Loading AI tools
একটি মহিলার প্রজনন বয়সে মাসিকের অভাব উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
একটি মহিলার প্রজনন বয়সে মাসিকের অভাবকে অ্যামেনোরিয়া বলা হয়। অ্যামেনোরিয়ার শারীরবৃত্তীয় অবস্থা দেখা যায়, বেশিরভাগই, গর্ভাবস্থায় এবং ল্যাকটেশন (স্তন্যপান করানো) এর সময়ে, শেষেরটি গর্ভনিরোধের একটি রূপ হিসাবেও পরিচিত, ল্যাকটেশনাল অ্যামেনোরিয়া পদ্ধতি । প্রজনন সময়ের বাইরে, শৈশবে এবং পরে রজোনিবৃত্তি হলে, ঋতুস্রাব হয়না।
অ্যামেনোরিয়া | |
---|---|
প্রতিশব্দ | অ্যামেনোরিয়া, অ্যামেনোরিয়া |
বিশেষত্ব | স্ত্রীরোগবিদ্যা |
অ্যামেনোরিয়া অনেক সম্ভাব্য অসুখের একটি উপসর্গ। প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়া (মাসিক চক্র কখনোই শুরু না হওয়া) গঠনের সমস্যার জন্য হতে পারে, যেমন জন্মগতভাবে জরায়ুর অনুপস্থিতি অথবা ডিম্বাশয় এর ডিম্বাণু গ্রহণ করা বা পালন করার ক্ষমতার অভাব। এছাড়াও, বয়ঃসন্ধির গঠনে বিলম্ব হলেও প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়া হয়। ১৪ বছর বয়সে আদ্যঋতুর অনুপস্থিতির সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের যৌন বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতি অথবা দ্বিতীয় পর্যায়ের যৌন বৈশিষ্ট্য স্বাভাবিক, কিন্তু ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত কোন আদ্যঋতু না থাকা দিয়ে এটা সংজ্ঞায়িত করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের অ্যামেনোরিয়া (মাসিক চক্র বিরতি) প্রায়শই হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোন ব্যাঘাত, অকাল রজোনিবৃত্তি বা জরায়ুর মধ্যে ক্ষত হওয়ার কারণে হয়। একটি মহিলার পূর্বে স্বাভাবিক ঋতুচক্র থাকলেও তিন মাস বন্ধ থাকলে বা অলিগোমেনোরিয়ার ইতিহাস থাকলে, নয় মাস ঋতুস্রাব বন্ধ থাকা দিয়ে এটি সংজ্ঞায়িত করা হয়।[1]
অ্যামেনোরিয়ার শ্রেণিবিন্যাস করার জন্য দুটি প্রধান উপায় আছে। অ্যামেনোরিয়াকে প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত হিসাবে, অথবা কার্যকরী "বিভাগের" উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।[2] পরের শ্রেণিবিন্যাসটি রোগীর হরমোনের অবস্থা সম্পর্কিত; হাইপো-, ইইউ-,বা হাইপারগোনাডোট্রপিক (যেখানে জননাঙ্গ এবং ফলিকল উদ্দীপক হরমোন (এফএসএইচ) এর যোগাযোগ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে এফএসএইচ এর মাত্রা নিম্ন, স্বাভাবিক বা উচ্চ হয়ে যায়)।
প্রাথমিক/দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত | বহির্নালী ব্যতিক্রমসমূহ/বাধা | জননাঙ্গ/সীমান্তবর্তী অঙ্গ রোগ | পিটুইটারি এবং হাইপোথ্যালামিক/কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক ব্যাধি |
---|---|---|---|
