Loading AI tools
উইলিয়াম শেকসপিয়র রচিত বিয়োগান্ত নাটক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট (ইংরেজি: Romeo and Juliet) হচ্ছে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম শেকসপিয়র রচিত একটি বিয়োগান্তক নাটক, যা গড়ে উঠেছে দুজন প্রেমিক-প্রেমিকাকে কেন্দ্র করে। [1] পরবর্তীকালে তাদের মৃত্যু বিবাদমান দুই পরিবারকে একত্রিত করে। এটি শেকসপিয়রের জীবদ্দশায় সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পাঠকনন্দিত নাটক। একই সাথে হ্যামলেট, এবং ম্যাকবেথও ছিলো পাঠক নন্দিত ও সমান জনপ্রিয়। প্রাচীন যুগের সাহিত্যে বিয়োগান্তক প্রেমের উপাখ্যানের একটি ধারা লক্ষ্য করা যায়। রোমিও জুলিয়েট নাটক সেই ধারার অন্তর্গত। মূল কাহিনী ইতালির একটি প্রচলিত গল্পকে অবলম্বন করে যার অনুবাদ কবিতা রূপে প্রকাশ করেন আর্থার ব্রুক ১৫৬২ তে তাঁর 'দ্য ট্রাজিকাল হিস্ট্রি অফ রোমিয়াস এণ্ড জুলিয়েট' বইতে আর গদ্যরূপে প্রকাশ করেন উইলিয়াম পেণ্টার ১৫৬৭ তে তাঁর 'প্যালেস অফ প্লেজার' বইতে। শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েটে, যা নাকি আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীর ৯০র দশকে রচিত হয়, এই দুই রচনার গভীর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু শেক্সপিয়ার তাঁর নাটকে অনেক পার্শ্বচরিত্র, যেমন মার্কুশিও, প্যারিস ইত্যাদি যোগ করেন। নাটকটি প্রথম পুস্তিকাকারে প্রকাশ পায় ১৫৯৭ সালে (কোয়ার্টো সংস্করণ)। প্রথম পুস্তিকাটির গুণগত মান খুবই ন্যূন ছিল, পরের সংশোধিত সংস্করণগুলি অবশ্য শেক্সপিয়ারের মূল রচনার সংগে অনেক বেশি সংগতি রক্ষা করেছে। এই নাটকে শেক্সপিয়ারের কাব্যিক শৈলীতে নাটকীয় সংঘাতের উপস্থাপনা, গৌণ চরিত্রগুলিকে যথোচিত মর্যাদা দেওয়া এবং কাহিনীর সংগে নানা উপকাহিনী যোগ করে নাটকটিকে সমৃদ্ধ করা—সবই তাঁর নাট্যকার হিসাবে দক্ষতার পরিচয় বহন করে। চরিত্রের সংগে সাযুজ্য রক্ষা করে বিভিন্ন ছাঁদের কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে। রোমিও জুলিয়েট রঙ্গমঞ্চ, ছায়াছবি, সঙ্গীত-জলসা, যাত্রা ইত্যাদি নানা বিনোদন মাধ্যমে নানা রূপে অসংখ্যবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সপ্তদশ শতকে উইলিয়াম ডেভনান্ট নাটকের পুনরুদ্ধার ও বহু পরিমার্জন করেন। অষ্টাদশ শতকে ডেভিড গ্যারিক কিছু দৃশ্যের পরিবর্তন করেন, কিছু আপত্তিকর অংশ(তৎকালীন মতে) বাদ দেন। জর্জ বেন্ডা রোমিও জুলিয়েটের মিলনান্তক পরিণতি ঘটান। ঊনবিংশ শতকের অভিনয়ানুষ্ঠান প্রধানত মূল রচনাশ্রয়ী, অভিনেত্রী শার্লট কুশমানের কাজ এই তালিকায় পড়ে। জন গিলগাডের ১৯৩৫ সালের রূপায়নও মূল রচনানুসারী। বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীতে রোমিও এন্ড জুলিয়েট চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে ১৯৩৬ সালে জর্জ কুকার, ১৯৬৮ সালে ফ্রাংকো জেফিরেলি, ১৯৯৬ তে বাজ লুরমানের এবং ২০১৪ তে ব্রডওয়ে কোম্পানির নাম উল্লেখযোগ্য।
নাটকটি ইতালির ভেরোনা শহরের পটভূমিতে রচিত। শুরুতেই দেখা যায় মণ্টেগু ও ক্যাপুলেটের ভৃত্যদ্বয় পথে বচসায় রত, মনিবদের মতন তারাও আজীবন শত্রু। বচসা চরমে উঠলে প্রিন্স এসকলাস মধ্যস্থতা করতে বাধ্য হন এবং তিনি ঘোষণা করেন পুনরায় কেউ নগরের শান্তি ভঙ্গ করলে তার মৃত্যুদণ্ড হবে। পরে কাউন্ট প্যারিস ক্যাপুলেট-কন্যা জুলিয়েটকে বিবাহ করতে চাইলে ক্যাপুলেট তাকে আরো দুই বছর অপেক্ষা করতে বলেন এবং তাকে আসন্ন ক্যাপুলেটের নাচের আসরে নিমন্ত্রণ জানান। জুলিয়েটের মা ও ধাত্রী জুলিয়েটকেে প্যারিসের বিবাহ প্রস্তাব গ্রহণ করতে পরামর্শ দেন। এদিকে মন্টেগুতনয় রোমিও, ক্যাপুলেট পরিবারের কন্যা রোজালিনের প্রতি প্রণয়াসক্ত, রোমিওর ভাই তথা বন্ধু বেনভোলিও তা জানতে পারে। ক্যাপুলেটের নাচের আসরে রোজালিন আসবে জেনে বেনভোলিও ও মার্কুশিও, রোমিওর আরেক বন্ধু, রোমিওকে নিয়ে ছদ্মপরিচয়ে সেই নাচের আসরে যায়। সেখানে রোমিওর জুলিয়েটের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়, প্রথম দর্শনেই তারা পরস্পরের প্রতি গভীর ভাবে আকৃষ্ট হয়॥ আসরে রোমিওদের প্রকৃত পরিচয় ধরা পড়ে যায়। ক্রূদ্ধ টিবাল্ট, জুলিয়েটের ভাই, রোমিওকে হত্যা করতে যায় কিন্তু জুলিয়েটের পিতা তাকে নিবৃত্ত করেন। বাড়ি ফেরার পথে রোমিও মত পরিবর্তন করে ক্যাপুলেটের বাগানে চুপিসাড়ে প্রবেশ করে। জুলিয়েট তখন বাড়ির দ্বিতল বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনমনে রোমিওকে প্রেম নিবেদন করছে। রোমিও তা শুনতে পেয়ে আত্মপ্রকাশ করে। উভয়ের প্রেম বিনিময়ের পরে তারা শীঘ্র বিবাহ করতে মনস্থির করে। সন্ন্যাসী লরেন্স, যিনি এই দুই পরিবারের মিলন চাইতেন, পরের দিন গোপনে দুই প্রেমিক-প্রেমিকার বিবাহ দেন। টিবাল্টের ক্রোধ তখনো শান্ত হয়নি। রোমিওর সঙ্গে তার নূতন সম্পর্ক সম্বন্ধে অনবহিত সে রোমিওকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান জানায়। রোমিও কিন্তু আত্মীয়তার কথা ভেবে সে আহ্বান অস্বীকার করে। সম্মান রাখতে মার্কুশিও দ্বন্দ্বযুদ্ধ স্বীকার করে নেয়, রোমিও যখন যুদ্ধ থামাতে চাইছে, টিবাল্টের তরবারির আঘাতে মার্কুশিও প্রাণ হারায়। [2] শোকে উন্মত্ত রোমিও টিবাল্টকে হত্যা করে। বিচারে দুপক্ষের কথা শুনে রাজা রোমিওকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন না বটে কিন্তু তাকে অবিলম্বে ভেরোনা ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেন এবং কখনো তাকে ভেরোনায় দেখা গেলে তার প্রাণদণ্ড অবধি হতে পারে এ কথাও জানিয়ে রাখলেন। রোমিওর নির্বাসনে সদ্য পরিণীতা জুলিয়েটের হৃদয় ভেঙে গেল। টিবাল্টের মৃত্যুই এই শোকের কারণ বলে সকলে মনে করল। পিতা ক্যাপুলেটও আর দেরি না করে কাউন্ট প্যারিসের সঙ্গে জুলিয়েটের বিবাহ এখনই দিয়ে দিতে চাইলেন। জুলিয়েটের আপত্তি কেউ কানেও তুলল না। অসহায় জুলিয়েট