Loading AI tools
ভারতীয় অভিনেতা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
প্রেম নাজির (জন্ম আব্দুল কাদের ; ৭ই এপ্রিল ১৯২৬ - ১৬ই জানুয়ারি ১৯৮৯) একজন ভারতীয় অভিনেতা ছিলেন। তিনি তাঁর প্রজন্মের মালয়ালম চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী অভিনেতাদের একজন হিসাবে বিবেচিত। কেরালার একজন জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক আইকন, নাজিরকে প্রায়শই নিত্যহরিত নায়কন ("চিরসবুজ নায়ক") হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[1] নাজির একজন মঞ্চ অভিনেতা হিসাবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৫২ সালের মরুমাকল চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি তাঁর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ভিসাপিন্তে ভিলি (১৯৫২) এর সেটে প্রেম নাজির নামটি গ্রহণ করেন।
প্রেম নাজির | |
---|---|
জন্ম | আব্দুল কাদের ৭ এপ্রিল ১৯২৬ |
মৃত্যু | ১৬ জানুয়ারি ১৯৮৯ ৬২) মাদ্রাজ, তামিলনাড়ু, ভারত | (বয়স
সমাধি | তিরুবনন্তপুরম, ভারত |
অন্যান্য নাম | নিত্যহরিত নায়কন' ( চিরসবুজ নায়ক) |
মাতৃশিক্ষায়তন |
|
পেশা | অভিনেতা |
কর্মজীবন | ১৯৫১–১৯৮৯ |
পরিচিতির কারণ | মালয়ালম চলচ্চিত্র |
দাম্পত্য সঙ্গী | হাবিবা বিবি (বি. ১৯৪৪) |
সন্তান | ৪, শানাভাস সহ |
আত্মীয় | প্রেম নওয়াস (ভাই) |
পুরস্কার | পদ্মভূষণ (১৯৮৩) |
মুরাপ্পেনু (১৯৬৫), উদ্যোগস্থ (১৯৬৭), ইরুত্তিন্তে আথমাভু (১৯৬৭), কাল্লিচেল্লাম্মা (১৯৬৯), বিরুন্নুকরি (১৯৬৯), নদী (১৯৬৯), সিআইডি নাজির (১৯৭১), অনুভালঙ্গল পালিচাকল (১৯৭১), ট্যাক্সি কার (১৯৭২), আঝাকুল্লা সালীনা (১৯৭৩), নেল্লু (১৯৭৪), আরিয়াপ্পাথা রহস্যম (১৯৮১), ভিদা পারায়ুম মুনপে (১৯৮১), পড়ায়োত্তম (১৯৮২), এবং ধোয়ানি (১৯৮৮) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নাজির বিখ্যাত হয়ে আছেন।[2] ভিদা পরায়ুম মুনপে- এ মাধবন কুট্টি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নাজির কেরালা স্টেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড (বিশেষ জুরি অ্যাওয়ার্ড) জিতেছিলেন। শিল্পকলায় তাঁর অবদানের জন্য ভারত সরকার তাঁকে তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণে সম্মানিত করে।[3] ১৯৮৯ সালের ১৬ই জানুয়ারি, হাম রোগের জটিলতার কারণে ৬২ বছর বয়সে মারা যান।[4]
নাজির ১৩০টি ছবিতে একই নায়িকার বিপরীতে (শীলার বিপরীতে) অভিনয় করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বইতে নাম তুলেছিলেন, এবং এর আগে রেকর্ড ৭২০টি ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার রেকর্ড তাঁর ছিল।[5][6] এছাড়াও আরো দুটি অভিনয় রেকর্ড তঁর আছে, সেগুলি হলো; তিনি আশিজন নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন এবং দুবার এক বছরে (১৯৭৩ সালে এবং ১৯৭৭ সালে) মুক্তিপ্রাপ্ত ৩০টি চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন।[7]
১৯২৭ সালের ৭ই এপ্রিল, ত্রিবাঙ্কুর (বর্তমানে কেরালার তিরুবনন্তপুরম জেলায়) রাজ্যের চিরায়িংকিড়ুতে একটি রোথার পরিবারে, নাজির জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ও মায়ের নাম ছিল যথাক্রমে আক্কোদে শাহুল হামিদ এবং আসুমা বিবি।[8] তাঁর দুই ভাইয়ের নাম - প্রেম নওয়াস (আব্দুল ওয়াহাব) - ও আশরাফ এবং ছয় বোনের নাম - সুলেখা, আরিফা, আনিসা, উমাইবা, সুনাইসা এবং সুহারা।[9] তাঁর শৈশবেই তাঁর মা মারা যান এবং তাঁর বাবা একই নামের একজন মহিলাকে পুনরায় বিয়ে করেছিলেন। নাজির কদিনামকুলাম লোয়ার প্রাইমারি স্কুল, শ্রী চিথিরভিলাসাম স্কুল, ত্রিভান্দ্রম, সনাতন ধর্ম কলেজ, আলাপুঝা এবং সেন্ট বার্চম্যানস কলেজ, চাঙ্গানাসেরি থেকে তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি একজন অভিজ্ঞ নাট্য শিল্পী হয়ে উঠেছিলেন।