সংক্ষিপ্ত বিবরণ | হাইপোথ্যালামিক-পিটুইটারি-ওভারিয়ান অক্ষ কাজ করছে। | ডিম্বাশয় বা জননাঙ্গ পিটুইটারি উত্তেজনাতে সাড়া দেয়না। জননাঙ্গের অনুর্বরতা বা অকাল ঋতুবন্ধ সম্ভাব্য কারণ। সাধারণত কিশোরীদের ক্রোমোজোম পরীক্ষায় বোঝা যায় হাইপারগোনাডোট্রপিক অ্যামেনোরিয়া হয়েছে। এই সব রোগীদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কম পাওয়া যায় এবং হাইপো-ইস্ট্রোজেনিজম চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। | সাধারণত, অপর্যাপ্ত মাত্রার এফএসএইচ থাকলে ডিম্বাশয় কম উদ্দীপ্ত হয় যা যথেষ্ট ইস্ট্রোজেন ক্ষরণে ব্যর্থ হয় যাতে এন্ডোমেট্রিয়াম (জরায়ুজ আস্তরণ) উদ্দীপ্ত হয়না, ফলে অ্যামেনোরিয়া হয়। সাধারণভাবে, যাঁদের হাইপারগোনাডোট্রপিক অ্যামেনোরিয়া আছে তারা কার্যকরীভাবে উর্বর। |
এফএসএইচ | বহির্নালীর অস্বাভাবিকতা থাকলে নর্মগোনাডোট্রপিক হয় এবং এফএসএইচ এর মাত্রা স্বাভাবিক পরিসীমায় থাকে। | জননাঙ্গের, সাধারণত ডিম্বাশয়ের, অস্বাভাবিকতা বর্ধিত এফএসএইচ মাত্রার বা হাইপারগোনাডোট্রপিক অ্যামেনোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এফএসএইচ মাত্রা সাধারণত ঋতুবন্ধের সীমায় থাকে। | হাইপোথ্যালামিক এবং পিটুইটারি দুটি গ্রন্থির অস্বাভাবিকতাই নিম্ন মাত্রার এফএসএইচ সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যা হাইপারগোনাডোট্রপিক অ্যামেনোরিয়া ঘটায়। |
প্রাথমিক |
|
|
|
দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত |
|
|
|
যেসব মহিলা নিয়মিত যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম করেন অথবা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ওজন কমিয়েছেন তাদের হাইপোথ্যালামিক (বা 'খেলাধুলোর') অ্যামেনোরিয়া হবার ঝুঁকি থাকে।কার্যকরী হাইপোথ্যালামিক অ্যামেনোরিয়া (এফএইচএ) মানসিক চাপ, ওজন কমে যাওয়া এবং/অথবা অত্যধিক ব্যায়াম দ্বারা সৃষ্ট হতে পারে। অনেক নারী আছেন যাঁরা খাদ্য সংযম করেন বা যাঁরা অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন কিন্তু তাদের ব্যায়াম এবং স্বাভাবিক ঋতুচক্র বজায় রাখতে ব্যয় করার জন্য যথেষ্ট ক্যালোরি গ্রহণ করেননা।[7] নিয়মিত ঋতুচক্র চালানোর জন্য ন্যূনতম সঞ্চিত, সহজে সংযুক্ত শক্তিই প্রয়োজন, তাই পরম ওজনের চেয়ে কম শক্তি প্রাপ্যতা অ্যামেনোরিয়া শুরু হবার মূল কারণ হিসেবে দেখা গেছে।[8]
শক্তির ভারসাম্যহীনতা এবং ওজন কমে যাওয়া, বিভিন্ন হরমোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঋতুচক্র ব্যাহত করতে পারে। ওজন কমে যাওয়ার ফলে ঘ্রেলিন হরমোন বেশি ক্ষরিত হয়, যা হাইপোথ্যালামিক-পিটুইটারি-ওভারিয়াল অক্ষকে বাধা প্রদান করে।[9] ঘ্রেলিন হরমোনের বাড়তি ঘনত্ব জিএনআরএইচ স্পন্দনের মানের পরিবর্তন করে দেয়, যার জন্য পিটুইটারি থেকে এলএইচ এবং ফলিকল উদ্দীপক হরমোন (এফএসএইচ) এর ক্ষরণ কমে যায়।[10]
কম ওজনের মহিলাদের লেপটিন হরমোনের কম মাত্রা দ্বিতীয় পর্যায়ের অ্যামেনোরিয়া সৃষ্টি করে।[11] ঘ্রেলিনের মত, লেপটিন শক্তির ভারসাম্যের সংকেত দেয়, এবং প্রজনন অক্ষে চর্বি সঞ্চয় করে।[12] লেপটিন এর মাত্রা কমে যাওয়া, শরীরের চর্বির মাত্রা কমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, এবং জিএনআরএইচ স্পন্দনের ধীরগতির সঙ্গেও সম্পর্কিত।
