সান্তাহার
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সান্তাহার বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত বগুড়া জেলায় অবস্থিত একটি শহর। এই শহরটি আদমদীঘি উপজেলার প্রধান শহর। এ শহরটি বহুপূর্ব থেকেই রেল যোগাযোগের জন্য বিখ্যাত।
সান্তাহার পূর্বনাম :সুলতানপুর | |
---|---|
পৌরশহর | |
বাংলাদেশে সান্তাহার শহরের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৪.৭৭৭২৫১° উত্তর ৮৮.৯৯৩৬২১° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
জেলা | বগুড়া জেলা |
উপজেলা | আদমদীঘি উপজেলা |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• শাসক | সান্তাহার পৌরসভা |
• পৌর মেয়র | মো: তোফাজ্জল হোসেন (ভুট্টু) [1] |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৩৬,৮৬০ [2] |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৫৮৯১ |
কলিং কোড | +৮৮০ |
বর্তমানে এ শহর সান্তাহার নামে পরিচিত হলেও এর পূর্ব নাম সুলতানপুর। মূলত তখন এটি রাজশাহী জেলার অন্তর্গত ছিলো। ব্রিটিশরা তখন এ অঞ্চলে রেলযোগাযোগ সম্প্রসারণের উদ্যেগ নেয়। যে মৌজাটির উপর রেল স্টেশন তৈরি করা হয় তা ছিল সাঁতাহার মৌজা। সান্তাহার রেল জংশন স্টেশনের সরকারি কোড STU। সে সময় আদমদীঘি থানাধীন সুলতানপুর বাজার (বর্তমানে নওগাঁ জেলার সদর থানাধীন) অত্র এলাকার বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ বাজার হিসেবে গড়ে উঠায় অত্র রেল স্টেশনের নাম সুলতানপুর রাখা হয়। সে হিসাবে SULTANPUR ইংরেজি নাম হতে S T U নিয়ে সান্তাহার রেলওয়ে জংশন স্টেশনের কোড STU নির্ধারণ করা হয়। যা এখন পর্যন্ত বহাল আছে। এই জংশন স্টেশনটি সাঁতাহার মৌজার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় স্থানীভাবে সাঁতাহার নামই পরিচিত হতে থাকে। তৎকালীন অধিকাংশ অফিসার ইংরেজি বা অন্য ভাষাভাষী হবার কারণে, তারা ইংরেজি তে সাঁতাহার লিখতে গিয়ে চন্দ্রবিন্দু থাকার কারণে(সাঁ – San তা- Ta হার -Har) সান্তাহার বানিয়ে ফেললেন। বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে কোন শব্দের সঙ্গে চন্দ্রবিন্দু থাকার কারণে ইংরেজি বানানের সময় চন্দ্রবিন্দু এর স্থলে ইংরেজি বর্ণ N ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। তাই বাংলা সাঁতাহার এর ইংরেজি অপভ্রংশ Santahar নামটি অধিক ব্যবহারের কারণে সান্তাহার নামটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে।সাঁতাহারের ইংরেজি বানান Santahar কালক্রমে ব্যাপকভাবে সান্তাহার নামে পরিচিতি হওয়ায় সুলতানপুর নামটি বিলুপ্ত হয়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ উপনিবেশ শেষ হলে সুলতানপুর নামটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয় এবং সরকারিভাবে সান্তাহার নামটি ব্যবহার শুরু হয়। তবে সান্তাহার রেল স্টেশনের কোড STU রয়ে যায়। [3]
১৮০০ খ্রিস্টাব্দের শেষ ভাগে ভারতীয় উপমহাদেশে যে সামান্য কয়েকটি শহর দ্রুত আধুনিক হয়ে ওঠে সান্তাহার তার মধ্যে অন্যতম। সান্তাহার একটি রেল প্রসিদ্ধ শহর। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোস্পানির ভাইসরয় লর্ড ডালহৌসি আসার পর থেকে এ অঞ্চলে রেল সম্প্রসারনের কাজ শুরু হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে রেল সম্প্রসারনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের পদক্ষেপে ১৮৫০ এর দিকে প্রথম খুলনা এলাকায় প্রথম কাজ শুরু করলেও মাটির কারণে তা ব্যার্থ হয়। পরবর্তিতে রাণী ভবানীর প্রচেষ্টায় ১৮৭৮ সালে ইস্টার্ন স্টেট কোম্পানি নাটোর – পার্বতীপুর রেললাইন বসানোর কাজ শুরু কর। অভিজ্ঞ ব্রিটিশরা তখন যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নদীপথের সংযোগ শহর সুলতানপুরকে(সান্তাহারের পূর্বনাম) বেছে নেয়। যমুনা ও রক্তদহের তীরে এই শহরটিকে তারা স্টেশন স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অধুনা উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকা ও খুলনার রেল যোগাযোগ সান্তাহারের উপর দিয়ে হয়। তৎকালীন অবিভক্ত ভারত বর্ষে সান্তাহার থেকে ভারত তথা কলকাতা, দার্জিলিংসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে দার্জিলিং মেইল নামে খ্যাত রেলগাড়ির মাধ্যমে যাত্রা করা যেত। সান্তাহার রেলপ্রসিদ্ধ শহর বিধায় পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার সান্তাহারে বিহারীদের সান্তাহারে পূর্ণবাসন করে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বহু স্মৃতিবিজড়িত এ শহর। সান্তাহারের মুক্তিযোদ্ধারা ও আপামর জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে প্রায় ২৫ হাজার বিহারির বসবাস ছিল এই শহরে। নানা রকম অত্যাচার করতো তারা বাঙালীদের ওপর। ১৯৭১ সালে মুত্তিযুদ্ধ শুরুর প্রক্কালে বিহারিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বাঙালী নিধন কার্যক্রম শুরু করে। শেষ পযর্ন্ত তাদের হত্যাযজ্ঞের ভয়ে ভীত না হয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাঙালীরা। প্রান যায় উভয় পক্ষের লোকজনের। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকবাহিনী সান্তাহারে বিহারি হত্যা কান্ডের প্রতিশোধ হিসাবে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত করে। প্রান যায় সান্তাহারে অনেক হিন্দু, মুসলমান সহ নানা ধর্মের মানুষের। মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের জন্য ২০১৫ সান্তাহারে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়। অনেক স্মৃতি বিজরিত সান্তাহার শহরে রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ের ভিতর ’ঠক্কর’ নামক স্থানে স্বাধীনতা স্বৃতিস্তম্ভ নির্মানের জন্য স্থান নির্ধারন হয়। [4] [5]
শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৪.৭৭৭২৫১° উত্তর ৮৮.৯৯৩৬২১° পূর্ব। সমুদ্র সমতল থেকে শহরটির উচ্চতা ১৪ মিটার।
বাংলাদেশের অন্যান্য শহরগুলোর মতো সান্তাহারও সান্তাহার পৌরসভা নামক একটি পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত হয় যা মূলত একটি স্থানীয় সরকার সংস্থা। 'ক' শ্রেণীভুক্ত এ পৌরসভাটি বর্তমানে সান্তাহার শহরকে ৯টি ওয়ার্ডে এবং সেগুলোকে পুনরায় ৩৫ টি মহল্লায় বিভক্ত করে এ শহরের নাগরিকদের পৌরসেবা ও পরিচালনা করছে।[6]
বাংলাদেশের আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১ অনুযায়ী সান্তাহার শহরের মোট জনসংখ্যা ৩৬,৮৬০ জন যার মধ্যে ১৮৮১৩ জন পুরুষ এবং ১৮৪০৭ জন নারী। এ শহরের পুরুষ এবং নারী অনুপাত ১০৪:১০০। [7]
সান্তাহার একটি রেল যোগাযোগের জন্য প্রসিদ্ধ একটি শহর। অধুনা উত্তরবঙ্গের সাথে ঢাকা ও খুলনার রেল যোগাযোগ সান্তাহারের উপর দিয়ে হয়ে থাকে। তৎকালীন অবিভক্ত ভারত বর্ষে সান্তাহার থেকে ভারত তথা কলিকাতা, দার্জিলিং সহ ভারতের বিভিন্ন শহরে যোগাযোগ করা যেত। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সান্তাহার একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। নওগাঁ জেলা ও আশেপাশের সকল এলাকার সড়ক যোগাযোগ সান্তাহারের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। সিএনজি, বাস, রিকশা প্রধান যানবাহন।
সান্তাহার শহরের স্বাক্ষরতার হার শতকরা ৬২ ভাগ। এ শহরের উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল: প্রাথমিক বিদ্যালয়:
সরকারি কলেজ:
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.