Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চিৎপুর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরের উত্তরাংশের একটি পাড়া। রবীন্দ্র সরণি-সংলগ্ন সমগ্র এলাকাটিকে কখনও কখনও চিৎপুর বলে অভিহিত করা হলেও, উক্ত এলাকার বিভিন্ন অংশের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে।
চিৎপুর | |
---|---|
কলকাতার পাড়া | |
কলকাতায় অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২.৬১৬° উত্তর ৮৮.৩৭১° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | কলকাতা |
শহর | কলকাতা |
বোরো | ১ |
ওয়ার্ড | ৬ |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+5:30) |
ডাক সূচক সংখ্যা | ৭০০০০২ |
এলাকা কোড | +৯১ ৩৩ |
লোকসভা কেন্দ্র | কলকাতা উত্তর |
বিধানসভা কেন্দ্র | কাশীপুর-বেলগাছিয়া |
চিৎপুর অঞ্চলের ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো। মনোহর ঘোষ এই অঞ্চলে দেবী চিত্তেশ্বরীর (কালী) একটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেই মন্দিরের নামানুসারেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়। কথিত আছে, উক্ত মন্দিরে সেকালে নরবলি দেওয়া হত। এই মন্দিরের নবরত্ন চূড়াটি ১৭৩৭ সালের ঘূর্ণিঘড়ে ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রাচীন মন্দিরটি একটি ধ্বংসস্তুপ।[1]
অন্য মতে, এই অঞ্চলের প্রকৃত নাম ছিল ‘চিত্রপুর’। ১৪৯৫ সালে রচিত বিপ্রদাস পিপলাইয়ের মনসামঙ্গল কাব্যে এই অঞ্চলের উল্লেখ আছে। তবে এই উল্লেখ উক্ত গ্রন্থে পরবর্তীকালের প্রক্ষিপ্তাংশও হতে পারে। এই মত অনুসারে, চক্রপাণি নামে বাংলার নবাবের এক সেনাপতি এখানে বাস করতেন। এটি ছিল শিল্পীদের একটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চল। এই মত অনুসারে, ১৬১০ সালে জনৈক গোবিন্দ ঘোষ চিত্তেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চিতে ডাকাত নামে এই অঞ্চলের এক কুখ্যাত ডাকাত এই মন্দিরে নরবলি দিত। চিতে ডাকাতের নাম অনুসারেও এই অঞ্চলের নামকরণ হওয়া সম্ভব।[2]
১৭১৭ সালে মুঘল সম্রাট ফররুখ শিয়রের কাছ থেকে ইংরেজরা যে ৩৮টি গ্রামের সত্ত্ব লাভ করে, তার মধ্যে চিৎপুর ছিল অন্যতম। পরবর্তীকালে চিৎপুর, টালা, বীরপাড়া ও কালীদহ গ্রামগুলিকে নিয়ে ডিহি চিৎপুর গঠিত হয়।[3]
চিৎপুরের নবাব মহম্মদ রেজা খাঁর একটি বাগানবাড়ি এখানে ছিল। দিল্লির মুঘল সম্রাটদের কাছ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভের পর কয়েক বছর মহম্মদ রেজা খাঁর হাতে বাংলার প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল।[4] তৎকালীন শাসকশক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই চিৎপুরের নবাব পদে বহাল ছিলেন এবং শাসকশক্তি তাকে প্রথম সারির ব্যক্তিত্বের স্থান দিয়েছিল। ড্যানিশ, ফরাসি ও ডাচ গভর্নররা যথাক্রমে শ্রীরামপুর, চন্দননগর ও চুঁচুড়া থেকে কলকাতায় এলে প্রথানুসারে লাটভবনে যাবার আগে চিৎপুরে খানিকক্ষণ অবস্থান করতেন।[5]
সার্কুলার খাল চিৎপুরেই হুগলি নদীতে মিশেছে। ২০শ শতাব্দীতে একটি বিশাল লক অ্যান্ড টাইডাল বেসিন এই খালের মুখে নির্মিত হয়।[4]
এন্টালি, মানিকতলা, বেলগাছিয়া, উল্টোডাঙ্গা, চিৎপুর, কাশীপুর, বেনিয়াপুকুরের অংশবিশেষ, বালিগঞ্জ, ওয়াটগঞ্জ, একবালপুর এবং গার্ডেনরিচ ও টালিগঞ্জের অংশবিশেষ ১৮৮৮ সালে কলকাতা পৌরসংস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়।[6]
