Loading AI tools
২০১০ এর পাকিস্তানি অপরাধ মামলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আশিয়া বিবি ব্লাসফেমি নামক কেস পাকিস্তানি খ্রিস্টান নারী আশিয়া নওরীনের বিরুদ্ধে (উর্দু: آسیہ نورین – Āsiyaah Naurīn [ˈɑːsiɑː nɔːˈriːn], জন্ম আনু. ১৯৭১)[1] গঠিত হয়েছিল। বর্তমানে তিনি আসিয়া বিবি নামে সম্যক পরিচিত। তিনি ব্লাসফেমি আইনে অভিযুক্ত হওয়ায় পাকিস্তানের একটি আদালত ২০১০ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।[2] ২০১৮ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের উচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রমাণের অপর্যাপ্ততার জন্য তাকে বেকসুর খালাস দেয়।[3]
আসিয়া বিবি বনাম রাষ্ট্র | |
---|---|
আদালত | পাকিস্তানের প্রধান আদালত |
সিদ্ধান্ত | অক্টোবর ২০১৮ |
প্রতিলিপি | বিচারকাজ |
মামলার ইতিহাস | |
এ থেকে আপীল | শেখপুরা জেলার বিচারিক আদালত |
এতে আপীল | লাহোর উচ্চ আদালত (১৬ অক্টোবর ২০১৪ খ্রিষ্ঠাব্দে বাতিল হয়) |
পরবর্তীকালে কার্য(গুলি) | পাকিস্তানের প্রধান আদালত (২০১৫ খ্রিষ্ঠাব্দে বিচারকার্যের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষ না হওয়া অবধি মৃত্যুদণ্ডাদেশ সাময়িকভাবে বাতিল হয়)। ২০১৮ খ্রিষ্ঠাব্দে মৃত্যুদণ্ডাদেশ সম্পুর্ণভাবে বাতিল হয় |
মামলার মতামত | |
সিদ্ধান্ত প্রদান করেন | মিলান সাকিব নিসার |
সম্মতি দেন | আসিফ সাঈদ খোসা |
মূলশব্দ | |
২০০৯ সালের জুন মাসে নওরীন বেরী ফল সংগ্রহের সময় তার সহযোগীদের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়, এরপরই তার বিরুদ্ধে নবী অবমাননার অভিযোগ উঠে।[4][5] তিনি পরবর্তীকালে গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। ২০১০ সালের নভেম্বরে, শেখপুরা আদালতের বিচারক তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। এরপর আসিয়া বিবি লাহোরের উচ্চ আদালতে আপীল করেন। আর তখনি এ মামলা বিশ্বব্যাপীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভয়েস অব মার্টায়ারের মতো বিভিন্ন সংগঠন তার মুক্তির জন্য পিটিশন দাখিল করে।[6] তার মধ্যে একটি সংগঠন ৪ লক্ষ স্বাক্ষর সংগ্রহ করে। পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট এবং পোপ ফ্রান্সিস তার মুক্তির জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান করে।[7] তবে আসিয়া তার নিজের দেশের মানুষ থেকেই সবচেয়ে কম সহানুভূতি পান। বিশেষত দেশটির ইসলামী ধর্মীয় নেতারা বিচারের তোয়াক্কা না করে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে আহ্বান জানান। সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টি ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সালমান তাসির আসিয়ার পক্ষ সমর্থন করায় এবং ব্ল্যাসফেমী আইনের বিরোধিতা করায় উভয়েই হত্যার শিকার হন।[8] নওরীনের পরিবার অসংখ্য মৃত্যুর হুমকি পাওয়ার পর লুকিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মাওলানা ইউসুফ কোরেশী নামক একজন ধর্মীয় নেতা নওরীনকে হত্যার জন্য ৫ লক্ষ পাকিস্তানি রুপি অর্থমূল্য দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
৩১ অক্টোবর ২০১৮ সালে পাকিস্তানের উচ্চ আদালত আসিয়াকে[3] বেকসুর খালাস দেন। রায়ে বলা হয়, যারা অভিযোগ দাখিল করেছেন, তাদের কথাবার্তা অসংলগ্ন পরস্পরবিরোধী। আসিয়া এজাতীয় কিছু বলেছেন কিনা তা যেমন নিশ্চিত না। পুরো ঘটনাগুলোই এক প্রকার ধোঁয়াশায় পরিপূর্ণ।[9] এ রায়ের ফলে ইসলামী দলগুলো বারুদের মতো ফেটে পরে। নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রধান প্রধান সড়কে তারা ভাঙচুর চালাতে থাকে।[10][11] অন্যদিকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও খ্রিস্ট ধর্মীয় সংগঠন এ রায়কে স্বাগত জানায়।[12]
২ নভেম্বর ২০১৮ খ্রিষ্ঠাব্দে, ইমরান খানের নের্তৃত্বে পাকিস্তান সরকার তেহেরিক-ই-লাব্বাইক দলটির সাথে একটি সমঝোতায় আসে। দলটির সাথে প্রশাসনের চুক্তি হয় আসিয়া বিবিকে দেশত্যাগ করতে দেওয়া হবে না।[13][14][15][15][16] তেহেরিক-ই-লাব্বাইকের সাথে সরকারের এই চুক্তির ফলে পাকিস্তান সরকারের উপর অভিযোগ উত্থিত হয় যে, প্রশাসন উগ্রপন্থীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।[17] ৭ নভেম্বর ২০১৮ খ্রিষ্ঠাব্দে, আসিয়া বিবি মুলতানে অবস্থিত নারীর জন্য বিশেষায়িত জেল থেকে মুক্তি পান।
পাকিস্তানে ব্লাসফেমী আইনের কারণে বিভিন্ন সময় ৬০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। সেই সাথে বিভিন্ন সময় ব্লাসফেমীকে জুজু করে সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়েছে[18] এবং একইসাথে কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাইলে ধর্ম অবমাননাকে অজুহাত করে এই আইনের অপপ্রয়োগ করা হয়েছে।[19] ১৯৮৭ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ১৩০০ জন মানুষ ব্লাসফেমির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন এবং আসিয়া বিবি প্রথম নারী যিনি এই আইনের প্রয়োগে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদন্ড দণ্ডিত হয়েছিলেন।[20][21]
