Loading AI tools
প্রাচীন বিশ্বের বানর প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত বানর বিশেষ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রেসাস বানর বা লাল বান্দর (ইংরেজি: Rhesus Macaque, Rhesus Monkey; বৈজ্ঞানিক নাম: Macaca mulatta) প্রাচীন বিশ্বের বানর প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত বানর বিশেষ। লাল বান্দর পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের প্রাদেশিক প্রাণী হিসেবে পরিচিত।
এ প্রজাতির বানরটি আইইউসিএন লাল তালিকায় ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে। বাংলাদেশের ১৯৭৪[3] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[4] বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সংখ্যায় এর বিস্তৃতি ঘটেছে এবং বাসস্থানের উপযোগী পরিবেশও বিদ্যমান। দক্ষিণ, মধ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে তৃণভূমিসহ বনাঞ্চল এলাকার বৃক্ষের শাখাসমূহে এদেরকে দেখা যায়। এছাড়াও, এরা মানব বসতির কাছাকাছি থাকতেও পছন্দ করে।[5]
মনস্তাত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, লাল বান্দর জটিল মানসিক সক্ষমতার অধিকারী। বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ, সাধারণ নিয়ম-কানুন প্রতিপালন, তাদের নিজস্ব মানসিক রাজ্যে বিচরণ করতে সক্ষম।[6] এমনকি তারা নিজস্ব সচেতনতায়ও পারদর্শী।[7]
স্তন্যপায়ী ও চতুষ্পদী লাল বান্দরের দেহ বাদামী অথবা ধূসর বর্ণের লোমে আচ্ছাদিত। মুখমণ্ডল ও পিছনের অংশ গোলাপী রঙের। এর লেজের দৈর্ঘ্য মাঝারি প্রকৃতির। লেজের দৈর্ঘ্য ২০.৭ সেন্টিমিটার থেকে ২২.৯ সেন্টিমিটারের মধ্যে (৮.১ থেকে ৯ ইঞ্চি) হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বানরের দৈর্ঘ্য সাধারণতঃ গড়ে ৫৩ সেন্টিমিটার (২১ ইঞ্চি) এবং ওজন প্রায় ৭.৭ কেজি (১৭ পাউন্ড) হয়। স্ত্রীজাতীয় বানর আকারে পুরুষের তুলনায় ছোট হয়। গড়পড়তা দৈর্ঘ্য ৪৭ সে.মি. (১৯ ইঞ্চি) এবং ওজন ৫.৩ কেজি (১২ পাউন্ড) হয়। মেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবে এদের কশেরুকার সংখ্যা গড়ে ৫০টি। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই দাঁতের সংখ্যা ৩২টি।
বাংলাদেশ, ভারতের উত্তরাঞ্চল, পাকিস্তান, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, আফগানিস্তান, চীনের দক্ষিণাংশসহ কিছু প্রতিবেশী দেশসমূহে লাল বান্দরের আবাসস্থল। উন্মুক্ত এলাকা, তৃণভূমি, বনভূমি এমনকি পাহাড়-পর্বতের ২,৫০০ মিটার (৮,২০০ ফুট) উচ্চ এলাকায়ও এদের আবাস রয়েছে। এরা নিয়মিতভাবে সাঁতার কেটে থাকে। বান্দর শাবকগুলো অল্প কিছুদিনের মধ্যে সাঁতারে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। দ্বীপ এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক বানরগুলো অর্ধ-মাইলেরও বেশি দূরত্বের জায়গা সাঁতার কেটে অতিক্রমণ করতে পারে। কিন্তু প্রায়শঃই এদেরকে ছোট আকারের দলভূক্ত হয়ে খাবার পানি পানের উদ্দেশ্যে পানিতে পরে ডুবন্ত অবস্থায় দেখা যায়।
লাল বান্দর দ্বি-চারী প্রাণী হিসেবে বৃক্ষ এবং ভূমি - উভয় স্থানেই চলাচল করতে পারে। চতুষ্পদী প্রাণী হলেও এরা মানুষের ন্যায় হাঁটতে পারে। তৃণজীবি হিসেবে এরা প্রধানত গাছের ফল খায়। এছাড়াও এদের খাদ্য তালিকায় বীজ, শিকড়, গাছের ছাল রয়েছে। হিসেব করে দেখা গেছে যে, ৪৬টি বানর প্রজাতি ৯৯টি বিভিন্ন গাছের নিয়মিত ভোক্তা। মৌসুমী ঋতুতে পছন্দসই পাকা ফল থেকে এরা প্রয়োজনীয় পানি গ্রহণ করে। নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে দূরে থাকে। গাছের পাতায় প্রাপ্ত শিশিরকণা ও বৃষ্টির পানির মাধ্যমে তৃষ্ণা নিবারণ করে।[8] এছাড়াও, ঘাস ফড়িং, পিঁপড়াও এদের শিকারের অন্তর্ভুক্ত।[9]
লাল বান্দর কলহপ্রিয় জাতি। দলের প্রধান পুরুষ বানর অনুপ্রবেশকারীকে চোখ বড় বড় করে ও মুখ হা করে ভয় দেখায়। ভয় পেলে কাশির মত খক খক শব্দ করে ডাকে। তীব্র চিৎকার ও দাঁত বের করে একে অপরকে হুঁশিয়ার করে দেয়। দলের আকার ছোট থেকে বড় হতে পারে। আবাসস্থল ও খাদ্যের প্রাচুর্যের উপর ভিত্তি করে দলের সদস্যসংখ্যা ১০-৯০ পর্যন্ত হতে পারে। বন্য বানরের দল শহরাঞ্চলের দল থেকে অনেক বড় হয়। দলের প্রধান থাকে একটি প্রভাবশালী পুরুষ বানর। মানব বসতিতে বসবাসকারী বানরদের বিচরণের সীমা ১০-১০০ হেক্টর। কিন্তু বন্য বানরদের ক্ষেত্রে তা ৩০০-৪৯১ হেক্টর। দিনের ৬৫ ভাগ সময় এরা খাবার খোঁজা ও আহারের পেছনে ব্যয় করে।[10]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.