সাহায্যের জন্য সন্ন্যাসী লরেন্সের কাছে ছুটে গেল। তিনি জুলিয়েটকে একটি পুষ্পনির্যাস দিলেন, যেটি পান করলে বিয়াল্লিশ ঘণ্টার জন্য দেহে সমস্ত প্রাণস্পন্দন থেমে যাবে। ইতোমধ্যে তিনি রোমিওকে খবর পাঠাবেন, সমাধিগৃহে জ্ঞান ফিরলে জুলিয়েট সামনে প্রিয়তম রোমিওকে দেখতে পাবে। জুলিয়েট সন্ন্যাসীর কথামত কাজ করল। পরিবারের সকলে তাকে মৃত ভেবে পারিবারিক সমাধিগৃহে সমাধিস্থ করে এল। সন্ন্যাসীর বার্তাবাহক কিন্তু রোমিওর কাছে পৌঁছায়না। তার আগেই ভৃত্য বালথাসারের কাছে রোমিও জানতে পারে জুলিয়েটের অন্তিম সংবাদ। ভগ্নহৃদয় রোমিও এক ওষুধের দোকানে কিছু বিষ জোগাড় করে সোজা চলে যায় ক্যাপুলেটদের সমাধিগৃহে। প্রবেশপথে দেখা হয় জুলিয়েটের পাণিপ্রার্থী কাউন্ট প্যারিসের সঙ্গে, সেও এসেছে নিভৃতে শোক নিবেদন করতে। প্যারিস সন্দেহ করে রোমিওর কোনো দুরভিসন্ধি আছে। উভয়ের বচসা. তার থেকে দ্বন্দ্ব, রোমিওর হাতে প্যারিস মারা যায়। জুলিয়েট তখনো মৃতবৎ, তাকে শেষবারের মত দেখে রোমিও বিষ পান করে। এরপরেই বিয়াল্লিশ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়, জুলিয়েট চোখ মেলে রোমিওকে মৃত দেখে শোকে অধীর হয়ে রোমিওর ছুরি দিয়ে আত্মহত্যা করে। দুই বিরোধী পরিবার ও রাজা সমাধিগৃহে মিলিত হন। সন্ন্যাসী লরেন্স অশুভগ্রহদুষ্ট প্রেমিকযুগলের কাহিনী বর্ণনা করেন। সন্তানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দুই পরিবারের দীর্ঘদিনের শত্রুতার অবসান হয়।
আর্থার ব্রুকের রোমিয়াস এণ্ড জুলিয়েট এর প্রচ্ছদ
প্রাচীন কালের বহু প্রেমোপাখ্যানের ছায়া শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েটে দেখতে পাওয়া যায়। খৃষ্টীয় প্রথম শতকের রোমান কবি ওভিদের মেটামর্ফোসিস কাব্যের পিরামাস ও থিসবে চরিত্র দুটি তার অন্যতম উদাহরণ[3]। প্রেমিকদের পারিবারিক শত্রুতা, পিরামাসের থিসবের মৃত্যু সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা রোমিও জুলিয়েট কাহিনীর অনুরূপ। খৃষ্টীয় দ্বিতীয় শতকের গ্রিক কবি জেনোফোন অফ এফেসাস রচিত এফেসিয়াকার সঙ্গেও রোমিও জুলিয়েট কাহিনীর নানা সাদৃশ্য রয়েছে, যেমন, প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ, ঘুমপাড়ানি নির্যাস[4]
চতুর্দশ শতকের ইতালীয় কবি দান্তের 'ডিভাইন কমেডি'তে মন্টেগু ক্যাপুলেট নামের উল্লেখ পাওয়া যায়, যদিও সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গে, মূল কাহিনীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আলেখ্য অনুযায়ী মন্টেগু ভেরোনার একটি রাজনৈতিক দল যদিও ক্যাপুলেট ক্রিমোনা শহরের একটি অভিজাত পরিবার[5]। পক্ষান্তরে পঞ্চদশ শতকের ইতালীয় কবি মাসুসিও সালেরনিতানো সিয়েনা নগরের পটভূমিতে মারিওত্তো ও গিয়ানোজাকে নিয়ে যে নভেল রচনা করেন(১৪৭৬ এ প্রকাশিত) [6] তার সঙ্গে রোমিও জুলিয়েট কাহিনীর মিল অনেক স্পষ্ট, যেমন নায়ক নায়িকার গোপন বিবাহ, সন্ন্যাসীর ভূমিকা, সম্ভ্রান্ত এক ব্যাক্তির হত্যা, নায়ক মারিওত্তোর নির্বাসন, নায়িকা গিয়ানোজাকে বিবাহে বাধ্য করা, মৃত্যুকল্প নির্যাস। শেষাংশে মারিওত্তো ধরা পড়ে, তার শিরোশ্ছেদ করা হয়, সেই শোকে গিয়ানোজা মারা যায়[7][8]। সালেরনিতানো দাবী করেন এটি একটি সমসাময়িক সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত।
একই বিষয় নিয়ে লুইগি দা পোর্তো(১৪৮৫-১৫২৯) রচনা করেন 'গিলেত্তা এ রোমিও'[9]। রচনাটি তাঁর বিখ্যাত হিস্টোরিয়া নভেলামেন্ত "রিত্রোভাতা দি দিউ নোবিলি আমান্তি"('দুই মহান প্রেমিক প্রেমিকার নবলব্ধ কাহিনী', ১৫২৪ সালে লিখিত ও লেখকের মৃত্যুর পরে ১৫৩১ সালে প্রকাশিত)গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত[10][11]। দা পোর্তোর রচনায় "পিরামাস ও থিসবে ", বোকাচিওর "ডেকামেরন", সালেরনিতানোর "মারিওত্তো ও গিয়ানোজা"র ছায়া লক্ষ্য করা যায়। মতান্তরে এটি লেখকের আত্মজীবনীমূলক। ১৫১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, পোর্তো তার সৈনিকজীবনে উদিন শহরে সাভোর্গনান গোষ্ঠীর গৃহে অনুষ্ঠিত স্ট্রমিয়েরি গোষ্ঠীর সঙ্গে সাভোর্গনান গোষ্ঠীর যুদ্ধবিরতির উৎসবে যোগ দেন ও গৃহস্বামীকন্যা লুসিনার প্রেমে পড়ে যান। অভিভাবকরা সে সম্পর্ক অনুমোদন করেন না। পরের দিন সাভোর্গনান উদিন শহর আক্রমণ করে। স্ট্রমিয়েরি গোষ্ঠীর বহু লোক মারা যায়, পোর্তোও গভীর আহত হন ও চিরতরে পঙ্গু হন। এক বছর বাদে তাঁর মন্টোর্সো ভিসেন্টিনোর আবাসে তিনি "গিলেত্তা এ রোমিও" রচনা করেন ও প্রেমিকা লুসিনাকে উৎসর্গ করেন[12]। পোর্তোর দাবী তাঁর কাহিনী একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, সালেরনিতানোর একশ বছর আগে ঘটেছে, যখন ভেরোনায় রাজত্ব করছেন বার্থোলোমিউ ডেলা স্কালা[13]। পোর্তোর রচনায় নামকরণ থেকে শুরু করে আমাদের পরিচিত রোমিও জুলিয়েটের সর্বাধিক ঘটনা ও চরিত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। ভেরোনা শহর, মন্টেচি ও ক্যাপুলেট পরিবার, চরিত্রের মধ্যে সন্ন্যাসী লরেন্স, মার্কুশিও, টিবাল্ট, বিশ্বস্ত ভৃত্য, ধাত্রী ও মুখ্য ঘটনার মধ্যে দুই পরিবারের জন্মগত শত্রুতা, নাচের আসরে রোমিও জুলিয়েটের প্রথম সাক্ষাৎ ও প্রেম, ব্যালকনি দৃশ্য, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দুই পরিবারের মিলন প্রভৃতি শেক্সপিয়ারের নাটকের সঙ্গে সাদৃশ্যের উদাহরণ[14]। ১৫৫৪ সালে ইতালীয় কবি-সাহিত্যিক মাত্তিও বান্দেল্লো সম্পাদিত 'নভেলে'তে 'গিলেত্তা এ রোমিও' অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৫৬২ খৃঃতে আর্থার ব্রুক বর্ণনাত্মক কবিতা রূপে প্রকাশ করেন তাঁর “দ্য ট্রাজিকাল হিস্ট্রি অফ রোমিয়াস এণ্ড জুলিয়েট”[15]। ১৫৬৭ খৃঃতে প্রকাশিত হয় উইলিয়াম পেণ্টারের ইতালিয় গল্প সংকলন “প্যালেস অফ প্লেজার[16], যার “ গডলি হিস্ট্রি অফ ট্রু এণ্ড কন্স্ট্যান্ট লাভ অফ রোমিও এণ্ড জুলিয়েট” কাহিনীটি রোমিও জুলিয়েটকে নিয়ে। প্রসঙ্গত শেক্সপিয়ারের "মার্চেন্ট অফ ভেনিস", "মাচ অ্যাডো অ্যাবাউট নাথিং, " "অল ইজ ওয়েল দ্যাট এনডস ওয়েল" এবং "মেজার ফর মেজার" নাটকও ইতালিয় কাহিনী থেকে নেওয়া। সেই সময় নাটকপ্রেমীদের কাছে ইতালিয় কাহিনীর বিশেষ জনপ্রিয়তা ছিল। তুলনায় সমকালীন ইংরাজ লেখক ক্রিস্টোফার মার্লোর “ হিরো এণ্ড লিয়ান্ডার” বা “ডিডো, কুইন অফ কার্থেজ” লেখার প্রভাব শেক্সপিয়ারের রচনায় কম।
