Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
শ্রীলঙ্কা গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সংবিধান (সিংহলি: ශ්රී ලංකා ආණ්ඩුක්රම ව්යවස්ථාව, তামিল: இலங்கை அரசியலமைப்பின், প্রতিবর্ণী. Ilaṅkai araciyalamaippiṉ) হল শ্রীলঙ্কা দ্বীপরাষ্ট্রের সংবিধান যেটা ন্যাশনাল স্টেট অ্যাসেম্বলি দ্বারা আসলে প্রবর্তন হয় ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের মে পর্যন্ত-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ] মোট ১৯ বার শ্রীলঙ্কার সংবিধানে সংশোধন আনা হয়েছে।
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের শ্রীলঙ্কান সংবিধানের প্রতিস্থাপনের পর এটা শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান; এই দেশ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে সিংহলের আধিপত্যের ব্রিটিশ কমনওয়েলথ থেকে স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার পর এটা যেমন তৃতীয় সংবিধান, এবং মোটের ওপর এটা হল চতুর্থ সংবিধান।
সোলবারি সংবিধানের অধীনে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দ্য সিলোন ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট, ১৯৪৭ এবং দ্য সিলোন (কন্সটিটিউশন অ্যান্ড ইন্ডিপেন্ডেন্স) অর্ডার্স ইন কাউন্সিল, ১৯৪৭ এই দুটো আইন সমন্বিত হয়েছিল; শ্রীলঙ্কাকে সেই সময় বলা হোত সিলোন।[1] সোলবারি সংবিধানের মাধ্যমে সিলোনে সংসদীয় কাঠামোর সরকার এবং একটা জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন ও একটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠিত হয়েছিল। সংবিধানের ২৯(২) অনুচ্ছেদ মোতাবেক সংখ্যালঘু অধিকারকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল। গভর্নর-জেনারেল (যিনি সিলোন রাজতন্ত্রের এবং যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্রেরও প্রতিনিধি), সেনেট এবং হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন। ১০১ জন সদস্য সমন্বিত হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের মধ্যে ৯৫ জন সদস্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন এবং বাকি ৬ জনকে মনোনীত করেন গভর্নর-জেনারেল। ডিলিমিটেশন কমিশন ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিনিধি সভার সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে মোট ১৫১ করেছিল এবং সভার মেয়াদ হয়েছিল ৫ বছর।[2] ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি এসডাব্লুআরডি বান্দরনায়েকে সরকার সংবিধান সংশোধন করার জন্যে সেনেট এবং হাউস অব রিপ্রেসেন্টেটিভসের একটা জয়েন্ট সিলেক্ট কমিটি গঠন করেছিল; কিন্তু ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মে সংসদের প্রচার কাজের জন্যে কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।[3] ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন ঠিক একই ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়েছিল ডুডলি সেনানায়াকে সরকার এবং সেই চেষ্টাও একই রকম প্রচারের ফলে কার্যকর করা যায়নি।[4] ৩০ জন সদস্য নিয়ে যে সেনেট গঠিত হয় (প্রতিনিধি সভার দ্বারা ১৫ জন এবং গভর্নর-জেনারেল দ্বারা বাকি ১৫ জন সদস্য নির্বাচিত) ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২ অক্টোবর অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
সংবিধান সংশোধন
