জেনারেল কোদানদেরা সুবাইয়া থিমাইয়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একমাত্র ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে কোদানদেরা একটি পদাতিক ব্রিগেডের অধিনায়কত্ব করেন।[১] কোরীয় যুদ্ধের পর কোদানদেরা জাতিসংঘের যুদ্ধবন্দী বিষয়ক একটি বিষয়ের সমাধান করেন। ১৯৬৪ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর তিনি সাইপ্রাসে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অধিনায়কের দায়িত্ব পান এবং কর্তব্যরত থাকাকালীন ১৯৬৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর সাইপ্রাসেই মারা যান।
জেনারেল কোদানদেরা সুবাইয়া থিমাইয়া ডিএসও | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | মাদিকেরী, কোড়গু জেলা, মহীশূর রাজ্য, ব্রিটিশ ভারত |
আনুগত্য | ব্রিটিশ ভারত ভারত |
সেবা/ | ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনী |
কার্যকাল | ১৯২৬-১৯৬১ |
পদমর্যাদা | জেনারেল |
ইউনিট | ১৯তম হায়দ্রাবাদ রেজিমেন্ট |
নেতৃত্বসমূহ | সেনাবাহিনী প্রধান![]() ১৯তম পদাতিক ডিভিশন ২৬৮ পদাতিক ব্রিগেড ৮ম ব্যাটেলিয়ন, ১৯তম হায়দ্রাবাদ রেজিমেন্ট |
পুরস্কার | ![]() ![]() |
পূর্ব জীবন এবং শিক্ষা
কোদানদেরা সুবাইয়া থিমাইয়া জন্মগ্রহণ করেন ৩০ শে মার্চ, ১৯০৬ তারিখে থিমাইয়া ও সিতাম্মার সন্তান হিসেবে, কর্ণাটকের কোড়গু জেলার (পূর্বে কুর্গ নামে পরিচিত) মাদিকেরীতে। তার পরিবারটি ছিল এলাকার একটি প্রধান কফি রোপনকারী। তার মা, সিতাম্মা অত্যন্ত শিক্ষিত এবং একজন সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি কায়সার-ই-হিন্দ পদকের প্রাপক ছিলেন। কোদানদেরা তার পরিবারের ছয় সন্তানের দ্বিতীয় সন্তান ছিল। সবচেয়ে বড় ছিল পনপ্পা, তারপর কোদানদেরা, তারপরে সোমায়া ও তিনটি ছোট বোন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে তিনজনই ছেলে অফিসার হয়েছিলেন।[২]
তার পিতার দিক থেকে, তিনি কোদানদেরা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যেই গোষ্ঠীতে ভারতের প্রথম সেনাবাহিনী প্রধান কোদানদেরা মদপ্পা কারিয়াপ্পাও ছিলেন। তার মা চেপেদী চিত্তৌওয়া চুপুদিরা পরিবার থেকে ছিলেন। তার স্ত্রী মিসেস নিনা থিমায়য় ১৯৩৫ সালে কোয়েটা ভূমিকম্পের সময় তার মানবিক কল্যাণে কায়সার-ই-হিন্দ পদক লাভ করেন। তার মামা সি বি পন্নাপ্পা ইন্ডোর ডিফেন্স স্কুল থেকে কমিশনযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তাদের প্রথম ব্যাচ এবং প্রথম সেনাপ্রধান করিয়াপ্পার ব্যাচমেট ছিলেন। তাকে ভালো শিক্ষা দেওয়ার জন্য আট বছর বয়সে কুনুরের সেন্ট জোসেফ কলেজ যেটি ছিলো আইরিশদের দ্বারা পরিচালিত একটি কনভেন্টে পাঠানো হয়েছিল। পরে, থিমাইয়াকে ব্যাঙ্গালোরের বিশপ কটন বয়েজ স্কুলে পাঠানো হয়েছিল। স্কুল শেষ করার পর, থিমাইয়াকে প্রিন্স অফ ওয়েলসের রয়্যাল ইন্ডিয়ান মিলিটারি কলেজে পাঠানো হয়েছিল, যেটি ছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কমিশনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদযাত্রা। তার বড় ভাই পন্নাপ্পা (পরে আইএনএ যোগদান করেন) এবং সেইসাথে ছোট ভাই সোময়ায় (১৯৪৭-৪৮ কাশ্মীর অপারেশনে মাইন দুর্ঘটনায় মারা যান) ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। রয়্যাল ইন্ডিয়ান মিলিটারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর, "টিম্মী", যেখানে তিনি স্নেহভাবে পরিচিত ছিলেন, স্যান্ডহার্স্টের রয়্যাল মিলিটারি কলেজে আরও প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হন যেখানে তিনি ছয়জন ভারতীয় ক্যাডেটদের একজন ছিলেন।
পূর্ব সামরিক জীবন
