Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রামকৃষ্ণ সারদা মিশন ভগিনী নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয় বা ভগিনী নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয় হল কলকাতার একটি বালিকা বিদ্যালয়। এটি উত্তর কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলে ৫, নিবেদিতা লেনে অবস্থিত। স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা তথা স্কটিশ-আইরিশ বংশোদ্ভূত সমাজকর্মি ভগিনী নিবেদিতা ১৮৯৮ সালের নভেম্বর মাসে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।[1]
রামকৃষ্ণ সারদা মিশন ভাগিনী নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয় | |
---|---|
ঠিকানা | |
৫, নিবেদিতা লেন , , , ৭০০০০৩ | |
তথ্য | |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৩ নভেম্বর ১৮৯৮ |
প্রতিষ্ঠাতা | ভগিনী নিবেদিতা |
কর্তৃপক্ষ | রামকৃষ্ণ সারদা মিশন |
শ্রেণি | প্রথম-দ্বাদশ শ্রেণি |
লিঙ্গ | মহিলা |
ওয়েবসাইট | sisterniveditagirlsschool |
স্বামী বিবেকানন্দ ভগিনী নিবেদিতাকে ভারতে আসতে অনুরোধ করেছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে, নিবেদিতা (সেই সময় তার নাম ছিল মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল) ১৮৯৮ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতে আসেন। বিবেকানন্দ নিবেদিতাকে ভারতে এনে তার মাধ্যমে প্রধানত স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের কাজটি করাতে চেয়েছিলেন। সেই জন্য নিবেদিতা ভারতে বিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনার কথাজানালে বিবেকানন্দ উৎসাহী হন। তিনি বলরাম বসুর বাড়িতে এই ব্যাপারে একটি সভা ডাকেন। মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত, সুরেশ দত্ত, হরমোহন প্রমুখ রামকৃষ্ণ পরমহংসের গৃহস্থ শিষ্যেরা এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। এই সভাতেই নিবেদিতা বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেন এবং সবাইকে বিদ্যালয়ে ছাত্রী পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন। সভা চলাকালীন বিবেকানন্দ সভায় প্রবেশ করে সবার পিছনে আসন গ্রহণ করেন। নিবেদিতা তা লক্ষ্য করেননি। নিবেদিতা ছাত্রী পাঠানোর অনুরোধ করার পরই বিবেকানন্দ উঠে দাঁড়িয়ে সবাইকে বলতে থাকেন, “ওঠো, ওঠো, শুধু মেয়ের বাবা হলেই চলবে না। মেয়েদের শিক্ষাবিস্তারের জন্য সবাইকে সাহায্য করতে হবে। এটা জাতীয় আদর্শ।” তখন সবাই মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে রাজি হন। কিন্তু কেউই নিবেদিতাকে সাহায্য করতে রাজি হননি। তখন বিবেকানন্দ হরমোহনকে জোর করে রাজি করান এবং হরমোহনের হয়ে বিবেকানন্দই মেয়েদের বিদ্যালয় পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন।[2]:২১–২২
১৮৯৮ সালের ১৩ নভেম্বর কালীপূজার দিন কলকাতার বাগবাজার এলাকার ১৬, বোসপাড়া লেনে বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।[3] স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণ পরমহংসের অন্যান্য অনুগামীদের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন সারদা দেবী। [4] সারদা দেবী বিদ্যালয়ের সাফল্য কামনা করে বলেন, “আমি এই বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উপর দিব্যজননীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করি। এই বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা যেন শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে আদর্শ নারী হয়ে উঠতে পারে।” [2]:২২
১৯০২ সালে বিদ্যালয়টি নিয়মিত বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। ১৯০৩ সালে বিবেকানন্দের আমেরিকান শিষ্যা ভগিনী ক্রিস্টিন নিবেদিতাকে সাহায্য করতে বিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯১১ সালের অক্টোবর মাসে নিবেদিতার মৃত্যুর পর থেকে বিদ্যালয়টি নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকে। ১৯১৪ সালে ভগিনী সুধীরা এসে বিদ্যালয়ের কার্যভার নিজের হাতে তুলে নেন। সেই থেকে বিদ্যালয়ের পরিচালনভার রামকৃষ্ণ মিশন-অনুগামী শিক্ষিতা মহিলাদের হাতে চলে যায়।[4]
১৯১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়টি ছিল রামকৃষ্ণ মিশনের একটি শাখাকেন্দ্র। ১৯৬৩ সালের ৯ অগস্ট রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়টিকে রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের হাতে সমর্পণ করেন। সেই থেকে এখন বিদ্যালয়ের নাম রামকৃষ্ণ সারদা মিশন ভগিনী নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়।[4]
বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনটি ৫, নিবেদিতা লেনে অবস্থিত। শিল্পভবনটি অবস্থিত কাছেই ৬৮এ, রামকান্ত বসু স্ট্রিটে। পুরনো ভবনে ৩৫টি ঘর ও প্রার্থনা কক্ষ আছে।[5]
এই বিদ্যালয়ে তিনটি বিভাগ আছে। যথা, (১) প্রাথমিক বিভাগ, (২) মাধ্যমিক বিভাগ ও (৩) শিল্প বিভাগ।[5]
প্রাথমিক বিভাগে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি ও মাধ্যমিক বিভাগে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি অবধি ক্লাস হয়। শিক্ষা দফতরের বিশেষ অধ্যাদেশ অনুসারে গঠিত একটি বিশেষ কমিটি এই বিভাগ দেখাশোনা করে।[5]
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এই বিভাগ অনুমোদন করেছে। এটিও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দফতরের দ্বারা গঠিত বিশেষ কর্তৃপক্ষ দেখাশোনা করে।[5]
১৯০৩ সালে ভগিনী নিবেদিতা ও ভগিনী ক্রিস্টিন এই বিভাগটি চালু করেছিলেন। সেই সময় এই বিভাগের নাম ছিল “পুরস্ত্রী বিভাগ”। এখানে বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া হয়। সেলাই, খেলনা তৈরি ইত্যাদি হাতের কাজও শেখানো হয়। এই বিভাগের ছাত্রীরা প্রতি বছর একটি প্রদর্শনী আয়োজন করে। ১৯৪৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর এই বিভাগটি অনুমোদন করে। ওই দফতর থেকে এই বিভাগটিকে অনুদানও দেওয়া হয়।[5]
১৯৮৮ সাল থেকে এই বিদ্যালয় স্থানীয় বাসিন্দাদের ছেলেয়েমেদের জন্য বিনামূল্যে কোচিং ক্যাম্পের আয়োজন করছে। কোচিং ক্লাসগুলি হয় সপ্তাহে চার দিন সকাল ৭টা থেকে ৯টায় ক্রিস্টিন ভবনে। এই দিনগুলিতে তাদের বিনামূল্যে খাবারও দেওয়া হয়। বই আর নতুন জামাকাপড়ও দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে দেশভ্রমণের ব্যবস্থাও করা হয়।[6]
২০০০ সালের মার্চ মাস থেকে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য নিয়মিত মাসিক মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করা হচ্ছে। সাতবেরিয়া গ্রাম জনকল্যাণ মিশনের সহযোগিতায় প্রতি মাসের রবিবারে এই ক্যাম্প হয়।[6]
বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষা কেন্দ্রে মাল্টিমিডিয়া সহ ৬টি কম্পিউটার আছে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীরা এই কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ পায়। বিদ্যালয় প্রাথমিক বিভাগেও কম্পিউটার চালু করেছে। সেই বিভাগে ৭টি কম্পিউটার আছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীরা এগুলি ব্যবহারের সুযোগ পায়।[6]
২০০৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীদের জন্য স্পোকেন ইংলিশ ক্লাশ শুরু হয়। শ্রীসারদা মঠ থেকে ৫ জন শিক্ষিকা নিযুক্ত করা হয় এই ক্লাসের জন্য।[6]
বিদ্যালয় পত্রিকা নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয় পত্রিকা ২০০৫ ও ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ছাত্রীদের গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও শিল্পকর্ম ছাড়া ছাত্রীদের দেশভ্রমণ, প্রতিযোগিতায় যোগদানের সংবাদ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সংবাদ ইত্যাদিও ছাপা হয়।[6]
বিদ্যালয়ে জন্মাষ্টমী, বুদ্ধপূর্ণিমা, রামকৃষ্ণ, সারদা দেবী, স্বামী বিবেকানন্দ, ভগিনী নিবেদিতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন এবং সরস্বতী পূজা, বড়দিন ও রথযাত্রা পালিত হয়।[6]
বিদ্যালয়ের একটি প্রকাশনা বিভাগ আছে। এখান থেকে ইংরেজি ও বাংলা বই প্রকাশিত হয়। বিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত কয়েকটি বিখ্যাত বই হল:[7]
১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রীদের নিয়ে প্রাক্তনী পরিষদ “সিস্টার নিবেদিতা গার্লস’ স্কুল অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন” গঠিত হয়। এই পরিষদ নিয়মিত নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।[8]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.