Loading AI tools
বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, এবং গল্পকার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জহির রায়হান (১৯ আগস্ট ১৯৩৫ — ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২)[১] ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার। বাংলা সাহিত্যের গল্প শাখায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৭৭ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। চলচ্চিত্রে তার সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে ১ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে মরণোত্তর বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
জহির রায়হান | |
---|---|
জন্ম | মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ খান ১৯ আগস্ট ১৯৩৫ |
মৃত্যু | ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২ (নিখোঁজ) |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশি |
পেশা | চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার |
দাম্পত্য সঙ্গী | সুমিতা দেবী, সুচন্দা |
সন্তান | বিপুল রায়হান, অনল রায়হান ও তপু রায়হান |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
তার রচিত প্রথম উপন্যাস শেষ বিকেলের মেয়ে ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। তার রচিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো হাজার বছর ধরে ও আরেক ফাল্গুন।[২] হাজার বছর ধরে উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৬৪ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র জাতীয় পুরস্কার পায়।[৩] তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র কখনো আসেনি (১৯৬১)। ১৯৬৪ সালে কাঁচের দেয়াল চলচ্চিত্রের জন্য তিনি নিগার পুরস্কার লাভ করেন।[৩] তার নির্মিত অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলো হলো বেহুলা, সঙ্গম, আনোয়ারা এবং জীবন থেকে নেয়া।[২] স্টপ জেনোসাইড প্রামাণ্যচিত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন।[৪]
জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] তার পিতার নাম মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ; তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপক ছিলেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। সেই হিসেবে জহির কলকাতা মাদ্রাসার অ্যাংলো-পার্সিয়ান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন।[৫] তবে ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সাথে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে দু'বার বিয়ে করেন: ১৯৬১ সালে সুমিতা দেবীকে এবং ১৯৬৬ সালে তিনি সুচন্দাকে বিয়ে করেন, দুজনেই ছিলেন সে সময়কার বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।[৩]
জহির রায়হান বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জীবন শুরু হয়। ১৯৫০ সালে তিনি যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে, জাগো হুয়া সাভেরা ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ছবি যে নদী মরুপথেতেও সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাকে এ দেশ তোমার আমার এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান; জহির এ ছবির নামসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। ১৯৬১ সালে তিনি রূপালী জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা মুক্তি দেন।
জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়াতে।[২] তিনি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন।[৬] কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়ার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন।[৬]
জহির রায়হান ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা ফিরে আসেন। মিরপুরে তাঁর ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারসহ আরও অনেককে বিহারিরা আটকে রেখেছে বলে খবর পেয়ে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি সকালে তিনি সেনাবাহিনী ও পুলিশের বহরের সঙ্গে মিরপুর ১২ নম্বরের দিকে যান। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বিহারিরা কালাপানি পানির ট্যাংকের সামনে সেনা ও পুলিশ সদস্যদের দিকে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে তিনি নিহত হন। পরদিন ৩১ জানুয়ারি বিহারি ও পাকিস্তানি সৈন্যদের হাত থেকে মিরপুর দখলমুক্ত হলেও তার লাশ পাওয়া যায়নি।[৭]
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রবাদ পুরুষ জহির রায়হানের দুই স্ত্রী’র একজন সুমিতা দেবী। এই প্রয়াত অভিনেত্রীর দুই ছেলে বিপুল রায়হান ও অনল রায়হান। দুজনেই প্রতিষ্ঠিত নাট্য নির্মাতা। আরেক স্ত্রী সুচন্দার দুই ছেলে। আরাফাত রায়হান অপু ও তপু রায়হান। ছোট ছেলে তপু রায়হানও অভিনেতা। তিনি ‘সবুজ কোট কালো চশমা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। জহির রায়হানের ভাই শহীদুল্লা কায়সারের।ভাইয়ের মেয়ে শমী কায়সার।[৮]
বছর | চলচ্চিত্র | ভূমিকা | ভাষা | নোট | |||
---|---|---|---|---|---|---|---|
পরিচালক | প্রযোজক | চিত্রনাট্য | লেখক | ||||
১৯৬১ | কখনো আসেনি | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | পরিচালক হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্র | |
১৯৬২ | সোনার কাজল | হ্যাঁ | বাংলা | কলিম শরাফী এর সাথে যৌথভাবে পরিচালনায় নির্মিত। | |||
১৯৬৩ | কাচের দেয়াল | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | |
১৯৬৪ | সঙ্গম | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | উর্দু | সমগ্র পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নির্মিত প্রথম রঙ্গীন চলচ্চিত্র। |
১৯৬৫ | বাহানা | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | উর্দু | সমগ্র পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নির্মিত প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র। |
১৯৬৬ | বেহুলা | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | |||
১৯৬৭ | আনোয়ারা | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | |||
১৯৬৮ | দুই ভাই | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | |||
১৯৬৮ | কুচবরণ কন্যা | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৬৮ | জুলেখা | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৬৮ | সুয়োরাণী-দুয়োরাণী | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৬৮ | সংসার | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | |||
১৯৬৯ | মনের মত বউ | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৬৯ | শেষ পর্যন্ত | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৬৫ | একুশে ফেব্রুয়ারি | হ্যাঁ | বাংলা | অপ্রকাশিত | |||
১৯৭০ | জীবন থেকে নেয়া | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | |
১৯৭০ | টাকা আনা পাই | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৭০ | লেট দেয়ার বি লাইট | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ইংরেজি, বাংলা, উর্দু, রুশ | অসমাপ্ত। চলচ্চিত্রটি সমাপ্ত হবার আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। |
১৯৭১ | জলতে সুরজ কে নিচে | হ্যাঁ | উর্দু | ||||
১৯৭১ | স্টপ জেনোসাইড | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ইংরেজি | তথ্যচিত্র | ||
১৯৭১ | বার্থ অব আ নেশন / এ স্টেট ইজ বর্ন | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ইংরেজি | তথ্যচিত্র | |
১৯৭১ | চিলড্রেন অব বাংলাদেশ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ইংরেজি | তথ্যচিত্র | |
১৯৭১ | সারেন্ডার | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ইংরেজি | তথ্যচিত্র | |
১৯৭২ | প্রতিশোধ | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৭৩ | ধীরে বহে মেঘনা | বাংলা | মূল পরিকল্পনা | ||||
২০০৫ | হাজার বছর ধরে | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
২০১৪ | পোস্টার | হ্যাঁ | বাংলা | স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র | |||
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.