লাহোর থেকে ৩০ মাইল দূরে অবস্থিত[22] পাঞ্জাবের শেখপুরা জেলার ইত্তান ওয়ালী নামক একটি গ্রামে আশিয়া নওরীন জন্মগ্রহণ করেছেন এবং সেখানেই বেড়ে উঠেছেন।[23][24] তার গ্রামটিতে এমনকি পাকিস্তানের সর্বত্র দরিদ্র খ্রিস্টানরা পয়ঃনিষ্কাশন বা পরিস্করণের মত নিম্নস্তরের পেশা অধিগ্রহণ করে থাকে।[22] একজন রোমান ক্যাথলিক [25] নওরীন তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য শেখপুরায় খেতিমজুর হিসেবে কাজ করতেন।[25] তার সাথে আশিক মাশিয়ার বিবাহ হয়। আশিকের পূর্বঘরের তিনজন সন্তান ছিল[26] এবং নওরীনের সাথে বিবাহের পর তাদের ঘরে আরো দুইজন সন্তান জন্মগ্রহণ করে। আশিক ইট ভাঙার কাজ করতেন।[27][28] একমাত্র তাদের পরিবারই ওই গ্রামটিতে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছিল।[29] কারারুদ্ধ হওয়ার পূর্বে সেই গ্রামে তার সহকর্মীরা তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য বারবার চাপ দিয়েছিল।[30]
২০০৯ সালের জুনে, নওরীন তার সহকর্মী মহিলাদের সাথে একত্রে শেখপুরা জেলার একটি ক্ষেতে ফলসা বেরী নামক ফল সংগ্রহ করছিলেন।[25] মাঠ সংলগ্ন কুয়া থেকে পানি আনার জন্য তাকে বলা হয়;[21] তিনি কথামত পানি আনয়নের উদ্দেশ্যে সেখানে যান। তার তৃষ্ণা পাওয়ায় এবং কুয়ার কাছে একটি পুরাতন ধাতুর তৈরী কাপ পরে থাকতে দেখে তিনি কাপ দিয়ে পান করেন।[26][31] মুসারাত নামক নওরীনের এক প্রতিবেশী নওরীনকে পানি পান করতে দেখেন। মুসারাতের সাথে নওরীনের পরিবারের পূর্ব থেকেই জমিজমা সংক্রান্ত একটি বিরোধ চলছিল।[1] মুসারাত অগ্নিশর্মা হয়ে নওরীনকে বলেন, যে পাত্র দিয়ে মুসলিমরা পানি পান করে সেই একই পাত্র দিয়ে খ্রিস্টানরাও পানি পান করবে এটা ইসলামে নিষিদ্ধ। সেখানে অবস্থিত কিছু কর্মী পাকিস্তানের বর্ণপ্রথাকে ব্যবহার করে নওরীনকে খ্রিস্টান হওয়ার সুবাদে নাপাক,[4][5] অপরিচ্ছন্ন বলে অভিহিত করে।[26] নওরীনের বর্ণনা মতে মুসারাত তাকে বলেছে: "সত্য, তুমি একজন নোংরা খ্রিস্টান! তুমি আমাদের পানি দূষিত করেছ এবং তোমার কত বড় সাহস, তুমি নবীকে নিয়ে কথা বলো! মুঢ় দুশ্চরিত্রা, তোমার যীশুর তো বাবারই ঠিক ঠিকানা নাই। সে ছিল একটা বেজন্মা। তুমি কী তা জানো না?"[26] নওরীন সেই দিনের কথা স্মরণ করে বলে যখন তারা খ্রিস্টান ধর্মের বিরুদ্ধে অবমাননাকর বক্তব্য দিচ্ছিল এবং আমাকে ইসলাম ধর্মে রুপান্তরের জন্য বারবার চাপ দিচ্ছিল, আমি তখন বলেছিলাম, "আমি আমার ধর্ম এবং যীশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করি। তিনি মানবজাতির পাপের বোঝাকে মাথায় নিয়ে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুকে গ্রহণ করেছিলেন। তোমার নবী মুহম্মাদ মানবজাতিকে বাঁচাতে কী করেছে হে? আর আমিই বা কেন ধর্মান্তরিত হব, তোমরা কেন নও?"[26][31][32] এরপর এক তীব্র বাকযুদ্ধের শুরু হয়।[33]
নওরীনের বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনার পাঁচদিন পরে সে যে মাঠে ফল সংগ্রহ করত সেখানে মুসারাত উত্তেজিত জনতাকে নিয়ে চলে আসে। তার বিরুদ্ধে সর্বসম্মুখে অভিযোগ করা হয়, সে নবী মুহম্মদকে অপমান করেছে।[26] এরপর জনতা তাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে থাকে, তার নাকে ঘুষি মারা হয়।[26] স্থানীয় ইমাম তার বয়ানে বলে, নওরীনের সম্মুখে দুইটি রাস্তা খোলা; হয় নওরীনকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে অথবা মৃত্যুবরণ করতে হবে। নওরীন জানিয়ে দেয়, সে তার ধর্ম ত্যাগ করতে পারবে না। কিন্তু তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত কারণ মুসারাত তার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করেছে।[26] তারা তার অভিযোগে যা বলেছে, তা পরবর্তীতে আদালতের রায়ে উল্লেখিত তার বয়ান হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন।[34] নওরীনকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে উত্তেজিত জনতা তার ঘরে আসে, তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রহার করে।[21] পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং পাকিস্তানের পেনাল কোডের ২৯৫ সি ধারা অনুযায়ী তাকে গ্রেফতার করে।[20]
স্থানীয় পুলিশ অফিসার মুহম্মদ ইলিয়াস সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবী করেন, নওরীন সেদিনের বাকবিতণ্ডায় বলেছিল, "কুরান হচ্ছে জাল এবং তোমাদের নবী মৃত্যুর আগে একমাস বিছানায় শুয়ে ছিল কারণ তার মুখে এবং নাকে পোকা হয়েছিল। তিনি খাদিজাকে শুধুমাত্র টাকার লোভে বিবাহ করেছিল এবং তার সব সম্পত্তি নিজের হস্তগত করার পর তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল"।[35] গ্রামের ইমাম কারী মুহাম্মদ সেলিম, যার কাছে নওরীন সহকর্মীরা ব্লাসফেমি অভিযোগ করেছিলেন, দাবি করেন যে নওরীন তার কাছে সব অভিযোগ স্বীকার করেছে এবং ক্ষমা চেয়েছে।[35] পক্ষান্তরে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন দ্বারা প্রকাশিত চিঠিতে উদ্ধৃত করা হয়:[36]
ঘটনার পাঁচদিন পরে স্থানীয় মুসলিম নেতা ও ইমাম কারী সালেম, হঠাৎই ঘটনার মধ্যে প্রবেশ করেন এবং এলাকার লোকজনকে উত্তেজিত করতে থাকেন, এই বলে যে, নওরীন নবী অবমাননা করেছে। আয়েশা বিবির স্বীকারোক্তি আদায়ের কোনো উপায় না পেয়ে শেষমেষ তিনি মসজিদের লাউডস্পিকারের সাহায্যে, জনতাকে আহ্বান করেন, যাতে সবাই জড়ো হয়, কারণ নওরীন ধর্ম অবমাননা করেছে। স্নানীয় লোকজন নওরীনকে তার সন্তানের সামনেই তীব্রভাবে প্রহার করে।[36]