প্রশিক্ষণ শেষ করার পর কোদানদেরা ১৯২৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ২য় লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন পান। তার ব্যাচে প্রাণ নাথ থাপার নামে একজন ছিলেন যিনি ১৯৬১ সালেই কোদানদেরার পরে সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন।[৩] কোদানদেরাকে হাইল্যান্ড লাইট ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টে প্রাথমিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো, ১৯২৭ সালের ২৮ মে তিনি ১৯তম হায়দ্রাবাদ রেজিমেন্টে নিয়োগ পান যেটি এখন কুমাওন রেজিমেন্ট নামে পরিচিত,[৪] এবং লেফটেন্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পান ১৯২৮ সালের ৪ মে।[৫] ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বরে থিমাইয়া ঐ ব্যাটেলিয়নটির অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
১৯৩৫ সালের জানুয়ারি মাসে থিমাইয়া নীনা কারিয়াপ্পা নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেন। ১৯৩৬ সালের ২০ মার্চ থিমাইয়া এবং নীনার ঘর আলোকিত করে একটি কন্যাসন্তান আসে। এই বছরের এপ্রিলে থিমাইয়া মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি ট্রেনিং কোর-এর কমান্ডার নিযুক্ত হন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে থিমাইয়া সিঙ্গাপুরে বদলী হন এবং ১৯৪১ সালের শুরুর দিকে তাকে ভারপ্রাপ্ত মেজর পদবীতে উন্নীত করা হয়,[৬] অক্টোবর মাসে তার অনুরোধে তাকে ভারতে বদলী করা হয়। থিমাইয়া নবগঠিত ব্যাটেলিয়ন ১৯তম হায়দ্রাবাদ রেজিমেন্টের ৮ম ব্যাটেলিয়ন (৮/১৯ হায়দ্রাবাদ) -এর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড নিযুক্ত হন যেটা পরে ৮ম কুমায়ুন রেজিমেন্ট হিসেবে পরিবর্তিত হয়, ব্যাটেলিয়নটি আগ্রাতে ছিলো তখন। এরপর তিনি কোয়েটা স্টাফ কলেজে পড়তে আসেন। স্টাফ কলেজের পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর তিনি নিয়োগ পান ২৫ পদাতিক ডিভিশনে জেনারেল স্টাফ অফিসার ২ হিসেবে।
২৫ পদাতিক ডিভিশনে নিয়োগ পাওয়ার সাথে সাথেই থিমাইয়া জঙ্গল যুদ্ধের প্রশিক্ষণ লাভ করেন এবং তাদের সেনাদলটিকে জাপানী সেনাবাহিনীর সাথে লড়াইয়ের জন্য বার্মায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, সেখানে পরে আরাকান অভিযান ১৯৪২–৪৩ অনুষ্ঠিত হয়। থিমাইয়া খুব দ্রুত ব্যাটেলিয়ন কমান্ডারের পদ লাভ করেন যে ব্যাটেলিয়নে তিনি সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন, যুদ্ধে তার নেতৃত্ব সামরিক বাহিনীর উর্ধ্বতন মহলে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে এবং থিমাইয়া তার যুদ্ধ অবদানের জন্য ডিএসও (ডিসটিংগুইশড সার্ভিস অর্ডার) পদক লাভ করেন, একই সাথে তাকে মেনশন্ড ইন ডেসপ্যাচেস পদকও দেওয়া হয়।[৭]
তিনি রাতারাতি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করে ২৬৮ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি এই ব্রিগেডের কমান্ডেই ছিলেন।
স্বাধীন ভারত
১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে থিমাইয়া মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ৪ পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার হন। এরপর কমান্ডার, ১৯ পদাতিক ডিভিশন, সেনা সদরে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল এবং পর্যায়ক্রমে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান ১৯৫৩ সালের জানুয়ারিতে এবং ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে তাকে একটি কোরের কমান্ডার (পরে দক্ষিণ কমান্ড) হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয় (বর্তমানে সাউদার্ন কমান্ড)।
১৯৫৭ সালের ৭ মে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদ 'সেনাবাহিনী প্রধান'-এর পদে আসীন হন।
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.