রবীন্দ্র সরণি, পূর্বনাম চিৎপুর রোড, ছিল এক জনপ্রিয় তীর্থপথ। এই পথের ধারে অনেক ধর্মশালা ও দোকান-বাজার ছিল। তাই এই রাস্তাটিকে ঘিরে দ্রুত জনবসতি গড়ে ওঠে, এখানকার মুরগির বাজার ‘মুরগিহাটা’, একটি ছোটো নালার উপর দুটি সাঁকো ‘জোড়াসাঁকো’, মাংসের বাজার ‘কসাইটোলা’ ও মৃৎশিল্পীদের বসতি অঞ্চলটি ‘কুমারটুলি’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে এই কুমারটুলি অঞ্চলের শিল্পীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা মেটাতে মাটির মূর্তি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ১৭৫০-এর দশকে গোবিন্দপুরে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণের কাজ শুরু হলে উক্ত অঞ্চলের অধিবাসীরা উত্তর কলকাতায় চলে আসেন।[2]
চিৎপুর রোড ছিল কলকাতার প্রাচীনতম রাস্তা। ধনীদের পাশাপাশি এই অঞ্চলে বহু সাধারণ ব্যবসায়ীর বাস ছিল। বাংলা পঞ্জিকা এখানে ছাপা হত। এটিই ছিল বটতলা বইবাজারের কেন্দ্র। চিৎপুর রোডের সঙ্গে যুক্ত অনেক কিছুই কলকাতার বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল – পান, আড্ডা, যাত্রা ও বিবাহ উৎসবে ‘হি ইজ আ জলি গুড ফেলো’ গাওয়া ব্রাস ব্যান্ডের কেন্দ্র ছিল এই রাস্তা।[7]
লোয়ার চিৎপুর রোডের একটি অংশ দিল্লির চাঁদনি চকের সমতুল্য এলাকা ছিল। এখানেই ১৯২৬ সালে নাখোদা মসজিদ নির্মিত হয়। নবাবদের সর্বশেষ অবশিষ্টাংশ চিৎপুর রোডেই পাওয়া যেত।[8] এই রাস্তাতেই রামমোহন রায় ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই পরে আদি ব্রাহ্মসমাজে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পর এই রাস্তাটি এখানকার বিশিষ্টতম বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে নামাঙ্কিত হয়ে "রবীন্দ্র সরণি" নামে পরিচিত হয়। কলকাতার বিভিন্ন জাতি ও ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ এই রাস্তার বাসিন্দা।[2]
ঠাকুর পরিবারের আদি বাসভবন তথা অধুনা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো শিক্ষাপ্রাঙ্গন ‘জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি’ এই রাস্তার ধারেই অবস্থিত।
১৮৭৬ সালে কলকাতার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিকে একটি একক শহরতলি পৌরসভার অধীনে আনা হয়। ১৮৯৯ সালে শহরতলি এলাকাকে ভেঙে "কাশীপুর ও চিৎপুর শহরতলি পৌরসভা" গঠিত হয়। ১৯৩১ সালে এটি কলকাতার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়।[9] চিৎপুর এখন কলকাতা পৌরসংস্থার ৬ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এই এলাকার পশ্চিম দিকে হুগলি নদী এবং অন্য তিন দিকে রয়েছে কাশীপুর, সিঁথি, পাইকপাড়া, বেলগাছিয়া ও বাগবাজার এলাকা।[10] হুগলি নদীর পশ্চিমে হাওড়া শহরের সালকিয়া অবস্থিত।
চিৎপুর থানা কলকাতা পুলিশের উত্তর ও উত্তর শহরতলি বিভাগের অধীনস্থ।
চিৎপুরে কলকাতা রেলওয়ে স্টেশন অবস্থিত। এটি কলকাতার চতুর্থ ও সাম্প্রতিকতম যাত্রীবাহী ট্রেনের টার্মিনাল স্টেশন। কলকাতার প্রথম দুটি টার্মিনাল স্টেশন হাওড়া ও শিয়ালদহ এক শতাব্দীরও আগে নির্মিত হয়েছিল। এই দুই স্টেশনের যাত্রীর চাপ কমাতে কলকাতা স্টেশন স্থাপিত হয়েছে।[11] কলকাতার তৃতীয় স্টেশন শালিমার দক্ষিণ পূর্ব রেলের অধীনস্থ এবং হাওড়া জেলায় অবস্থিত হওয়ায় কলকাতার নগরকেন্দ্র থেকে অনেকটাই দূরে।[12] চিৎপুর এর আগে এক শতাব্দীকাল রেলের একটি ইয়ার্ড ছিল। নতুন টার্মিনাল কোথায় হওয়া উচিত তা নিয়ে বিস্তর চিন্তাভাবনার পর শহরকেন্দ্র থেকে এর নৈকট্যের কারণে ভারতীয় রেল এখানেই টার্মিনাল স্থাপন করে।[11]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.