তাকে এরপরপরই পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে কোনো সরকারী/পুলিশি অভিযোগ গঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত একবছরের বেশি সময় ধরে তিনি কারারুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।[37]
নওরীন ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে প্রত্যাখান করে বলে তার প্রতিবেশী শুধুমাত্র পূর্বোক্ত কিছু সমস্যার জেরে এই ষড়যন্ত্রমূলক কাজ করেছে।[29][37][38] ২০১০ সালের নভেম্বরে পাঞ্জাবের শেখপুরা জেলার আদালতের বিচারক মুহম্মদ নাভেদ ইকবাল তার ফাসির দণ্ডাদেশ দেয়। অধিকন্তু তাকে ১১০০ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়।[39]
ধর্ম অবমাননার দরুণ মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়েছেন এরূপ ব্যক্তিদের মধ্যে নওরীনই প্রথম নারী পাকিস্তানি।[27] নওরীন তার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তির ঘটনার দিনকে নিম্নোক্তভাবে বর্ণনা করেছেন:
আমি নিজের মাথাকে দুই হাতের মধ্যে গুজে রেখে একাকী কাদঁছিলাম। একজন দরিদ্র ক্ষেতমজুরের মৃত্যুদণ্ডাদেশে মানুষের হাততালির শব্দ, সংঘবদ্ধ মানুষের এই তীব্র ঘৃণাবোধ আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। আমি তাদের দেখছিলাম না। কিন্তু আমি তাদের শব্দ শুনছিলাম। সেখানে উপস্থিত জনতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিচারককে নির্দেশ দিচ্ছিল: "তাকে হত্যা করো, হত্যা করো! আল্লাহু আকবর!" উৎসাহিত জনতা আদালতের দ্বার ভেঙে ফেলেছিল, তারা "পবিত্র নবীর অবমাননার জন্য, আল্লাহ মহান" এই বলে স্লোগান দিচ্ছিল। আমাকে সেসময় পুরাতন এক বস্তার মত ভ্যানগাড়িতে ছুড়ে ফেলা হয়...... আমি সেদিন তাদের চোখে মানবতাকে হারিয়ে যেতে দেখেছিলাম।[40]
নওরীনের স্বামী ৫১ বছর বয়সী আশিক মাইসী উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে ঘোষণা দেন,[41] যার নিষ্পত্তি লাহোরের উচ্চ আদালতে হয়ে থাকে।[20] এক মাস পরে রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারির হয়ে তদন্ত কমিটিতে কাজ করা সালমান তাসীর বলেন, উচ্চ আদালত আসিয়া নওরীনের শাস্তি মওকুফ না করলেও খুব সম্ভবত তিনি ক্ষমা পাবেন।[42] জারদারির উপর আসিয়া বিবিকে ক্ষমা ঘোষণার চাপ প্রয়োগ করা হয় কিন্তু উচ্চ আদালত রাষ্ট্রপতির ক্ষমা আসিয়া বিবির জন্য অকার্যকর বলে ঘোষণা দেন, যা আজ পর্যন্ত বহাল আছে।[43][44] আদালতের প্রতিলিপিতে একাধিক গড়মিল থাকলেও সাংবাদিকরা জানান, তারা আসিয়া বিবির মামলা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন করবে না, পাছে তারাও ব্লাসফেমীর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়।[34]
আসিয়া বিবিকে ৮-বাই-১০-ফুট (২.৪ মি × ৩.০ মি) সেলে রাখা হয়,[45] লাহোরের এই হাজতে কোনো জানালা ছিলো না।[23] আততায়ী দ্বারা হত্যার আগে তাসীর, তার স্ত্রী- আমনা ও কন্যা শেহরবানো কয়েকবার আসিয়া বিবির সাথে এই জেলে দেখা করতে যান।[22] অবশ্য পরবর্তীতে পাকিস্তানের আদালত থেকে আসিয়া বিবি শুধুমাত্র তার অর্ধাঙ্গের সাথেই দেখা করতে পারবে বলে নির্দেশ দেয়া হয়।[23] লাহোর হাজতে নির্বাহী পরিচালক বলেন, অন্যান্য হাজতবাসীর মতই আসিয়া বিবির সাথে আচরণ করার ইচ্ছে থাকলেও, আসিয়ার নিরাপত্তার জন্যই তাকে অন্যান্য হাজতবাসীর থেকে আলাদা রাখা হয়েছিল।[46] কেননা ধর্মনিন্দার অভিযোগে গ্রেফতার পূর্বের হাজতবাসীরা হাজতে থাকাকালীন অবস্থাতেই হত্যার শিকার হয়েছিলেন।[29][47] বিষ প্রয়োগের ভয়ে আসিয়া বিবিকে হাজতে নিজের খাবার নিজেই রান্না করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছিল।[48] মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থা, মাসিহি ফাউন্ডেশন হাজতে থাকাকালীন আসিয়া বিবির স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল বলে বর্ণনা করে।[37][49] অন্যান্য হাজতবাসী ছাড়াও হাজতে নিরাপত্তা রক্ষীরাও তাকে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।[30][50]
মানবাধিকার কমিশনের মতে, নওরীনের সাথে যা ঘটছে, তা বিরল নয়।[51] যদিও ধর্ম অবমাননা মামলায় পাকিস্তানে এখন অবধি কারো ফাসি হয় নি,[52] তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দীর্ঘসময় ধরে কারারুদ্ধ থাকতে হয়েছে।[50] মে ২০১৪ সালে নওরীনের আপিল শুনানীর দিন ৫ম বারের মত পিছানো হয়।[53]
নওরীনের দণ্ডাদেশের খবর শুনার পর, ধর্ম অবমাননা আইন নিয়ে পাকিস্তানের মানুষ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পরে। পাকিস্তানি মানবাধিকার কমিশন বিষয়ক গবেষক আলি দাওয়ান হাসান বলেন, "এ আইন এমন এক বৈধ অবকাঠামো গড়ে তুলেছে, যার মাধ্যমে যে কাউকে নিগৃহীত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত করার সুযোগ তৈরী করে।"[54] তিনি পরবর্তীতে এ আইনকে "নির্যাতনমূলক ও বৈষম্যমূলক" আইন বলে অভিহিত করেন।[29] পাঞ্জাব মুখ্যমন্ত্রী সালমান তাসির এবং পাকিস্তানি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাবাজ ভাট্টি উভয়েই নওরীনকে সমর্থন করেছিলেন।[29] নওরীীন পাকিস্তানি রাজনীতি বিজ্ঞানী রসূ বক্স ও স্থানীয় যাজক স্যামসন দিলওয়ারের সমর্থন পেয়েছিলেন।[27] নওরীনের কারারুদ্ধকরণ পাকিস্তানি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভীত-বিহ্বল করেছিল এবং উদারমনা মুসলিমরা হয়ে উঠেছিল বিচলিত।[46]
