাজ্যের মিউজ টাউনশিপে চীন-মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর শহর ও সীমান্ত চৌকিতে হামলা করে। [50] [51] বিদ্রোহীরা ২৫ নভেম্বর ২০১৬-এ মং কো শহর দখল করে [52] এবং মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর বিমান হামলায় বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে ৪ ডিসেম্বর ২০১৬ এ শহর থেকে সরে না যাওয়া পর্যন্ত এর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। [53] [54]
১৫ আগস্ট ২০১৯-এ উত্তর জোট বিদ্রোহীরা নাওংঘকিও টাউনশিপের একটি সামরিক কলেজে হামলা করে ১৫ জন হত্যা করে। [55] [56] [57] [58] পরের দিনগুলিতে আরও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। [59] [60] [61] [62] মিয়ানমারের সামরিক সতর্কতা করে যে উত্তর জোট তাদের আক্রমণ বন্ধ না করলে শান রাজ্যে একটি "পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ" হতে পারে। [63]
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারী ভোরে এনএলডি’র নেতৃত্বের বেসামরিক সরকারকে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে উৎখাত করে মিয়ানমার সেনাবহিনী-এর কমান্ডার-ইন-চীফ, সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং রাষ্ট্রের প্রধান হন। অভ্যুত্থানের সময় অং সান সু চি এবং তার সরকারের অনেক সিনিয়র সদস্যকে সামরিক বাহিনীর গ্রেফতার করে। [64] মিন অং হ্লাইং এবং নবনির্মিত স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল (এসএসি) এর পদত্যাগ, অভ্যুত্থানে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি এবং বেসামরিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভকারীরা ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে। [65]
অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভকারীরা নিজেদেরকে গুলতি, মোলোটভ ককটেল এবং অস্থায়ী ঢাল দিয়ে সজ্জিত করে প্রতিবাদ করতে থাকে। [66] ২০২১ সালের মার্চের শেষের দিকে জানা গেছে যে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী দেশটির অনেক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটির অধীনে প্রশিক্ষণ নিতে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় ভ্রমণ করেছিল যা দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে। [67] নির্বাসিত বেসামরিক সরকার পাইডাংসু হুলুটাও (সিআরপিএইচ) প্রতিনিধিত্বকারী কমিটি সামরিক বাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য একটি "ফেডারেল সশস্ত্র বাহিনী" গঠনের প্রস্তাব করে। [66]
প্রতিবাদকারীদের সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রথম দৃষ্টান্তগুলির মধ্যে একটি সাগাইং অঞ্চলের কালে শহরে এবং এর আশেপাশে ঘটে। ২০২১ সালের ২৮ শে মার্চ মিয়ানমার সেনাবহিনী কালেতে একটি প্রতিবাদ শিবিরে অভিযান চালানোর পর প্রতিবাদকারীরা পশু শিকারের রাইফেল এবং ঘরোয়া প্রস্তুতকৃত আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে লড়াই করে । [68] বেশ কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী বিশেষ করে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি এবং কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মিও অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ পুনরায় শুরু করে বা বাড়ায়। [69] [70]
২০২১ সালের ৪ এপ্রিলে দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতি চুক্তির সাতটি স্বাক্ষরকারী ঘোষণা করে যে তারা অল বার্মা স্টুডেন্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এবং কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন সহ জাতীয় ঐক্য সরকারে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। [71] জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে কিছু গোষ্ঠী আবার শত্রুতা শুরু করে।
চিন রাজ্যের মিন্দাত এবং হাখায় চিনল্যান্ড প্রতিরক্ষা বাহিনী ২০২১ সালের ২৬শে এপ্রিল একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু করে। [72]
২০২১ সালের ৫ মে তারিখে জাতীয় ঐক্য সরকার একটি সশস্ত্র শাখা, পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) সামরিক জান্তা আক্রমণ থেকে নিজ অনুসারীদের রক্ষা করার জন্য এবং একটি ফেডারেল ইউনিয়ন সেনাবাহিনীর দিকে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ঘোষণা করে। [73] এটি ২৩শে মে মিউজ শহরে সেনাবহিনীর সাথে সংঘর্ষে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কমপক্ষে ১৩ সদস্য নিহত হয়। [74] [75] কায়াহ রাজ্যের কারেনি পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (কেপিডিএফ) সদস্যরাও রাজ্যের রাজধানী লোইকাওর কাছে সেনাবহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। [76] [77]
মিয়ানমারের কমিউনিস্ট পার্টি নিজেকে পুনরায় সজ্জিত করেছে এবং ২০২১ সালের শেষের দিকে তাদের নতুন সশস্ত্র শাখা পিপলস লিবারেশন আর্মি গঠনের ঘোষণা দেয়। [78] [79]
এসিএলইডি অনুমান করেছে যে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে। [80]
ভারতের মিজোরামের মিজো, মিয়ানমারের চিন ও কুকি জনগণ জো জনগোষ্ঠী যাদের একটি অভিন্ন সংস্কৃতি ও ইতিহাস।
১৯৬০ সালে চিন অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিকে একীভূত করার জন্য চিন লিবারেশন আর্মি তুন খো পুম বাইতে দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আর মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) মিজো স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে। চিন ন্যাশনাল আর্মি (সিএনএফ) ১৯৮৮ সালে গঠিত হয়। এটি ২০১২ সালে চিন রাজ্য সরকারের সাথে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে। কুকি ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) ১৯৮৮ সালে মিয়ানমার এবং ভারতে কুকি স্বায়ত্তশাসন তৈরির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়।
উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীও মিয়ানমারে ঘাঁটি ঘেঁটে কাজ করে। যেমন: জোমি রেভল্যুশনারি আর্মি, ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (উলফা) এবং ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ড (এনএসসিএন)। এই দলগুলো প্রায়ই নিয়ন্ত্রণহীন সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করে। [81]
২০১৬ সালের জুন মাসে মিয়ানমার সৈন্যরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয় করে সাগাইং অঞ্চলের নাগা স্ব-শাসিত অঞ্চলে তাগাতে এনএসসিএন সদর ঘাঁটিতে অভিযান চালায়। [82]
কাচিন জনগণ মিয়ানমারের একটি প্রধান জাতিগত সংখ্যালঘু যারা প্রধানত কাচিন রাজ্যের কাচিন পাহাড়ের পার্বত্য উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে। কাচিন নিয়মিত সৈন্যরা পূর্বে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালে নে উইনের শাসন ক্ষমতা দখলে কাচিন সৈন্য সামরিক বাহিনী ত্যাগ করে এবং কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স অর্গানাইজেশন (কেআইও) এর অধীনস্থ কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) গঠনের জন্য পূর্বের সক্রিয় কাচিন বিদ্রোহীদের সাথে একত্র হয়। এখানে ধর্মীয় উত্তেজনাও সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ কাচিন জনগণ ঐতিহাসিকভাবে খ্রিস্টান প্রধান আর সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার জনগণ প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। [83]