চাঙ্গানাসেরির এসবি কলেজের ছাত্র থাকাকালীন প্রেম নাজির দ্য মার্চেন্ট অফ ভেনিস (১৯৫১) নাটকে শাইলকের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। শেপার্ড পরিচালিত নাটকে এই চরিত্রের জন্য তিনি সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছিলেন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ছিল এস কে চারি পরিচালিত এবং পল কাল্লুঙ্গাল প্রযোজিত মরুমাকল (১৯৫২)। এই ছবিতে তিনি আবদুল কাদের নামই ব্যবহার করেছিলেন। তেলুগু পরিচালক মোহন রাও কেঅ্যাণ্ডকে কম্বাইন্স (উদয় স্টুডিও) এর জন্য তৈরি ভিসাপিন্তে ভিলি (১৯৫২)র জন্য নাজিরকে সুযোগ দেন, এটি ছিল নাজিরের দ্বিতীয় ছবি। এই ছবির সেটে থিক্কুরুসি সুকুমারন নায়ার তাঁর নাম পরিবর্তন করে প্রেম নাজির রাখেন। যখন প্রেম নাজির নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন, তখন নাটক ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিজ্যুয়াল মাধ্যম এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ তখনও তার শৈশবাবস্থায় ছিল। নাজির এক্সেল প্রোডাকশন (উদয় স্টুডিও) এর জন্য অভিনয় শুরু করেন। তাঁর বেশিরভাগ চলচ্চিত্র ছিল উদয় এবং মেরিল্যান্ড স্টুডিওর জন্য।[10]
নাজিরের আগমন ছিল এমন একজন নতুন পর্দা ব্যক্তিত্ব, যিনি মার্জিতরুচি অভিনেতা এবং যুবাদের হৃদস্পন্দন। প্রেম নাজির একজন রোমান্টিক নায়কের দীপ্তি এবং অনুরাগী সমর্থককুল অর্জন করেছিলেন। তাঁর ভাবপ্রবণ অভিনয় মহিলা শ্রোতাদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এবং তাঁকে অতি প্রিয় নায়কে পরিণত করেছিল। তিনি মালয়ালম চলচ্চিত্রের প্রথম বাস্তব তারকা হয়ে ওঠেন। আরেকটি যে কারণ প্রেম নাজিরের উত্থানে সহায়তা করেছিল তা হলো পৌরাণিক ও ভক্তিবাদের অব্যাহত রাজত্ব, অন্যান্য আঞ্চলিক চলচ্চিত্র শিল্পে তাঁর সমসাময়িকদেরও একইভাবে উত্থান হয়েছিল। সুন্দর পরিচ্ছদে গীতিনাট্য, স্টুডিওর মধ্যেই শুরু থেকে শেষ অবধি চিত্রায়ণ, এগুলি সবই নিজস্ব অবদান রেখেছিল। এই ধরনের সমস্ত চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই তিনি দীর্ঘ সময় ধরে নিজের ভক্তদের সামনে এসেছিলেন, তাঁর রোমান্টিক ভাবমূর্তিকে পুষ্ট করেছিলেন এবং বিভিন্ন চরিত্রে তাঁর প্রতিভাকে অনুশীলনের মাধ্যমে পরিমার্জিত করার সীমাহীন সুযোগ পেয়েছিলেন। যেহেতু দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ অংশই দৃশ্যত এবং শ্রবণগতভাবে নাটকীয় হতো, তাই প্রেম নাজিরের মঞ্চের পটভূমি এবং মালয়ালম ভাষায় তাঁর অসাধারণ দক্ষতা তাঁকে দর্শকদের মন জয় করতে সাহায্য করেছিল।[11]
১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে, সামাজিক ও ধর্মীয় অবিচারের উপর ভিত্তি করে বিষয়বস্তুর ওপর তৈরি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নাজির মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত, প্রেম নাজির জনপ্রিয়তার উত্তাল তরঙ্গের শীর্ষে উঠে গিয়েছিলেন এবং মালয়ালম চলচ্চিত্রে নিজের সেরা অবদান রেখেছিলেন। ইরুটিন্তে আথমাভু (১৯৬৭) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নাজির ভারতের সেরা অভিনেতাদের সারিতে উঠে আসেন। একজন বিভ্রান্ত যুবক-ভেলায়ধনের চরিত্রে, তিনি একজন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নাটকীয় অভিনেতা হিসাবে নিজের দক্ষতার প্রমাণ রেখেছিলেন। অনেক সমালোচক এই ভূমিকাটিকে তাঁর সেরা অভিনয় হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। এম টি বাসুদেবন নায়ারের লেখা এই ছবিটি মালয়ালম চলচ্চিত্রকে স্বল্প বাজেটের চলচ্চিত্র হিসেবে একটি নতুন দিশা দিয়েছিল। প্রচুর সংখ্যক স্টুডিও শট এবং সামগ্রিক নাটকীয়তা সত্ত্বেও, চলচ্চিত্রটি সাংস্কৃতিকভাবে যথেষ্ট সমৃদ্ধ ছিল।
