বেতার তরঙ্গ
তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ / From Wikipedia, the free encyclopedia
বেতার তরঙ্গ বা রেডিও তরঙ্গ এক প্রকারের তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ। এটি সর্বাপেক্ষা বৃহত্তম তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ যার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সীমা ১ মিলিমিটার থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এই তরঙ্গ খালি চোখে দেখা যায় না। বেতার তরঙ্গের কম্পাঙ্ক দৃশ্যমান আলোর থেকে কম - ৩ কিলোহার্টজ থেকে ৩০০ গিগাহার্টজ। ৩০০ গিগা হার্টজ রেডিও তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১ মিলিমিটার (চালের দানার চেয়ে ছোট); আবার ৩০ হার্টজ রেডিও তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১০,০০০ কিলোমিটার (যা পৃথিবীর ব্যাসার্ধের চেয়েও দীর্ঘ)।
সর্বপ্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু বৈদ্যুতিক তার ছাড়া কীভাবে দূরে রেডিও সংকেত পাঠানো যায় এ বিষয়ে তিনি অনেক গবেষণা করেন। 1895 সালে তিনি প্রথমবারের মতো বেতারে দূরবর্তী স্থানে রেডিও সংকেত পাঠিয়ে দেখান। মাইক্রোওয়েভ গবেষণার ক্ষেত্রেও তার বড় অবদান আছে, তিনিই প্রথম বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ দৈর্ঘ্যকে মিলিমিটার পর্যায়ে (প্রায় 5 মিলিমিটার) নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রেডিও সংকেতকে শনাক্ত করার জন্য অর্ধপরিবাহী জংশন ব্যবহার করেন। এই আবিষ্কার পেটেন্ট করে বাণিজ্যিক সুবিধা নেওয়ার পরিবর্তে তিনি সেটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারিগরি, প্রযুক্তিবিদ এবং পেশাজীবীদের প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস বসু। ইঞ্জিনিয়ারিং (IEEE) তাঁকে রেডিও বিজ্ঞানের একজন জনক হিসেবে অভিহিত করে।
বড় তরঙ্গ দৈর্ঘ্য খুবই কম শক্তি সম্পন্ন হয় এবং অকল্পনীয় দুরত্ব পাড়ি দিতে পারে। অন্যান্য সব তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণের মত বেতার তরঙ্গও শুন্যে আলোর গতিতে ভ্রমণ করে, তবে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের কাছাকাছি কিছুটা কম গতিতে ভ্রমণ করে। বেতার তরঙ্গ সাধারণত ত্বরণে গতিপ্রাপ্ত চার্জযুক্ত কণা দ্বারা উৎপন্ন হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে বেতার তরঙ্গ সৃষ্টি হয় সাধারণতঃ বজ্রপাত বা মহাজাগতিক বস্তু থেকে এবং কৃষ্ণবস্তু বিকিরণের অংশ হিসেবেও এ তরঙ্গ পাওয়া যায়। রেডিও তরঙ্গ কৃত্রিমভাবে ট্রান্সমিটার দিয়ে তৈরি হয় এবং এন্টেনার সাহায্যে রেডিও রিসিভার দ্বারা পাওয়া যায়। কৃত্রিমভাবে তৈরীকৃত বেতার তরঙ্গ মোবাইল টেলিযোগাযোগ, বেতার যোগাযোগ, সম্প্রচার, রাডার ও অন্যান্য দিকনির্দেশনা (navigation) ব্যবস্থা, কৃত্রিম উপগ্রহের সাথে যোগাযোগ, তারবিহীন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সহ অসংখ্য কাজে ব্যবহৃত হয়। ভিন্ন কম্পাঙ্কের বেতার তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন রকম হয়। বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ পাহাড়ের মতো বাধার কারণে বিচ্ছুরিত হতে পারে এবং পৃথিবীর সীমারেখা অনুসরণ করে যেতে পারে(গ্রাউন্ড ওয়েভ)। ছোট বা ক্ষুদ্র তরঙ্গ আয়নমন্ডল দ্বারা প্রতিফলিত হতে পারে এবং অতি ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ খুবই অল্প বাঁক নিতে পারে বলে শুধু দৃষ্টি রেখা (line of sight) বরাবর ভ্রমণ করতে পারে।
বিভিন্ন ব্যবহারকারীদের মধ্যে যাতে হস্তক্ষেপ না ঘটে সেজন্য কৃত্রিমভাবে রেডিও তরঙ্গের উৎপাদন ও ব্যবহার আইন দ্বারা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন কর্তৃক কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, যা বেতার তরঙ্গকে কৃত্রিম সহায়তা ছাড়া মহাকাশে ভ্রাম্যমাণ ৩০০০ গিগাহার্জ এর কম কম্পাংকের তরঙ্ হিসেবে সজ্ঞায়িত করে।[1]বেতার বর্ণালিটি কম্পাংকের ভিত্তিতে কয়েকটি রেডিও ব্যান্ডে বিভক্ত করে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।