রাজা রামমোহন রায় (২২ মে ১৭৭২ – ২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩) একজন ভারতীয় সংস্কারক। তিনি ১৮২৮ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের একটি সামাজিক-ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন ব্রাহ্মসভার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর তাকে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন । রাজনীতি, জনপ্রশাসন, শিক্ষা ও ধর্মের ক্ষেত্রে তার প্রভাব ছিল স্পষ্ট । তিনি সতীদাহ প্রথা এবং বাল্যবিবাহ বাতিলের প্রচেষ্টার জন্য পরিচিত ছিলেন।[1] অনেক ইতিহাসবিদ রামমোহন রায় কে "ভারতীয় রেনেসাঁর জনক" বলে মনে করেন।[2]

দ্রুত তথ্য রাজা রামমোহন রায়, জন্ম তারিখ ...
রাজা রামমোহন রায়
(১৭৭২-০৫-২২)২২ মে ১৭৭২ – সেপ্টেম্বর ২৭, ১৮৩৩(১৮৩৩-০৯-২৭)
Thumb
রেমব্রান্ট পিল অঙ্কিত রাজা রামমোহন রায় (১৮৩৩)
জন্ম তারিখ (১৭৭২-০৫-২২)২২ মে ১৭৭২
জন্মস্থান রাধানগর, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩(1833-09-27) (বয়স ৬১)
মৃত্যুস্থান স্ট্যাপলেটন, ব্রিস্টল, ইংল্যান্ড
জাতীয়তা ভারতীয়
উপাধি রাজা
আন্দোলন বাংলার নবজাগরণ
প্রধান সংগঠন ব্রাহ্মসমাজ
ধর্ম হিন্দুধর্ম
স্বাক্ষর Thumb
বন্ধ

২০০৪ সালে, বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির জরিপে রামমোহন ১০ম স্থানে ছিলেন।[3][4][5]

শৈশব ও শিক্ষা

১৭৭২ সালের ২২ মে হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে রামমোহন রায়ের জন্ম হয়েছিল। তার পিতা রামকান্ত ছিলেন একজন বৈষ্ণব, তার মা ফুলঠাকুরানী দেবী ছিলেন শৈব পরিবার থেকে। তিনি সংস্কৃত, ফার্সি এবং ইংরেজি ভাষার একজন মহান পণ্ডিত ছিলেন এবং আরবি, ল্যাটিন এবং গ্রীক ভাষাও জানতেন।

পনেরো-ষোলো বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে নানা স্থান ভ্রমণ করেন। কাশীতেপাটনায় কিছুকাল অবস্থান করেন। এছাড়া তিনি নেপালে গিয়েছিলেন। এর আগে তার সঙ্গে তন্ত্রশাস্ত্রবেত্তা সুপণ্ডিত নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কারের (পরে হরিহরানন্দ তীর্থস্বামী কুলাবধূত নামে পরিচিত) যোগাযোগ হয়। নন্দকুমারের সহযোগিতায় রামমোহনের সংস্কৃত ভাষায় পাণ্ডিত্য হয়, তার বেদান্তে অনুরাগ জন্মে। ব্রাহ্ম উপাসনালয় প্রতিষ্ঠায় হরিহরানন্দই তার দক্ষিণ-হস্ত ছিলেন। বারাণসী থেকে সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার পর তিনি পাটনা থেকে আরবিফারসি ভাষা শেখেন। পরে তিনি ইংরেজি, গ্রিকহিব্রু ভাষাও শেখেন।

কর্মজীবন

তরুণ বয়সে তিনি কলকাতায় মহাজনের কাজ করতেন। ১৭৯৬ সালে রামমোহন অর্থোপার্জন শুরু করেন। ১৮০৩ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী ছিলেন। কলকাতায় প্রায়ই আসতেন এবং কোম্পানির নবাগত অসামরিক কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাদের নানা বিষয়ে সাহায্য করেন। এই সুযোগে ভালো করে ইংরেজি শিখে নেন।