নাজির তাঁর শীর্ষ সময়ে, বিভিন্ন ধরণের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এবং সমাজের সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। তিনি মালয়ালম চলচ্চিত্রের সর্বপ্রথম অনুসন্ধানী সিরিজ, পি ভেনু পরিচালিত সিআইডি নাজির- এ অভিনয় করেন। তিনি ভাদাক্কান পাট্টুকালের উপর ভিত্তি করে এক ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অ্যারোমালুন্নি, কান্নাপানুন্নি, থাচোলি অম্বু এবং পদয়োত্তম এই ধারার কিছু প্রধান চলচ্চিত্র। তিনি এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন কারণ তাঁর শারীরিক গঠন এটির জন্য উপযুক্ত ছিলনা, তবুও তিনি দর্শকদের মধ্যে একটি বিশাল জনপ্রিয়তা উপভোগ করেছিলেন। তিনি রাম, কৃষ্ণ এবং আয়াপ্পার মতো হিন্দু দেবতার ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। নাজির তাঁর ছবিতে এমন এক চিরন্তন রোমান্টিক নায়ক ও ভাল মানুষের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য সুপরিচিত ছিলেন, যে নায়ক কোন অনুশোচনা ছাড়াই দুর্জনদের মারত।[12]
যদিও ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে নাজির পুনরায় সেই অভিনয় দক্ষতা দেখাতে পারেননি, তবুও তিনি ১৯৮০ এর দশকের শুরু পর্যন্ত তাঁর অতি জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছিলেন। ১৯৭৯ সালে, তাঁর ৩৯টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল, যেটি একটি রেকর্ড। তিনি সর্বাধিক প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার রেকর্ডও রেখেছেন - প্রায় ৭০০টি চলচ্চিত্রে (৮৫ জন নায়িকা সহ; আরেকটি রেকর্ড) তিনি প্রধান ভূমিকায় ছিলেন। আরেকটি রেকর্ড হল অভিনেত্রী শীলার বিপরীতে সর্বাধিক সংখ্যায় অভিনয়। ১৯৭৫ সালের মধ্যে, ১৩০টি ছবিতে তাঁরা রোমান্টিক জুটি হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়াও জয়ভারতী এবং শারদার মতো অন্যান্য নায়িকাদের সাথেও তাঁর ছবিগুলিও বক্স অফিসে বড় সাফল্য পেয়েছিল। কৌতুক অভিনেতা অদুর ভাসির সাথে তাঁর জুটি কৌতুক অভিনেতা হিসেবেও তাঁকে খ্যাতি এনে দিয়েছিল। দর্শকদের কাছে নেপথ্য গায়ক কে জে যেসুদাসের কণ্ঠ নাজিরের জন্য ছিল নিখুঁত। আজও অনেকে নাজির-যেসুদাসের গানের সমন্বয়কে পর্দায় সর্বকালের সেরা বলে মনে করেন। তাঁকে নিত্যহরিত নায়কন (দ্য এভারগ্রিন হিরো) হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে কারণ বেশি বয়সেও তিনি নায়ক হিসেবে একই রকম ছাপ রেখেছেন। বরিষ্ঠ মালয়ালম অভিনেত্রী কবির পোন্নাম্মা প্রকাশ করেছেন যে প্রেম নাজির খুব ভাল গায়ক ছিলেন এবং কর্ণাটকী সঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।[13]
১৯৮০ এর দশকের শুরুতে, নাজির নিজেই পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের দিকে চলে আসেন। তিনি জয়ান, সুকুমারন, শঙ্কর এবং সোমনের সাথেই বেশিরভাগ সহায়ক ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ১৯৮০ সালে, তিনি জয়ানের সাথে পি ভেনু পরিচালিত আরিয়াপদাথা রহস্যম- এ অভিনয় করেন। ১৯৮১ সালে, তিনি মোহনের ভিদা পারায়ুম মুনপেতে একটি প্রধান সহায়ক ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, যার জন্য তিনি কেরালা রাজ্য বিশেষ জুরি পুরস্কার অর্জন করেছিল।