কেআইএ ও সরকারের মধ্যে বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯৪৪ সালে স্বাক্ষরিত একটি যুদ্ধবিরতি। যা ২০১১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১৭ বছর কার্যকর ছিলো। জুন মাসে সরকারি বাহিনী কাচিন রাজ্যের ভামোর পূর্বে টেপিং নদীর তীরে কেআইএ অবস্থানে আক্রমণ করেছিল। [84] যুদ্ধবিরতি ভাঙার ফলে কাচিন রাজ্য অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির তরঙ্গের মুখোমুখি হয়। ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১৫০টিরও বেশি শিবির বা ক্যাম্প এর মত করে ৯০,০০০ এরও বেশি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত লোক রয়েছে। অনেক আইডিপি ক্যাম্প বেসরকারী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অবস্থিত যেখানে প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে সীমিত। [85] ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) অনুমান করে যে ২০১৮ সালের এপ্রিল এবং মে মাসে কেআইএ এবং মিয়ামার সেনাবাহিনী মধ্যেকার লড়াইয়ে থেকে ১৪,০০০ জনেরও বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়। [86]
২০১২ সালে কেআইএ ও মিযানমার সেনাবহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে প্রায় ২,৫০০ জন বেসামরিক এবং সামরিক মানুষ নিহত হয়। যাদের মধ্যে মাত্র ২১১ জন সরকারি সৈন্য ছিল। সহিংসতায় প্রায় ১,০০,০০০ বেসামরিক লোক বাস্তুচ্যুত হয় এবং ৩৬৪টি গ্রাম সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিত্যক্ত হয়। [87] [88] [89] [90] [91]
২০১৪ সালের ১৯শে নভেম্বর সরকারী বাহিনী লাইজা শহরের কাছে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মির সদর দপ্তরে আক্রমণ করে। সরকারের অনুসারে কমপক্ষে ২২ জন কেআইএ বিদ্রোহীকে হত্যা করে। [92]
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এন'বান লা কেআইওর চেয়ারম্যান এবং কেআইএর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হন। Htang Gam Shawng কেআইএর কমান্ডার-ইন-চিফ হিসাবে তার অবস্থানে থাকে। [93]
১০৫৭ সালে কারেন্নি রাজ্যে (বর্তমান কায়াহ রাজ্য ) স্বাধীনতাপন্থী দলগুলি কারেনি ন্যাশনাল প্রগ্রেসিভ পার্টি (কেএনপিপি ) প্রতিষ্ঠা করে।এটি একটি সহগামী সশস্ত্র শাখা যেটি কারেনি আর্মির। কারেনি জনগণের স্ব-নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করার কিছু পরেই প্রতিষ্ঠিত হয়। [94] ১৯৯৫ সালে সংক্ষিপ্ত তিন মাসের যুদ্ধবিরতি ছাড়াও কারেনি আর্মি এবং মিয়ানমার সেনা অধ্যুষিত এই অঞ্চলে যুদ্ধ করেছে। [95] কেএনপিপির প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে রয়েছে বামপন্থী কায়ান নিউ ল্যান্ড পার্টি (কেএনএলপি) এবং কারেনি ন্যাশনাল পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (কেএনপিএলএফ)। যারা উভয়েই ১৯৯০ এর দশকে সরকারের সাথে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর করেছিল। [96] [97]
সরকারের প্রতি কারেনি আর্মির বিবৃত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে
কারেনি আর্মি বর্তমানে জেনারেল বি হটুর নেতৃত্বে মোটামুটি ৫০০ [94] এবং [98][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] থেকে ১,৫০০ সৈন্য আছে। [99]
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পরে বেসামরিক নেতৃত্বাধীন কারেনি পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (কেপিডিএফ) উত্তর কায়াহ রাজ্যে একটি নতুন ফ্রন্ট চালু করার সাথে সাতে দ্বন্দ্ব বাড়ে। সরকার সৈন্যরা এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রাম আক্রমণ ও পুড়িয়ে দেওয়ার পর, কেপিডিএফ যোদ্ধারা সরকারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। বেশ কয়েকটি সামরিক ফাঁড়ি দখল ও ধ্বংস করে। [100]
পূর্ব মিয়ানমারের কায়িন রাজ্যের (পূর্বে কারেন রাজ্য) কারেন জনগণ মিয়ানমারের তৃতীয় বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭% । কারেন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি ১৯৪৯ সাল থেকে স্বাধীনতা এবং স্ব-নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। ১৯৪৯ সালে কারেন বিরোধী গোষ্ঠীর উত্থানে জাতিগত উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। মিয়ানমার সেনাবহিনী থেকে জেনারেল স্মিথ ডানের কমান্ডার-ইন-চিফ, একজন জাতিগত কারেনকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তার স্থলাভিষিক্ত হন নে উইন, একজন বামার জাতীয়তাবাদী যিনি পরবর্তীতে একজন সামরিক স্বৈরশাসক হিসেবে মিয়ানমার শাসন করবেন। [8]
মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে অতীতে কারেন বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে " ঝলসানো মাটি " কৌশল ব্যবহার করার অভিযোগ আনা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে
আইনি সংস্থা ডিএলএ পাইপারের একটি প্রতিবেদন অনুসারে যে প্রতিবেদন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও উপস্থাপন করা হয়েছিল এই যে ক্যারেনের বিরুদ্ধে এই কৌশলগুলিকে জাতিগত নির্মূল হিসাবে চিহ্নিত করা যাবে। সরকার অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে। [102]
কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) এবং এর সশস্ত্র শাখা কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (কেএনএলএ) এর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কারেন জনগণের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরি করা। ১৯৭৬ সালের পর থেকে তারা নীতি পরিবর্তন করে ন্যায্য কারেন প্রতিনিধিত্ব এবং কারেন জনগণের স্ব-নিয়ন্ত্রণ সহ একটি ফেডারেল ইউনিয়নের আহ্বান জানায়। [14]
১৯৫৫ সালে কেএনইউর প্রধান সদর দপ্তর এবং অপারেটিং ঘাঁটিগুলি বেশিরভাগই সরকার দ্বারা ধ্বংস বা দখল করা হয়। কেএনএলএকে কেইন রাজ্যের জঙ্গলের দিকে সরতে বাধ্য করে। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত থাই সরকার মায়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্ত জুড়ে বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছিল। কিন্তু পরে মিয়ানমারের সাথে একটি নতুন বড় অর্থনৈতিক চুক্তির কারণে তাদের সমর্থন বন্ধ করে দেয়। [103]
কেএনইউ মিয়ানমার সরকারের সাথে ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর তারিখে অন্যান্য সাতটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতি চুক্তি (এনসিএ) স্বাক্ষর করে। [104] ২০১৮ সালের মার্চ মাসে মিয়ানমার সরকার দুটি সামরিক ঘাঁটি সংযোগকারী একটি রাস্তা নির্মাণের জন্য কেএনইউ অধিকৃত অঞ্চলে ৪০০ সৈন্য পাঠিয়ে চুক্তি লঙ্ঘন করে। [105] এইচপাপুন জেলার লার মু প্লা এলাকায় কেএনইউ এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ শুরু হয়। যার ফলে ২,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। [106] ২০১৮ সালের ১৭মে মিযানমার সেনাবহিনী তাদের রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প "সাময়িকভাবে স্থগিত" করতে এবং এলাকা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়। [107]
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর কেএনইউ মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে পুনরায় লড়াই শুরু করে। ২০২১ সালে ২৭শে এপ্রিল কেএনইউ বিদ্রোহীরা সালভিন নদীর পশ্চিম তীরে একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করে। এটি থাইল্যান্ড-মিয়ানমারের সীমান্ত। মিযানমার সেনাবহিনী পরে কেএনইউ অবস্থানে বিমান হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নেয়। তবে উভয় পক্ষের কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। [70]
১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে প্রাথমিকভাবে মোন পিপলস ফ্রন্টের অধীনে ১৯৬২ সাল থেকে নিউ মন স্টেট পার্টি (এনএমএসপি) এর মাধ্যমে মোন জনগণ স্ব-নিয়ন্ত্রণ চায়। । মোন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (এমএনএলএ) ১৯৪৯ সাল থেকে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে। এটি ২০১৫ সালে দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতি চুক্তি (এনসিএ) স্বাক্ষর করে এবং কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (কেএনএলএ) এর সাথে ছোটখাটো সংঘর্ষেও লিপ্ত হয়।
রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী (সাবেক আরাকানি), [108] চিন [109] এবং রোহিঙ্গা [110] জাতিগত সংখ্যালঘুরা ১৯৫০ এর দশকের শুরু থেকে রাখাইন রাজ্যে স্ব-নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ১৯৭৮ সালে মিয়ানমার সেনাবহিনীর কাছে পরাজয়ের আগ পর্যন্ত অঞ্চলটি লাল পতাকা কমিউনিস্ট পার্টির একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল।১৯৯০ সাল পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহ চালিয়ে যায় এর উত্তরসূরি আরাকান কমিউনিস্ট পার্টি । [111]
জাতিগত রাখাইন বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যেমন: আরাকান আর্মি এবং আরাকান লিবারেশন আর্মি (এএলএ), সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও রাজনৈতিক সংস্কার এবং শান্তি আলোচনার পর থেকে বড় ধরনের সহিংসতা বিরল।[কখন?] ] ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আরাকান আর্মি বর্তমানে রাখাইন রাজ্যের সবচেয়ে বড় বিদ্রোহী দল। যাদের প্রায় ৭,০০০ সৈন্য রয়েছে। [112]
২০১৯ সালে ৪ঠা জানুয়ারী প্রায় ৩০০ আরাকান আর্মি বিদ্রোহীরা উত্তর বুথিদাউং টাউনশিপে চারটি সীমান্ত পুলিশ ফাঁড়ি - কিয়াং তাউং, এনগা মিন তাও, কা হেটি লা এবং কোন মিন্ট এ ভোররাতে আক্রমণ করে। এতে [113] বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর ১৩ সদস্য নিহত হয় এবং নয়জন আহত হয়। [114] [115] [116] আরাকান আর্মি ৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১০,০০০ রাউন্ডের বেশি গোলাবারুদ লুট করে। আরাকান আর্মি পরে বলেছে যে তারা ৯জন বিজিপি সদস্য এবং পাঁচজন বেসামরিক নাগরিককে বন্দী করে এবং তাদের তিনজন যোদ্ধাও হামলায় নিহত হয়। [117] [118]
এ হামলার পর মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারী তারিখে রাজধানী নেপিডোতে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক হয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয় যেসব এলাকায় আক্রমণ করা হয়েছে সেসব এলাকায় সেনা মোতায়েন বাড়াতে এবং প্রয়োজনে বিমান ব্যবহার করার জন্য। [119] মিয়ানমার আর্মি এবং আরাকান আর্মির মধ্যে পরবর্তী সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে মংডু, বুথিদাউং, কিউকতাও, রাথেদাউং এবং পোন্নাগিউন টাউনশিপে। যার ফলে ৫,০০০ এরও বেশি বেসামরিক লোককে বেশিরভাগই রাখাইন এবং খামি জনগোষ্ঠীকে তাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। [120] [121] সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া,[122] বেসামরিক হতাহত, [123] [124] নির্বিচারে মারধর [125] এবং জাতিগত রাখাইনদের আটক, [126] জোরপূর্বক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, [127] এবং তাতমাডো কর্তৃক খাদ্য সহায়তা ও চিকিৎসা ত্রাণে বাধা দেওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। [128]
রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা ১৯৪৮ সাল থেকে উত্তর রাখাইন রাজ্যে স্থানীয় সরকারী বাহিনী এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।যা প্রধানত মুসলিম রোহিঙ্গা এবং বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যে চলমান ধর্মীয় সহিংসতা-সংঘাতের ইন্ধন।
মিয়ানমারের স্বাধীনতার পর রোহিঙ্গা মুজাহিদিনরা রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানে সংযুক্ত করার প্রয়াসে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। ১৯৪৯ এবং ১৯৫৪ সালের মধ্যেকালে বার্মিজ সামরিক বাহিনী এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য বেশ কয়েকটি অভিযান চালায়। ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে মুজাহিদিনরা তাদের বেশিরভাগ গতি এবং সমর্থন হারিয়ে ফেলেছিল এবং তাদের বেশিরভাগ যোদ্ধা ১৯৬১ সালের মধ্যে আত্মসমর্পণ করেছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