১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রামমোহন কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা হন, এখন থেকেই প্রকাশ্যে তার সংস্কার-প্রচেষ্টার শুরু। তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ফারসি ভাষায় লেখা তুহফাতুল মুহাহহিদিন। বইটিতে একেশ্বরবাদের সমর্থন আছে। এরপর একেশ্বরবাদ (বা ব্রহ্মবাদ) প্রতিষ্ঠা করার জন্য বেদান্ত-সূত্র ও তার সমর্থক উপনিষদগুলি বাংলার অনুবাদ করে প্রচার করতে থাকেন। ১৮১৫ থেকে ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রকাশিত হয় বেদান্তগ্রন্থ, বেদান্তসার, কেনোপনিষদ, ঈশোপনিষদ, কঠোপনিষদ, মাণ্ডূক্যোপনিষদমুণ্ডকোপনিষদ। রক্ষণশীল ব্যক্তিরা তার এ কাজের প্রতিবাদ করেন। 'বেদান্ত গ্রন্থ' প্রকাশের সঙ্গে তিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ একেশ্বর উপাসনার পথ দেখালেন আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করে। এই আত্মীয় সভাকেই পরে তিনি ব্রাহ্মসমাজ নাম ও রূপ দেন। সাহেবদের বাংলা শেখানোর জন্য তিনি বাংলা ও ইংরেজিতে ব্যাকরণ রচনা করেন।[6]

সতীদাহ ও রামমোহন রায়

বেদান্ত-উপনিষদগুলি বের করবার সময়ই তিনি সতীদাহ অশাস্ত্রীয় এবং নীতিবিগর্হিত প্রমাণ করে পুস্তিকা লিখলেন 'প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ'। প্রতিবাদে পুস্তিকা বের হল 'বিধায়ক নিষেধকের সম্বাদ'। তার প্রতিবাদে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুস্তিকা বের হয়। এই বছরেই ডিসেম্বর মাসে আইন করে সহমরণ-রীতি নিষিদ্ধ করা হয়। তবুও গোঁড়ারা চেষ্টা করতে লাগল যাতে পার্লামেন্টে বিষয়টি পুনর্বিবেচিত হয়। এই চেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য রামমোহন বিলেত যেতে প্রস্তুত হলেন। এব্যাপারে তাকে আর্থিক সহায়তা দান করেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। মোঘল সম্রাট ২য় আকবর তার দাবি ব্রিটিশ সরকারের কাছে পেশ করার জন্য ১৮৩০ সালে রামমোহনকে বিলেত পাঠান, তিনি রামমোহনকে রাজা উপাধি দেন।

ব্রাহ্মসমাজ ও রামমোহন রায়

বেদান্তচন্দ্রিকার প্রতিবাদে রামমোহন ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিচার লিখে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বেদান্ত গ্রন্থ প্রকাশের সঙ্গে তিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ একেশ্বর উপাসনার পথ দেখান আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করে। এই আত্মীয় সভাকেই পরে তিনি ব্রাহ্মসমাজ নামে নতুন রূপ দেন।

বিলেত ভ্রমণ

১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর তিনি কলকাতা থেকে বিলেত যাত্রা করেন। দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় আকবর তাকে 'রাজা' উপাধি দেন। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে কিছুদিনের জন্য তিনি ফ্রান্সেও গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন আধুনিক ভারতের সমাজ সংস্কারের অন্যতম পথিকৃৎ।

সমাজ সংস্কার

রামমোহন রায় সামাজিক কুফলগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এবং ভারতে সামাজিক ও শিক্ষাগত সংস্কার প্রচারের জন্য আত্মীয় সভা এবং একতাবাদী সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

শিক্ষাবিদ

  • রামমোহন রায় বিশ্বাস করতেন শিক্ষা সমাজ সংস্কারের একটি বাস্তবসম্মত হাতিয়ার।
  • ১৮১৭ সালে, ডেভিড হেয়ারের সহযোগিতায় তিনি কলকাতায় হিন্দু কলেজ স্থাপন করেন।
  • ১৮২২ সালে অ্যাংলো-হিন্দু স্কুলের চার বছর পরে (১৮২৬) বেদান্ত কলেজে; তিনি জোর দিয়েছিলেন যে তার একেশ্বরবাদী মতবাদের শিক্ষাগুলি "আধুনিক, পাশ্চাত্য পাঠ্যক্রম" এর সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।[7]
  • ১৮৩০ সালে, তিনি রেভারেন্ড আলেকজান্ডার ডাফকে সাধারণ পরিষদের ইনস্টিটিউশন (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত) প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিলেন।
  • তিনি ভারতীয় শিক্ষায় পাশ্চাত্য শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি সমর্থন করেন।
  • তিনি পাশ্চাত্য ও ভারতীয় শিক্ষার সংশ্লেষণ হিসেবে কোর্স অফার করে বেদান্ত কলেজও স্থাপন করেন।
  • তার সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ছিল সংবাদ কৌমুদী। এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ভারতীয়দের চাকরির উচ্চ পদে অন্তর্ভুক্ত করা এবং নির্বাহী ও বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের মতো বিষয়গুলিকে কভার করে।
  • ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন সংবাদমাধ্যমে মুখ থুবড়ে পড়ে, তখন রাম মোহন যথাক্রমে ১৮২৯ এবং ১৮৩০ সালে এর বিরুদ্ধে দুটি স্মারক রচনা করেন।