রোমিও জুলিয়েট নাটকের সঠিক রচনাকাল অনিশ্চিত, জুলিয়েটের নার্স এক দৃশ্যে এগার বছর আগের এক ভূমিকম্পের উল্লেখ করে[17], তা যদি ১৫৮০ সনের ইংলণ্ডের ডোভার স্ট্রেইটের ভূমিকম্প হয় তবে নাটকের ঘটনাকাল ১৫৯১, যদিও অন্য কোনো ভূমিকম্পের সম্ভাবনা, ইংলণ্ড বা ভেরোনায়, একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না[18]। তবে নাটকের রচনাশৈলীর সঙ্গে শেক্সপিয়ারের ১৫৯৪-১৫৯৫ সনে রচিত 'মিড সামার নাইট ড্রিম' প্রভৃতি কয়েকটি নাটকের সাদৃশ্য লক্ষ্য করে অনেকে এটিও সেইসময়ের রচনা মনে করেন। এমনও হতে পারে শেক্সপিয়ার রচনা শুরু করেন ১৫৯১তে শেষ করেন ১৫৯৫তে[19]। শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েট প্রথম প্রকাশিত হয় পুস্তিকাকারে (কোয়ার্টো) ১৫৯৭ সালে, মুদ্রক জন ডান্টার। এই পুস্তিকাটির সঙ্গে পরবর্তী প্রকাশনার এতই তফাৎ যে একে মন্দ পুস্তিকা (Bad Quarto)বলা হয়। বিংশ শতাব্দীর সম্পাদক টি. জে, বি. স্পেন্সার পুস্তিকাটি সম্বন্ধে তীব্র বিতৃষ্ণা প্রকাশ করে বলেছেন এটি সম্ভবতঃ দুএকজন চরিত্রাভিনেতার ত্রুটিপূর্ণ স্মৃতির উপর নির্ভর করে লেখা, হয়তো বেআইনি ভাবে[20]। মতান্তরে, নাটকটি মঞ্চস্থ করার আগে তৎকালীন প্রথা অনুযায়ী অনেক কাটাছেঁড়া করা হয়, যার ফলে এই বিপত্তি। আরেকটি মত হোলো 'মন্দ পুস্তিকা' শেক্সপিয়ারের নিজেরই রচনা, পরে তিনি এটিকে পরিমার্জন/পরিবর্ধন করেন[21]। যাই হোক, ১৫৯৭ সালে এর প্রকাশ সুনিশ্চিত করে যে রোমিও জুলিয়েট ১৫৯৬ বা তার আগেই রচিত হয়েছে।
১৫৯৯ সালে পুস্তিকার উন্নততর সংস্করণ প্রকাশিত হয়, মুদ্রক টমাস ক্রিড, প্রকাশক কুথবার্ট বার্বি। এতে নাটকটি 'মোস্ট এক্সেলেন্ট এন্ড ল্যামেন্টেবল ট্র্যাজেডি অফ রোমিও এন্ড জুলিয়েট' নামে স্থান পেয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রথম সংস্করণের চেয়ে ৮০০ লাইন বেশি। এর প্রচ্ছদে লেখা, সদ্য সংশোধিত, পরিবর্ধিত ও পরিবর্তিত। গবেষকরা মনে করেন এটি একটি প্রাক-মঞ্চাভিনয় খসড়া। ত্রুটি এতেও রয়েছে, তবু প্রথমটির তুলনায় এটি অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। ১৬০৮, ১৬২২ ও ১৬৩৭ সালে এর পুনর্মুদ্রন প্রকাশিত হয়। পরবর্তী কালে রোমিও জুলিয়েটের সব প্রকাশনাই একে অনুসরণ করেছে। শেক্সপিয়ারের সমগ্র রচনাবলী যা ফার্স্ট ফোলিও নামে সমধিক পরিচিত ১৬২৩ সালে প্রকাশিত হয়। অন্যান্য সংস্করণও প্রকাশিত হয় যথাক্রমে ১৬৩২, ১৬৬৪, ১৬৮৫ সালে[22]। এগুলির সমন্বয়ে ১৭০৯ সালে নিকোলাস রো ও ১৭২৩ সালে আলেকজাল্ডার পোপ প্রকাশ করেন আধুনিক সংস্করণ। পোপের সংস্করণে কিছু তথ্য যা ২য় পুস্তিকায় নেই কিন্তু ১মটিতে আছে তা যোগ করা হয়েছে। টিকাভাষ্য সহ সংস্করণ প্রথম প্রকাশ হয় ঊনবিংশ শতকে, ভিক্টোরিয়ান যুগে[23]।
'রোমিও এন্ড জুলিয়েট' নাটক কোনো একটি বিশেষ ভাবের ধারক নয়, ভাববৈচিত্র্যের সমাহার। কারো মতে মানবচরিত্রের বহুমুখীতা, শুভাশুভের দ্বন্দ্ব নাটকের উপজীব্য, কারো মতে কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের সংঘাত এর মূল বিষয়, আবার অনেকের মতে নিয়তির অপরিসীম ক্ষমতাই এখানে দেখানো হয়েছে। যদিও কোনোটিই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তবু নীচের আলোচিত ধারণা গুলোই সমধিক গ্রাহ্য।
রোমিও জুলিয়েটের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় যৌবনের প্রেমের আবেগ[24]। রোমিও জুলিয়েটকে এখনো তরুণ প্রেমের প্রতীক হিসাবে ধরা হয়। নাটকে প্রেমের প্রাধান্য বিবেচনা করে গবেষকরা নানাভাবে এই প্রেম ও প্রেমনিবেদনকে বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন[25]। তার একটি হোলো নাটকের প্রেমসংলাপ যা অধিকাংশ সময়েই উপমাত্মক। ধরনটি রেনেসাঁস যুগের ইতালীয় সাহিত্যক বালদাসার কাস্তিগ্লিওন প্রবর্তিত। তাঁর মতে নায়ক যদি এ ভাষায় প্রেম নিবেদন করে তবে নায়িকা না বোঝার ভান করে এড়িয়ে যেতে পারে। উপমার্থে শেক্সপিয়ার প্রচলিত রীতি অনুযায়ী নানা ধর্মীয় শব্দের প্রয়োগ করেছেন। আবার বহুস্থানে প্রচলিত রীতি ভেঙ্গেওছেন। ব্যালকনি দৃশ্যে জুলিয়েটের আত্মমগ্ন প্রেমসম্ভাষণ, রোমিওর আড়ি পেতে শোনা, পরস্পরকে প্রেম নিবেদন ও ঝটিতি বিবাহের প্রস্তাব, মাত্র একদিনের আলাপে, -- সবই প্রচলিত সামাজিক রীতি বহির্ভূত। শেষ দৃশ্যে সমাধিকক্ষে নায়ক-নায়িকার আত্মহননও ক্যাথলিক নীতিবিরোধী। নাট্যকারের মৃত্যুকে গরিমান্বিত করা, প্রণয়ীর সঙ্গে একাসনে বসানোও সেযুগে তর্কসাপেক্ষ ছিল।
নাটকে নিয়তির ভূমিকা নিয়ে সমালোচকরা একমত নন। নায়ক-নায়িকার যে পরিণতি, তা কি ভাগ্যের পরিহাস না ঘটনার ফলশ্রুতি! ভাগ্যতত্ত্বের প্রবক্তারা নায়ক-নায়িকাকে অশুভগ্রহদুষ্ট বলে অভিহিত করেন[26]। পক্ষান্তরে অনেকে মনে করেন নাটকটি যথেষ্ট যুক্তিগ্রাহ্য ঘটনাপ্রবাহর উপরে দাঁড়িয়ে। উদাহরণস্বরূপ, রোমিওর নির্বাসন টিবাল্টের মৃত্যুর কারণে, আবার টিবাল্টের মৃত্যু কোনো নিয়তির খেলা নয় মার্কুশিওর হত্যাই রোমিওকে উদ্বুদ্ধ করেছিল দণ্ডনীয় কাজ করতে[27]।
নাটকে আলো ও আঁধারের বিশেষ ব্যবহার রয়েছে। ক্যারোলিন স্পার্জিয়নের ভাষায় আলো এখানে তরুণ প্রেমের প্রতীক। রোমিও এবং জুলিয়েট উভয়েই পরস্পরকে দেখে অন্ধকারের মধ্যে আলোর প্রকাশ রূপে। রোমিও জুলিয়েটকে তুলনা করে সূর্য[28], আলোকবর্তিকা[29] ও হীরার ঝলকানির[30] সাথে। সমাধিকক্ষে আপাতমৃত জুলিয়েটের রূপ তার মনে হয় কক্ষকে আলোকিত করে তুলেছে। জুলিয়েট রোমিওকে মনে করে রাত্রির মধ্যে দিন, কৃষ্ণপটে উজ্জ্বল নীহারকণা[31][32]। আলো এবং আঁধার প্রকৃতপক্ষে ভালবাসা এবং ঘৃণা, তারুণ্য এবং পরিপক্কতা-এদেরই দ্যোতক। আলো ও আঁধারের বৈপরীত্য নাটকে বিচিত্র ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। রোমিও-জুলিয়েটের প্রেম আলোর প্রতীক, কিন্তু তাদের মিলন ঘটে রাত্রির অন্ধকারে। অপরপক্ষে পারিবারিক হিংসা যা আঁধারের প্রতীক তার প্রকাশ ঘটে দিবালোকে। নাটকের শেষ দৃশ্যে বিষণ্ণ প্রভাতে, সূর্য যখন মুখ লুকিয়েছে, আলো এবং অন্ধকার তাদের যথাযথ স্থানে ফিরে যায়। বাহিরের অন্ধকার যেন দুই পরিবারের দীর্ঘদিনের সঞ্চিত রাগ—বিদ্বেষ, রোমিও জুলিয়েটের প্রেমালোক সূর্যের ম্লান আলো হয়ে সকলের মনের অন্ধকার দূর করে দেয়।
নাটকে সময় বা কালের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। রোমিও জুলিয়েট কঠোর প্রতিকূল বাস্তবের মধ্যে নিরন্তর এক কল্পনার জগৎ গড়ে তুলতে চেয়েছে যেখানে সময় স্তব্ধ। রোমিও যখন জুলিয়েটকে চাঁদের শপথ নিয়ে প্রেম জানায় জুলিয়েট প্রতিবাদ করে কারণ চাঁদ নিয়ত পরিবর্তনশীল। নায়ক-নায়িকাকে অশুভগ্রহদুষ্ট বলে চিহ্নিত করার মধ্যেও রয়েছে জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি বিশ্বাস য়েখানে নক্ষত্রের গতি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করে। নাটকের প্রথমে ও শেষভাগে জুলিয়েটের মৃত্যুসংবাদ শোনার পরে রোমিওকে তার জীবনে নক্ষত্রের প্রভাবের কথা বলতে শোনা গেছে। কাহিনীর গতি আর একটি লক্ষণীয় বিষয়। নাটকের শুরু থেকে শেষ অবধি সময়ের ব্যাপ্তি মাত্র পাঁচ থেকে ছয় দিন। জি টমাস ট্যানসেলের মতন পণ্ডিতেরা মনে করেন শেক্সপিয়ারের দৃষ্টিতে ত্বরা হোল তারুণ্যের প্রতীক আর ধীরতা প্রতীক প্রাচীনতার। রোমিও জুলিয়েট সময়কে অতিক্রম করে তাদের প্রেমকে চিরস্থায়ী করতে চেয়েছে, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাদের আকাঙ্খা পূর্ণ হয়।
১৬৬২তে তদানীন্তন প্রথিতযশা সমালোচক স্যামুয়েল পেপিস রোমিও জুলিয়েট সম্বন্ধে লিখছেন এত মন্দ নাটক জীবনে শুনিনি[33]। এটিই রোমিও জুলিয়েট নাটকের প্রথম সমালোচনা ধরা হয়। দশ বছর পরে আবার কবি জন ড্রাইডেন নাটকের, বিশেষ করে মার্কুশিও চরিত্রের প্রশংসা করে বলছেন মার্কুশিও চরিত্র চিত্রণে শেক্সপিয়ারের সর্বোত্তম শৈল্পিক দক্ষতা প্রকাশ পেয়েছে। অষ্টাদশ শতকের সমালোচকরা যদিও অপেক্ষাকৃত বেশি বিশ্লেষণধর্মী কিন্তু কখনোই ঐকমত্য নন। নিকোলাস রো সর্বপ্রথম নাটকের অন্তর্নিহিত ভাব নিয়ে চিন্তা করেন ও বলেন এটি বংশক্রমে জ্ঞাতিশত্রুতার উচিত শাস্তি। সাহিত্যিক চার্লস গিল্ডন এবং দার্শনিক লর্ড কেমস দাবী করেন এটি নাটক হিসাবে ব্যর্থ কারণ এতে নাটকের শাশ্বত নিয়ম মানা হয়নি, বিয়োগান্ত পরিণতি কেবলমাত্র নাটকের চরিত্রদের কৃত কোনো দোষে হতে পারে, দুর্ঘটনার কারণে নয়। সাহিত্যিক-সমালোচক স্যামুয়েল জনসন অবশ্য এটিকে শেক্সপিয়ারের অন্যতম নান্দনিক সৃষ্টি বলে অভিহিত করেছেন[34]। অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগে ও ঊনবিংশ শতকে নাটকের সমালোচনা ছিল প্রধানত এর নৈতিক বার্তাকে কেন্দ্র করে। নাট্যকার-সাহিত্যিক ডেভিড গ্যারিক ১৭৪৮ সালে নাটকের পরিবর্তিত রূপে রোজালিন চরিত্রটি বাদ দেন কারণ জুলিয়েটের জন্য রোমিওর রোজালিনকে পরিত্যাগ তিনি অনৈতিক মনে করেন। অপরপক্ষে চার্লস ডিবডিনের মতন সমালোচক মনে করেন রোজালিন চরিত্রটির উপস্থিতি রোমিওর জুলিয়েটের প্রতি উদ্দামতাকে আরো স্পষ্ট করেছে এবং তার প্রেমের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির জন্য এই উদ্দামতাই দায়ী। অনেকে মনে করেন সন্ন্যাসী লরেন্স যখন ধৈর্য ধরতে উপদেশ দেন তিনি শেক্সপিয়ারেরই মুখপাত্র হিসাবে কাজ করেন। বিংশ শতাব্দীর সমালোচকেরা তাঁদের পূর্বসূরীদের এই নৈতিক সমালোচনার ধারা সমর্থন করেন না। রিচার্ড গ্রীন মৌল্টন বলেন চরিত্রগত ত্রুটি নয়, দুর্ঘটনাই প্রেমিকযুগলের মৃত্যুর কারণ[35]।
নাটকীয় সংঘাত, অপ্রত্যাশিত ভাবে নাটকের মোড় পরিবর্তন রোমিও-জুলিয়েট নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য যা সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেছিল। মার্কুশিওর মৃত্যু পর্যন্ত নাটকটি ছিল একটি লঘু প্রণয় কাহিনী[36]। তার পরেই সহসা চাপল্য অন্তর্হিত হয়, নাটক গুরুগম্ভীর রূপ ধারণ করে। রোমিওর নির্বাসনের পরেও ফ্রায়ারের ভূমিকায় দর্শকদের মনে আবার আশা জাগে মিলনান্তক পরিণতির[37]। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ অভাবিত ভাবে ভিন্ন খাতে বয়ে যায়, আশা হতাশায় পরিণত হয়[38]। শেক্সপিয়ার তাঁর কাহিনীতে অনেক উপকাহিনীর ব্যবহার করেছেন যা মূল কাহিনীকে স্পষ্ট করে তুলেছে। রোজালিন চরিত্র ও প্রথমে তার প্রতি রোমিওর আকর্ষণ বস্তুতঃ পরবর্তী পর্যায় রোমিওর জুলিয়েটের প্রতি অনুরাগের গভীরতাকে বুঝতে সাহায্য করেছে। তেমনি জুলিয়েটের পাণিপ্রার্থী কাউন্ট প্যারিসের চরিত্রের উপস্থিতি ও জুলিয়েটের তার প্রতি সৌজন্যপূর্ণ শীতল ব্যবহার জুলিয়েটের রোমিওর প্রতি অনুরাগের আন্তরিকতাকে আরো বিশদ করেছে।
চতুর্দশপদী পয়ার বা শেক্সপিয়ারিয়ান সনেট নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, কোরাস বা সমবেত কণ্ঠে গাওয়া[39]। তবে নাটকের অধিকাংশ অমিত্রাক্ষর ছন্দের কাব্যে রচিত। কবিতার ভাষা চরিত্রানুগ, লরেন্স কথা বলেন যাজকোচিত উপদেশগম্ভীর ভাষায়, ধাত্রীর সংলাপ সাধারণ লোকের প্রচলিত ভাষা। একই চরিত্রের সংলাপও পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়েছে। রোমিও রোজালিনের বর্ণনা করতে গিয়ে তৎকালীন পেত্রার্চান সনেটের অতিরঞ্জনপূর্ণ কাঠামো ব্যবহার করে। আবার জুলিয়েটের সঙ্গে কথোপকথনে ব্যবহার করে শান্ত সমাহিত ভাষা। পরিশেষে ব্যালকনিতে রোমিওর প্রণয় নিবেদনের কাব্যিক ভাষা জুলিয়েটের সংশয় দূর করে না, সে জানতে চায় তার প্রতি রোমিওর প্রকৃত মনোভাব[40]। প্রকৃত প্রেমে ভাষার অলংকরণের অনাবশ্যকতা আরো স্পষ্ট হয় যখন দেখি জুলিয়েটের রোমিওর সঙ্গে সংলাপ সংক্ষিপ্ত, প্রায়শঃই ব্যাকরণ বহির্ভূত, বিপরীতে কাউন্ট প্যারিসের সঙ্গে সে কথা বলে পোশাকি ভাষায়[41]। নাটকে আবেগপূর্ণ রাপ্সডি বা বিষাদপূর্ণ এলেজিরও প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। হাস্যরসাত্মক সংলাপ নাটকের আরেকটি উপাদান।
মনোবিদরা রোমিওর বাস্তবজ্ঞান বর্জিত আবেগপ্রবণতাকে মার্কুশিওর মৃত্যু ও শেষে যুগ্ম আত্মহত্যার জন্য দায়ী করেন[42]। তবে সার্বিকভাবে জটিল মনস্তত্ত্বের এই নাটকে বিশেষ ভূমিকা নেই। জুলিয়া ক্রিস্তেভার মতে তাদের পারিবারিক শত্রুতা রোমিও জুলিয়েটের প্রেমকে প্রগাঢ় করেছিল। অনেকে মনে করেন শেক্সপিয়ারের একমাত্র পুত্র হ্যামনেটের মৃত্যু রোমিওর মৃত্যুকে প্রভাবিত করেছিল[43]।
নারীবাদী সমালোচকেরা মনে করেন পিতৃতান্ত্রিক সমাজের কুপ্রথা রোমিও জুলিয়েটের মর্মান্তক পরিণতির জন্য দায়ী। কোপেলা কানের মতে এই প্রথার জন্যই পুত্রেরা পিতার জন্য, ভৃত্যেরা প্রভুর জন্য বংশপরম্পরায় হিংসাত্মক কার্যকর্মে লিপ্ত হয়েছে, যা এই অশুভ পরিণতির দিকে টেনে নিয়ে গেছে। জুলিয়েটের কোনো ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ছিল না, তাকে বিপদে লরেন্সের শরণাপণ্ণ হতে হয়েছে। ডিম্পনা কালাঘান ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে পটভূমিকে বিচার করেছেন। নাটকের ঘটনা সেই সময়ের যখন সামন্ততন্ত্রের প্রাধান্য কমে গিয়ে রাজতন্ত্র ও ধনতন্ত্রের আধিপত্য বিস্তার পাচ্ছে। জুলিয়েটের রোমিওকে স্বামী নির্বাচন বস্তুত সমগ্র পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ[44]।
রোমিও জুলিয়েট নাটককে অধুনা কুইয়ার থিয়োরির আঙ্গিকেও বিচার করা হয়েছে। নরনারীর প্রচলিত ধারণা বহির্ভূত সম্পর্ক, সমকামীতা ইত্যাদি বিংশ শতকের শেষ দশকে উদ্ভূত কুইয়ার থিয়োরির মূল বিষয়। মার্কুশিও-রোমিওর সম্পর্কে, জুলিয়েটের পুরুষের মধ্যে নারীসুলভ সৌন্দর্যের সন্ধানে পন্ডিতেরা এরই ছায়া দেখতে পান।
ব্যালকনি দৃশ্যের প্রথম উদ্ভাবনা করেন দা পোর্তো, ১৫২৪ খৃঃতে। পোর্তোর রোমিও জুলিয়েটের বাড়ির সামনে প্রায়ই ঘুরে বেড়াত, কখনো জানালায় উঁকি দিত। এক চন্দ্রালোকস্নাত রাত্রে প্রেমে অধীর রোমিও ব্যালকনি বেয়ে উঠে যায় জুলিয়েটের বারান্দায়। জুলিয়েট জানলা খুলে তাকে দেখতে পায়, তখনই তারা পরস্পরকে প্রেম নিবেদন করে[45]। কয়েক দশক পরে বান্দেল্লো এই দৃশ্যটির পরিবর্ধন ও কিছু পরিবর্তন করেন। যেমন, তাঁর নাটকে জুলিয়েট ধাত্রীর মাধ্যমে রোমিওকে ডেকে পাঠায়, বারান্দায় উঠবার জন্য দড়ির মইও সরবরাহ করে, রোমিওকেও ব্যালকনিতে উঠবার জন্য ভৃত্যদের সাহায্য নিতে হয়, যদিও তারা পরে নিঃশব্দে প্রস্থান করে। অক্টোবর ২০১৪ তে লুই লেভিন দা আটলাণ্টিকে প্রকাশিত তাঁর নিবন্ধে লিখছেন শেক্সপিয়ারের মূল রচনায় কোনো “ব্যালকনি “ থাকতে পারে না, কারণ ব্যালকনি শব্দটি ইংরাজি শব্দভাণ্ডারে ঢুকেইছে শেক্সপিয়ারের মৃত্যুর নাহক দুবছর বাদে[46]। তবে ১৬৭৯ সালে টমাস অটওয়ের রোমিও-জুলিয়েটের ভাবানুলম্বনে “দা হিস্ট্রি এণ্ড ফল অফ কায়াস মারিয়াস” এর অভিনয়ে ব্যালকনি দৃশ্যের ব্যবহার নিশ্চিত ভাবে করা হয়েছিল। অষ্টাদশ শতকের ডেভিড গ্যারিকের রূপান্তরেও ব্যালকনি দৃশ্য দেখা যায় এবং তদাবধি সেই ধারা চলে আসছে।
রোমিও-জুলিয়েট শেক্স্পিয়ারের সর্বাধিক অভিনীত নাটক, একমাত্র হ্যামলেটের সঙ্গে এর তুলনা চলে। বহুবিধ পরিবর্তন, পরিমার্জন একে একটি কালজয়ী নাটকের রূপ দিয়েছে। শেক্স্পিয়ারের জীবনকালেও এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। শেক্স্পিয়ারের দুই পূর্বসূরী ক্রিস্টোফার মার্লো ও টমাস কিডের মৃত্যুর পরে এবং উত্তরসূরী বেন জনসনের উত্থানের মধ্যবর্তী পর্বে শেক্স্পিয়ার ছিলেন লন্ডনের সবচাইতে প্রতিষ্ঠিত নাট্যকার[47]। -জুলিয়েট নাটকের প্রথম অভিনয় কবে হয়েছিল সঠিক বলা যায়না। ১৫৯৭ সালের প্রথম পুস্তিকায় বলা হচ্ছে ইতঃপূর্বে নাটকটি বহুবার মঞ্চস্থ হয়েছে। নাট্যদল লর্ড চেম্বার্লিনস মেন অবশ্যই এর প্রযোজক। শেক্স্পিয়ারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সুদৃঢ় সম্পর্কের জন্য দলটির খ্যাতি। রিচার্ড বার্বেজ সম্ভবতঃ প্রথম রোমিও এবং মাস্টার রবার্ট গফ প্রথম জুলিয়েট[48]। তখন নারীচরিত্রে সাধারণত কিশোররা অভিনয় করত। থিয়েটার ও কার্টেন তৎকালীন লন্ডনের দুটি অভিজাত হল। প্রথম নাট্যাভিনয় সম্ভবত থিয়েটার-এ হয়েছিল। পরবর্তি অভিনয়গুলি কার্টেন হলে হয়[49]। রোমিও-জুলিয়েটই শেক্স্পিয়ারের প্রথম নাটক যা ইংলন্ডের বাইরে, ১৬০৪ সালে জার্মানির নরডিনজেনে, অভিনীত হয়[50]।
মেরি সন্ডারসন, প্রথম নারী জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয় করেন
ইংলন্ডে পিউরিটান সরকার ক্ষমতায় এলে ১৬৪২ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর সমস্ত থিয়েটার হল বন্ধ করে দেয়[51]। ১৬৬০ সালে স্টুয়ার্ট রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। কিংস কোম্পানি আর ডিউক কোম্পানি নামে দুটি নাট্যদল খোলা হয়। তৎকালীন নাট্যজীবিরা তাতে যোগ দেন।
ডিউক কোম্পানির সার উইলিয়াম ডাভেনান্ট ১৬৬২সালে রোমিও-জুলিয়েট মঞ্চস্থ করেন, হেনরি হ্যারিস রোমিও, টমাস বেটার্টন মার্কুশিও, মেরি সন্ডারসন জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয় করেন। মেরি সন্ডারসনই প্রথম নারী যিনি জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয় করেন। ডিউক কোম্পানি রোমিও-জুলিয়েটের আরেকটি রূপান্তরও নিয়মিতভাবে মঞ্চস্থ করতেন যেটি ছিল মিলনান্তক[52]। ১৬৮০ সালে টমাস অটওয়ের 'দা হিস্ট্রি এন্ড ফল অফ কায়াস মারিয়াস' রোমিও-জুলিয়েটের আমূল পরিবর্তিত রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। টমাসের নাটকের পটভূমি ভেরোনার পরিবর্তে প্রাচীন রোম, রোমিও মারিয়াস, জুলিয়েট লাভিনিয়া আর বংশগত বিদ্বেষ হয় শ্রেণী সংঘাত। জুলিয়েট/লাভিনিয়ার ওষুধের ঘোর কেটে যায় রোমিও/মারিয়াসের মৃত্যুর আগেই। অটওয়ের নাট্যরূপ এতই জনপ্রিয় হয় যে পরবর্তী সত্তর বছর নাটকের এই রূপই প্রচলিত থাকে[53]। নাটকের বিশেষ করে শেষ দৃশ্যটি তার শৈল্পিক নৈপুণ্যের জন্য এতই সমাদৃত হয় যে পরবর্তী দুইশত বছর ধরে নাট্যশিল্পীরা এটি তাদের নাটকে ব্যবহার করেছেন, ১৭৪৪ এ থিওফিলাস সাইবার এবং ১৭৪৮ এ ডেভিড গ্যারিকের প্রযোজনা[54] তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এঁরা তাঁদের নাটকে কিছু অবাঞ্ছিত অংশও (তাঁদের মতে) বাদ দেন প্রধানত সমকালীন দর্শকদের নীতিবোধের কথা ভেবে। যেমন, গ্যারিক তাঁর প্রযোজনায় অতিরিক্ত পরিবর্তন করেন মূল নাটকে রোমিও তার প্রথম প্রেমিকা রোজালিনের উদ্দেশ্যে যে সব সংলাপ বলেছিল সেগুলিকে জুলিয়েটের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। ১৭৫০ সালে নাট্যগোষ্ঠীদের মধ্যে রীতিমত রোমিও যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় যার একদিকে ল অপেরা হাউসের কোভেন্ট গার্ডেনে অনুষ্ঠিত স্প্রেন্জার ব্যারি-সুশানা মারিয়া অ্যান অভিনীত রোমিও-জুলিয়েটের এবং অপরদিকে থিয়েটার রয়ালের ড্রাউরি লেনে অনুষ্ঠিত ডেভিড গ্যারিক-জর্জ অ্যান বেলামি অভিনীত রোমিও-জুলিয়েটের নাট্যাভিনয়[55]।
উত্তর আমেরিকায় প্রথম রোমিও-জুলিয়েটের নাট্যাভিনয়ের কথা জানা যায় ১৭৩০ সালের ২৩শে মার্চ, তবে তা ছিল নেহাৎই অপেশাদারি। হ্যালাম কোম্পানির প্রযোজনা উত্তর আমেরিকায় রোমিও-জুলিয়েটের প্রথম পেশাদারি অনুষ্ঠান।
১৮৪৬ সনে শার্লট ও সুসান কুশমান, আমেরিকান ভগিনীদ্বয় রোমিও ও জুলিয়েট রূপে
১৭৪৮ এ ডেভিড গ্যারিকের রূপান্তরিত প্রযোজনাটি এতই জনপ্রিয় হয় যে প্রায় শতবর্ষ ধরে সেটি অভিনীত হয়। ১৮৪৫ সালে আমেরিকার কুশমান ভগিনীদ্বয়, শার্লট ও সুসান কুশমান পুনরায় রোমিও-জুলিয়েটকে তার মৌলিক রূপে ফিরিয়ে আনেন[56][57]। শার্লট কুশমানের রোমিও সকলের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। টাইমস পত্রিকা তার উচ্ছসিত প্রশংসা করে[58], রানী ভিক্টোরিয়ার জার্নালেও এই অভিনয়ের সপ্রশংস উল্লেখ পাওয়া যায়[58]। কুশমানদের সাফল্য পরবর্তী নাট্যকারদের মূল কাহিনীকে অনুসরণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। ১৮৪৭ সালে ব্রিটেনের স্যাডলারস ওয়োলস থিয়েটারে স্যামুয়েল ফেল্পসের প্রযোজনা সেই ধারার অনুবর্তী। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে অভিনীত নাটকে নায়ক নায়িকার চরিত্রে প্রথিতযশা তারকাদের দেখতে পাওয়া যায়, তুলনায় পার্শ্বচরিত্রেরা অবহেলিত। ব্যাপক মঞ্চসজ্জা, ট্যাবল ব্যবহারেরও ঝোঁক দেখা যায়[59]। ১৮৮২ সালে লাইসিয়াম থিয়েটারে অভিনীত হেনরি আর্ভিং এর প্রযোজনা যাতে হেনরি আর্ভিং রোমিও ও এলেন টেরি জুলিয়েটের চরিত্রে অভিনয় করেন, এই ধরনের মঞ্চসজ্জার জন্য বিখ্যাত। ১৮৯৫ সালে আর্ভিং এর প্রযোজনা হস্তান্তরিত হয়ে চলে যায় জনসন ফোর্বস রবার্টসনের কাছে। ফোর্বস রবার্টসন আর্ভিং এর জাঁকজমক আড়ম্বরকে পরিহার করে এক সাদাসিধা রোমিওকে তুলে আনেন যে কবিতার বদলে গদ্যে কথা বলে, অতিনাটকীয়তার ধার ধারে না[60]। ফোর্বস রবার্টসনকৃত রোমিওর এই সংস্করণ এখনো জনপ্রিয়। সমসময়ে ব্রিটেনের সঙ্গে আমেরিকাতেও রোমিও-জুলিয়েটের অভিনয়ানুষ্ঠান হয়ে চলেছিল। ১৮৬৯ সালে ৩রা ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের ধনাঢ্য বুথস থিয়েটারে (অতি আধুনিক কারিগরী সমৃদ্ধ মঞ্চ ও বাতানুকূল প্রেক্ষাগৃহ) এডউইন বুথ ও মেরি ম্যাকভিকার যথাক্রমে রোমিও ও জুলিয়েট রূপে নটকের উদ্বোধন করেন। এটি অনেকের মতে আমেরিকায় সর্বকালের রোমিও-জুলিয়েটের সর্বোত্তম প্রযোজনা, এবং অবশ্যই অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল, একনাগাড়ে ছয় সপ্তাহ চলেছিল ও $৬০০০০ উপার্জন করেছিল[61]। নাটকটি নির্ভুলভাবে শেক্সপিয়ারের কাহিনীকে অনুসরণ করে। ১৮৯০ সালে জর্জ ক্রিশ্টন মিল্ন-এর কোম্পানি জাপানের ইয়োকোহামায় রোমিও-জুলিয়েটের নাট্যাভিনয় করে আসে[62]। ঊনবিংশ শতকে রোমিও-জুলিয়েট ছিল শেক্সপিয়ারের সর্বাধিক অভিনীত নাটক এবং বিংশ শতকে এটি ছিল দ্বিতীয় সর্বাধিক অভিনীত নাটক, হ্যামলেটের পরেই[63]।
১৯৩৩ এ আমেরিকার অভিনেত্রী ক্যাথারিন কর্নেল ও তাঁর পরিচালক স্বামী গুটরি ম্যাকক্লিন্টিক নাটকটিকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং সাত মাস ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে এর অভিনয় করেন। অর্সন ওয়েলস, ব্রায়ান অ্যাহেমস, বেসিল রথবোন প্রমুখ এতে অভিনয় করেন। প্রযোজনাটি স্বল্প সাফল্য অর্জন করে। নিউইয়র্কে ফিরে কর্নেল দম্পতি এর পুনর্নির্মাণ করেন. যাতে শেক্সপিয়ারের মূল নাটকের প্রতিটি দৃশ্য এমনকি ভূমিকাও যথাযথ ভাবে পরিবেশিত হয়। ১৯৩৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্রডওয়েতে এই নবীকৃত প্রযোজনাটি মঞ্চস্থ হয়। সমালোচকরা এর উচ্ছসিত প্রশংসা করেন।
জন গিলগাড যিনি রোমিও, মার্কুশিও, লরেন্স—তিনটি চরিত্রেই ক্রমান্বয়ে অভিনয় করেন
জন গিলগাডের ‘নিউ থিয়েটার’ প্রযোজনা ১৯৩৫ সালে মঞ্চস্থ হয়। নাটক চলাকালীন জন গিলগাড অন্য অভিনেতাদের সঙ্গে ভূমিকা পরিবর্তন করে রোমিও, মার্কুশিও, লরেন্স—তিনটি চরিত্রেই ক্রমান্বয়ে অভিনয় করেন। লরেন্স অলিভার রোমিও ও মার্কুশিওর চরিত্রে, পেগি অ্যাশল্ট জুলিয়েটের চরিত্রে অভিনয় করেন[64]। গিলগাড কোয়ার্টো ১ এবং২-র মননশীল সংমিশ্রণ ঘটান। দৃশ্যপট, পোশাক যথাসম্ভব এলিজাবেথান সময়ানুগ রাখেন[65]। এই প্রচেষ্টা বক্স অফিসের বিপুল সাফল্য অর্জন করে। তাঁর এভাবে নাটকের মাধ্যমে ইতিহাসকে উপস্থাপিত করার কৌশল পরবর্তী কালেও অনুসৃত হয়। পিটার ব্রুকের ১৯৪৭ এর নাট্যরূপটি এক ভিন্ন অধ্যায়ের সূচনা করে। ব্রুক ইতিহাসের পুঙ্খানুপুঙ্খতা নিয়ে মাথা ঘামাতেন না, তিনি চেয়েছিলেন নাটকটি এমন ভাবে পরিবেশন করতে যা বর্তমান যুগের দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। ব্রুকের নাটকে পরিবারের পুনর্মিলনের অংশটিও বাদ পড়ে[66]।
চলচ্চিত্রজগতের সঙ্গে পাল্লা দিতে নাটকেও রোমিও-জুলিয়েট চরিত্রে তরুণ মুখ নেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছিল[67]। ১৯৬০ সালে ফ্রাংকো জেফিরেলির ‘ওল্ড ভিক’ প্রযোজনায় জন স্ট্রাইড ও জুডি ডেন্চ সেই আকাঙ্খা পূর্ণ করেন। ব্রুকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জেফিরেলি নাটকের প্রায় একতৃতীয়াংশ বাদ দেন যাতে এটি সর্বজনসাধারণগ্রাহ্য হয়। জেফিরেলির মতে শেক্সপিয়ারের কাহিনীতে নরনারীর প্রেম ও প্রাচীন-নবীন দুই প্রজন্মের সংঘাত – এই দুটি বিষয় বর্তমান যুগেও প্রাসংগিক। রোমিও-জুলিয়েটের রূপান্তরণ তথা আধুনিকীকরণ হয়েই চলে। ১৯৮৬ সালে রয়াল শেক্সপিয়ার কোম্পানি নাটক মঞ্চস্থ করেন আধুনিক ভেরোনার পটভূমিতে। তরবারির বদলে আসে সুইচব্লেড, বলনাচের স্থান নেয় রক পার্টি আর রোমিও আত্মহত্যা করে হাইপোডার্মিক নীডলের সাহায্যে। নিল বার্লেটের প্রযোজনাটি আধুনিকতর। লন্ডনের ‘লিরিক হ্যামারস্মিথ’ হলে এটির প্রদর্শন শুরু হয়। পরে ১৯৯৫ তে ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার প্লেহাউসে এটি বহুদিন একাধিপত্য করে। এমিলি উফ (জুলিয়েট), স্টয়ার্ট বাল্স (রোমিও), সেবাস্টিয়ান হারকোম্ব(মার্কুশিও), অ্যাশলে আর্টাস (টিবাল্ট), সাইলাস কার্সন(প্যারিস), সোয়াদ ফারেস (লেডি ক্যাপুলেট) এতে অভিনয় করেন। ১৯৯৭ সালে ‘ফোল্জার শেক্সপিয়ার থিয়েটার’ -এর নাটকটি সাদামাটা শহরতলির পটভূমিতে নির্মিত।
নাটক বর্ণিত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তাৎপর্য বোঝাতে অনেক সময় অনুরূপ কোনাো ঐতিহাসিক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পটভূমিতে নাটককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ ইজরায়েল-প্যালেস্টাইনের দ্বন্দ্ব[68], সাউথ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্য[69], আমেরিকার পাবলো বিদ্রোহ[70] বিভিন্ন সময়ে নাটকের পটভূমি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৫৬ তে পিটার উস্তিনভের প্রহসন ‘রোমানফ এন্ড জুলিয়েট’ ইউরোপের কল্পিত দুই দেশে আমেরিকা-রাশিয়ার কোল্ড ওয়ারের ছায়া রেখেছে। ১৯৮০ সালে ‘লাইফ এন্ড অ্যাডভেন্চার অফ নিকোলাস নিকলবি’ নাটক অভিনয়ের সময় নাটকের যে অংশে রোমিও-জুলিয়েটের নাট্যাভিনয় আছে তাতে রোমিও-জুলিয়েটের পূর্ণ মিলনান্তক নাট্যরূপ দেওয়া হয়। শুধু রোমিও-জুলিয়েটের মিলনই নয়, মার্কুশিও-প্যারিস জীবন ফিরে পায় আর বেনভোলিও বেনভোলিয়া হয়ে প্যারিসকে প্রেম নিবেদন করে[71]। ১৯শ, ২০শ শতকের ধ্রুপদী নাট্যসংস্থাগুলি প্রায়শঃ রোমিও-জুলিয়েট নাটকের অভিনয় দিয়ে তাদের সংস্থার উদ্বোধন করত। এদের মধ্যে ১৮৬৯ সালে এডউইন বুথের, ১৯২৯এ জন গিলগাডের ও ১৯৭৭এ নিউইয়র্কের রিভারসাইড শেক্সপিয়ার কোম্পানির নাম উল্লেখযোগ্য[72][73]। রোমিও-জুলিয়েট নাটকের জনপ্রিয়তা আজও অব্যাহত। ২০১৩ সালে ব্রডওয়ের রিচার্ড রজার্স থিয়েটারে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নাটকের ৯৩টি অভিনয় হয়। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পূর্বে ২৪শে আগস্ট থেকে নাটকের আরো ২৭টি অভিনয় হয়। অর্লান্ডো ব্লুম ও কন্ডোলা রাসাদ এতে অভিনয় করেন[74]।
ব্যালের মধ্যে প্রোকোফিয়েভের রোমিও জুলিয়েট সর্বাধিক জনপ্রিয়[75]। কিরোভ ব্যালে আয়োজিত এই ব্যালেটি পরপর দুইবার দর্শকদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয় প্রথমে এর মিলনান্তক পরিণতির জন্য, পরে এর পরীক্ষামূলক সঙ্গীতের জন্য। কিন্তু পরে এটি এসম্ভব খ্যাতি অর্জন করে ও ১৯৬২ সালে জন ক্র্যাংকো, ১৯৬৫তে কেনেথ ম্যাকমিলান ও আরো অনেকে এর কোরিওগ্রাফ করেন[76]। ১৯৭৭ সালে স্মুইনের সান ফ্রান্সিসকো আয়োজিত রোমিও জুলিয়েটের ব্যালে তার নাটকীয়তা ও আবেগের জন্য বহুপ্রশংসিত হয়। এটিই সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গদৈর্ঘ্যের ব্যালে। ১৯৭৮ সালে পিবিএস সিরিজের গ্রেট পার্ফরম্যান্স, ডান্স ইন আমেরিকাতে এটি বেতার প্রচারিত হয়। একবিংশ শতাব্দীতে দাদা মাসিলো, দক্ষিণ আফ্রিকার মহিলা নৃত্যশিল্পী, এক সম্পূর্ণ আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আফ্রিকান নৃত্যের সঙ্গে ব্যালের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এবং বর্ণবৈষম্য প্রসঙ্গের অবতারণা করে এর সর্বাঙ্গীণ রূপান্তর সাধন করেন[77]।
রোমিও জুলিয়েটের কাহিনী নিয়ে অন্তত ২৪টি অপেরা বা গীতিআলেখ্য তৈরি হয়েছে[78]। সর্বপ্রথমটি জর্জ বেন্ডার সিংগস্পিয়েল(জার্মান অপেরা), ১৭৭৬ সালে নির্মিত। এতে মূল কাহিনীর অধিকাংশ চরিত্র ও ঘটনা বাদ দেওয়া হয়েছে, কাহিনীর পরিণতিও সুখকর। তবে গাউন্ডের ১৮৬৭ র রচনাটিই অধিক পরিচিত(গীতিকার-জুল বার্বার ও মাইকেল কেরী)। এটি এখনো অনুষ্ঠিত হয়। বেলিনির অপেরার অনুষ্ঠান মাঝেসাঝে দেখা গেলেও এর বিরূপ সমালোচনাও আছে, প্রধানত শেক্সপিয়ারের মূল কাহিনী থেকে বিচ্যূতির জন্য। বেলিনি বা তাঁর গীতিকার ফেলিস রোমানি অপেরাটি তৈরি করেছিলেন ইতালীয় কবি নিকোলা ভাকাইর জুলেত্তা এ রোমিও অবলম্বনে, সরাসরি শেক্সপিয়ারের কাহিনী থেকে করেননি[79]। জাজ ঘরানার সংগীতেও রোমিও জুলিয়েটের প্রভাব লক্ষিত হয়। পেগি লী-র ‘ফিভার’[80], ডিউক এলিংটনের ‘সাচ সুইট থান্ডার’ অংশত ‘অশুভগ্রহদুষ্ট ‘প্রণয়ীযুলকে নিয়ে রচিত। বার্লিয়োজের সিমফনি একটি বড় মাপের কাজ, তিন অংশে বিভক্ত-, সমবেত, ঐকতান, অর্কেস্ট্রা প্রভৃতির সংমিশ্রণে তৈরি[81]। ১৮৩৯ সালে এর প্রথম অনুষ্ঠান হয়। চাইকোভস্কির ১৮৬৯ সালের ‘রোমিও জুলিয়েট ফ্যান্টাসি ওভারচার’ ১৫ মিনিটের একটি অনবদ্য সিম্ফনি যার স্টাইল পরবর্তীকালের অনেক ধ্রুপদী সুরকারেরা অনুকরণ করেছেন। নিনো রোটার ১৯৬৮ র ছায়াছবি ও ডেস রী-র ১৯৯৬ র ছায়াছবিতে এর