শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
বড়ু চণ্ডীদাস রচিত বৈষ্ণব কাব্য / From Wikipedia, the free encyclopedia
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন হল বড়ু চণ্ডীদাস রচিত একটি মধ্যযুগীয় বাংলা কাব্য। এটি আদি মধ্যযুগীয় তথা প্রাক্-চৈতন্য যুগে বাংলা ভাষায় লেখা একমাত্র আখ্যানকাব্য এবং বৌদ্ধ সহজিয়া সংগীত-সংগ্রহ চর্যাপদের পর আদি-মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষার আবিষ্কৃত দ্বিতীয় প্রাচীনতম নিদর্শন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ বাঁকুড়া জেলার কাঁকিলা গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গোয়ালঘর থেকে এই কাব্যের খণ্ডিত পুঁথিটি আবিষ্কার করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁরই সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে পুঁথিটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। তিনি এই পুঁথির নামকরণ "শ্রীকৃষ্ণকীর্তন" করলেও পুঁথির মধ্যে একটি চিরকুটে লিখিত শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ নামটি[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] দৃষ্টে কোনও কোনও গবেষক পুঁথিটির নাম "শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ" রাখারই পক্ষপাতী ছিলেন; যদিও নামটি সংশয়াতীত নয় বলে বর্তমানে কাব্যটিকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামেই অভিহিত করা হয়।
বাংলা সাহিত্য | |
---|---|
বাংলা সাহিত্য (বিষয়শ্রেণী তালিকা) বাংলা ভাষা | |
সাহিত্যের ইতিহাস | |
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস | |
বাঙালি সাহিত্যিকদের তালিকা | |
কালানুক্রমিক তালিকা - বর্ণানুক্রমিক তালিকা | |
বাঙালি সাহিত্যিক | |
লেখক - ঔপন্যাসিক - কবি | |
সাহিত্যধারা | |
প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় চর্যাপদ - মঙ্গলকাব্য - বৈষ্ণব পদাবলি ও সাহিত্য - নাথসাহিত্য - অনুবাদ সাহিত্য -ইসলামী সাহিত্য - শাক্তপদাবলি - বাউল গান আধুনিক সাহিত্য উপন্যাস - কবিতা - নাটক - ছোটোগল্প - প্রবন্ধ - শিশুসাহিত্য - কল্পবিজ্ঞান | |
প্রতিষ্ঠান ও পুরস্কার | |
ভাষা শিক্ষায়ন সাহিত্য পুরস্কার | |
সম্পর্কিত প্রবেশদ্বার সাহিত্য প্রবেশদ্বার বঙ্গ প্রবেশদ্বার | |
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মূল উপজীব্য রাধা ও কৃষ্ণের প্রণয়কাহিনি। সমগ্র কাব্যটি তেরোটি খণ্ডে বিভক্ত: জন্মখণ্ড, তাম্বুলখণ্ড, দানখণ্ড, নৌকাখণ্ড, ভারখণ্ড, ছত্রখণ্ড, বৃন্দাবনখণ্ড, কালিয়দমন খণ্ড, যমুনাখণ্ড, হারখণ্ড, বাণখণ্ড, বংশীখণ্ড ও রাধাবিরহ। রাধাবিরহ অবশ্য মূল কাব্যে প্রক্ষিপ্ত কিনা তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে।
কাব্যের প্রধান তিন চরিত্র রাধা, কৃষ্ণ ও বড়ায়ি। এই বড়ায়ি চরিত্রটি সৃষ্টি করা হয়েছে প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যের "কুট্টনী" জাতীয় চরিত্রটির আদলে। এই তিনটি চরিত্র চিত্রণের দক্ষতার পরিপ্রেক্ষিতে কাব্যটিকে বড়ু চণ্ডীদাসের কবি প্রতিভার সার্থক নিদর্শন মনে করা হয়। পরবর্তীকালের বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের মাথুর ও ভাবসম্মিলন পর্যায়ের পূর্বাভাস শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রাধাবিরহ অংশের মধ্যে নিহিত।
মধ্যযুগের আদিপর্বে রচিত এই কাব্যের ভাষা আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুটা দুরূহ মনে হলেও বাংলা সাহিত্যের প্রথম যুগের ভাষা হিসেবে তা চর্যাপদের ভাষা অপেক্ষা অনেক বেশি সাবলীল, স্বাভাবিক ও স্বনির্ভর ছিল। মনে করা হয় যে, বড়ু চণ্ডীদাস সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে সুপণ্ডিত ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে যেমন একদিকে ভাগবত পুরাণ ও গীতগোবিন্দম্ কাব্যের বহু পংক্তির ভাবানুবাদ স্থান পেয়েছে, তেমনই উপমা, রূপক, উৎপ্রেক্ষা প্রভৃতি অলংকারের প্রয়োগেও কবি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এই কাব্যের ছন্দের বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। সাত প্রকারের পয়ার ও তিন প্রকারের ত্রিপদী ছন্দের প্রয়োগ দেখা যায় শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে। বিষয়বস্তু ও ভাবের দিক থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন জয়দেবের গীতগোবিন্দম্ ও চৈতন্যোত্তর বৈষ্ণব সাহিত্যের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজটি করেছে। তাছাড়া এই কাব্যে রাধা, কৃষ্ণ ও বড়ায়ির উক্তি-প্রত্যুক্তির মাধ্যমে যে নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে নিহিত রয়েছে পরবর্তীকালের বাংলা নাট্যসাহিত্যের বীজও।