নওরীন পাকিস্তানের সাধারণ জনতার সমর্থন পাননি। শেখপুড়া এবং তৎসংশ্লিষ্ট অসংখ্য গ্রামাঞ্চল গুলোর মানুষরা ধর্ম অবমাননার এই আইনকে সমর্থন করেছিল। অনেকে তার মাথা কেটে ফেলার প্রতিও আহ্বান করেছিল।[46] জামাত উলেমা-ই-পাকিস্তান নামক সংগঠনের সদস্য মোহাম্মদ সালেম তাকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানোর আহ্বান করে মিছিল বের করেন।[27] নওরীনের দণ্ডাদেশের একমাস পরে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে মহব্বত খান মসজিদের ইমাম মাওলানা ইউসুফ কোরায়েশী, যে ব্যক্তি নওরীনকে হত্যা করতে পারবে তার পুরস্কার হিসেবে ৫ লক্ষ পাকিস্তানি রুপির ঘোষণা দেন।[55][23][20] একটি সমীক্ষায় ১০ মিলিয়ন পাকিস্তানি আসিয়া বিবিকে নিজ হাতে হত্যার ইচ্ছে প্রকাশ করে।[23] আসিয়ার গ্রামের মসজিদের ইমাম, কারী মোহাম্মদ সালিম এই রায়ে আনন্দে চোখে পানি এসে গিয়েছিল বলে বক্তব্য দেন। তিনি এও বলেন, আসিয়া বিবিকে ক্ষমা করা হলে বা মুক্তি দেয়া হলে, কিছু মানুষ "নিজ হাতে আইন তুলে নিয়ে" আসিয়াকে হত্যা করতো।[29] অবশ্য সাংবাদিক জুলু ম্যাকার্থি "দেশটির অধিকাংশ শান্তিপ্রিয় মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি" মৌলবাদীদের গর্জনে ঢাকা পড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন।[27]
নওরীনের পরিবার ক্রমাগত হত্যার হুমকি পেতে থাকায় নিজেদের লুকিয়ে ফেলেন।[29] তার স্বামী আশিক উদ্ধৃতিতে বলেন, তিনি অত্যন্ত ভীত এবং এজন্য সন্তানদের বাহিরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছেন। তিনি আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে বলেন, "নওরীন যদি মুক্তি পেয়েও যায়, সে কীভাবে বেঁচে থাকবে। সে কারাগার থেকে বের হলেই এই মোল্লারা তাকে মেরে ফেলবে, এ বিষয়টি তারা জনসম্মুখে জানিয়ে দিয়েছে।"[29] যতক্ষণ নওরীন কারারুদ্ধ থাকবে, ততক্ষণ তার পরিবার দেশ ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। ইতালি, ফ্রান্স এবং স্পেনসহ অসংখ্য দেশ নওরীন ও তার পরিবারকে গ্রহণ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে।[31]
৪ জানুয়ারী ২০১১ সালে ইসলামাবাদের কোশার মার্কেটে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সালমান তাসির আততায়ীর হাতে নিহত হন। আততায়ী ছিলেন তারই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ২৬ বছর বয়সী মালিক মুমতাজ হুসেইন কাদরী। নওরীনকে সমর্থন করায় এবং ধর্ম অবমাননা নামক আইনের বিরোধিতা করার জন্য কাদরী এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মুমতাজ কাদরীর মৃত্যদণ্ডাদেশ হয় এবং ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে তাকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হয়। তাসির প্রকাশ্যেই ধর্ম অবমাননা নামক আইনের সমালোচনা করতেন। তার মৃত্যুর পরদিন তালেবান এবং কিছু ধর্মীয় নেতার হুমকি সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর জানাজায় সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন,[33] যদিও পাকিস্তানি জনতার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ কাদরীর হত্যাকান্ডের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন এবং কাদরীকে নেতা হিসেবে অভিহিত করেন;[56] মুখ্যমন্ত্রীর হত্যাকান্ডের পর সহস্রাধিক সুন্নী মুসলিম ধর্ম অবমাননামূলক এই আইনের সমর্থনে মিছিল বের করেন।[22] ৫০০ বেরলভি আলেম নিজ নিজ অনুসারীদের তাসিরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারী করেন।[57] এর দ্বারাই দেশটির জনগণ মৌলবাদীদের মেনে নিচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।[57]
কারাগার থেকে জানানো হয়, তাসিরের মৃত্যুসংবাদ শুনার পরপরই নওরীন হাহাকার করে ফেটে পরেন। তিনি বারবার বলতে থাকেন, "মানুষটা এখানে এসেছিল এবং শুধুমাত্র আমার জন্যই তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছেন।"[46] লাহোরের প্রবীণ খ্রিস্টান ধর্মযাজক এন্ড্রু নিসারী পরিস্থিতিকে "তীব্র রকমের বিশৃঙ্খল" বলে ঘোষণা দেন।[46] সাত মাস পরে, তাসিরের ২৮ বছর বয়সী পুত্র শাহবাজ অপহৃত হন।[58] অপহরণের ৫ বছর পরে ৯ মার্চ ২০১৬ সালে শাহবাজকে লাহোরে খুঁজে পাওয়া যায়।[59]
সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টির মতানু্যায়ী, জুন ২০১০ সালে প্রথম তিনি মৃত্যুর হুমকি পান। সেই হুমকিতে বলা হয়েছিল, তার মাথা কেটে ফেলা হবে যদি তিনি ধর্ম অবমাননামূলক আইন পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি প্রতিবেদককে বলেন, "তিনি পাকিস্তানের জনগণের ন্যায় বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ" এবং নওরীনের মুক্তির জন্য তিনি মরতেও রাজি।[29] ২ মার্চ ২০১১ সালে, ভাট্টি বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন। অনুমান করা হয়, ধর্ম অবমাননা মূলক আইনের প্রসঙ্গে তার অবস্থানের দরুনই তাকে হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তানের মন্ত্রীসভায় তিনিই একমাত্র খ্রিষ্ঠান মন্ত্রী ছিলেন।[57]
নওরীনের মৃত্যুদণ্ড আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে শিরোনাম হয়,[60] একইসাথে বিভিন্ন বেসরকারী সংগঠন যারা নিপীড়িত খ্রিস্টানদের পাশে দাঁড়ায়, তারা এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই আইনের বিলোপের জন্য আহ্বান করে। [27][29][45] পোপ ষোড়ষ বেনেডিক্ট নওরীনের মুক্তির জন্য আহ্বান করে।[54] তার বিবৃতিতে তিনি বলেন, তিনি নওরীনের সাথে আত্মিক সংযোগ অনুভব করছেন।[61][62]
বিভিন্ন বহিঃস্থ মিডিয়াও তার স্বপক্ষে সোচ্চার হয়। মার্কিন সাংবাদিক জন এল. এলেন জেয়ার লিখেন, "নওরীন পাঁচ সন্তানের জননী হওয়ার পাশাপাশি পাঞ্জাবের সবচেয়ে বিখ্যাত নিরক্ষর খ্রিস্টান নারী"।[25] এলেনের মতে, নওরীন খ্রিস্টান কর্মীদের মাঝে সেলেব্রিটি বনে গিয়েছিলেন।[25] টুইটার, কনসার্ট সহ অনেক অনলাইন পিটিশনের মাধ্যমে তার জন্য নানারকম ক্যাম্পেইন করা হয়। যুক্তরাজ্যে অবস্থিত ওবারফিউজ নামক খ্রিস্টান পপ ব্যান্ড,[63] "ফ্রি আসিয়া বিবি" নামক একটি গান অনলাইনে প্রকাশ করে।[44] এছাড়াও বিভিন্ন বই ও প্রামাণ্যচিত্রে তাকে নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশ করা হয়।[23]
ভয়েস অব মার্টায়ারস নামক নিপীড়িত খ্রিস্টানদের জন্য পক্ষে দাঁড়ানো একটি সংগঠন ১০০-এর অধিক দেশ থেকে নওরীনের মুক্তির দাবীতে ৪ লক্ষ স্বাক্ষর সংগ্রহ করে।[45]
আয়ারল্যাণ্ডের মুসলিম ইমাম উমর আল কাদ্রি নওরীনের মুক্তির জন্য দাবী জানান। তিনি বলেন, "আসিয়া বিবির ঘটনা হলো এমন এক প্রকার ঘটনা যেখানে আসিয়া বিবি ধর্ম অবমাননামুলক কোনো বক্তব্য দিয়েছে, এমন বক্তব্যকেই অস্বীকার করছে। আসিয়াকে খালাস দেওয়ার জন্য যদি কোনো যুক্তির প্রয়োজন হয় তবে এ যুক্তিই যথেষ্ট। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পাকিস্তানের ধর্ম অবমাননামূলক যে আইন আছে তা প্রকৃত ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না।"[64]
লাহোরের উচ্চ আদালত (পাকিস্তানে প্রধান বিচারালয় একটি কিন্তু প্রদেশ ভিত্তিতে ৫টি আলাদা উচ্চ আদালত আছে) ১৬ অক্টোবর ২০১৪ সালে নওরীনের আপিলকে বাতিল করে দেয় এবং তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখে।[65] ২০ নভেম্বর ২০১৪ সালে, তার স্বামী রাষ্ট্রপতির ক্ষমার জন্য আবেদন করেন।[66] ২৪ নভেম্বর ২০১৪ সালে নওরীনের আইনজীবী পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতে আপীল করেন।[67]
২২ জুলাই ২০১৫ সালে, উচ্চ আদালত তার নির্দেশনায় বলে, যতক্ষণ অবধি না নওরীনের বিচারের রায় পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার ফাঁসির রায় বাস্তবায়নে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।[68][69] নভেম্বর ২০১৫ সালে, বিবির আইনজীবী নাইম শাকির বলেন দুইবার তারিখ পিছানোর পর লাহোরের সর্বোচ্চ আদালত নওরীনের আপীল শুনানীর দিন ২০১৬ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে ধার্য করেছেন।[70] আপীল শুনানী পরবর্তীতে ১৩ অক্টোবর ২০১৬ সালে নির্ধারিত হয়। কিন্তু সেই দিন সকালে বেঞ্চের তিনজন বিচারপতির একজন ইকবাল হামিদুর রহমান[71] – সেই বেঞ্চের অংশ হিসেবে এই রায় দিতে অস্বীকৃতি জানান।[72] এর ফলে আপীলের রায় কখন হবে, তা নিয়ে একটি অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। সেই বিচারক পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ হুসাইনকে প্রেরণ করা হাতে লেখা একটি চিঠিতে জানান তিনি পদত্যাগ করছেন। কী কারণে পদত্যাগ করছেন তার কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ পদত্যাগ পত্রে তিনি জানান নি।[71] নওরীনের আইনজীবী সাইফুল মুলক জুনের প্রথম সপ্তাহে আপিল শুনানীর আবেদন করলে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিলান সাকিব নিসার ২৬ এপ্রিল ২০১৭ সালে সেই আবেদন নাকচ করে দেন।[73]
৮ অক্টোবর ২০১৮ সালে বিচারক মায়ান সাকিব নিসার, বিচারক আসিফ সাইদ খোসা এবং বিচারক মাজহার আলমকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ তার আপীলের রায়ের জন্য সময় নেন, যাতে করে পরবর্তীতে লিখিত ভাবে তা প্রকাশ করতে পারে।[74] ৩১ অক্টোবর ২০১৮ খ্রিষ্ঠাব্দে, সর্বোচ্চ আদালত ৫৬ পৃষ্ঠার রায়ে এই আপীলের নিষ্পত্তি করেন।[75][76][77][78] আদালত তার রুলে বলে, "যদি নওরীনের বিরুদ্ধে অন্য কোনো অপরাধের অভিযোগ না থাকে, তবে তিনি মুক্ত এবং যেতে পারেন"।[3] তার রায়ে বিচারক আসিফ সাইদ খান খোসা উল্লেখ করেন:[79]
মুহম্মদ ইদ্রিস এবং তদন্তকর্মকর্তা মুহম্মদ আমীন বুখারীর বিবৃতিমতে আদালতে বিচার শুরু হওয়ার পূর্বেই এই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গিয়েছে, প্রথমে খ্রিষ্ঠান নারী আসিয়া নওরীনের ধর্মকেই অপমান করা হয়েছে। তিনি যীশুর অনুসারী হওয়ায় তার ধর্মীয় অনুভূতিরই প্রথমে অবমাননা করা হয়েছে। পবিত্র কোরান শরীফ অনুসারে, একজন মুসলিমের বিশ্বাস কখনোই পূর্ণতা পাবে না, যদি না সে আল্লাহর বার্তাবাহক এবং সমস্ত নবীদের যীশু খ্রিষ্ঠ (মরিয়মের পুত্র ইসা ) যার অন্তর্ভুক্ত বিশ্বাস না করে। পুর্ণতা পাবে না, যদি না বাইবেলের মত আল্লাহর প্রেরিত গ্রন্থে বিশ্বাসী না হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর ধর্ম অবমাননা করাও কম ধর্ম অবমাননা নয়। — আসিফ সাইদ খান খোসা, পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতের প্রবীন বিচারক[79]