একটি মহিলার যখন অ্যামেনোরিয়া, আহার ব্যাধি, এবং অস্টিওপোরোসিস একত্রে হয়, তাকে বলে ফিমেল অ্যাথলিট ট্রায়াড সিনড্রোম। কম খাওয়ার জন্য অ্যামেনোরিয়া হয় এবং হাড়ের ক্ষয় হলে এসে যায় অস্টিওপেনিয়া এবং সেটি পরিবর্তিত হতে পারে অস্টিওপোরোসিস এ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
এক একজন মানুষের ওপর অ্যামেনোরিয়ার সামাজিক প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। প্রায়ই অ্যামেনোরিয়া যুক্ত থাকে অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা এবং অন্যান্য আহার ব্যাধির সঙ্গে, যাদের নিজস্ব আলাদা প্রভাব আছে। যদি দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়া জীবনের প্রথম দিকেই এসে যায়, উদাহরণ স্বরূপ অত্যধিক ব্যায়াম বা ওজন কমে যাবার ফলে, আদ্যঋতু জীবনে আর না ও আসতে পারে। এই অবস্থায় একজন মহিলা আর গর্ভবতী না ও হতে পারেন, এমনকি ওষুধের সাহায্যেও নয়। দীর্ঘ মেয়াদী অ্যামেনোরিয়া হলে ইস্ট্রোজেনের অভাব দেখা দেয়, যার ফলে অল্প বয়সেই ঋতুবন্ধ হয়ে যেতে পারে। ২৫ থেকে ৩০ বছরের পরে ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্যালসিয়াম ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন অ্যামেনোরিয়া হবার কারণে কোন মহিলার ডিম্বাশয় আর ইস্ট্রোজেন তৈরী করেনা, তখন তিনি দ্রুত ক্যালসিয়াম হারাবেন, এবং অসুখটি হয়ে দাঁড়াবে অস্টিওপোরোসিস।[13] অ্যামেনোরিয়ার জন্য টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে লোমের আধিক্য দেখা দেয় এবং স্তনের আকার ছোটো হয়ে যায়।[14] অ্যান্ড্রোজেন এর মাত্রা বেড়ে গেলে, বিশেষত টেস্টোস্টেরন, ওভারিয়ান সিস্ট হতে পারে। কিছু অ্যামেনোরিয়াযুক্ত দৌড়বিদদের মধ্যে গবেষণা করে দেখা গেছে যে ঋতু বন্ধ হয়ে গেলে তাদের আত্মসম্মানেও ঘাটতি এসে যায়।[15]
কিছু ঔষধ, বিশেষত গর্ভনিরোধক ঔষধ, একজন সুস্থ সবল মহিলার অ্যামেনোরিয়া ঘটাতে পারে। সাধারণত ঔষধ শুরু করার কিছু পরেই ঋতুবন্ধ শুরু হয়ে যায় এবং ঔষধ বন্ধ করার পরে পুনরায় চালু হতে এক বছর পর্যন্ত লাগতে পারে। হরমোনাল গর্ভনিরোধক যেগুলিতে শুধু প্রোজেস্টেরন আছে যেমন খাওয়ার জন্মনিরোধক মাইক্রোনর এবং বিশেষ করে উচ্চ মাত্রায় তৈরী ইঞ্জেকশনভিত্তিক ডিপো প্রোভেরা সাধারণত এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে আসে। বর্ধিত চক্রের সংযুক্ত হরমোনাল গর্ভনিরোধক ব্যবহার করলেও ঋতু দমন হয়। রোগীরা যাঁরা প্রথমে সংযুক্ত মৌখিক হরমোনাল গর্ভনিরোধক (ওসিওপি) এর মত গর্ভনিরোধক ব্যবহার করেন এবং পরে ছেড়ে দেন তাদের একটি প্রত্যাহার লক্ষণ হিসাবে দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়া হতে পারে।