শেষ জীবন

Thumb
রাজা রামমোহন রায় সরণিতে রামমোহনের আবক্ষ মূর্তি

১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর তিনি কলকাতা থেকে বিলেত যাত্রা করেন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ এপ্রিল রামমোহন লিভারপুলে পৌঁছলেন। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে কিছুদিনের জন্য তিনি ফ্রান্সেও গিয়েছিলেন। সেখানে ফরাসি সম্রাট লুই ফিলিপ কর্তৃক তিনি সংবর্ধিত হন। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে বসবাস করতে থাকেন। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ৮ দিন জ্বরে ভুগে ২৭ সেপ্টেম্বরে মৃত্যবরণ করেন।[8] তার মৃত্যুর দশ বৎসর পর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর 'আনসার ডেল' নামক স্থানে তার সমাধিস্থ করে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেন।  ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য ব্রিস্টলে তার একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়।[9]

Thumb
ব্রিস্টলে রাজা রাম মোহান রায়ের মূর্তি

রামমোহন রায় রচিত গ্রন্থাবলি

বাংলা গ্রন্থাবলি

  1. বেদান্ত গ্রন্থ (১৮১৫): রাজা রামমোহন রায় রচিত প্রথম বাংলা গ্রন্থ। মূল গ্রন্থটি চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত। রাজা রামমোহন রায়-প্রণীত গ্রন্থাবলি-র (১৮৮০) সম্পাদক রাজনারায়ণ বসু ও আনন্দচন্দ্র বেদান্তবাগীশ অধ্যায়গুলির নামকরণ করেছিলেন যথাক্রমে সমন্বয়, অবিরোধ, সাধন ও ফল।[10]
  2. বেদান্ত সার (১৮১৫): রামমোহন রায়ের দ্বিতীয় বাংলা গ্রন্থ। এই বইটির প্রকাশকাল নিয়ে মতান্তর রয়েছে। বইটির আখ্যাপত্রে প্রকাশকাল মুদ্রিত ছিল না। রামমোহনের জীবনীকার নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, এটি প্রকাশিত হয় বেদান্ত গ্রন্থ-এর সঙ্গে অথবা কিছুকাল পরে। কেউ কেউ মনে করেন বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮১৬ সালে। তবে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রকাশিত রামমোহন-গ্রন্থাবলী-র সম্পাদকেরা এটির প্রকাশকাল ১৮১৫ বলে মতপ্রকাশ করেছেন। ১৮১৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত রামমোহনের ট্রান্সলেশনস অফ অ্যান অ্যাব্রাইজমেন্ট অফ দ্য বেদান্ত গ্রন্থে এই গ্রন্থটির নাম পাওয়া যায়। বেদান্ত সার হিন্দুস্তানী ভাষাতেও অনূদিত হয়।[11]
  3. তলবকার উপনিষৎ (জুন, ১৮১৬): বেদান্ত গ্রন্থবেদান্ত সার রচনার পর রামমোহন রায় উপনিষদ্‌ গ্রন্থাবলি বাংলায় প্রচারের কাজে হাত দেন। তলবকার উপনিষৎ রামমোহন রায় অনূদিত পাঁচটি উপনিষদের মধ্যে প্রথম। এটি কেনোপনিষদের অনুবাদ। গ্রন্থের ভূমিকায় রামমোহন জানিয়েছেন যে, তিনি আদি শঙ্কর রচিত ভাষ্য অবলম্বনে এই গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন।[12]
  4. ঈশোপনিষৎ (জুলাই, ১৮১৬): রামমোহন রায় কর্তৃক অনূদিত দ্বিতীয় উপনিষদ্‌। এই উপনিষদ্ যজুর্বেদের অন্তর্গত এবং এর অপর নাম বাজসনেয় সংহিতোপনিষদ্‌।[13]
  5. ভট্টাচার্যের সহিত বিচার (মে, ১৮১৭): কলকাতা সরকারি কলেজের অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার রামমোহন রায়ের বেদান্ত গ্রন্থবেদান্ত সার-এর প্রতিবাদে বেদান্ত চন্দ্রিকা নামে একখানি গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থের প্রত্যুত্তরে রামমোহন বাংলায় ভট্টাচার্যের সহিত বিচার গ্রন্থটির রচনা করেন। এটি উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশের সহিত বিচার গ্রন্থের প্রায় সমসাময়িককালেই রচিত হয়।[14]
  6. কঠোপনিষৎ (অগস্ট, ১৮১৭): রামমোহন কর্তৃক অনূদিত তৃতীয় উপনিষদ্‌। এটিতেও একটি ক্ষুদ্র ভূমিকা রয়েছে। আদি শঙ্করের ভাষ্য অবলম্বনে রামমোহন যজুর্বেদের অন্তর্গত এই উপনিষদ্‌ অনুবাদ করেন।[15]
  7. মাণ্ডুক্যোপনিষৎ (অক্টোবর, ১৮১৭): রামমোহন রায় অনূদিত চতুর্থ উপনিষদ্‌। অথর্ববেদের অন্তর্গত এই উপনিষদের একটি দীর্ঘ ভূমিকাও রামমোহন এই গ্রন্থে সংযোজিত করেছিলেন। এই অংশে ব্রহ্মোপাসনার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে একটি 'শাস্ত্রীয় প্রমাণসম্বলিত বিচার' রয়েছে। তারপর বঙ্গানুবাদ সহ মূল উপনিষদ্‌ আলোচিত হয়েছে এবং শেষভাগে ভাষ্যে বর্ণিত সিদ্ধান্তগুলির বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ১৮১৯ সালে বইটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়।[16]
  8. গোস্বামীর সহিত বিচার (জুন, ১৮১৮): মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের পর গৌড়ীয় বৈষ্ণব-মতাবলম্বী জনৈক গোস্বামী রামমোহন রায়ের বিরুদ্ধে পুস্তক প্রকাশ করেন। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাসের অনুমান, এই গোস্বামীর নাম সম্ভবত 'রামগোপাল শর্মণঃ'। এই গ্রন্থের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ রামমোহন রায় রচনা করেন গোস্বামীর সহিত বিচার। এই গ্রন্থে রামমোহন লিখেছিলেন, "এই গ্রন্থের বিশেষ বিচার্য এই যে, ভাগবত শাস্ত্রই যথার্থ বেদার্থ নির্ণায়ক নহে; বেদার্থ নির্ণয়ে শ্রুতি-স্মৃতিরই প্রাধান্য আছে।"[17]
  9. সহমরণ বিষয়ে প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের সম্বাদ (আনুমানিক নভেম্বর, ১৮১৮): সহমরণ বিষয়ে রামমোহন রায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে যে তিনখানি পুস্তিকা রচনা করেন, এই বইটি সেগুলির মধ্যে প্রথম। পুস্তিকাটিতে প্রকাশকাল মুদ্রিত না থাকায় এটির প্রকৃত প্রকাশকাল জানা যায় না। ১৮১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর সমাচার দর্পণ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদে এই পুস্তিকাটির নাম পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, সেই বছরই ৩০ নভেম্বর এই পুস্তিকাটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।[18]
  10. গায়ত্রীর অর্থ (১৮১৮): বইটি "ভূমিকা" ও "গ্রন্থ" - এই দুই অংশে বিভক্ত। ভূমিকা অংশে রামমোহন বলেন, ব্রাহ্মণেরা প্রতিদিন যে গায়ত্রী মন্ত্র জপ করেন, তা আসলে পরব্রহ্মেরই উপাসনা। এরপর গ্রন্থ-অংশে গায়ত্রীর অর্থ বাংলায় ব্যাখ্যা করে তিনি সেই কথাটিই প্রতিপন্ন করেছেন।[19]
  11. মুণ্ডকোপনিষৎ (আনুমানিক ফেব্রুয়ারি/মার্চ, ১৮১৯): রামমোহন রায় অনূদিত সর্বশেষ উপনিষদ্‌ গ্রন্থ। এই গ্রন্থটির প্রকাশকাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। মূল সংস্করণের আখ্যাপত্রে প্রকাশকাল মুদ্রিত ছিল না। বসু-বেদান্তবাগীশ সংস্করণে এটিকে পূর্বে প্রকাশিত বলে উল্লেখ করা হলেও সমাচার দর্পণ পত্রিকার ২৭ মার্চ ১৮১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে এটিকে "নূতন পুস্তক" বলে উল্লেখ করা হয়। জেমস লং মুদ্রিত বাংলা পুস্তক তালিকাতেও এই গ্রন্থের প্রকাশকাল ১৮১৯ বলে উল্লিখিত। এই কারণে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রকাশিত সংস্করণে এই গ্রন্থটিকে ১৮১৯ সালের রচনা হিসেবেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রেও রামমোহন রায় আদি শঙ্কর কৃত টীকা অনুসারে অথর্ববেদের অন্তর্গত এই উপন্যাসটির বাংলা অনুবাদ করেছেন।[20]
  12. সহমরণ বিষয়ে প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের দ্বিতীয় সম্বাদ (নভেম্বর, ১৮১৯): রামমোহন রায় প্রণীত সহমরণ বিষয়ে প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের সম্বাদ পুস্তকের প্রতিবাদে কলকাতার ঘোষালবাগানের এক চতুষ্পাঠীর পরিচালক কাশীনাথ তর্কবাগীশ ১৮১৯ সালে বিধায়ক নিষেধকের সম্বাদ নামে একখানি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। সেই পুস্তিকার প্রত্যুত্তরে রামমোহ রায় রচনা করেন সহমরণ বিষয়ে প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের দ্বিতীয় সম্বাদ। ১৮২০ সালে পুস্তিকাটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়।[21]
  13. আত্মানাত্মবিবেক (১৮১৯): আদি শঙ্কর রচিত একই নামের একটি বেদান্ত-আলোচনা পুস্তকের বঙ্গানুবাদ।[22]