বিশ্বের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সিরিমাভো বন্দরনায়েকে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে কার্যভার গ্রহণ করেন।[6] তাঁর যুক্তফ্রন্ট সরকার সংসদকে গণপরিষদ হিসেবে ব্যবহার করেন এবং প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানের একটা খসড়া প্রস্তুত করেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ২২ মে প্রবর্তন করা হয়। বর্তমান সংবিধান ন্যাশনাল স্টেট অ্যাসেম্বলি নামে ৬ বছর মেয়াদী একটা এককক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রদান করেছিল এবং এর মধ্যে সার্বভৌমত্ব নিহিত ছিল। দেশের নামমাত্র প্রধান হিসেবে একজন রাষ্ট্রপতিকে মননীত করবেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি মন্ত্রিসভার প্রধান ও ন্যাশনাল স্টেট অ্যাসেম্বলির কাছে দায়বদ্ধ। সিংহল নাম পরিবর্তন করে রাখা হল শ্রীলঙ্কা প্রজাতন্ত্র (প্রোজ্জ্বল দ্বীপ)। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি এই সংবিধানে জনগণের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতা সংশোধন করে একটি ঘোষণা করা হয়; যাতে বলা হয় যে, একেকটি নির্বাচন ক্ষেত্রের সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে ৭৫,০০০ সংখ্যার জায়গায় ৯০,০০০ নির্বাচকমণ্ডলী থাকবে[7] জে. আর. জয়বর্ধনে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাইতে পাঁচ-ষষ্ঠমাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কার্যভার গ্রহণ করে ৪ অক্টোবর, ১৯৭৭ তারিখে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের সংবিধানে দ্বিতীয় সংশোধনী পাস করান; যার ফলে কার্যকরী রাষ্ট্রপতির পদ তৈরি হয়। এই বিধান অনুযায়ী ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী জয়বর্ধনে স্বাভাবিকভাবেই শ্রীলঙ্কার প্রথম কার্যকরী রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন।[8]
১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ নির্বাচনের আগে ইউ এন পি জনগণের কাছ থেকে একটা নতুন সংবিধান গ্রহণ করার শাসনাদেশ পেয়েছিল। সেই অনুযায়ী বর্তমান সংবিধান সংশোধন করার জন্যে একটা সিলেক্ট কমিটি মনোনীত করা হয়েছিল।
১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ সেপ্টেম্বর নতুন সংবিধান প্রবর্তিত হয়েছিল, যাতে এককক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং কার্যকরী রাষ্ট্রপতির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির কার্যকাল এবং সংসদের মেয়াদ দুই ক্ষেত্রেই ছ-বছর ধার্য করা হয়েছিল। নতুন সংবিধান সংসদের নির্বাচনে বহু সদস্যের সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব প্রবর্তিত হয়েছিল, যে সংসদের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৯৬ (পরবর্তীকালে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীতে যেটা বাড়িয়ে ২২৫ করা হয়)।
সংবিধান স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং মৌলিক অধিকারের গ্যারান্টি দিয়েছে, যেমন কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করতে পারে। সংবিধানে শাসনের (ন্যায়পাল) জন্যে একজন সংসদীয় কমিশনার রাখার ব্যবস্থা আছে যিনি জনতার অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবিধান দিতে পারেন। এটা দলবদল-বিরোধী আইন, এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দিষ্ট বিষয় ও বিলের ওপর গণভোট প্রবর্তন করে।
শ্রীলঙ্কার সংবিধানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে সংশোধন করার ব্যবস্থা আছে। যাই হোক, বুনিয়াদি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নির্দিষ্ট কিছু ধারার ক্ষেত্রে, যেমন, ভাষা, ধর্ম এবং শ্রীলঙ্কার বিষয়ে এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং জাতীয় পর্যায়ে গণভোটে অনুমোদন দুটোরই প্রয়োজন হয়।
সংশোধন | তারিখ | বিবরণ |
---|---|---|