রুলে সাক্ষীর অসামঞ্জস্য বিবৃতি এবং আসিয়ার সাথে প্রতিবেশীর পূর্বোক্ত ঝগড়াকে ইঙ্গিত করে বলা হয়, এসবকিছুই তার বিরুদ্ধে তার প্রতিবেশীর অভিযোগের উপর সন্দেহের ছায়া ফেলছে।[9]
আসিয়া নওরীন তার রায়ের খবর বাইবেল পাঠ করার সময়ে শুনেছিলেন। তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াকে ব্যক্ত করেন এভাবে যে, "আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না, আমি কী শুনছি? আমি কী এখন এখান থেকে বের হতে পারব? তারা কী সত্যিই আমাকে যেতে দেবে? সত্যি?...... আমি জানি না একে কী বলা যায়, আমি খুব খুব খুশি। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।[79][80] নওরীন কন্যা এহসাম আশিক এরায়ের খবরের প্রতিক্রিয়ায় বলে, “আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের খবর... আমি শুধু আমার মাকে আলিঙ্গন করতে চাই। আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ কারণ তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনেছেন।”[81]
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ইসলামিক দলগুলো পাকিস্তানের সড়কে প্রতিবাদ শুরু করে, "তারা রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয় এবং অবকাঠামোতে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে"।[10][11][82] সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর, ইসলামাবাদ, করাচী, মুলতান পেশোয়ারে বিক্ষোভ অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত ছড়িয়ে পরে।[83] জেইউআইএফের প্রধান ফজল উর রেহমান শান্তিপুর্ণ আন্দোলনের ডাক দিয়ে বলেন, নওরীনের মুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তেহেরিক ই লাব্বাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) প্রধান খাদিম হুসাইন রিজভী এবং জামাত-ই-আহলে হাদিস বিক্ষোভ আন্দোলনের ডাক দেয়।[84] টিএলপির আন্দোলনকর্মীরা জানায়, যতক্ষণ না আসিয়া বিবিকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হচ্ছে, ততক্ষণ অবধি তারা রাস্তা অবরোধ করে রাখবে।[82] প্রায় এক হাজার লাঠিসোঁটা হাতে সশস্ত্র টিএলপির সদস্য ইসলামাবাদের রাস্তায় জড়ো হয়।[79] টিএলপির সহপ্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ আফজাল কাদরী সর্বোচ্চ আদালতের আসিয়া নওরীনের আপীলের নিষ্পত্তি করা তিনজন বিচারকের মৃত্যু চান। তিনি বিবৃতি দেন, "প্রধান বিচারপতি এবং বাকি দুইজন বিচারপতির হত্যা হওয়া প্রয়োজন।" তিনি বলেন, এই বিচারকত্রয়ের হয় তাদের গাড়িচালক, অথবা নিরাপত্তা প্রহরী অথবা তাদের রাধুনির তাদের হত্যা করা উচিত।"[85][86] ইসলামাবাদের রেড জোন এলাকা বিক্ষোভকারীদের থেকে সুরক্ষিত রাখার নিমিত্তে সাধারণ জনগণের জন্য অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয় এবং প্যারামিলিটারী বাহিনী নামিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটানোর চেষ্টা করা হয়।[87] প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আসিয়া বিবির রায়ের পর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে যারা রায়পরবর্তী সহিংসতা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারী দেন। তিনি তার ভাষণ শেষ করেন এই বলে, পাকিস্তানকে সেই স্থানে নিয়ে যাবেন না, যেখান থেকে পাকিস্তানের ফিরে আসারবা কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার অবস্থাই থাকবে না।[88][89] ১ নভেম্বর জাতীয় সড়ক এবং মটরওয়ে পুলিশ যাত্রীদের জাতীয় সড়ক পথ এড়িয়ে চলার জন্য নির্দেশনা জারী করে।[90][91] লাহোরের খ্রিশ্চিয়ান স্কুলগুলো নিরাপত্তার খাতিরে স্কুলের পাঠপরিক্রমা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে।[92] ২ নভেম্বর পাকিস্তান সরকার মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়।[93]
৩১ অক্টোবর রায়ের পূর্বে পাকিস্তানের খ্রিষ্ঠান সম্প্রদায় স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা ও রোজা রাখেন।[94] জোসেদ কৌটস, করাচির রোমান ক্যাথলিক আর্চবিশপ প্রার্থনায় বলেন, রায়ের পর যেন কোনো সহিংসতা তৈরী না হয়।[95]
নওরীনের আইনজীবী জানান, তিনি ক্রমাগত হুমকি পাচ্ছেন।[96] সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ও ক্রিশ্চিয়ান টুডে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, চরমপন্থীদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে তিনি পরিণত হয়েছেন।[96][97] ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর, তিনি পাকিস্তান থেকে[98] বিমানে করে নেদারল্যান্ডে চলে গিয়েছেন, বলে প্রতিবেদনে আসে।[99] মুলকের মতে, তিনি তার মক্কেলের কারামুক্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত দেশ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালেও জাতিসংঘ জোর করে তাকে বিমানে তুলে দেয়।[100]
এই রায়কে বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান অসংখ্য মানবাধিকার সংগঠন এবং খ্রিষ্ঠান ধর্মীয় সংগঠন গুলো স্বাগত জানায়।[9][12] অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একে মাইলফলক রায় বলে অভিহিত করে।[75] এইড টু চার্চ এ রায়কে নির্যাতিত সংখ্যালঘু মানুষদের জন্য আশার প্রতীক বলে উল্লেখ করে।[101] পাকিস্তানের মানবাধিকার সংগঠন ১ নভেম্বর তাদের বিবৃতিতে রায়কে স্বাগত জানায়।[102]