সংস্কৃত গ্রন্থাবলি

  1. উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশের সহিত বিচার (১৮১৬-১৭): ১৮১৬ সালে রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত আত্মীয়সভার নিকট বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মহামহোপাধ্যায় উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশ নিজের প্রশ্নপত্র পাঠান এবং রামমোহন রায় আত্মীয়সভার পক্ষ থেকে তার উত্তর দেন। এই প্রশ্নোত্তর-সম্বলিত চারটি পুস্তিকা শ্রীরামপুর কলেজ গ্রন্থাগারে রক্ষিত ছিল। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রকাশিত রামমোহন-গ্রন্থাবলী-র সম্পাদক ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়সজনীকান্ত দাস সংস্কৃত ভাষায় রচিত ও বাংলা হরফে মুদ্রিত সেই পুস্তিকাগুলি উদ্ধার করে গ্রন্থাবলীর দ্বিতীয় খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেন। ইতিপূর্বে এটি রামমোহনের অপর কোনও রচনা-সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। উল্লেখ্য, উৎসবানন্দ প্রথমে রামমোহনের বিচারপদ্ধতির ঘোরতর বিরোধী হলেও এই বিচারের ফলে রামমোহনের মত গ্রহণ করেছিলেন এবং ১৮২৮ সালের অগস্ট মাসে রামমোহন ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করলে তিনি তার অধিবেশনে উপনিষদ্‌-পাঠের দায়িত্বও গ্রহণ করেন।[23]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

১৯৬৫ সালে বিজয় বোস পরিচালিত ভারতীয় বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র রাজা রামমোহন, প্রধান চরিত্রে বসন্ত চৌধুরী[24]

১৯৮৮ সালে শ্যাম বেনেগাল প্রযোজিত ও পরিচালিত দূরদর্শন সিরিয়াল ভারত এক খোজ এছাড়াও রাজা রাম মোহন রায়ের উপর একটি পূর্ণাঙ্গ একটি পর্ব চিত্রিত করে । প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিশিষ্ট টিভি অভিনেতা অনঙ্গ দেশাই, উর্মিলা ভাট, টম অল্টার এবং রবি ঝাঁকাল সহ কাস্ট হিসেবে।

১৯৮৪ সালে ভারতের ফিল্ম ডিভিশন পিসি শর্মা পরিচালিত রাজা রামমোহন রায়ের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে।[25]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.