নে উইনের শাসনামলে সামরিক জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের প্রতি ক্রমশ বৈরী হয়ে ওঠে। আরাকান থেকে বিদ্রোহীদের এবং তথাকথিত "বিদেশিদের" বিতাড়নের জন্য কর্তৃপক্ষ বড় আকারের সামরিক অভিযান শুরু করে। যেমন: ১৯৭৮ সালে অপারেশন ড্রাগন কিং এবং ১৯৯১ সালের অপারেশন পি থায়া [129]
রোহিঙ্গা জনগণের আইনি ও রাজনৈতিক অধিকার একটি অন্তর্নিহিত সমস্যা ছিল যার ফলে পর্যায়ক্রমে ঘটেছিল ২০১২ সালের রাখাইন রাজ্যের দাঙ্গা এবং ২০১৩ সালের মিয়ানমারের মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার মতো স্বতঃস্ফূর্ত সহিংসতা-সংঘাত। রাখাইন রাজ্যের তিনটি উত্তরাঞ্চলীয় জনপদে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা প্রায়ই ধর্মীয়ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়।[110] ১৯৮২ সালের জাতীয়তা আইন রোহিঙ্গাদের একটি স্থানীয় জাতিগত গোষ্ঠী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। [129] ফলস্বরূপ, রোহিঙ্গারা বার্মিজ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারে না এবং তাদের অধিকার থেকে রক্ষার জন্য কয়েকটি আইন বিদ্যমান। [130]
২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর অজ্ঞাত বিদ্রোহীরা বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সীমান্তে তিনটি বার্মিজ সীমান্ত চৌকিতে আক্রমণ করে উত্তর রাখাইন রাজ্যে একটি নতুন সশস্ত্র সংঘর্ষ শুরু করে। সীমান্তবর্তী শহর মংডুতে সরকারি কর্মকর্তাদের মতে হামলাকারীরা সীমান্ত চৌকি থেকে কয়েক ডজন আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে এবং তারা ছুরি ও ঘরে তৈরি গুলতি মেটাল ধাতব বোল্ট দিয়ে হামলা করেছিল। হামলায় নয়জন সীমান্ত কর্মকর্তা এবং "বেশ কিছু বিদ্রোহী" নিহত হয়। [44] ২০১৬ সালের ১১ অক্টোবর যুদ্ধের তৃতীয় দিনে চার মিয়ানমার সামরিক সৈন্য নিহত হয়। [131] আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) নামের একটি নতুন উদীয়মান বিদ্রোহী গোষ্ঠী এক সপ্তাহ পরে এ হামলার দায় স্বীকার করে। [132]
২০১৭ সলে ১৫ আগস্ট আরসা বিদ্রোহীরা ২৪টি পুলিশ পোস্ট এবং ৫৫২ তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন সেনা ঘাঁটিতে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে এক ডজন সামরিক লোক হত্যা করে। [45] [46] [47] জবাবে মিয়ানমার সেনাবহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে "ক্লিয়ারেন্স অপারেশন" শুরু করে, যা সমালোচকদের যুক্তিতে বিদ্রোহীদের পরিবর্তে রোহিঙ্গা বেসামরিকদের লক্ষ্য করে। [133] [134] [135] সহিংসতার পর ২,০০,০০০ বেসামরিক লোক এই অঞ্চলে বাজার, জীবিকা, পরিষেবা এবং চিকিৎসা পরিষেবার পর্যাপ্ত সুবিধা ছাড়াই আটকা পড়েছিল। [136] [137]
শান জনগণ শান রাজ্যের বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতি। তারা প্যাংলং চুক্তি পর্যন্ত আলোচনার সময় অং সানকে সমর্থন দেয়া বেশ কয়েকটি জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে একটি ছিল। অং সান সরকার শান নেতাদের স্বাধীনতার এক দশক পরে মায়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিকল্পও দিয়েছিল যদি তারা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়। [11] অং সানের হত্যার পর স্বাধীনতা-উত্তর সরকার এই নীতি মেনে চলেনি। [10]