[16] এই সংযোগটি ভাল বোঝা যায় নি, কারণ যেসব মহিলার ওসিওপি ব্যবহার বন্ধ করে প্রত্যাহার লক্ষণ হিসাবে অ্যামেনোরিয়া হয়েছে এবং যেসব মহিলার অন্য কোন কারণের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়া হয়েছে, গবেষণা করে তাদের হরমোন মাত্রায় কোন তফাৎ পাওয়া যায়নি।[17] নতুন ধরনের গর্ভনিরোধক বড়ির ব্যবহার, যেমন একটানা মৌখিক গর্ভনিরোধক ঔষধ (ওসিপি সমূহ) যেগুলি প্রতি চক্রের স্বাভাবিক ৭ দিনের প্লাসিবো বড়ি নয়, মহিলাদের মধ্যে অ্যামেনোরিয়া হবার হার বাড়িয়ে দিয়েছে। গবেষণা বলছে মহিলাদের ১ বছর ধরে একটানা ওসিপি ব্যবহার করে চিকিৎসা করলে অ্যামেনোরিয়া হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।[18]
নিয়মিত আফিমযুক্ত ড্রাগের ব্যবহার (যেমন হেরোইন) দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারকারীদের মধ্যে অ্যামেনোরিয়া ঘটিয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
স্কিটসোফ্রিনিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রতি-মনোরোগ ঔষধ অ্যামেনোরিয়ার কারণ বলে জানা গেছে। নতুন গবেষণা প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতি-মনোরোগ ঔষধ বিধিব্যবস্থায় মেটফরমিনের একটি ডোজ যোগ করলে ঋতু পুনঃস্থাপিত হয়।[19] মেটফরমিন ইনসুলিন কে বাধা দেবার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, এছাড়াও প্রোল্যাকটিন, টেস্টোস্টেরন, এবং লুটেনাইজিং হরমোন (এলএইচ) এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। মেটফরমিন এলএইচ/এফএসএইচ অনুপাত কমিয়ে দেয়। মেটফরমিনের ওপর গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে এই হরমোনগুলির নিয়ন্ত্রণ দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়া হবার মূল কারণ।
দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়ার একটি সাধারণ কারণ হল স্তন্যপান করানো, এবং প্রায়ই এই অবস্থা ছয় মাস ধরে স্থায়ী হয়।[20] স্তন্যপান করানো সাধারণত ল্যাক্টেশনাল অ্যামেনোরিয়ার থেকে বেশিদিন স্থায়ী হয়, এবং অ্যামেনোরিয়ার স্থিতিকাল, কত ঘন ঘন একটি মহিলা স্তন্যপান করান তার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।[21] ল্যাক্টেশনাল অ্যামেনোরিয়া পরিবার পরিকল্পনার একটি পদ্ধতি হিসাবে সমর্থিত হয়েছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে যেখানে গর্ভনিরোধের অন্যান্য পদ্ধতি নেওয়ার সুযোগ সীমিত হতে পারে। উন্নয়নশীল দেশে স্তন্যপান করানো জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা গর্ভনিরোধক ব্যবহারের মত অন্য কোন পদ্ধতির তুলনায় একটি বহুল প্রচলিত গর্ভ নিরোধের উপায়। ল্যাক্টেশনাল অ্যামেনোরিয়া প্রসবের পর প্রথম ছয় মাসে গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করার পদ্ধতি হিসাবে ৯৮% কার্যকর।[22]
অচিকিৎসিত সেলিয়াক রোগ অ্যামেনোরিয়া ঘটাতে পারে। জনন অঙ্গের রোগ অচিকিৎসিত সেলিয়াক রোগের একমাত্র প্রকাশ হতে পারে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বীকৃত হয় না। সেলিয়াক রোগীদের, প্রজনন ব্যাধি এড়াতে বা ঝুঁকি কমাতে গ্লুটেন-মুক্ত খাদ্য সাহায্য করে। [23][24]