আলেকজান্ডার ডুমার চিরসবুজ অতুলনীয় উপন্যাস দ্য কাউন্ট অফ মন্টে ক্রিস্টোর উপর ভিত্তি করে তৈরি থামবান-এর নাম ভূমিকায় তিনি অভিনয় করেছিলেন। তিনি রাথেশের সাথে ভেল্লারিক্কা পত্তনম (১৯৮৫) এ তাঁর শেষ নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তার দ্বিতীয় শেষ চলচ্চিত্র ছিল আয়ালবাসি ওরু দারিদ্রাবসি (১৯৮৬), যেখানে তিনি মুকেশ, শঙ্কর, নেদুমুদি ভেনু, সুকুমারী এবং সীমার সাথে অভিনয় করেছিলেন। তাঁর শেষ সমাপ্ত চলচ্চিত্রটি ছিল এ টি আবুর ধ্বনি (১৯৮৮), যেখানে তিনি জয়রামের সাথে অভিনয় করেছিলেন। তাঁর শেষ মুক্তি ছিল প্রিয়দর্শনের কদাথানাদান আম্বাদি (১৯৯০), যেখানে তিনি মোহনলালের সাথে সহ-অভিনয় করেছিলেন। তাঁর শেষ সাক্ষাৎকারে তিনি মামুটি এবং মোহনলালের সাথে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।[14]
প্রেম নাজির দ্বারা সূচিত দুটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র সিরিজ হল সিআইডি সিরিজ এবং ভাদাক্কানপাট্টু সিরিজ। প্রথমটি পি ভেনুর অনুসন্ধানমূলক চলচ্চিত্রের একটি দল, যেখানে নাজির জেমস বণ্ডের মতো একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই ছবিগুলির অনেকগুলিতেই তিনি কমেডি অভিনেতা অদুর ভাসির সাথে জুটি বেঁধেছিলেন। পি ভেনু পরিচালিত সিআইডি নাজির, অসংখ্য অভিযোজিত এবং অনুরূপ সিরিজকে অনুপ্রাণিত করেছে। এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায় জনপ্রিয় সিবিআই সিরিজ, যার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন মাম্মুটি। এছাড়া আছে মোহনলাল-শ্রীনিবাসন দলের একটি ব্যঙ্গাত্মক সিআইডি সিরিজ। অন্যান্য অনুপ্রাণিত চলচ্চিত্রগুলি হল সিআইডি উন্নিকৃষ্ণন, যেখানে অভিনয় করেছিলেন জয়রাম এবং সিআইডি মুসা, যেখানে প্রধান চরিত্রে ছিলেন দিলীপ।[15][16]
নাজির অভিনীত আরেকটি চলচ্চিত্র সিরিজ ছিল ভাদাকানপাত্তুর উপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্রের একটি সিরিজ যা কেরালার ঐতিহ্যবাহী লোককাহিনীর অংশ। এগুলি লোকগানের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ছড়িয়ে থাকা সমর যোদ্ধাদের গল্প। যদিও থাচোলি ওথেনান -এ নাম ভূমিকার সাথিয়ান-এর অভিনয়ের মাধ্যমে এই সিরিজের সূচনা হয়েছিল, তবে তাঁর মৃত্যুর অনেক পরেও ভাদাক্কানপাট্টু-র অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করে নাজির এই ধারাটি অব্যাহত রেখেছিলেন।[17]
প্রেম নাজির হাবিবা বিবিকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। লায়লা, রসিয়া ও রীতা কন্যা এবং পুত্র শানাভাস। শানাভাসের স্ত্রী আয়েশা বিবি প্রেম নাজিরের বড় বোন সুলেখা বিবির মেয়ে। প্রেম নাজিরের ছেলে শানাভাস কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করলেও বাবার মতো সফল হতে পারেননি। প্রেম নাজিরের তৃতীয় প্রজন্ম, শানাভাসের ছেলে শামির খান, একটি মালায়লাম চলচ্চিত্র, উপ্পুকান্দম ব্রাদার্স ব্যাক ইন অ্যাকশন-এ অভিনয় করেছেন।
প্রেম নাজিরের ছোট ভাই প্রেম নওয়াস (আবদুল ওহাব) কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। যদিও তিনি ছিলেন পরিবারে প্রথম ব্যক্তি, যিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছিলেন, তবে পরে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। অগ্নিপুত্রী, থুলাভরশম, পূজাক্কু এডুকথা পুক্কল, নীথি এবং কেনি তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র। প্রেম নওয়াসের একমাত্র পুত্র, প্রেম কিশোরও দুটি মালয়ালম চলচ্চিত্র - অবকাশ এবং থাস্কারপুত্রান- এ অভিনয় করেছেন। প্রেম নাওয়াস মালয়ালম ভাষায় নির্মিত প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র - কান্দাম বেচা কোট্টুতে অভিনয় করেছেন।[18]