এক দশকের নিষ্ফল আলোচনায় হতাশ হয়ে সাউ ইয়ান্ডা [138] নেতৃত্বে ৩৯ শান-এর একটি দল ১৯৫৮ সালের ২১শে মে একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে। [139] এটি নুম সুক হার্ন (বা নুম সিক হার্ন [140] ) নামে পরিচিত হয়, যার অর্থ "সাহসী তরুণ যোদ্ধা"। [139] ১৯৬০ সালে আন্দোলনটি "রুক্ষ ও অশিক্ষিত" স ইয়ান্ডা ও একদল তরুণ বুদ্ধিজীবীর মধ্যে একটি অভ্যন্তরীণ বিভক্তির শিকার হয় এবং পরবর্তীতে শান স্টেট ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (এএআইএ) গঠন করে। [140] নুম সুক হার্ন এবং এসএসআইএ-এর অবশিষ্টাংশ ছাড়াও শান ন্যাশনাল ইউনাইটেড ফ্রন্ট (এসএনইউএফ) ছিল। এটি মূলত দক্ষিণ শান রাজ্যে কাজ করতো। এসএসআইএ, এসএনইউএফ এবং কোকাং ফোর্স (কোকাং চীনাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্থানীয় সেনাবাহিনী) ১৯৬৪ সালে শান স্টেট আর্মি (এসএসএ) এ একীভূত হতে সম্মত হয়। সাও নাং হারন খাম ইয়াংঘওয়ের মহাদেবী ও তার রাজনৈতিক শাখা শান স্টেট ওয়ার কাউন্সিল (এসএসডব্লিউসি) এর চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। [140] এসএসডব্লিউসি ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট শান স্টেট প্রগ্রেস পার্টি (এসএসপিপি) এ রূপান্তরিত হয়। [140]
উত্তর শান রাজ্যে এসএসএ বার্মার কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে যেটি দীর্ঘদিন ধরে চীনের সাথে বার্মার সীমান্তে সক্রিয় ছিল। ১৯৬০ এর দশকে বার্মা আর্মি কা কেউ ইয়ে (কেকেওয়াই) প্রোগ্রাম শুরু করে। যা কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জাতিগত সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করেছিল এবং বিনিময়ে তাদের নিজেদের শর্তে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যে জড়িত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে এসএসএর অনেক ইউনিট কেকেওয়াই মিলিশিয়াদের কাছে চলে যায়। এসএসএ লো সিং হান এবং খুন সার মতো আফিম যুদ্ধবাজদের সাথেও কাজ করেছিল। অভ্যন্তরীণ বিভাজনের ফলে এসএসএ অনেক উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং ১৯৭৬ সালের মাঝামাঝি এটি ভেঙে পড়ে। এসএসপিপি পরে বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কমিউনিস্টপন্থী শান স্টেট আর্মি – উত্তর (এসএসএ-এন) গঠন করে। ১৯৮৯ সালের এপ্রিল মাসে সিপিবি একটি অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের শিকার হয় এবং পতন ঘটে।তখন এসএসএ-এন সিপিবি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলিতে স্বায়ত্তশাসনের বিনিময়ে সরকারের সাথে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে। সাই লিউনের নেতৃত্বে একটি স্প্লিন্টার গ্রুপ যেটি একই সময়ে সিপিবি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এনডিএএ) প্রতিষ্ঠা করে। এটি শান রাজ্যের মং লা এলাকা (বিশেষ অঞ্চল ৪) নিয়ন্ত্রণ করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
-এ৯৬০-র দশকে একজন কেকেওয়াই মিলিশিয়া নেতা খুন সাকে শান এবং কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের সাথে লড়াই করার বিনিময়ে বার্মিজ সরকার আফিম চাষ ও ব্যবসা করার অনুমতি দেয়। তিনি ধীরে ধীরে শান রাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী নেতাদের একজন হয়ে ওঠেন। খুন সা ১৯৬৯ সালে এসএসএর সাথে চক্রান্তে করার পরে মিয়ানমার সেনাবহিনী দ্কর্তৃক বন্দী হন। কিন্তু পরে তাকে থাইল্যান্ডে ছেড়ে দেওয়া হয়। খোনে তিনি বার্মিজ সীমান্তের কাছে একটি সেনাবাহিনী তৈরি করেন এবং গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের প্রভাবশালী আফিম যুদ্ধবাজ হয়ে ওঠেন। ১৯৮২ সালে থাই আর্মি কর্তৃক বহিষ্কৃত হওয়ার পর খুন সা বার্মায় ফিরে আসেন এবং ১৯৮৫ সালে মং তাই আর্মি (এমটিএ) গঠন করেন। ১৯৯০-এর দশকে এমটিএ ২০,০০০ সৈন্যের সর্বোচ্চ শক্তির সাথে প্রভাবশালী শান লড়াকু বাহিনী হয়ে ওঠে। ১৯৯২ সালে খুন সা নিজেই রাষ্ট্রপতি হিসাবে একটি স্বাধীন শান রাজ্য গঠনের ঘোষণা করেছিলেন। এমটিএতে কিছু শান জাতীয়তাবাদী তার নেতৃত্বের সাথে দ্বিমত পোষণ করে এবং একটি প্রতিদ্বন্দ্বী শান সংগঠন শান স্টেট ন্যাশনাল আর্মি (এসএসএনএ) গঠন করে। [141] মং তাই আর্মিকে ব্যাপক পরিত্যাগের পর দ্রুত ভেঙে দেওয়া হয় এবং খুন সা নিজেই ১৯৯৬ সালে সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তাকে ইয়াঙ্গুনে অবসর নেওয়ার এবং তার বিশাল ভাগ্য রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
খুন সা এবং এমটিএর সাথে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করে শান ইউনাইটেড রেভল্যুশনারি আর্মি (সুরা) এর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াওদ সার্ক তার নেতৃত্বে ৮০০ জন সৈন্যকে কেন্দ্রীয় শান রাজ্যে নিয়ে যান এবং ০১৯৯৬ সালের ২৬শে জানুয়ারী শান স্টেট আর্মি-সাউথ (এসএসএ-এস) প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি লোই তাই লেং -এ গ্রুপের সদর দপ্তর স্থাপনের জন্য দক্ষিণ শান রাজ্যে ফিরে আসার আগে প্রায় এক হাজার সৈন্য নিয়োগ করেন। এসএসএ-এস তখন থেকে মিয়ানমারের বৃহত্তম শান বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে এবং ২০১৬ সালে জানা যায তাদের প্রায় ৮,০০০ সৈন্য রয়েছে ।[142] ইয়াওদ সার্ক ২০১৪ সালের ২রা ফ্রেব্রুয়ারী অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। এর রাজনৈতিক শাখা হল শান রাজ্যের পুনরুদ্ধার কাউন্সিল । এসএসএ-এস মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তে বেশ কয়েকটি ঘাঁটি রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং [143] ২০১১ সালে ২রা ডিসেম্বর সরকারের সাথে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
২০১১ সালে শান রাজ্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অপারেশন অধ্যবসায়( Operation Perseverance নামে একটি সামরিক আক্রমণ শুরু করে । [144] আক্রমণের সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী এনডিএএ এবং এসএসএ-এন থেকে অঞ্চল দখল করে। [145] [146] যদিও এই অপারেশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জান্তার "এক জাতি, এক সেনাবাহিনী" নীতির দলগুলির প্রত্যাখ্যানের প্রতিক্রিয়া ছিল। [147] [148] [149] [150] গবেষকরা এটিকে জেড বাণিজ্যে সামরিক বাহিনীর স্বার্থের সাথে যুক্ত করেছেন। [151] [152]
২০১৫ সালের অক্টোবরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির অধীনে এসএসএ-উত্তরকে দেওয়া অঞ্চল দখল করতে একটি সামরিক আক্রমণ শুরু করে। সেনাবহিনী ভারী কামান এবং বিমান হামলা করে। এসময় হাজার হাজার বেসামরিক লোককে বাস্তুচ্যুত করে। [153]
এই অঞ্চলের অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির মধ্যে রয়েছে
১৯৬০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত উত্তর শান রাজ্যের কোকাং অঞ্চলটি বার্মার কমিউনিস্ট পার্টি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল এবং ১৯৮৯ সালে পার্টির সশস্ত্র শাখা ভেঙে যাওয়ার পর এটি মিয়ানমারের একটি বিশেষ অঞ্চলে পরিণত হয় মিয়ানমার ন্যাশনালিটিজ ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এর নিয়ন্ত্রণে। ) এমএনডিএএ হলো একটি কোকাং বিদ্রোহী গোষ্ঠী যারা উত্তর শান রাজ্যের কোকাং স্ব-শাসিত অঞ্চলে সক্রিয়। গোষ্ঠীটি ১৯৮৯ সালে সরকারের সাথে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে। একই বছর এটি আবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যখন সরকারী সৈন্যরা এলাকা দিয়ে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করার প্রয়াসে তাদরে অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল যা ২০০৯ সাল পর্যন্ত দুই দশক ধরে চলেছিল । [154] ২০১৫ সালে আবার সহিংসতা শুরু হয় যখন এমএনডিএএ ২০০৯ সালে হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছিল। [155] [156] ২০১৭ সালে এমএনডিএএ আবারও সরকারি সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। [157] [158]
২০২১ সালে এমএনডিএএ সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। এমএনডিএএ এবং তাআং ন্যাশনাল আর্মি (টিএনএলএ) সম্মিলিত ভাবে শান রাজ্যে মিয়ানমার সরকারী বাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়েছে।[159]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.