শারীরিক বিকৃতির জন্য অ্যামেনোরিয়া হতে পারে। এর একটি উদাহরণ হল এমআরকেএইচ (মেয়ার-রকিট্যানসকি-কুসটার-হসার) সিনড্রোম, প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়ার দ্বিতীয় সবচেয়ে সাধারণ কারণ।[25] এর লক্ষণটি মুলেরিয়ান এজেন্সি দ্বারা চিহ্নিত। এমআরকেএইচ সিনড্রোমে, মুলেরিয়ান নালির অস্বাভাবিক বিকাশ হয় এবং এর ফলে যোনিদ্বারে প্রতিবন্ধকতা হয়ে ঋতুতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এই লক্ষণ জন্মের পূর্বেই নারী জননতন্ত্রের বিকাশের সময়ে তৈরী হয়ে যেতে পারে।
মানসিক চাপ, চূড়ান্ত ওজন ক্ষয়, বা অত্যধিক ব্যায়ামের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়া হতে পারে। তরুণ ক্রীড়াবিদেরা বিশেষত আক্রান্ত হয়, যদিও সাধারণত স্বাস্থ্যকর ওজনের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক ঋতু ফিরে আসে। দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়ার কারণে প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়া হতে পারে, বিশেষত যদি ঋতু দর্শনের আগেই হয়ে থাকে।[26][27]
১৪ বছর বয়সী কিশোরীর যদি কোন দ্বিতীয় প্রকারের যৌন বৈশিষ্ট্য না তৈরী না হয়, যেমন বর্ধিত স্তন এবং লোম, তাহলে প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়া আছে ধরে নেওয়া যায়।[28] দ্বিতীয় প্রকারের যৌন বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতিতে, অ্যামেনোরিয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ বয়ঃসন্ধি আসতে দেরী হওয়াতে এফএসএইচ এবং এলএইচ কম মাত্রায় ক্ষরিত হওয়া। টার্নার সিনড্রোম সহ গোনাডাল ডিসজেনেসিস, অথবা ডিম্বাশয়ের অপূর্ণতাকেও দোষ দেওয়া যায়। যদি দ্বিতীয় প্রকারের যৌন বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি থাকে, কিন্তু ১৬ বছরের মধ্যে ঋতুদর্শন না হয়, তাহলে প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়া হয়েছে ধরে নেওয়া যায়। এই ঘটনার একটি কারণ হতে পারে যে একজন ব্যক্তি ব্যবহারগত ভাবে নারী কিন্তু জন্মগত ভাবে পুরুষ, এই অবস্থাকে বলা হয় অ্যান্ড্রোজেন অসংবেদনশীল লক্ষণ। যদি জন্মের সময় শুক্রাশয় নিচে না আসে, অন্ডকোষের ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণে তাদের প্রায়ই বয়ঃসন্ধির পরে সরিয়ে ফেলা হয় (~২১ বছর বয়স)। এই রকম অসমাপ্ত শুক্রাশয়ের উপস্থিতি যদি না থাকে, এমআরআই করে দেখা যায় জরায়ু আছে কি নাই। ১৫% প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়ার ঘটনা মুলেরিয়ান এজেন্সির জন্য হয়। যদি জরায়ু উপস্থিত থাকে, বহির্নালীর বাধা প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়ার একটি কারণ হতে পারে।
দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়ার সবচেয়ে সাধারণ এবং সহজে নির্ণয়ের কারণ হল গর্ভধারণ, থাইরয়েড রোগ, এবং হাইপারপ্রোল্যাক্টিনেমিয়া। নির্ণয়ের জন্য একটি সাধারণ প্রথম পদক্ষেপ হল গর্ভাবস্থা পরীক্ষা।[29] হাইপারপ্রোল্যাক্টিনেমিয়া, প্রোল্যাকটিন হরমোনের উচ্চ মাত্রা দ্বারা চিহ্নিত, এর সঙ্গে প্রায়ই একটি পিটুইটারি স্ফীতি থাকে। প্রায়ই ডোপামাইন অ্যাগোনিস্ট উপসর্গ উপশমে সাহায্য করে। সাময়িক লক্ষণ থিতিয়ে যাওয়াই সাধারণত কয়েক মাস পরে ঋতু পুনরুদ্ধারে যথেষ্ট। আশারম্যান্স সিনড্রোম এর সঙ্গে যুক্ত বহির্নালীর বাধার জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়া হতে পারে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়া হতে পারে, যদিও দুটির মধ্যে সংযোগ ভাল বোঝা যায় নি। সময়ের আগে রজোনিবৃত্তির সূত্রপাতের জন্য ডিম্বাশয়ের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়া হয়, এবং যদিও সাধারণত এই অবস্থার চিকিৎসা করা যেতে পারে, কিন্তু এটা সবসময় আগের মত হয় না। মানসিক চাপ, চূড়ান্ত ওজন ক্ষয়, বা অত্যধিক ব্যায়ামের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়া হতে পারে। তরুণ ক্রীড়াবিদেরা বিশেষত আক্রান্ত হয়, যদিও সাধারণত স্বাস্থ্যকর ওজনের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক ঋতু ফিরে আসে। দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়ার কারণে প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়া হতে পারে, বিশেষত যদি ঋতু দর্শনের আগেই হয়ে থাকে।[26][27]
অন্তর্নিহিত অবস্থার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসাব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়। বিচার্য বিষয় হল যথাযথ হলে অস্ত্রোপচারের সমস্যা এবং ইস্ট্রোজেন মাত্রা কম থাকলে ইস্ট্রোজেন চিকিৎসা। যাঁরা আপন সন্তান চাননা, তাদের চিকিৎসা না করলেও চলে যদি অ্যামেনোরিয়ার অন্তর্নিহিত কারণ তাদের স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা না ঘটায়। যদিও, ক্রীড়াবিদদের অ্যামেনোরিয়ার ক্ষেত্রে, ইস্ট্রোজেন এবং লেপটিন এর ঘাটতি প্রায়শই হাড়ের ক্ষয় ঘটায়, এবং রোগটি অস্টিওপোরোসিস হয়ে দাঁড়ায়।
ফিমেল অ্যাথলিট ট্রায়াড এর একটি অংশ "ক্রীড়াবিদ" অ্যামেনোরিয়ার চিকিৎসা হল অধিক খাদ্যগ্রহণ এবং ব্যায়ামের পরিমাণ ও তীব্রতা কমানো।[30] যদি রোগের অন্তর্নিহিত কারণ অ্যাথলিট ট্রায়াড হয় তাহলে চিকিৎসক, ডায়েটিশিয়ান, এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শদাতার পর্যবেক্ষণে বহুবিধি চিকিৎসাব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়; সঙ্গে দরকার হয় পরিবার, বন্ধু, এবং কোচ সকলের সমর্থন। যদিও গর্ভনিরোধক বড়ি খেলে ঋতু শুরু হয়ে যেতে পারে, তবুও গর্ভনিরোধক বড়ি প্রাথমিক চিকিৎসা হওয়া উচিত নয় কারণ তাতে অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলি চাপা পড়ে যেতে পারে এবং খাদ্য ব্যাধির অন্যান্য প্রভাব, যেমন অস্টিওপোরোসিস, এর বৃদ্ধি হতে পারে।