নাজিরকে একজন মানবতাবাদী বলা হয় এবং এটি এখনও একটি চলমান বিতর্ক যে তিনি একজন অভিনেতা হিসাবে বড় ছিলেন নাকি একজন মানবতাবাদী হিসাবে, যদিও অধিকাংশের মতে তিনি একজন মানবতাবাদী হিসাবে একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন। নাজির তাঁর জীবদ্দশায় অনেক মানুষকে সাহায্য করেছেন। তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধু জয়ান (কৃষ্ণান নায়ার) কে তারকা বানানোর চেষ্টা করেছিলেন। কোলিলাক্কামের শুটিং চলাকালীন একটি মারাত্মক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর জয়ান মারা গেলে, নাজির একাই চেন্নাই থেকে তাঁর মৃতদেহ তিরুবনন্তপুরমে ফিরিয়ে আনার জন্য অর্থায়ন করেছিলেন। তিনি প্রবীণ পরিচালক এম শশীকুমারের সাথে অনেক দেউলিয়া প্রযোজককে সাহায্য করেছিলেন।[19]
১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে একজন রাজনৈতিক প্রার্থী বন্ধুর পক্ষে নাজির কঠিন পরিশ্রম করে প্রচারণা চালান। নাজির বহুমূত্ররোগাক্রান্ত ছিলেন, এইসময় খাদ্য ব্যবস্থায় অনিয়মের কারণে তাঁর গ্রহণীতে ঘা (ডুওডেনাল আলসার) হয়।[20] হাসপাতালে চিকিৎসাকালে তাঁকে দেখতে আসা অনুরাগীদের মধ্যে একজন ব্যক্তি হাম রোগাক্রান্ত ছিলেন। নাজিরের দুর্বল শরীরে এটির সংক্রমণ ঘটে এবং তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হয়। ১৯৮৯ সালের ১৬ই জানুয়ারি ভোরের দিকে, ৬২ বছর বয়সে তিনি মারা যান।[21] তাঁর মৃতদেহ বিমানের মাধ্যমে তিরুবনন্তপুরমে এবং একটি বিশেষ বাসের মাধ্যমে তাঁর জন্মভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেখানে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মানের সাথে সমাহিত করা হয়।
প্রেম নাজির তাঁর অভিনয়জীবনে ৪০টিরও বেশি ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করার রেকর্ড করেছেন। প্রথম চলচ্চিত্র যেটিতে তিনি দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তা ছিল এস এস রাজন পরিচালিত ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র কুঞ্জলি মারাক্কর। এটি মালয়ালমের সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিল।[22]
প্রেম নাজিরকে মালয়ালম চলচ্চিত্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং ধারা প্রবর্তনকারী প্রধান অভিনেতা মনে করা হয়। নাজির ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে নিজের চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন, পরে ১৯৮০-এর দশকে শঙ্কর, মম্মুট্টী এবং মোহনলাল (অভিনেতা) মতো জনপ্রিয় ভবিষ্যতের তারকাদের সাথে অভিনয় করেন। তিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মালয়ালম চলচ্চিত্রের মূলধারার একজন তারকা ছিলেন। পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে ক্যাম্পাসের একটি চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তাঁর একটি অনানুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও রয়েছে।
প্রেম নাজির তাঁর জীবনে ৪০টিরও বেশি ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করার রেকর্ড করেছেন। প্রথম চলচ্চিত্র যেটিতে তিনি দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তা ছিল এস এস রাজন পরিচালিত ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র কুঞ্জলি মারাক্কর। এটি মালায়ালামের সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিল।[23]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.