জাতিসংঘের সহকারী মুখপাত্র এ রায়কে স্বাগত জানায়।[103][104]
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, এখবরে আনন্দে প্রকাশ করে আশা করেন, বিশ্বজুড়ে মৃত্যদণ্ড রহিত করা হবে।[105] তবে আসিয়া নওরীনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ব্রিটেন তাকে এসাইলাম দেয় নি।[106]
ফ্রান্সের ন্যাশনাল র্যালীর সভাপতি মেরিন লে পেন তার সরকারকে অনুরোধ করেন, যাতে নওরীনকে এসাইলাম দেওয়া হয়।[107]
স্পেন সহ বেশ কিছু রাষ্ট্র আসিয়া নওরীনকে এসাইলাম দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।[77][96]
২ নভেম্বর ২০১৮ তে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রশাসন এবং আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে আন্দোলন উসকে দেওয়া ইসলামিক রাজনৈতিক দল তেহেরিক-ই-লাব্বাইক একটি সমঝোতা মুলক চুক্তিতে আসে। সেই চুক্তি ছিল, আসিয়া বিবির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এবং তেহেরিক ই লাব্বাইকের যেসব আন্দোলনকর্মীরা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের মুক্তি দেওয়া।[13][14][15][16] ধর্মমন্ত্রী নুরুল হক কাদরী এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মুহম্মদ বাসারাত রাজা এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।[108][109] চুক্তি অনুযায়ী আসিয়া বিবিকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।[14] পাকিস্তানি প্রশাসনের মুল বক্তব্য ছিল, যতক্ষণ না এই রায়ের পরবর্তী রিভিউ শুনানী হচ্ছে ততক্ষণ অবধি আসিয়া বিবিকে মুক্তি দেওয়া হবে না।[110] টিএলপি তাদের আন্দোলনকর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে ফিরে যেতে আহ্বান জানায়।[111]
পাকিস্তান সরকার এবং তেহেরিক ই লাব্বাইকের মধ্যকার এই চুক্তির ফলে সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উত্থিত হয় যে, পাকিস্তান সরকার চরমপন্থীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।[17] পাকিস্তানি তথ্যমন্ত্রী ফায়াদ চৌধুরী এই অভিযোগের প্রত্যুত্তরে বলেছেন যে, আমাদের কাছে দুইটি বিকল্প আছে। হয় বলপ্রয়োগ করতে হবে এবং এ বল প্রয়োগের ফলে মানুষ মারা যাবে। এটা এমন একটা বিষয়; যা কোনো রাষ্ট্রই করতে চায় না। অথবা দ্বিতীয় বিকল্প হলো আপোষ করা, আর আপোষ করতে চাইলে তুমি কিছু নিলে তোমাকে কিছু দিতেও হবে।[17]
আসিয়া নওরীনের আইনজীবী সাইফ উল মুলক ইসলামবাদী এবং সরকারের মধ্যকার এই চুক্তিকে বিরক্তিকর বলে অভিহিত করে বলেন। "তারা (পাকিসরকার) এমনকি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অবধি বাস্তবায়ন করতে পারছে না।"[112] নিজের জীবন হুমকিগ্রস্থ ভেবে মুলক ইউরোপে পালিয়ে যান। তার ভাষায়, "আসিয়া বিবির জন্য নৈতিক লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কারণে আমাকে বেঁচে থাকতে হবে।"[112] উইলসন চৌধুরীও একইভাবে বলেন, "পাকিস্তান সরকার চরমপন্থীদের গুহায় প্রবেশ করায় আমি আশ্চর্যান্বিত নই। ইমরান খানের প্রাক্তন স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ বলেন যে, পিটিআই নেতৃত্বাধীন সরকার আসিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে কট্টরপন্থীদের দাবি মেনে নিয়ে তাদের গুহায় প্রবেশ করেছে। এখন আর নয়া পাকিস্তান নিয়ে আমাদের কোনো আশা নেই।’ [113] জাতিসংঘ থেকে একটি প্লেন আসিয়া নওরীনকে নেওয়ার জন্য পাকিস্তানে অবতরণ করলেও তাকে ব্যতীতই ফিরে যায়। কারণ তখন পাকিস্তান সরকার নওরীনকে মুক্তি না দেওয়ার জন্য টিএলপির কাছে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন।[114]
ব্রিটিশ পাকিস্তান ক্রিশ্চিয়ান এসোসিয়েশনের প্রধান উইলসন চৌধুরী তার বিবৃতিতে বলেন, "আসিয়া বিবিকে পাকিস্তান ছেড়ে বের হতে না দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারী করারই সামিল।"[115]
আসিয়া নওরীনের স্বামী আশিক মাসিহ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি আহ্বান জানান, যাতে করে তাদের এই দেশ ছাড়তে সাহায্য করা হয় এবং তাদেরকে সেই দেশে থাকতে অনুমতি দেওয়া হয়।[116] তিনি নিপিড়ীত খ্রিষ্ঠানদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা এইড টু দ্য চার্চ ইন নিডের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আমাদের পাকিস্তান ছাড়তে সাহায্য করুন। আমরা আমাদের জীবন নিয়ে প্রচন্ডভাবে উদ্বিগ্ন। আমাদের খাওয়ার জন্য কিছুই নেই। কারণ আমরা ঘর ছেড়ে খাওয়ার জন্য বের হতে পারছি না।"[117]
৭ নভেম্বর ২০১৮ সালে, মুলতানের নিউ জেইল ফর ওম্যান কারাগারে অবরুদ্ধ আসিয়া বিবির মুক্তির চিঠি আসে।[118][119] স্থানীয় গণমাধ্যমের করা প্রতিবেদন অনুযায়ী নওরীনকে চার্টার বিমানে করে নেদারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল।[118] তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমের এই দাবীকে অস্বীকার করেন এবং জানান, নওরীন পাকিস্তানে নিরাপদ স্থানেই আছে।[120][121][122]
ইসলামিক রাজনৈতিক দল তেহেরিক ই লাব্বাইক পাকিস্তানের নেতা হাফেজ শাহবাজ আত্তারী এ সংবাদ শুনার পর তার দলের নেতাকর্মীদের ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিণ্ডিতে একত্রিত হয়ে আন্দোলন করতে বলেন যাতে করে, নওরীনের দেশত্যাগ ঠেকানো যায়।[118]