[30] ওজন পুনরুদ্ধার, অথবা পর্যাপ্ত বিশ্রাম সবসময়ে অনুঘটকের কাজ করে ঋতু ফিরিয়ে আনেনা। ডিম্ব উদগীরণের পুনরারম্ভ বোঝায় নিউরোট্রান্সমিটার এবং হরমোনের পুরো কার্যপ্রণালীর ওপর নির্ভরতা, যেটি দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত অ্যামেনোরিয়ার জন্য পরিবর্তিত হয়ে গেছিল। ঔষধ-জনিত অ্যামেনোরিয়ার চিকিৎসায়, ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ বন্ধ করা একটি স্বাভাবিক কর্মপরিকল্পনা। হাইপোথ্যালামিক অ্যামেনোরিয়ার দিকে নজর দিলে, গবেষণায় দেখা গেছে সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটর (এসএসআরআই) ব্যবহার করে চিকিৎসা করলে মানসিক চাপ যুক্ত অ্যামেনোরিয়ার ফলে উদ্ভূত ফাংশানাল হাইপোথ্যালামিক অ্যামেনোরিয়া (এফএইচএ)র অস্বাভাবিকতা ঠিক করা যায়।[31] এটি গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হরমোন (জিএনআরএইচ)/লুটিনাইজিং হরমোন (এলএইচ) কে নিয়ন্ত্রণ ক'রে বিপাকীয় এবং স্নায়ু সংকেতগুলি সংযুক্ত ক'রে পিআই৩কে সংকেত পথের মেরামতের সাথে যুক্ত করে। অন্য কথায়, এটি স্নায়বিক কার্যকলাপ এবং নিউরোপেপটাইড সিস্টেমের এক্সপ্রেশন কে নিয়ন্ত্রণ করে যা জিএনআরএইচ ক্ষরণে সাহায্য করে। অবশ্য, এসএসআরআই চিকিৎসা হল হাইপোথ্যালামিক অ্যামেনোরিয়ার একটিমাত্র হরমোনাল অবস্থার সম্ভাব্য হরমোন সমাধান। তদ্ব্যতীত, যেহেতু এই অবস্থাটি বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটার সমূহের নিজেদের কাজের সঙ্গে যুক্ত, হরমোন চিকিৎসা দেবার জন্য এখনো অনেক গবেষণা করতে হবে যাতে হরমোনের প্রভাব নিবারণ করা যায়।
হাইপোথ্যালামিক অ্যামেনোরিয়ার শারীরিক চিকিৎসার জন্য, গোনাডোট্রপিন হরমোনের স্বল্পতা এবং নিউরোএন্ডোক্রাইন বিকৃতি, যেমন থাইরয়েড কম সংশ্লেষণ এবং আইজিএফ-১ এর জন্য যে ইস্ট্রোজেন ঘাটতি হয় তার চিকিৎসায়, মেট্রিলেপটিন (আর-মেটহুলেপটিন) এর ইঞ্জেকশন ব্যবহার করে ফল পাওয়া গেছে। দেখা গেছে আর-মেটহুলেপটিন হাইপোথ্যালামিক-পিটুইটারি-গোনাডাল অক্ষের ত্রুটি পুনরুদ্ধারে এবং জনন, থাইরয়েড, এবং আইজিএফ হরমোনের উৎকর্ষ সাধনে এবং সেইসাথে হাড়ের গঠনেও কার্যকর, এইভাবে অ্যামেনোরিয়া এবং বন্ধ্যাত্ব নিরাময় করে। যাইহোক, এটি কিন্তু কর্টিসোল এবং অ্যাড্রেনোকোর্টিকোটোপিন স্তরগুলির বা হাড়ের পুনরূদ্ধারে কার্যকর প্রমাণিত হয়নি।[32]
প্রাক শিল্পপণ্যোৎপাদী সমাজে, ঋতুদর্শন সাধারণত বর্তমান শিল্প সমাজের চেয়ে পরে ঘটত। ঋতুদর্শনের পরে, গর্ভধারণ বা স্তন্যদানের জন্য মহিলাদের প্রজনন জীবনের বেশিরভাগ সময়ই ঋতুস্রাব বন্ধ থাকত। ঋতুদর্শনের বয়স কমে যাওয়া এবং প্রজনন হার কমে যাওয়ার অর্থ মানব বিবর্তনের ইতিহাসের অধিকাংশ সময়ে অবস্থার প্রভাবে নারীদের যা ঋতুস্রাব থাকত তার তুলনায় আধুনিক নারীদের ঋতুস্রাব প্রায়ই অনেক বেশি।[33]
শব্দটি পাওয়া গেছে গ্রিক: এ = নেতিবাচক, মেন = মাস, রোইয়া = প্রবাহ। প্রাপ্ত বিশেষণগুলি হল অ্যামেনোরিয়াল এবং অ্যামেনোরিক। এর বিপরীত হল স্বাভাবিক ঋতু চক্র (ইউমেনোরিয়া)।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.