ব্যবহার দেখা যায়[82]। এছাড়া সুরকার হেনরি হিউগ পিয়ারসন (রোমিও এন্ড জুলিয়েট ওভারচার ফর অর্কেস্ট্রা), সেন্ডসেন(রোমিও জুলি, ১৮৭৬), ডেলিয়াস( এ ভিলেজ রোমিও এন্ড জুলিয়েট ১৮৯৯-১৯০১), স্টেনহ্যামার ((রোমিওজুলিয়া, ১৯২২) ও কাবালেভস্কি( ইনসিডেন্টাল মিউজিক টু রোমিও এন্ড জুলিয়েট, ১৯৫৬)-র নাম উল্লেখযোগ্য[83]। প্রচলিত লঘু সংগীত শিল্পীদের কাজেও রোমিও জুলিয়েটের ছায়া দেখা যায়, যাদের মধ্যে দা সুপ্রিম, ব্রুস স্প্রিংস্টিন, টম ওয়েট, লো রীড এবং টেলর সুইফটের নাম করা যেতে পারে। অবশ্য ডায়ার স্ট্রেটের রোমিও এন্ড জুলিয়েটই সবচেয়ে নামকরা[84]। রোমিও জুলিয়েটকে নিয়ে যত গীতিনাট্য রচিত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ স্টিফেন সনড্হাইনের কথায় ও লিওনার্ড বার্নস্টাইনের সুরে ‘ওয়েস্ট সাইড স্টোরি’। ব্রডওয়েতে ১৯৫৭ সালে ও ওয়েস্ট এন্ড এ ১৯৫৮ সালে এর প্রথম অনুষ্ঠান হয়। ১৯৬১ তে এটি অবলম্বনে একটি ছায়াছবিও তৈরি হয় যার ঘটনাস্থল বিংশ শতাব্দীর নিউইয়র্ক আর পারিবারিক শত্রুতার স্থান নেয় শ্রেণীবৈষম্যগত বিদ্বেষ। অন্যান্য সংগীতালেখ্যের মধ্যে টেরেন্স মানের ১৯৯৯ সালের রক সংগীত ‘উইলিয়াম শেক্সপিয়ারস রোমিও এন্ড জুলিয়েট’ (সহলেখক জেরোম কোর্মান)[85], গেরার্ড প্রেসগুর্ভিকের ২০০১ সালের ‘রোমিও এন্ড জুলিয়েট- ডি লা হাইন আ অ্যামোর’[86], রিকার্ডো কসিয়ান্টের ২০০৭ সালের ‘জুলিয়েত্তা এন্ড রোমিও’ এবং জোহান ক্রিস্টার সুজ ও জোহান পিটারসনের ২০১৩ সালের ‘কার্নিভাল টেল (ভ্রাম্যমাণ কার্নিভালে অনুষ্ঠিত)[87]’ উল্লেখযোগ্য।
জুলিয়েটের মৃত্যুশয্যায় রোমিও, হেনরি ফুসেলি, ১৮০৯
পরবর্তী প্রজন্মের সাহিত্যে রোমিও জুলিয়েটের বিপুল প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এর আগে নরনারীর প্রণয়কে ট্রাজেডির যোগ্য বিষয় হিসাবে গণ্য করা হত না[88]। শেক্সপিয়ারই প্রথম মৃত্যুর মাধ্যমে প্রেমকে মহান করে তোলেন। রোমিও জুলিয়েটের রূপান্তরণও ঘটেছে সর্বাধিক। সাহিত্যের গদ্য পদ্য রূপ ছাড়াও নাটক, যাত্রা, সংগীত, নৃত্য, ব্যালে, ছায়াছবি, টেলিভিশান, চিত্রকলা- সব শিল্পমাধ্যমই রোমিও জুলিয়েটকে তাদের বিষয় হিসাবে বেছে নিয়েছে, শুধু একবার নয় বারবার। রোমিও জুলিয়েটকে নিয়ে প্যারডিও হয়েছে, শেক্সপিয়ারের জীবিতকালেই। হেনরি পোর্টারের 'টু অ্যাংগ্রি উওমেন অফ অ্যাবিংটন(১৫৯৮)' এবং টমাস ডেকারের 'ব্লার্ট কনস্টেবল (১৬০৭)' নাটকদ্বয়ে রোমিও জুলিয়েটের বিখ্যাত ব্যালকনি দৃশ্যের হাস্যরসাত্মক রূপ দেওয়া হয়েছে[89]। শেক্সপিয়ার-উত্তর যুগের বহু কথাসাহিত্যিকের রচনায় রোমিও জুলিয়েট নানা ভাবে স্থান পেয়েছে, উদাহরণস্বরূপ চার্লস ডিকেন্সের নিকোলাস নিকলবির নাম করা যায়। রোমিও জুলিয়েটকে নিয়ে চারুকলার চর্চাও হয়েছে কম না। এলিসা কার্কিলের তৈরী দারুমাধ্যমে সমাধিগৃহের প্রতিরূপটি বোধহয় এদের মধ্যে সর্বপ্রথম। ১৭০৯ সালে নিকোলাস রোয়ের প্রযোজনায় এটি দেখা যায়[90]। অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে নাটকের পাঁচটি অঙ্কের দৃশ্যাবলম্বনে নির্মিত পাঁচটি তৈলচিত্র বয়ডেল শেক্সপিয়ার গ্যালারিতে শোভা পাচ্ছে[91]। ১৯শ শতকে চিত্রকল্পের যে ঝোঁক দেখা যায় তার অনুপ্রেরণায় শিল্পীরা নাটকের দৃশ্য ও অভিনেতাদের নিয়ে অনেক ছবি আঁকেন[92]। ২০শ শতকের অধিকাংশ ছবি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের চিত্ররূপ[93]। লুই লেভিনের ২০১৪ সালের উপন্যাস 'জুলিয়েটস নার্স' জুলিয়েটের ধাত্রীর দৃষ্টিভঙ্গী থেকে লেখা, কাহিনী শুরুর পূর্ববর্তী চৌদ্দ বছরের উপাখ্যান। প্রসঙ্গত, শেক্সপিয়ারের কাহিনীতে ধাত্রীর ছিল তৃতীয় সর্বাধিক সংলাপ, রোমিও জুলিয়েটের পরেই[94]।
রোমিও জুলিয়েট কে সর্বকালের সর্বাধিক চলচ্চিত্রায়িত সাহিত্য বলে মনে করা হয়[95]। এদের মধ্যে জর্জ কুকারের একাধিক অস্কার অনুমোদিত ১৯৩৬ সংস্করণ, ফ্রাংকো জেফিরেলির ১৯৬৮ সংস্করণ এবং বাজ লুরমানের ১৯৯৬ র সংস্করণ উল্লেখযোগ্য। নির্বাক যুগে এর চলচ্চিত্রায়ণ করেন জর্জ মেলিস। দুঃখের বিষয় এটি এখন আর পাওয়া যায় না। সবাক যুগের চলচ্চিত্র, ১৯২৯ সালে নির্মিত, দা হলিউড রেভ্যুতে জন গিলবার্ট ও নর্মা শিয়ারারকে যথাক্রমে রোমিও ও জুলিয়েটের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। জর্জ কুকারের ছবিটি বিশেষ জনপ্রিয়তা পায়নি। লেসলি হাওয়ার্ড(রোমিও) ও নর্মা শিয়ারার(জুলিয়েট) দুজনেই তখন পরিণত বয়স্ক। এর কবিতাময় আঙ্গিকও দর্শকদের পছন্দ হয়নি। এর পরে প্রায় দশ বছর চলচ্চিত্রজগৎ শেক্সপিয়ারের থেকে মুখ ফিরিয়েছিল। ১৯৫৪ সালে ভেনিস ফিল্ম উৎসবে রেনাটো কাস্টেলানি তাঁর 'রোমিও জুলিয়েট' ছবির জন্য গ্র্যান্ড প্রিক্স পুরস্কার পান[96]। রোমিও ও জুলিয়েটের চরিত্রে অভিনয় করেন রেন্স হার্ভে ও সুশান সেন্তাল। ১৯৬৮ সালে ফ্রাংকো জেফিরেলি একরাশ নতুন মুখ নিয়ে রোমিও জুলিয়েটের এক বর্ণোজ্জ্বল রূপ দেন যা বহু প্রশংসিত হয়। বাজ লুরমানের ১৯৯৬ র চলচ্চিত্র প্রধানত এম টিভি জেনারেশানের উদ্দাম উচ্ছৃঙ্খল তরুণ দর্শকবৃন্দের কথা মাথায় রেখে বানানো। লিওনার্দো ডিকাপ্রিও ও ক্লেয়ার ডেন্স যথাক্রমে রোমিও ও জুলিয়েটের চরিত্রে অভিনয় করেন[97]। রোমিও জুলিয়েট নাটকের মূল ভাব অবলম্বন করে আধুনিক যুগেও বহু টিভি এবং বড় পর্দার ছবি তৈরি হয়েছে। ১৯৬০ সালের পিটার উস্তিনভের কোল্ড ওয়ার, ১৯৬১র ওয়েস্ট সাইড স্টোরি, ২০০৬ এর ডিজনির হাই স্কুল মিউজিকাল, জন ম্যাডেনের শেক্সপিয়ার ইন লাভ এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
• রয়াল শেক্সপিয়ার কোম্পানি ও মুডলার্ক প্রোডাকশন রোমিও জুলিয়েটের সর্বাধুনিক রূপ দেন ২০১০ সালে তাঁদের 'সাচ টুইট সরো' নামক টুইট সিরিজের মাধ্যমে। চিত্রনাট্য রচনা করেন মুডলার্ক প্রোডাকশন টিম ও লেখক টিম রাইট ও বেথান মার্লো। এটি ইউ টিউবেও পাওয়া যায়[98]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.