Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থা অথবা একক-নির্বাহী শাসনব্যবস্থা হলো একটি গণতান্ত্রিক ও গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার ব্যবস্থা, যেখানে সরকার প্রধান একটি নির্বাহী শাখায় নেতৃত্ব দেন, যা আইনসভা অথবা বিধানসভা বা সংসদসভা থেকে আলাদা হয়ে থাকে। সরকারের এই প্রধান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রেরও প্রধান হয়ে থাকেন এবং তিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে পরিচিত হন। সে হিসেবেই এই ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থা বলা হয়।
|
রাষ্ট্রপতিশাসিত দেশে নির্বাহীগণ নির্বাচিত হয়ে থাকেন এবং এর জন্য আইনপরিষদ দায়ী হয় না, যা সাধারণ অবস্থায়ও রদ করতে পারবে না। ক্ষেত্র বিশেষে এই ধরনের রদ খুবই কম কার্যকর হয়।
"প্রেসিডেন্ট" তখনই এর কার্যকরতা লাভ করে যখন ওই পদাধিকারী ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে কোন গর্ভনিংবডির সভাপতিত্ব করেন, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা থেকে নির্বাহী ব্যবস্থা পৃথক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মহাদেশীয় কংগ্রেসের সভাপতির কার্যাবলী।
রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা সংসদীয় ব্যবস্থার সাথে বৈপরীত্য সৃষ্টি করে, যেখানে সরকার প্রধান ক্ষমতাশীনদের দ্বারা নির্বাচিত হন। কোথাও কোথাও মিশ্র বা সংকর পদ্ধতি সংবলিত আধা রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থাও বিদ্যমান।
যে সকল দেশে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা বা আধা-রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা সম্পন্ন সরকার বিদ্যমান তাদেরকে একচেটিয়া রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা শিরোনামে অভিহিত করা যায় না। সংসদীয় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রের প্রধান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হয়ে থাকেন।
একনায়ক তন্ত্রের রাজা বা নেতারা নির্বাচিত হোক বা না হোক, তাদেরকেও প্রায়শই রাষ্ট্রপতি বলা হয়ে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় মহাদেশের একটি প্রধানতম রাষ্ট্রব্যবস্থা হচ্ছে রাষ্ট্রপতিবাদ, যেখানে এর ২২টি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে ১৯টিই রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার প্রজাতন্ত্র। এটি কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা এবং মধ্য এশিয়াতে লক্ষনীয়ভাবে বিদ্যমান।
একটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থায়, একজন রাজনীতিবিদ জনগণের দ্বারা সরাসরি অথবা বিজয়ী দলের মধ্য থেকে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে সরকার প্রধান হয়ে থাকেন। ব্যতিক্রম কেবল বেলারুশ ও কাজাখস্তানের বেলায়, সেখানে সরকার প্রধানই রাষ্ট্র প্রধান হয়ে থাকে, যাকে রাষ্ট্রপতি বলা হয়ে থাকে। রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী পদটিও বিদ্যমান হতে পারে, কিন্তু আধা-রাষ্ট্রপতি বা সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির নিকট জবাবদিহিতা করে, সংসদীয় সভাসদের নিকট নয়।
বিশ্বব্যাপী অসংখ্য রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা সম্পন্ন সরকার ব্যবস্থায় নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যাবলীর প্রয়োগ দেখা যায়—
উপজাতিক সরকার, সাধারণত বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা, রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার কাঠামো অনুযায়ী তৈরী হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সকল রাষ্ট্রেই রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান, যদিও সাংবিধানিকভাবে এটি বাধ্যতামুলক নয়। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক শহরে পর্ষদ-ব্যবস্থার সরকার ব্যবস্থা রয়েছে, যা সংসদীয় ব্যবস্থার বরাবর। উপরন্তু শহর ব্যবস্থাপক পদটি সাধারণত একটি অরাজৈনিতক পদ। কোন কোন দেশে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার সরকার ব্যবস্থা না থাকলেও উপজাতিক বা স্থানীয় পর্যায়ে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসাবে জাপানের নাম নেয়া যেতে পারে, যেখানে জাতীয় পর্যায়ে ব্যবহৃত হচ্ছে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা এবং স্থানীয় এলাকা ও পৌর সরকার ব্যবস্থায় সরকার ও মেয়র স্বাধীনভাবে নির্বাচিত হন সেখানকার স্থানীয় দল ও পরিষদ থেকে।
রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার মতাদর্শীরা সাধারণত চারটি সাধারণ সুবিধা উপভোগ করে থাকে-
অধিকাংশ রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থায়, জনপ্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন, যদিও কোথাও কোথাও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়, যেমন যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করে তাদের ইলেক্ট্রোরাল কলেজ (যা সরাসরি নির্বাচিত) অথবা অন্য কোন পদ্ধতি।[1] এই পদ্ধতিতে, ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় একটি দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব পায়, অপরদিকে সংসদীয় ব্যবস্থায় একজন জনপ্রতিনিধি কেবলমাত্র নির্বাচনী এলাকার জনপ্রতিনিধিত্ব করে। এর অর্থ এই যে, একজন রাষ্ট্রপতি বিধানসভা থেকে স্বাধীনভাবে নির্বাচিত হতে পারেন।
রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থায় নির্বাহীগণকে সাধারণ বিধানসভা থেকে পৃথক রাখায় কখনো কখনো বাড়তি সুবিধা তৈরী হয়ে থাকে, এতে একে অন্যের কাজের তদারকি করতে পারে। সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাহী বিভাগটি তৈরী করা হয় বিধানসভা থেকে, যেখানে একে অন্যের কাজের সমালোচনার ব্যাপারটি খুব কম হয়। বিধানসভা প্রায়ই নির্বাহী বিভাগের কাজকে একটি সাধারণ অনাস্থা ভোট দ্বারা আপত্তি তুলে থাকে। রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার সমর্থনকারীদের মতে, পরীক্ষণ ও ভারসাম্যতার অভাব থাকলে একজন প্রধানমন্ত্রীর অসদাচরণ কখনোই বের করা সম্ভব নয়। যুক্তরাজ্যের সাবেক সাংসদ উডরো ওয়াট, ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে বলেন, "এটা কখনো চিন্তা করবেন না যে, আরেকটি ওয়াটারগেট এখানে সংঘটিত হবেনা, তুমি কেবল এটা সম্পর্কে শুনবেই না" (ইবিড)। সমালোচকরা প্রতিক্রিয়ায় দিয়েছেন যে, একটি বিধানসভাকে যদি রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার দল দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহালেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রবক্তারা লক্ষ করেন যে এই জাতীয় পরিস্থিতিতেও রাষ্ট্রপতির দলের একজন বিধায়ক রাষ্ট্রপতির সমালোচনা করার জন্য আরও ভাল অবস্থানে আছেন বা তার নীতিমালাগুলি তাকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করা উচিত, যেহেতু রাষ্ট্রপতির অবস্থানের তাত্ক্ষণিক সুরক্ষা আইনসুলভ সমর্থনের উপর কম নির্ভরশীল। সংসদীয় পদ্ধতিতে দলীয় শৃঙ্খলা অনেক বেশি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়। যদি কোনও সংসদীয় ব্যাকব্যাঞ্চার প্রকাশ্যভাবে নির্বাহী বা এর দলীয় নীতিগুলির কোনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সমালোচনা করে তবে তার/তার দলের মনোনয়ন হারাতে পারে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দল থেকে সরাসরি বহিষ্কারের সম্ভাবনাও থাকে। এমনকি কোনও গুরুতর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসহ কোনও বিধায়ককে কার্যকরভাবে বিদ্রূপ করার জন্য ব্যাকব্যাঞ্চারের কাছ থেকে হালকা সমালোচনাই যথেষ্ট গুরুতর পরিণতিগুলি (বিশেষত, মন্ত্রিপরিষদের পদ থেকে অপসারণ) বহন করতে পারে।
অনাস্থার ভোটের অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে কোনও প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিপরিষদের নেয়া সিদ্ধান্তকে খন্ডন করা অত্যন্ত কঠিন। সংসদীয় ব্যবস্থায় যদি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ কোন আইনকে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের দ্বারা "অধঃ-ভোট" দেয় তবে তা অবিশ্বাসের ভোট বলে বিবেচিত হয়। এই নির্দিষ্ট বিষয়টির উপর জোর দেওয়ার জন্য, একজন প্রধানমন্ত্রী তার নিজের দলের বিধায়কদের পক্ষ থেকে অনীহা প্রকাশের প্রথম চিহ্নে প্রায়শই একটি নির্দিষ্ট আইনসভা ভোটকে আস্থার বিষয় হিসাবে ঘোষণা করেন। যদি কোনও সরকার সংসদীয় আস্থাভাজন ভোট হারায়, তবে অনাস্থাপ্রাপ্ত সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে বা নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানাতে হবে।
সীমিত স্বীকৃত রাষ্ট্রকে বোঝাতে ইটালিক ব্যবহার করা হয়েছে।
নিম্নলিখিত দেশগুলিতে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর একটি পদও বিদ্যমান। অন্যান্য পদ্ধতি থেকে একটু আলাদা, যেখানে রাষ্ট্রপতি- রাষ্ট্র এবং সরকার উভয়ের প্রধান হয়ে থাকেন আর প্রধানমন্ত্রী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতির সহায়ক হয়ে থাকেন। ব্যতিক্রম শুধু বেলারুশ এবং কাজাখস্তান এর বেলায়, সেখানে প্রধানমন্ত্রী কার্যত সরকার প্রধান এবং রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্র প্রধান।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.