লেবার এন্ড কো-অপারেটিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য মাইক গেপস বলেন, "সংখ্যালঘু খ্রিষ্ঠানদের নিরবচ্ছিন্ন হত্যা এবং দাঙ্গাবাজ জনতাকে ঠেকাতে ইমরান খানের সরকার পরিষ্কার ব্যর্থ হওয়ার পর, পাকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্ক পুনঃবিবেচনার এখনি সঠিক সময়। পাকিস্তানে সংখ্যালঘুরা যদি নিরাপদ না থাকে, তবে তা সত্যিকার অর্থে উদ্বেগের বিষয়।”[123] পাকিস্তানে নিযুক্ত ব্রিটেনের বাণিজ্যদূত রেহমান চিশতি পাকিস্তান সরকারের আসিয়া নওরীনকে দেশত্যাগ করতে না দেওয়ার প্রতিবাদস্বরূপ একইমাসে পদত্যাগ করেন।[124]
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর র্যান্ড পাল যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আসিয়া বিবির জন্য এসাইলাম দেওয়ার আহ্বান জানান।[125]
পরবর্তী প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায় আসিয়া নওরীন ২০১৯ সালের পূর্বে পাকিস্তান থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না। নওরীনের স্বামী এবং পরিবারকে আগলে রাখা জোসেফ নাদীম জানান, ইসলামবাদীরা তাদের ঘরের গেটে অগ্নিসংযোগ করেন এবং বেঁচে থাকার জন্য তাদেরকে পাচঁবার স্থানান্তরিত হতে হয়েছে।[126]
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর প্রধান এন্তনিও তাজানি,[127] ইতালীর প্রধানমন্ত্রী ম্যাথিও সালভিনি,[128][128][129] কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়া ফ্রিল্যান্ড,[128] অস্ট্রেলীয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডালটন সহ[130] অনেকে আসিয়া বিবির মুক্তির রায়ের পরও পাকিস্তান তাকে কারারুদ্ধ করে রাখায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
২৯ জানুয়ারি ২০১৯ সালে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত আসিয়া বিবির ধর্মদ্রোহিতা নিয়ে উঠা কেসে আপিলের রায় বলবৎ রাখে এবং রুল জারি করে বলে, আসিয়া বিবি এখন সম্পূর্ণভাবে মুক্ত এবং পাকিস্তান ত্যাগ করতে পারে এবং তার পরিবারের মানুষের সাথে যুক্ত হতে পারে। বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্র অনুসারে তার পরিবার ইতোমধ্যে দেশ ত্যাগ করেছে।[131][132] রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ পাকিস্তানে ছড়িয়ে পরে এবং তাদের দাবী অনুসারে আসিয়া বিবি এবং বিচারককে মৃত্যুদন্ড দিতে হবে। যদিও জার্মানীতে থাকা তার আইনজীবীর মতে ইতোমধ্যে আসিয়া নওরীন কানাডায় অবস্থান করছে তবে অন্য অনেকের মতে তাকে গোপনে ইসলামাবাদে নিয়ে আনা হলেও তাকে কখন ছাড়া হবে এবং সে কোথায় যাবে সে বিষয়ে কেওই নিশ্চিত নয়।[133][134][135]
ফ্রান্স, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ইতালি এবং অস্ট্রেলিয়া আসিয়া বিবি কে এ অ্যাসালাম দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করে।[136]
সর্বোচ্চ আদালত আপিলের রায় বলবৎ রাখার প্রতিবাদে পাকিস্তানের ফাইজাবাদ শহরে বিক্ষোভ করার সময় ৫৫ জন লোক গ্রেফতার হয়.[137]
২০১৯ সালে ১১ এপ্রিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কিছু জটিলতার জন্য আসিয়া বিবিকে স্থানান্তরে বিলম্ব হচ্ছে। মানবাধিকার অধিকার কর্মী আমান উল্লাহ জানিয়েছেন যে, আসিয়া বিবি একটা রুমে বদ্ধ আছেন, যার দরজা শুধুমাত্র খাবার দেওয়ার সময় খোলা হয়।
যাইহোক, ২০১৯ সালের ৮ মে আসিয়া বিবি সফলভাবে কানাডায় পৌছান এবং পূর্ব থেকেই সেখানে থাকা তার পরিবারের সাথে মিলিত হন।[138][139] আসিয়া বিবির জন্য প্রচারণা চালানো সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান কনসার্ন তাদের বক্তব্যে জানান, "আমাদের প্রার্থনা সবসময় তার পরিবার এবং তার সাথে আছে, আমরা চাই সে যেন শান্তি এবং নিরাপত্তা নতুন দেশে খুঁজে পায়"।
ফরাসি সাংবাদিক আনে ইসাবেলা টলেট নরীনকে নিয়ে একটি আত্মজীবনী লিখেন, যার শিরোনাম ছিল Blasphemy: A Memoir: Sentenced to Death over a Cup of Water (2013, আইএসবিএন ১৬১৩৭৪৮৮৯২).[31] নরীন নিরক্ষর ছিলেন, এবং টলেট কারাগারের কঠোর নিয়মকানুনের জন্য তার কাছে পৌছাতে অপারগ ছিলেন। তাই টলেট নরীনের স্বামী, সন্তান এবং তার বোনের সাক্ষাৎকার নেন।[31]
২০১৫ সালে এই আত্মজীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পোলিশ চলচ্চিত্রনির্মাতা Uwolnić Asię Bibi (বাংলাঃ আসিয়া বিবির মুক্তি) নামে চলচ্চিত্র তৈরী করেন। [140]
হানাফি ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী অমুসলিম নবী মুহম্মদকে অপমান করলেই, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না।[141][142] হানাফি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আবু হানিফা ধর্ম অবমাননা আইন প্রসঙ্গে পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করেছেন,
যদি একজন ধিমী (মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিম নাগরিক) পবিত্র নবীর অবমাননা করে, তবে তার শাস্তি হিসেবে তাকে খুন করা যাবে না। একজন অমুসলিমকে কখনো কুফরের (নবীর প্রতি অবিশ্বাস) জন্য বা শিরকের (বহু ঈশ্বর বা ধর্মের চর্চা) জন্য হত্যা করা হয় না। নবীকে অবমাননা করার চেয়েও বড় পাপ এই কুফর আর শিরক।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.