মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর
বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর (এম এ মঞ্জুর) (জন্ম: ১৯৪০-মৃত্যু: জুন ২, ১৯৮১) ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সুযোগ্য সেনাপতি। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা যিনি সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সাতটি সাব-সেক্টর নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন।[1] ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের সূত্রে একটি ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুতে দায়েরকৃত খুনের মামলা ১৯৯৫ থেকে তদন্তাধীন রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকারী হিসাবে চিহ্নিত করার লক্ষ্য নিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল এরশাদের সরাসরি নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।[2]
মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর (এম এ মঞ্জুর) | |
---|---|
জন্ম | ১৯৪০ কুমিল্লা, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | জুন ২, ১৯৮১ চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ |
পেশা | মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সালের পূর্বে) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ (১৯৭১ সালের পর) |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | বীর উত্তম |
দাম্পত্যসঙ্গী | রানা ইয়াসমিন মঞ্জুর |
সন্তান | জোহেব মঞ্জুর, শাফকাত মুহাম্মদ মঞ্জুর, রুবানা মঞ্জুর, কারিশমা মঞ্জুর |
এম এ মঞ্জুর ১৯৪০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার গুপিনাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার কামালপুর গ্রামে। অন্যান্য ভাই-বোনদের মতো ছোটবেলা থেকেই এম এ মঞ্জুর ছিলেন মেধাবী। তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় কলকাতায়। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকায় এসে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি পাঞ্জাবের সারগোদা পাবলিক স্কুল থেকে সিনিয়র ক্যাম্বিজ এবং ১৯৫৬ সালে আইএসসি পাস করেন।
এম এ মঞ্জুর ১৯৫৭ সালে তিনি কাকুল সামরিক একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সামরিক একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় সিএসএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সিএসপি অফিসার হয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে কানাডার স্টাফ কলেজ থেকে পিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন্ড পদে যোগদান করেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানে আটক অনেক বাঙালি অফিসার যুদ্ধে যোগদানের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এসময় এম এ মঞ্জুর শিয়ালকোটে 'ব্রিগেড মেজর' হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিযুক্ত ছিলেন শিয়ালকোটের চতুর্দশ প্যারা ব্রিগেডে। ২৬ জুলাই রাত আটটার দিকে পরিবারসহ এবং আরদালি আলমগীরসহ অন্যরা পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশের) উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। ২৭ জুলাই এই দলটি দিল্লি পৌঁছে। ৭ আগস্ট এম এ মঞ্জুর মুজিবনগর পৌঁছেন। ১১ আগস্ট মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে তাকে ৮নং সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়।[3] ৮নং সেক্টরের আওতায় ছিল কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা। পরে বরিশাল ও পটুয়াখালীকে এই সেক্টর থেকে বাদ দেয়া হয়। এই সেক্টরে কুষ্টিয়ার উত্তর থেকে খুলনার দক্ষিণাংশ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ মাইল সীমান্ত ছিল। সেক্টরের সৈন্য সংখ্যা ছিল দুই হাজার। গেরিলা বাহিনীর সদস্য ছিল প্রায় সাত হাজার। সাতটি সাব-সেক্টরের সমন্বয়ে গঠিত এই সেক্টরের সদরদপ্তর বেনাপোলে থাকলেও কার্যত সদরদপ্তরের একটা বিরাট অংশ ভারতের কল্যাণী শহরে ছিল।[4]
স্বাধীনতার পর এম এ মঞ্জুর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। সে সময় তিনি যশোরে ৫৫ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৩ সালে তিনি নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে সামরিক উপদেষ্টা হিসাবে যোগ দেন। বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা হত্যা এবং ১৯৭৫ সালের নভেম্বরের অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুথানের পর ১৯৭৫ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) পদে নিয়োগ পান। চট্টগ্রামে সেনাবহিনীর ২৪তম ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসাবে নিযুক্ত হন ১৯৭৭ সালের শেষ দিকে। ১৯৮১ সালের ২৯ মে পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন।
মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারকার্য চলে দীর্ঘকাল। তার মৃত্যু হয়েছিল ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে, আর মামলা দায়ের করা হয় ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে। মৃত্যুর ১৪ বছর পর ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন মঞ্জুরের ভাই। সার্বিক বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার রায়ের দিন ধার্য করা হয়। সরকার এ সময় বিচারক হোসনে আরা আকতারকে পরিবর্তন করে। নতুন বিচারক ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ খন্দকার হাসান মাহমুদ ফিরোজ রায় দেয়ার আগে মামলার যুক্তিতর্ক নতুন করে শোনার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার এ মামলার প্রধান আসামি সাবেক সেনাশাসক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপস্থিতিতে এই হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত করে ২২ এপ্রিল ২০১৪ তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে নির্দেশ প্রদান করে আদালত। এই দিন যুক্তিতর্কের কথা ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান খান রচি কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পুনঃতদন্তের আবেদন করলে আদালত তা গ্রহণ করে। এসময় এরশাদের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম এই আবেদনের বিরোধিতা করেছিলেন।[5] উল্লেখ্য যে এ সময় বিদেশি সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ ২৩-২৫ ফ্রেব্রুয়ারি তিন দিন ব্যাপী প্রকাশিত তদন্তমূলক ধারাবাহিক সংবাদ প্রতিবেদনে এরশাদ এবং একজন অজ্ঞাতনামা উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাকে মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে পুন:তদন্ত অথবা উচ্চতর আদালতে পুন:বিচারের সুপারিশ করেন।[6]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.