Remove ads
২০০৫-এর সুচন্দা পরিচালিত বাংলা চলচ্চিত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হাজার বছর ধরে এটি ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার জহির রায়হানের কালজয়ী উপন্যাস হাজার বছর ধরে অবলম্বনে একই শিরোনামে নির্মিত হয় এটি।বাংলাদেশ সরকারী চলচ্চিত্র অনুদানে এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন জহির রায়হানের সহধর্মিনী এক সময়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা।[১] ছবিতে প্রধান দুটি চরিত্র মন্ত ও টুনির ভুমিকায় অভিনয় করেছেন রিয়াজ ও নবাগত শারমিন জোহা শশি। এছাড়াও শাহনূর, এটিএম শামসুজ্জামান, সুচন্দা, নাজমা আনোয়ার সহ আরো অনেকে অভিনয় করেছেন।
হাজার বছর ধরে | |
---|---|
পরিচালক | কোহিনুর আক্তার সুচন্দা |
প্রযোজক | কোহিনুর আক্তার সুচন্দা |
রচয়িতা | জহির রায়হান |
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল |
চিত্রগ্রাহক | মাহফুজুর রহমান খান |
সম্পাদক | মজিবুর রহমান দুলু |
পরিবেশক | সুচন্দা চলচ্চিত্র |
মুক্তি | ৮ জুলাই ২০০৫ |
স্থিতিকাল | ১৪০মিনিট |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
ছবিটি দক্ষ নির্মাণ শৈলী দিয়ে নির্মাণ করে সুচন্দা চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের কাছে দারুন ভাবে আলোচিত হন। এবং জিতে নেন মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার। ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার-এর একটি বিশেষ পুরস্কারসহ মোট চারটি বিভাগে[২] ও পরে ঘোষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০০৫ এর মোট ছয়টি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।[৩]
নদী বয়ে চলেছে আপন গতিতে। গাছে গাছে ফুল ফোটে। আকাশে পাখি উড়ে- আপন মনে গান গায়। হাজার বছর ধরে যেই জীবনধারা বয়ে চলেছে, তাতে আশা-নিরাশা, প্রেম-ভালবাসা, চাওয়া-পাওয়ার খেলা চললেও তা সহজে চোখে পড়ে না, অন্ধকারে ঢাকা থাকে। কঠিন অচলায়তন সমাজে আর যাই থাকুক, নারীর কোন অধিকার নাই। নারী হাতের পুতুল মাত্র। পুরুষ তাকে যেমন নাচায় তেমন নাচে। নিজের ইচ্ছেতে কাউকে বিয়ে করাটা এমন সমাজে অপরাধ, গুরুতর অপরাধ। অন্ধকার এই সমাজে আনাচে কানাচে বাস করে কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, নারী নির্যাতন। পরীর দীঘির পাড়ের একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কাহিনী। কখন এই গ্রামের গোড়াপত্তন হয়েছিল কেউ বলতে পারে না। এক বন্যায় “কাসেম শিকদার” আর তার বউ বানের পানিতে ভেলায় ভাসতে ভাসতে এসে ঠাই নিয়েছিল এই জায়গায়। সেই থেকে এখানে পত্তন হয়েছিল শিকদার বাড়ির।
শিকদার বাড়ীতে বাস করে বৃদ্ধ “মকবুল” (এটিএম শামসুজ্জামান) ও তার তিন স্ত্রী সহ “আবুল” (সিরাজ হায়দার), “রশিদ”, “ফকিরের মা” (নাজমা আনওয়ার) ও “মন্তু” (রিয়াজ) এবং আরো অনেকে। বৃদ্ধ মকবুলের অষ্টাদশি বউ টুনির (শশী) মনটা মকবুলের শাসন মানতে চায় না। সে চায় খোলা আকাশের নিচে বেড়াতে, হাসতে, খেলতে। তাই সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় অল্প বয়সী সুঠামদেহী মন্তুকে। মন্তু বাবা-মা হারা অনাথ। বিভিন্ন কাজ করে বেড়ায়। টুনি আর মন্তু সকলের অগোচরে রাতের বেলায় বেরিয়ে পড়ে মাছ ধরতে। বর্ষায় যায় শাপলা তুলতে। এমনি করে দুজন দুজনার কাছে এসে যায়। অব্যক্ত ভালবাসার জোয়ারে ভাসে ওরা দু’জন। কিন্ত লোক লজ্জার ভয়ে কেউ মুখ ফুঁটে মনের কথা বলতে পারে না। সমাজের রক্তচক্ষু ওদের দূরে রাখে।
গাঁও গেরামে যা হয়, কলেরা বসন্তের মড়ক লাগলে উজাড় হয়ে যায় কয়েক ঘর মানুষ। ডাক্তার না দেখিয়ে টুকটাক তাবিজ করে, এভাবেই দিন চলে। মকবুলের আকস্মিক মৃত্যুর পর মন্তু যখন মনের কথা টুনিকে খুলে বলে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। গুন মোল্লা, আবলি, রশদ, ফকিরের মা, সালেহা কেউ নেই। টুনির সঙ্গে মন্তুর অনেক দিন দেখা হয়নি। টুনি হারিয়ে গেছে ওর জীবন থেকে। তবুও টুনিকে মাঝে মাঝে মনে পড়ে মন্তুর। এমনি করে অনেকটা সময় পার হয়েছে। রাতের বেলা সুরত আলীর ছেলে ওর বাপের মতোই পুঁথি করে- “শোন শোন বন্ধুগনে শোন দিয়া মন, ভেলুয়ার কথা কিছু জানো সর্বজন।” ভেলুয়া সুন্দরীর কথা সবাই জানে। একই তালে, একই সুরে হাজার বছরের অন্ধকার এক ইতিহাস নিয়ে এগিয়ে চলে সবাই। হাজার বছরের পুরনো জোত্স্না ভরা রাতে একই পুঁথির সুর ভেসে বেড়ায় বাতাসে।
কালের আবর্তে সময় গড়ায়। প্রকৃতিতেও পরিবর্তন আসে। শুধু পরিবর্তন আসে না অন্ধকার, কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রাম বাংলার আচলায়তন সমাজে।
হাজার বছর ধরে জহির রায়হান রচিত একটি কালজয়ী উপন্যাস। যেই উপন্যাস প্রচলিত বাংলাদেশের ১৯৬০ সালের জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে। বিখ্যাত অভিনেত্রী সুচন্দার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল এই উপন্যাস অবলম্বনে এবং একই শিরোনামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন।
এ ব্যাপারে তিনি বাংলাদেশ সরকার-এর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ সমর্থন পেয়েছিলেন। এবং ছবিটি রসাস্বাদন প্রকল্পে কর্তৃপক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার একটি অনুদান পেয়েছিলেন। 'যদিও ছবি নির্মাণ ব্যয়ের তুলনায় অনুদানের পরিমাণ ছিল অপর্যাপ্ত' সুচন্দা মনে করেন এটা অসম্ভব যে অল্প বাজেটের মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন যে 'ভালো কিছু করতে হলেত একটু বেগ পেতেই হয়'। সুচন্দা ছবির শুটিং স্পট বেছে নেন গাজীপুর মধ্যে হোতাপারা।
হাজার বছর ধরে সুচন্দার পরিচালিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র, তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র সবুজ কোট কালো চশমা, তিনি একটি দীর্ঘ বিরতি পর এই ছবিটি নির্মাণ শুরু করেন। তিনি এই চলচ্চিত্রের জন্য যথাক্রমে প্রায় ছয় বছর অপেক্ষা করেছেন। যখন হোতাপারা থেকে তিনি গাজীপুর গেলেন তখন শুটিং স্পট এবং প্রধান স্থান হিসেবে নির্বাচিত করলেন। মূল উপন্যাসের সাথে দৃশ্যের মিল রাখতে জায়গায় ঋতু পরিবর্তন মানা হয়। প্রকৃতিতে ঋতু পরিবর্তন স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল।
হাজার বছর ধরে ছবিতে টুনি চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে সুচন্দা ১৪ বছর বয়সী মেয়ে শশীকে নির্বাচিত করেন। সুচন্দার এই ছবিতে
অভিনয়ের ব্যাপারে অভিনেতা রিয়াজ ছিলেন অন্য রকম, তিনি এই ছবিটির মন্তু চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পারিশ্রমিক হিসাবে নিয়েছিলেন শুধুমাত্র ১০১ টাকা।[৪] সিনেমাটি ২০০৫ সালে সর্বপ্রথম এন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়।
হাজার বছর ধরে চলচ্চিত্রের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ছবির তিনটি গান, "আশা ছিল মনে মনে", "স্বপ্নে আইলো রাজার কুমার" ও "এই দুনিয়া দুই দিনের মুসাফির খানা" জহির রায়হান এর লেখা মূল উপন্যাস থেকে নেওয়া এবং বাকি দুটি গান "তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল" ও "হলুদ লাগাইয়া কন্যা সাজেরে" এর গীত রচনা করেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার।
নং. | শিরোনাম | রচয়িতা | কণ্ঠশিল্পী | দৈর্ঘ্য |
---|---|---|---|---|
১. | "আশা ছিল মনে মনে" | জহির রায়হান | সুবীর নন্দী | : |
২. | "তুমি সুতোয় বেঁধেছো শাপলার ফুল" | গাজী মাজহারুল আনোয়ার | সুবীর নন্দী ও অনুপমা মুক্তি | : |
৩. | "হলুদ লাগাইয়া কন্যা সাজেরে" | গাজী মাজহারুল আনোয়ার | আবিদা সুলতানা, শাম্মী আখতার ও উমা খান | : |
৪. | "স্বপ্নে আইলো রাজার কুমার" | জহির রায়হান | উমা খান | : |
৫. | "এই দুনিয়া দুই দিনেরই মুসাফির খানা" | জহির রায়হান | এন্ড্রু কিশোর | : |
হাজার বছর চলচ্চিত্রটি ২০০৫ সালে ৩টি বিষয়ে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করে।[৬]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.