প্রথম সহস্রাব্দ
সহস্রাব্দ / From Wikipedia, the free encyclopedia
অ্যানো ডোমিনি বা প্রচলিত যুগের প্রথম সহস্রাব্দ ১ থেকে ১০০০ বছর জুড়ে বিস্তৃত একটি সহস্রাব্দ হিসেবে গণনা করা হয় (প্রথম থেকে দশম শতাব্দী; জ্যোতিষশাস্ত্রে: জেডি ১৭২১৪২৫.৫ -২০৮৬৬৬৭.৫)[1]। পূর্ববর্তী সহস্রাব্দের তুলনায় এই সময়কালে বিশ্বের জনসংখ্যা বেশ ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ২০ কোটি জনসংখ্যা থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দ অবধি মাত্র ৩০ কোটির মতো জনসংখ্যা হয়েছিল।[2]
সহস্রাব্দ: | |
---|---|
শতাব্দী: |
|
পশ্চিমা ইউরেশিয়াতে (ইউরোপ এবং নিকট প্রাচ্য), প্রথম সহস্রাব্দ ছিল প্রাচীন যুগ থেকে মধ্যযুগে উত্তরণের সময়। প্রথম শতাব্দী রোমান সাম্রাজ্যের শীর্ষাবস্থান দেখেছিল যা পরবর্তীতে প্রত্নতাত্ত্বিক যুগে ধীরে ধীরে পতনের সম্মুখিন হয় এবং সে সাথে খ্রিস্টান ধর্মের উত্থান ও মহান অভিবাসনের সূচনা হয়। সহস্রাব্দের দ্বিতীয়ার্ধ ইউরোপের আদি মধ্যযুগ হিসেবে পরিচিত এবং পশ্চিমে ভাইকিং সম্প্রসারণ ও পূর্বে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের উত্থান দ্বারা চিহ্নিত।
পূর্ব এশিয়ায় প্রথম সহস্রাব্দ এক ব্যাপক সাংস্কৃতিক অগ্রগতির সময় ছিল। এ সময় পূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধধর্মের বিস্তার ঘটেছিল। চীনে দশম শতাব্দীতে পাঁচটি রাজবংশ এবং দশ রাজত্বের সময়কালে নতুন বিচ্ছিন্নতা উপস্থিত হওয়ার আগ পর্যন্ত হান রাজবংশের স্থান দখল করে নেয় চিন রাজবংশ এবং তারপর তাং রাজবংশের আবির্ভাব ঘটে। জাপানে, লোহার সরঞ্জামের ব্যবহারের দরুণ কৃষকদের উৎপাদনশীলতা এবং ফসলের ফলন বৃদ্ধির ফলে জনসংখ্যার ব্যাপক বর্ধনশীল প্রবণতা দেখা যায়। জাপানে ইয়ামতো আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। গুপ্ত সাম্রাজ্য গঠনের আগ পর্যন্ত প্রথম সহস্রাব্দ জুড়ে ভারতীয় উপমহাদেশ অসংখ্য রাজ্যে বিভক্ত ছিল। আরব থেকে পশ্চিম এশিয়া, ভারত, উত্তর আফ্রিকা এবং আইবেরীয় উপদ্বীপে ইসলাম ধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল যা ইসলামী স্বর্ণযুগে (–০০-১২০০) চূড়ান্ত রূপলাভ করেছিল।
মেসোমেরিকাতে (উত্তর আমেরিকার একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক অঞ্চল যা প্রায় বেলিজ হয়ে মধ্য মেক্সিকো, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, এল সালভাদর, নিকিরাগুয়া ও উত্তর কোস্তারিকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল) প্রথম সহস্রাব্দ ব্যাপক বিকাশের সময়কাল ছিল যা ক্লাসিক যুগ (২০০-৯০০) নামে পরিচিত। এসময় তেওতিহুয়াকান (মেসোআমেরিকান শহর) একটি মহানগরীতে পরিণত হয় এবং এর সাম্রাজ্য পুরো মেসোআমেরিকাতে আধিপত্য করত। দক্ষিণ আমেরিকায় প্রাক-ইনকা ও উপকূলীয় সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়েছিল। সেখানে প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক ধাতুশিল্প এবং উৎকৃষ্ট মৃৎশিল্প তৈরি করা হতো। উত্তর আমেরিকায় সহস্রাব্দের শেষ দিকে মিসিসিপি নদ এবং ওহিও নদীর উপত্যকায় মিসিসিপি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। অসংখ্য শহর নির্মিত হয়েছিল এ সময় যার মধ্যে বৃহত্তম শহর কাহোকিয়া বর্তমান ইলিনয় রাজ্যে গড়ে উঠেছিল। কাহোকিয়ায় সন্ন্যাসীদের স্তূপ বা ঢিবি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ৯০০-৯৫০ খ্রিস্টাব্দে।
সাব-সাহারান আফ্রিকাতে, বান্টু অভিবাসন প্রায় ৫ম শতাব্দীর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাতে পৌঁছে গিয়েছিল। অন্যদিকে ট্রান্স সাহারান ক্রীতদাস ব্যবসা ৯ম শতাব্দীর মধ্যে সাহারা এবং সোয়াহিলি উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল।