উল্লাপাড়া উপজেলা বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।[2]
উল্লাপাড়া | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে উল্লাপাড়া উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°১৯′১০″ উত্তর ৮৯°৩৪′৮″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
জেলা | সিরাজগঞ্জ জেলা |
নির্বাচনী | ৬৫,সিরাজগঞ্জ-৪ উল্লাপাড়া। |
সরকার | |
• সংসদ সদস্য | শফিকুল ইসলাম শফি |
আয়তন | |
• মোট | ৪১৪.৪৩ বর্গকিমি (১৬০.০১ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ৫,৪০,১৫৬ |
• জনঘনত্ব | ১,৩০০/বর্গকিমি (৩,৪০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৬৭৬০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫০ ৮৮ ৯৪ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান ও আয়তন
উল্লাপাড়া উপজেলা পদ্মা, যমুনা এবং এদের উপনদী দ্বারা বাহিত পলল দ্বারা সৃষ্ট জেলায় অবস্থিত। এ উপজেলা ২৪°১২' উত্তর সিরাজগঞ্জ অক্ষাংশ থেকে ২৪°২৬' উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত এবং ৮৯°২৫' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৮৯°৩৫' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত। উল্লাপাড়া উপজেলার উত্তরে রায়গঞ্জ উপজেলা ও তাড়াশ উপজেলা, দক্ষিণে শাহজাদপুর উপজেলা, ও পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলা, পূর্বে বেলকুচি উপজেলা ও কামারখন্দ উপজেলা, পশ্চিমে তাড়াশ উপজেলা ও পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলা। উল্লাপাড়া একটি বৃহৎ উপজেলা যার আয়তন ৪১৪.৪৪ বর্গ কিলোমিটার। সমুদ্র সমতল থেকে এর উচ্চতা ১০/১২ ফুট। প্রতি বছর বর্ষার সময় এর অধিকাংশ অঞ্চল প্লাবিত হয়। এ অঞ্চলে কোনো পাহাড় বা মালভূমি নেই। উল্লাপাড়ার পশ্চিমাংশে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি জলাভূমি ও ২৪ টি বিল রয়েছে। এ উপজেলার উপর দিয়ে করতোয়া, ফুলজোর, জপজাপিয়া, কমলা দরগাদহ ইত্যাদি নদী প্রবাহিত হচ্ছে।
প্রশাসনিক এলাকা
উপজেলা
উল্লাপাড়া থানা (বর্তমানে উপজেলা) ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। উপজেলাটির ১টি পৌরসভা,৩টি থানা ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ, ২৬৩টি মৌজা এবং ৪৩৩টি গ্রাম নিয়ে গঠিত।[3] থানাগুলো হলোঃ
- উল্লাপাড়া থানা
- সলঙ্গা থানা
- হাটিকুমরুল থানা
ইউনিয়ন তালিকাঃ
পৌরসভা
উল্লাপাড়া পৌর শহর ৯টি ওয়ার্ড ও ২৫টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। ১৯৯৪ সালে এটি পৌরসভায় উন্নীত হয়। পৌরসভার আয়তন ১২.৭০ বর্গ কিলোমিটার। পৌর এলাকায় মোট জনসংখ্যা ৩৬৭৬৬ (পুরুষ ৫২.৩১%, মহিলা ৪৭.৬৯%) এবং ঘনত্ব প্রতি কিলোমিটারে ২৮৯৫ জন। শহর এলাকায় শিক্ষার হার ৪৬.৩৩%। শহরটিতে ২টি ডাকবাংলো রয়েছে।[3]
ইতিহাস
উল্লাপাড়া অঞ্চল কখন গড়ে উঠেছে তার সঠিক কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি । তবে ভূ-তত্ত্ববিদগণের মতে এবং বিভিন্ন পরিব্রাজকদের বর্ণনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রায় ৪৫০০ খ্রিস্টপূর্বে জয়পুরহাট,দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহীর অংশ এবং পাবনার পশ্চিমাংশ নিয়ে বরেন্দ্রভূমি গড়ে উঠে। এর বহু শতাব্দী পরে বিভিন্ন নদীবাহিত পলল সঞ্চিত হয়ে সিরাজগঞ্জ,টাঙ্গাইল,ময়মনসিংহ,মুন্সীগঞ্জ,পাবনা প্রভৃতি জেলা গড়ে ওঠে । তখন যমুনা নদীর অস্তিত্ব ছিল না এবং সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল ছিল ময়মনসিংহের অংশ । চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এর মতে সপ্তম শতাব্দীর পর থেকে সিরাজগঞ্জ জেলায় জনবসতি গড়ে ওঠে । ঐ সময় নবগঠিত এ অঞ্চল বছরের প্রায় আট/নয় মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকত । হিউয়েন সাং এর বর্ণনা থেকে আরো জানা যায় যে, করতোয়া নদীর পশ্চিমাঞ্চল ছিল পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের অন্তর্গত । ধারণা করা হচ্ছে উল্লাপাড়াও এই রাজ্যের অন্তর্গত ছিল । পরবর্তীতে নদীবাহিত পলি সঞ্চায়নের মাধ্যমে উল্লাপাড়া প্লাবন সমভূমিতে পরিণত হয় । মুসলিম শাসনকাল(১২০৪-১৭৫৭) এবং ব্রিটিশ আমলে(১৭৫৭-১৯৪৭) নৌ-পথে ও স্থলপথে উল্লাপাড়ার সাথে যোগাযোগ স্থাপন হয় এবং ব্যবসায়িক কেন্দ্র গড়ে ওঠে ।
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০১১ সালের আদমশুমারীর হিসেব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ৫,৪০,১৫৬ জন এবং ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১৩০৩ জন। উল্লেখ্য যে, ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী উল্লাপাড়া পৌরসভার জনসংখ্যা ৩৬,৭৩৭ জন।[4] নিচে ছকের মাধ্যমে উল্লাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন আদমশুমারীর পরিসংখ্যান তুলে ধরা হল-
আদমশুমারী | মোট জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে) |
---|---|---|
২০১১ | ৫৪০১৫৬ | ১৩০৩ |
২০০১ | ৪৪৯২৪৩ | ১০৮৪ |
১৯৯১ | ৩৯৯০৭৪ | ৯৬৩ |
শিক্ষা
উল্লাপাড়া উপজেলার শিক্ষার হার ৩২.২২%। উল্লাপাড়ায় বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে কলেজ ২০টি, উচ্চ বিদ্যালয় ৫৪টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫টি, মাদ্রাসা ৯০টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৬টি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৬টি। এছাড়াও বেশকিছু কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সঙ্গীত বিদ্যালয়, স্যাটেলাইট স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন রয়েছে।
- উল্লাপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়,উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ
- বড় পাঙ্গাসী দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়, উল্লাপাড়া
- জাতীয় তরুণ সংঘ বড় পাঙ্গাসী ডিগ্রী কলেজ, উল্লাপাড়া।
- বড় পাঙ্গাসী গার্লস হাইস্কুল, উল্লাপাড়া।
- নুরুন্নাহার জয়নাল আবেদীন বড় পাঙ্গাসী দাখিল মাদ্রাসা, উল্লাপাড়া।
- বড় পাঙ্গাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উল্লাপাড়া।
- বড় পাঙ্গাসী হাফিজিয়া মাদ্রাসা, উল্লাপাড়া।
- সরকারি আকবর আলী কলেজ, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ
- কয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কয়ড়া,উল্লাপাড়া।
- কয়ড়া ফাজিল মাদ্রাসা, কয়ড়া, উল্লাপাড়া।
- দাদপুর উচ্চ বিদ্যালয়, কয়ড়া, উল্লাপাড়া।
- কয়ড়া খাদিজা সাঈদ উচ্চ বিদ্যালয়,কয়ড়া, উল্লাপাড়া।
- উল্লাপাড়া বিজ্ঞান কলেজ, সিরাজগঞ্জ
- মোমেনা আলি বিজ্ঞান স্কুল, উল্লাপাড়া
- আনোয়ারা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জ
- উল্লাপাড়া মার্চেন্টস পাইলট সরকারী স্কুল এন্ড কলেজ।
- গয়হাট্টা সালেহা ইসহাক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
- উধুনিয়া মানিকজান উচ্চবিদ্যালয়।
- তেলিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতন।
- পাঁচলিয়া বদরুল আলম উচ্চ বিদ্যালয়।
- মোহনপুর কে.এম. ইনষ্টিটিউশন
- বাঙালা কাজী ছাইদুর রহমান স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়
- বংকিরাট উচ্চ বিদ্যালয়।
- সড়াতৈল মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়।
- উনুখা পাগলা পীর উচ্চ বিদ্যালয়।
- মোহনপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।
- চয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়।
- এলংজানী উচ্চ বিদ্যালয়।
- নলসোন্দা উচ্চ বিদ্যালয়।
- ধামাইকান্দি কেফায়েত আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়।
- বিনায়েকপুর উচ্চবিদ্যালয়।
- পিয়ারাপুর কুচিয়ামারা উচ্চ বিদ্যালয়।
- হাওড়া উচ্চ বিদ্যালয়।
- সলপ উচ্চ বিদ্যালয়।
- কালিয়াকৈড় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়।
- সিরাজগঞ্জ রোড চৌরাস্তা উচ্চ বিদ্যালয়।
- বড়হর স্কুল এন্ড কলেজ।
- চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- পূর্বদেলুয়া উচ্চ বিদ্যালয়
- ধরইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- চড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
অর্থনীতি
উল্লাপাড়ার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। উপজেলার মোট ৪৩.৩৪% কৃষিকাজে জড়িত। প্রধাণ অর্থকারী ফসলের মধ্যে বয়েছে - ধান, পাট, গম, সরিষা ইত্যাদি ।[3]
প্রত্নতত্ত্বিক নিদর্শন
উল্লাপাড়া উপজেলার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নিদর্শন হচ্ছে[3] -
- পনের শতকের প্রাচীণ মাক্কাউলিয়া মসজিদ (দারোগাপাড়া)
- হযরত বাগদাদী 'র মাজার (গয়হাট্টা)
- আঙ্গারু পাঁচ পীরের মাজার (আঙ্গারু)
- চৌদ্দ শতকের নবরত্ন মন্দির (হাটিকুমরুল)
- উপজেলার সলপ ইউনিয়নে রয়েছে হিন্দু জমিদার বাড়ি ও পুকুর।
- শাহ্ সুফি সাহান শাহ্ বাগদাদী রহমতুল্লহ্'র মাজার শরীফ পূর্বদেলুয়া, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ।
ঐতিহাসিক ঘটনা
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন, ২০শে এপ্রিল, ১৯৭১ সালে উল্লাপাড়া উপজেলার ঘাটিনা রেলওয়ে ব্রীজের নিকটে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লড়াই সংগঠিত হয় এবং লড়াইয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২০জন সৈন্য নিহত হয়।[3]
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
- মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ[5]
- ফজলে লোহানী;
- ফতেহ লোহানী (মিডিয়া ব্যক্তিত্ত্ব);
- কামাল লোহানী, পরিচালক বাংলা একাডেমী
- মলয় ভৌমিক: বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত।
- এইচ টি ইমাম (সাবেক আমলা, উপদেষ্টা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ);
- আকবর আলী -সাংসদ, ব্যবসায়ী ও উল্লাপাড়া বিজ্ঞান কলেজ এবং বড়হর স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠাতা;
- শফিকুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংসদ;
- আবুহেনা মোস্তফা কামাল।
- তানভীর ইমাম, সংসদ সদস্য।
বিবিধ
উল্লাপাড়ার বেতকান্দী গ্রামের বাজারে, যা সলপ স্টেশন নামে পরিচিত, সেখানে নিয়মিত সুস্বাদু ঘোল যা উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ট্র ঘোল বলে লোকমুখে প্রচারিত। প্রতিবছর এখানে ঘোল উৎসব পালিত হয়।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.