প্রথম সংশোধন | ২০ নভেম্বর ১৯৭৮ | বিশেষ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন বিষয় |
দ্বিতীয় সংশোধন | ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ | প্রথম সংসদের সদস্যদের পদত্যাগ ও বহিষ্কার সম্পর্কিত বিষয় |
তৃতীয় সংশোধন | ২৭ আগস্ট ১৯৮২ | রাষ্ট্রপতির প্রথম দফার ৪ বছরের পর পুনর্নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সক্ষম হওয়ার জন্যে |
চতর্থ সংশোধন | ২৩ ডিসেম্বর ১৯৮২ | প্রথম সংসদের মেয়াদ বাড়ানোর জন্যে |
পঞ্চম সংশোধন | ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ | রাজনৈতিক দল শূন্যপদ পূর্ণ করতে না-পারলে উপনির্বাচনের বিধান রাখা |
ষষ্ঠ সংশোধন | ৮ আগস্ট ১৯৮৩ | আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা |
সপ্তম সংশোধন | ৪ অক্টোবর ১৯৮৩ | হাই কোর্টের কমিশনারের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং কিলিনচ্চি জেলা সৃষ্টি |
অষ্টম সংশোধন | ৬ মার্চ ১৯৮৪ | রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা নিয়োগ |
নবম সংশোধন | ২৪ আগস্ট ১৯৮৪ | সরকারি আধিকারিকদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা সম্পর্কে |
দশম সংশোধন | ৬ আগস্ট ১৯৮৬ | সরকারি নিরাপত্তা অধ্যাদেশের অধীনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজনী ঘোষণার ধারা বাতিল |
একাদশ সংশোধন | ৬ মে ১৯৮৭ | পুরো দ্বীপের রাজকোষের জন্যে ব্যবস্থা; হাই কোর্টের পত্তন সম্পর্কিত; আপীল কেশ কোর্টে সর্বনিম্ন বিচারক রাখার ধারা সংশোধন। |
দ্বাদশ সংশোধন | (প্রণীত হয়নি) | |
ত্রয়োদশ সংশোধন | ১৪ নভেম্বর ১৯৮৭ | তামিল ভাষাকে সরকারি ভাষা এবং ইংরেজিকে যোগাযোগের ভাষা করার জন্যে, এবং প্রাদেশিক পরিষদ গঠন করার জন্যে। |
চতুর্দশ সংশোধন | ২৪ মে ১৯৮৮ | রাষ্ট্রপতির মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি; সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ২২৫ করা; গণভোটের বৈধতা বৃদ্ধি; নির্বাচনী জেলাকে অঞ্চলে ভাগ করার জন্যে ডিলিমিটেশন কমিশন নিয়োগ; সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব এবং মোট প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশ কাট অফ পয়েন্ট হিসেবে ধার্য; ২৯ জন জাতীয় তালিকাভুক্ত সদস্যের বণ্টন। |
পঞ্চদশ সংশোধন | ১৭ ডিসেম্বর ১৯৮৮ | অঞ্চল বাছাইয়ের জন্যে ধারা ৯৬এ বাতিল করা এবং কাট অফ পয়েন্ট কুড়ি ভাগের এক ভাগ করার জন্যে। |
ষষ্ঠদশ সংশোধন | ১৭ ডিসেম্বর ১৯৮৮ | সিংহলি এবং তামিল ভাষাদ্বয়কে শাসনকার্য ও আইনি ভাষা করার ব্যবস্থা। |
সপ্তদশ সংশোধন | ৩ অক্টোবর ২০০১ | সাংবিধানিক পরিষদ এবং স্বাধীন কমিশনসমূহ গঠনের বিধান তৈরি করা। |
অষ্টাদশ সংশোধন | ৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ | যে বাক্যে রাষ্ট্রপতির পুনর্নির্বাচনের সীমাবদ্ধতার উল্লেখ আছে সেটা বাদ দেওয়া এবং একটা সংসদীয় পরিষদ নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া, নির্বাচন কমিশনারের মতো স্বাধীন পদ, মানবাধিকার, এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া। |
ঊনবিংশ সংশোধন | ২৮ এপ্রিল ২০১৫ | অষ্টাদশ সংশোধন বাতিল, যখন অচল সপ্তদশ সংশোধন প্রতিস্থাপন করে স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়, এবং যখন রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের, মন্ত্রিসভার এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যান, কার্যকরী রাষ্ট্রপতির শক্তি অপসারণ এবং রাষ্ট্রপতির কার্যকাল পাঁচ বছরে সীমাবদ্ধ করা। |
বিংশ সংশোধন | ২২ অক্টোবর ২০২০ | ঊনবিংশ সংশোধন বাতিল। |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.