কাজী মুহাম্মদ শফিউল্লাহ (জন্ম: ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪) যিনি কে এম শফিউল্লাহ নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার। তিনি ৩নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার এবং এস ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন।[1] তিনি সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি।[2] তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন।
মেজর জেনারেল কাজী মুহাম্মদ শফিউল্লাহ | |
---|---|
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ১৯৯৬ – ২০০১ | |
পূর্বসূরী | আবদুল মতিন চৌধুরী |
উত্তরসূরী | আবদুল মতিন চৌধুরী |
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার | |
কাজের মেয়াদ ৩১ জুলাই ১৯৮৭ – ৩ জুন ১৯৯১ | |
রাষ্ট্রপতি | শাহাবুদ্দিন আহমেদ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ |
পূর্বসূরী | মীর শওকত আলী |
উত্তরসূরী | রেজাউল করিম |
২য় সেনাবাহিনী প্রধান | |
কাজের মেয়াদ ৭ এপ্রিল ১৯৭২ – ২৪ আগস্ট ১৯৭৫ | |
রাষ্ট্রপতি | বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খন্দকার মোশতাক আহমেদ |
উপরাষ্ট্রপতি | মোহাম্মদউল্লাহ |
পূর্বসূরী | জেনারেল এম এ জি ওসমানী |
উত্তরসূরী | মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ |
পুরস্কার | বীর উত্তম |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | বাংলাদেশ পাকিস্তান (১৯৭১-এর আগে) |
শাখা | |
কাজের মেয়াদ | ১৯৫৫–১৯৭৫ |
পদ | মেজর জেনারেল |
ইউনিট | ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট |
কমান্ড |
|
যুদ্ধ | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
কাজী মুহাম্মদ শফিউল্লাহর জন্ম ১৯৩৪ সালের ২সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে। তার বাবার নাম কাজী আব্দুল হামিদ এবং মায়ের নাম রজ্জব বানু।[3] ৩ ভাই ৬ বোনের মধ্যে শফিউল্লাহ ছিলেন ৬ষ্ঠ। মুড়াপাড়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপরে মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার আগেই তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। কমিশন লাভ করেন ১৯৫৫ সালে। ১৯৬৮ সালে সেনা স্টাফ কলেজ (পাকিস্তান) থেকে পিএসসি পাস করেন।[4]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯ মার্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঢাকা ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার থেকে ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাব জয়দেবপুরে আসেন ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। সে সময় কে এম শফিউল্লাহ ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন। ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব ফিরে যাবার পর কে এম শফিউল্লাহর নেতৃত্বে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ৩টি ব্যাটেলিয়ান নিয়ে জয়দেবপুর থেকে গফরগাঁও হয়ে সিলেটের তেলিয়া লাগয় মাতৃমার পর সেক্টর ও এস ফোর্স গঠন করে যুদ্ধ শুরু করেন। ২৯ মার্চ ঢাকা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। কে এম শফিউল্লাহর নেতৃত্বে প্রথমে সেক্টর ও পরে এস ফোর্স গঠন করে প্রথমে সিলেটসহ বিরাট একটি অংশ মুক্তাঞ্চল গড়ে তোলা হয়। তারা একদিকে সিলেট আর একদিকে আশুগঞ্জ, ভৈরব ও মাধবপুর শত্রুমুক্ত করেন। তার নেতৃত্বে আশুগঞ্জ, ভৈরব, লালপুর, আজবপুর, সরাইল, শাহবাজপুর, মাধবপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর শত্রুমুক্ত হয়ে যায়।[5][6]
স্বাধীন বাংলাদেশে কর্মজীবন
১৯৭১ সালে মেজর পদে মুক্তিযুদ্ধ করেন কে এম শফিউল্লাহ; যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি লেঃ কর্নেল পদে উন্নীত হন। স্বাধীনতার পরে তিনি লেঃ কর্নেল পদবীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবগঠিত ৪৬ ব্রিগেডের প্রথম কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন[7]; ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ১৯৭২ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবস কুচকাওয়াজে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সৈন্যদলের কুচাকাওয়াজের মূল নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন ৪৬ ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল শফিউল্লাহ,[8] ঐ কুচকাওয়াজের প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এম এ জি ওসমানী। ১৯৭২ সালের ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান কে এম শফিউল্লাহকে ডেকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিতে বলেন, তখন দেশের সামরিক বাহিনীর প্রধান অধিনায়কের দায়িত্বে জেনারেল এম এ জি ওসমানী ছিলেন। শফিউল্লাহর পদবী তখন কর্নেল ছিলো, তিনি সেনাপ্রধান হতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিতে হয়। ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি ব্রিগেডিয়ার এবং একই বছরের ১০ অক্টোবর তিনি মেজর জেনারেল পদবীতে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন, তার সঙ্গে একই দিনে জিয়াউর রহমানও মেজর জেনারেল পদবীতে পদোন্নতি পেয়েছিলেন যিনি তখন সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ২৪শে আগস্ট পর্যন্ত শফিউল্লাহ সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ১৬ বছর তিনি বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইডেন আর ইংল্যান্ড। ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন।[9]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.