![cover image](https://wikiwandv2-19431.kxcdn.com/_next/image?url=https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/12/Hepatitis-B_virions.jpg/640px-Hepatitis-B_virions.jpg&w=640&q=50)
হেপাটাইটিস বি
মানব রোগ / From Wikipedia, the free encyclopedia
হেপাটাইটিস বি একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা যকৃত বা লিভার কে আক্রমণ করে।[1] হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (HBV) এর আক্রমণে এ রোগ হয়।[1] অনেক সময় সংক্রমণের প্রথম দিকে কোন লক্ষন প্রকাশ পায় না।[1] তবে অনেক ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, চামড়া হলুদ হওয়া, ক্লান্তি, পেট ব্যাথা, প্রস্রাব হলুদ হওয়া প্রভৃতি লক্ষন দেখা যায়।[1] সাধারনত এই লক্ষনগুলো কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং কদাচিৎ লক্ষ্মণ প্রকাশ পাওয়ার পর পরিশেষে মৃত্যু হয়।[1][2] সংক্রমণের পর রোগের লক্ষন প্রকাশ পেতে ৩০ থেকে ১৮০ দিন সময় লাগতে পারে।[1] জন্মের সময় আক্রান্ত হওয়া রোগীদের প্রায় ৯০% ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হন যেখানে ৫ বছর বয়সের পর আক্রান্ত হওয়া রোগীদের ১০% এরও কম এতে আক্রান্ত হন।[3] দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগেরই কোন প্রাথমিক লক্ষন থাকে না। যদিও এক্ষেত্রে এটি ধীরে ধীরে এটি সিরোসিস এবং যকৃতের ক্যান্সার এ রূপ নিতে পারে।[4] দীর্ঘস্থায়ী আক্রান্ত হওয়া রোগীদের প্রায় ১৫ থেকে ২৫% মৃত্যুবরণ করতে পারে।[1]
এই ভাইরাসটি রক্ত কিংবা দেহনিঃসৃত তরলের মাধ্যমে ছড়ায়।[1] যে সব জায়গায় এ রোগের প্রকোপ বেশি সেখানে সাধারনত শিশুর জন্মের সময় কিংবা শৈশবে অন্য আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের মাধ্যমে এ রোগ সবচেয়ে বেশি ছড়ায়।[1] কিন্তু যে সব জায়গায় এ রোগের প্রকোপ কম সেখানে শিরায় মাদক দ্রব্যের ব্যবহার এবং অরক্ষিত যৌনমিলন এ রোগের প্রধান কারণ।[1] এছাড়াও রক্ত আদান-প্রদান, ডায়ালাইসিস, আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে বসবাস, সংক্রমণের হার বেশি এমন স্থানে ভ্রমণ প্রভৃতি মাধ্যমেও এ রোগ ছড়ায়।[1][3] ১৯৮০ সালের দিকে ট্যাটু এবং আকুপাংচারের মাধ্যমেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হয়েছিলেন যদিও বর্তমানে এ ধরনের মাধ্যমে সংক্রমণ কমে এসেছে।[5] হাত ধরা, খাবারের তৈজসপত্র শেয়ার করা, চুম্বন, কোলাকুলি করা, হাঁচি-কাশি, কিংবা মাতৃদুগ্ধপানের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় না।[3] সংক্রমণের পর ৩০ থেকে ৬০ দিন পর এ রোগ নির্ণয় করা যায়।[1] সাধারনত রক্তে অবস্থিত ভাইরাস এবং এর বিরুদ্ধে অবস্থিত অ্যান্টিবডি থেকে এ রোগ নির্ণয় করা হয়।[1] এটি পরিচিত পাঁচটি হেপাটাইটিস ভাইরাসের মধ্যে অন্যতম একটি: এ, বি, সি, ডি, এবং ই।
১৯৮২ সাল থেকে টীকার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।[1][6] বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে জন্মের প্রথম দিনেই এ রোগের টীকা নেয়া উচিত।[1] সম্পূর্ণ সুরক্ষার জন্য আরও ২-৩ টি ডোজ[7] নেয়া প্রয়োজন।[1] প্রায় ৯৫% ক্ষেত্রেই এই টীকা কাজ করে।[1] জাতীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ২০০৬ থেকে বিশ্বের প্রায় ১৮০ টি দেশে এই রোগের প্রতিষেধক টীকা দেয়া হয়।[8] এটা সুপারিশ করা হয়ে থাকে যে সব ধরনের রক্ত আদান-প্রদানের পূর্বে পরীক্ষা করে দেখা এবং সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য কনডম ব্যবহার করা।[1] প্রাথমিক সংক্রমণের ক্ষেত্রে, রোগের লক্ষ্মণ অনুযায়ী রোগীর যত্ন নেওয়া হয়।[1] দীর্ঘস্থায়ী আক্রান্ত রোগীদের বেলায়, টেনোফোবির বা ইন্টারফেরোনের মতো সংক্রমণ ধ্বংসকারী ওষুধ কার্যকর হতে পারে; যদিও, ওষুধগুলো অনেক দামী।[1] সিরোসিসের জন্য অনেক সময় যকৃত প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে।[1]
পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তাদের জীবদ্দশার কোন এক সময় এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ থেকে ৩৫ কোটি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণে আক্রান্ত।[1][9][10] ২০১৩ সালে প্রায় ১৩ কোটি মানুষ নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।[11] এ রোগে প্রতি বছর ৭.৫ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়।[1] এদের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ মারা যায় যকৃতের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে।[12] বর্তমানে এ রোগটি শুধুমাত্র পূর্ব এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকায় বেশি দেখা যায়। এ সব অঞ্চলে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৫-১০% দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণে আক্রান্ত।[1] ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় আক্রান্তের হার ১% এরও কম।[1] এটি মূলত "সেরাম হেপাটাইটিস" নামে পরিচিত ছিল।[13] হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রতিষেধক সমৃদ্ধ খাবার তৈরির গবেষণা চালানো হচ্ছে।[14] এই রোগটি অন্যান্য হোমিনিডদের মাঝেও সংক্রমিত হতে পারে।[15]