Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রাজ্য নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় (চীনা: 国家安全部 গুওজিয়া আনকুয়ান বু ) হলো চীনের গোয়েন্দা সংস্থা যা প্রতি-গোয়েন্দাবৃত্তি (কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স), বৈদেশিক গুপ্তচরবৃত্তি এবং চীনের রাজনৈতিক বিষয়ক নিরাপত্তা নিয়ে দেখাশোনা করে। রাজধানী বেইজিংয়ে এর সদর দফতর অবস্থিত।
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ধারা ৪ -অনুযায়ী এমএসএস রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার হুমকি বিষয়ক অপরাধে জড়িত যে কোন অপরাধীকে পুলিশের ন্যায় গ্রেফতার করার অধিকার রাখে।[1]
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জন-নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পর্যায়ের তত্ত্বাবধানে, চীনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যুরো এবং রাজ্য নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় (এমএসএস) সমান্তরালভাবে কাজ করে; যা সাধারণত পুলিশিং এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক বিষয়সমূহ নিয়ে জড়িত। প্রশাসনিক কাঠামোগত দিক দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যুরো এবং এমএসএস পৃথক সত্ত্বা হলেও, স্থানীয় পর্যায়ের গোয়েন্দাবৃত্তিতে এই দুই সংগঠন একে অন্যের সাথে তথ্য ভাগাভাগি করার মাধ্যমে নিজেদের সহায়তা প্রদান করে থাকে।
১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আসীনের পূর্বে বর্তমান রাজ্য নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের পূর্বসরী সেন্ট্রাল ডিপার্টমেন্ট অব সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স (সি ডি এস এ) চীনের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা-রূপে কাজ করতো। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত চলা দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধের সময় সিডিএসএ - এর কার্যক্রম চীনের উত্তরের শাআনশি প্রদেশের কমিউনিস্ট অধ্যুষিত ই'য়ান শহর থেকে পরিচালিত হতো। এছাড়াও ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত চলা কমিউনিস্ট পার্টির এবং চীনের জাতীয়তাবাদি দল কুওমিনতাং এর মধ্যে গৃহযুদ্ধের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে সিডিএসএ কমিউনিস্টদের সাহায্য করেছিল।
১৯৪৯ সালের গ্রীষ্মের এক প্রাক্কালে সিডিএসএ সম্পূর্ণরূপে একটি সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে।[2] পরবর্তীতে কমিউনিস্ট পার্টি কর্তৃক জন নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় (এম পি এস) গঠনের পর সিডিএসএ - এর কার্যক্রম স্থগিত হয় এবং এর বেশিরভাগ বিশিষ্ট কর্মকর্তাদের বদলি করে এমপিএস - এ নিয়ে আসা হয়। এরপর সিডিএসএ - এর কিছু কর্মচারীরা চীনের সামরিক বাহিনীর আওতায় চলে এলে বাকিদের নিয়ে ১৯৫৫ সালে সংগঠনটি পুনর্গঠন করে সরাসরি কমিউনিস্ট পার্টির একটি অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয় যা বর্তমানে কেন্দ্রীয় তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) হিসেবে স্বীকৃত।[3] অতঃপর ১৯৮৩ সালে সিআইডি আর এমপিএস -এর প্রতি-গোয়েন্দাবৃত্তির উপাদানগুলোর সমন্বয়ে এমএসএস বা রাজ্য নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। এমএসএস -এর দীর্ঘতম প্রধানদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জিয়া চুনওয়াং, যিনি ছিলেন বেইজিং শহরের স্থানীয় অধিবাসী এবং চিংখুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬৪ সালের স্নাতক ডিগ্রিধারী। এছাড়া তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ'র গুণমুগ্ধ ছিলেন বলে জানা যায়। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৮ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি এমএসএস - এর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তার ক্ষমতা ছাড়ার পর এমএসএস - কে ঢেলে সাজানো হয় এবং প্রধান হিসেবে শু ইয়ংউয়ে - কে প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এমএসএস - এর বিশিষ্ট পদ থেকে সরে আসার পর জিয়া চুনওয়াং জন নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় এর একটি বিশেষ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এমএসএস - এর অধীনস্থ চৈনিক গুপ্তচরেরা অতীতে সফলভাবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অভ্যন্তরে ঢুকে গোপনীয় তথ্য বাগিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়েছিল। ১৯৮০ সালে ল্যারি উ-তাই চিন (জিন উদাই) নামক সিআইএ - এর বৈদেশিক সম্প্রচার তথ্য সংস্থা (Foreign Broadcast Information Service) শাখার একজন চৈনিক অনুবাদক চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার অপরাধে গ্রেপ্তার হন। তিনি ১৯৪৪ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং প্রায় চার দশক ধরে কোনরূপ ধরা না পড়ে একনাগারে চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতে সফল হন। এছাড়া ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এর গুপ্তসংবাদদাতা এবং রিপাবলিকান পার্টির অর্থ সংগ্রহকারী ক্যাটরিনা লিউয়িং - কেও ডাবল এজেন্ট হওয়ার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো; যিনি উভয় এফবিআই এবং চীনের সরকারের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন বলে শোনা যায়। তবে পরবর্তীতে তিনি এফবিআই -এর গুপ্তনথি নকল করার অপরাধ সম্পর্কিত অভিযোগ থেকে খালাস পান এবং তাকে শুধু কর ফাঁকি এবং এফবিআই - কে মিথ্যে বলার অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়।
২০১২ সালে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সংস্থা ওয়াশিংটন টাইমস্ - কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমএসএস - এর একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা লি ফেংঝি উল্লেখ করেন যে, এমএসএস প্রতিগোয়েন্দাবৃত্তি (কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স), অন্যান্য দেশসমূহের গোপনীয়তা ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ এবং চীনের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ দমন সম্পর্কিত কাজের সাথে জড়িত ছিলো। অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ দমন বলতে লি এখানে অনুমোদনহীন গির্জা এবং ফালুন গং নামক বৌদ্ধ ধর্মের একটি শাখা নিষিদ্ধকরণ; পাশাপাশি দেশের বাইরে বহিঃর্বিশ্বে কি হচ্ছে সেটা চীনের জনগণ যেন না জানতে পারে, সেজন্য চীনের ইন্টারনেট ব্যবহার সেন্সর করা সম্পর্কিত পদক্ষেপগুলোকে বুঝিয়েছিলেন। এছাড়া লি গুরুত্বসহকারে এই কথা উল্লেখ করেছিলেন যে, এমএসএস - এর উদ্দেশ্যই হলো "সর্বোপরি কমিউনিস্ট শাসন ধরে রাখার জন্য চীনের জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।"[4]
২০১২ সালে এমএসএস - এর একজন নির্বাহি সহকারী ল্যু ফোঁওয়েই কে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ - এর হয়ে কাজ করছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে ল্যু ফোঁওয়েই কে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা না হলেও এই ঘটনা চীনের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হু জিনতাও - কে ক্ষিপ্ত করেছিল বলে জানা গিয়েছিলো এবং তখন থেকে গোয়েন্দাদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থায় নিরাপত্তা এবং বেইজিং ও দেশের বাইরে প্রতিগোয়েন্দাবৃত্তি ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়েছিল।[5]
বৈদেশিক গুপ্তচর সংগ্রহে সাংহাই রাজ্য নিরাপত্তা ব্যুরো এবং এমএসএস বহুবার সফল এবং ব্যর্থ পদক্ষেপ নিয়েছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিলো মার্কিন নাগরিক গ্লেন ডাফি শ্রাইভার কে ২০১০ সালে সিআইএ - এর ন্যাশনাল ক্ল্যাডেস্টাইন সার্ভিসে ঢুকানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা। এছাড়াও রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মচারী ক্যান্ডিস ক্লেইবোর্ন কর্তৃক মার্কিনীদের গোপন পরিকল্পনা জানার প্রচেষ্টা যা পরবর্তীতে ক্ল্যান্ডিসের ২০১৭ সালে ধরা পড়ায় তাদের এই গোপন প্রচেষ্টার খবর ফাঁস হয়ে যায়।[6]
অর্থনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি হলো এমএসএস - এর প্রধান নির্দেশিকা এবং এফবিআই - এর রিপোর্ট অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে প্রায় ৩,০০০ কোম্পানী এমএসএস - এর হয়ে কাজ করছে।[7] যার মধ্যে হুয়ায়েই, চায়না মুঠোফোন এবং চায়না ইউনিকম - এর মতো কোম্পানীগুলো এমএসএস - এর কার্যক্রমের সাথে জড়িত বলে জানা যায়।[8][9]
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় পরিষদের অধীনস্থ রাজনৈতিক ও আইন কমিশন বিভাগের মহাসচিব লিউ ফুঝি এক বিবৃতিতে এই বলে উল্লেখ করেন যে, এমএসএস - এর উদ্দেশ্য হলো "রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষা করা যাতে শত্রু দেশের গুপ্তচর, বহিঃদেশের গোয়েন্দাগিরি এবং চীনের সমাজতান্ত্রিক অবকাঠামো-কে উৎখাত করার জন্য শত্রুদের যেসব পরিকল্পিত বিদ্রোহী কার্যকলাপ রয়েছে, সেসবের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।"[10]
এমএসএস - এর প্রধান তারাই যারা সরাসরি চীনের রাজ্য পরিষদের নিকট তথ্য প্রদানে দায়বদ্ধ থাকে।[11]
নংঃ | নাম | দপ্তর স্থলাভিষিক্ত | দপ্তর ত্যাগ |
---|---|---|---|
১ | লিং ইয়ুন | জুন ১৯৮৩ | সেপ্টেম্বর ১৯৮৫ |
২ | জিয়া চুনওয়াং | সেপ্টেম্বর ১৯৮৫ | মার্চ ১৯৯৮ |
৩ | শ্যু ইয়ংয়ুয়ে | মার্চ ১৯৯৮ | অগাস্ট ২০০৭ |
৪ | গেং হুইচাং | অগাস্ট ২০০৭ | নভেম্বর ২০১৬ |
৫ | চেন ওয়েংকিং | নভেম্বর ২০১৬ | শায়িত্ব |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.