শূন্যস্থান
পদার্থের খালি বা ফাঁকা স্থান / From Wikipedia, the free encyclopedia
শূন্যস্থান (ইংরেজি: Vacuum) হল পদার্থের খালি বা ফাঁকা স্থান। বায়মন্ডলীয় চাপের তুলনায় অনেক কম বায়বীয় চাপের এলাকাই হল শূন্যস্থান।পদার্থবিদরা প্রায়ই শূন্যস্থানে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফলকে আদর্শ বিবেচনা করেন এবং পরীক্ষাগারের অপরিপূর্ণ শূন্যস্থানকে বোঝাতে “আংশিক শূন্যস্থান” শব্দটি ব্যবহার করেন। অপরদিকে প্রকৌশল ও ফলিত পদার্থবিদ্যায় বায়ুমণ্ডলীয় চাপের তুলনায় কম চাপের যে কোন স্থানকেই শূন্যস্থান বলে।
আদর্শ শূন্যস্থানের কতটা কাছাকাছি আছে তার উপর আংশিক শূন্যস্থানের মান নির্ভর করে। অন্যদিকে নিম্ন গ্যাস চাপকে উচ্চগুণের শূন্যস্থান বলে। যেমন, একটি সাধারণ শূন্যস্থান পরিষ্কারক ২০% বায়ুচাপ কমিয়ে যথেষ্ট শোষণ তৈরি করতে পারে। এর থেকেও উচ্চগুণের শূন্যস্থান সম্ভব। রসায়ন, পদার্থবিদ্যা ও প্রকৌশলের অতি উচ্চ শূন্যস্থানের কক্ষ ১০০ nPa বায়ুমন্ডলীয় চাপের নিচে কাজ করতে পারে এবং প্রতি ঘনসেন্টিমিটারে ১০০ কণার পর্যায়ে পৌছতে পারে। মহাশূন্য হল উচ্চগুণের শূন্যস্থান যেখানে গড়ে প্রতি ঘনমিটারে অল্প কিছু হাইড্রজেন অণু থাকে । আধুনিক ধারণা অনুযায়ী কোয়ান্টাম অস্থিরতা, তমোশক্তি, গামা রশ্মি, মহাজগতিক রশ্মি , নিউট্রিনোর গমনাগমন এবং কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার অন্যান্য ব্যাপারের কারণে একটি নির্দিষ্ট আয়তনের স্থান থেকে সব পদার্থ বের করে নিলেও তা শূন্য হবে না। ঊনবিংশ শতকের তড়িৎচুম্বকত্ব তত্ত্ব অনুযায়ী শূন্যস্থান বলতে ইথার নামক অজানা পদার্থে পূর্ণ মাধ্যমকে বোঝাত। আধুনিক কণাপদার্থবিদ্যায় শূন্যাবস্থা বলতে পদার্থের নিম্ন অবস্থাকে বোঝায়।
প্রাচীন গ্রীসে শূন্যস্থান দার্শনিক বিতর্কের একটি জনপ্রিয় বিষয় ছিল, কিন্তু ১৭ শতকে এসেই বিষয়টির ওপরে তাত্ত্বিক গবেষণা শুরু হয়। এভাঞ্জেলিস্টা টরিসিলি ১৬৪৩ সালে সর্বপ্রথম পরীক্ষাগারে শূন্যস্থান তৈরি করেন। তার বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বিষয়ক তত্ত্বের পর অন্যান্য ব্যবহারিক কৌশল বের হয়। তিনি একটি লম্বা গ্লাসনল পারদ দ্বারা পূর্ন করে নলের খোলা প্রান্ত পারদের বাটিতে ডুবিয়ে টরিসিলিয়ান শূন্যস্থান তৈরি করেন।
২০ শতকে ভাস্বর বাতি এবং বায়ুশূন্য নলের পরিচিতির পর শূন্যস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প উপাদানের পরিণত হয় এবং বায়ুশূন্য প্রযুক্তির একটি বিশাল দুয়ার উন্মোচিত হয়। মানবমহাকাশযাত্রার বর্তমান উন্নয়ন , মানবস্বাস্থ্য এবং সাধারণ জীবন ধারণে বায়ুশূন্য স্থানের প্রভাব সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলেছে।