মুসৌরি
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মুসৌরি (হিন্দি: मसूरी, প্রতিবর্ণীকৃত: মাসূরী) হলো ভারতের উত্তরাংশে অবস্থিত উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দেরাদুন জেলার একটি শৈলশহর ও পৌরসভা। শহরটি রাজ্যসদর দেরাদুন থেকে ৩৫ কিলোমিটার (২২ মা) উত্তরে এবং রাজধানী দিল্লি থেকে ২৯০ কিমি (১৮০ মা) উত্তরপূর্বে অবস্থিত। শৈলশহরটি হিমালয় পর্বতমালার গাড়োয়াল বিভাগের পর্বত পাদদেশে রয়েছে। পার্শ্ববর্তী ল্যান্ডর সেনানিবাস এবং তৎসংলগ্ন বার্লোগঞ্জ ঐ ঝড়িপানি শহরাঞ্চলগুলিকে 'বৃৃৃৃহত্তর মুসৌরী'র অংশ বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। মুসৌরীর ডাক সূচক সংখ্যা হলো ২৪৮১৭৯।[2]
মুসৌরি मसूरी | |
---|---|
শৈলশহর | |
ডাকনাম: পর্বতের রানি | |
ভারত তথা উত্তরাখণ্ডে মুসৌরির অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ৩০.৪৫° উত্তর ৭৮.০৮° পূর্ব | |
রাষ্ট্র | ভারত |
রাজ্য | উত্তরাখণ্ড |
জেলা | দেরাদুন জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ৬৪.৭৫ বর্গকিমি (২৫.০০ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ১,৮৮০ মিটার (৬,১৭০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৩০,১১৮ |
• জনঘনত্ব | ৪৭০/বর্গকিমি (১,২০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• দাপ্তরিক | হিন্দি[1] |
• অন্যান্য | গাড়োয়ালি, ইংরাজী |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+০৫:৩০) |
পিন | ২৪৮১৭৯ |
যানবাহন নিবন্ধন | ইউকে ০৭, ইউকে ০৯ |
মুসৌরী শৈলশহরটি সমুদ্রতল থেকে মোটামুটিভাবে ১,৮৮০ মিটার (৬,১৭০ ফু) উচ্চতায় অবস্থিত। এর উত্তর-পূর্ব দিক বরাবর রয়েছে হিমালয় তুষার শৃৃৃঙ্গ, দক্ষিণে রয়েছে দুন উপত্যকা এবং শিবালিক পর্বতশ্রেণি। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অবস্থিত উচ্চতম চূড়াগুলির মধ্যে ল্যান্ডরের লাল টিব্বা, যার উচ্চতা প্রায় ২,২৭৫ মিটার (৭,৪৬৪ ফু)। জনপ্রিয়তা ও মনোরম দৃৃশ্যের জন্য মুসৌরীকে "পর্বতের রাণী" আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।[3][4]
১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে প্রথম মুসৌরীতে বিয়ার ব্রিওয়ারি প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়।[5] ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির জনপ্রিয়তার কারণে দেশে ২২টি ব্রিওয়ারি প্রতিষ্ঠান খোলা হয় যা সর্বমোট বাৎসরিক ৬ মিলিয়ন গ্যালন প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়।
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে শীত থেকে পরবর্তী বছর গ্রীষ্মকালের মধ্যে জনসংখ্যা ৬৪৬১ থেকে প্রায় ১৫,০০০ অতিক্রম করে। শুরুরদিকে ৫৮ মাইল (৯৩ কিমি) দীর্ঘ রাস্তার মাধ্যমে সাহারানপুর থেকে মুসৌরীতে প্রথম উন্নত পরিবহন গড়ে তোলা হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুরদিকেই দেরাদুনে রেলওয়ে স্টেশন তৈরী হওয়ার সাথে সাথে মুসৌরীর পরিবহন ব্যবস্থা আরো সহজ হয়।[6]
মনে করা হয়, মুসৌরী নামটি ঐ স্থানে অধিক ফলনশীল মসুরী মানক গাছের কারণে হয়েছে। স্থানীয়রা অনেকে এটিকে "মনসূরী" বলেও অভিহিত করে থাকেন।[7]
২০১১ সালের ভারতের জনগণনা অনুসারে মুসৌরীর মোট জনসংখ্যা ৩০১১৮ জন, যার মধ্যে ১৬৬২৩ জন পুরুষ এবং ১৩৪৯৫ জন নারী। ছয় বৎসর অনূর্ধ্ব শিশু সংখ্যা ২৬৭৩ জন যা জনসংখ্যার ৮.৮৮ শতাংশ। মোট ছয় বৎসরোর্ধ্ব জনসংখ্যা ২৪৬১৫ জন তথা ৮৯.৬৯ শতাংশ সাক্ষর।[8]
মুসৌরীর অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্প যথেষ্ট বড়ো ভূমিকা রাখে।
হরক চাঁদ নহাতা পরিবারের মালিকানাধীন ৩০০ একর (১২০ হেক্টর)-এর অধিক ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট জমিটি আগে "চিল্ডার্স লজ" নামে পরিচিত ছিলো। লাল টিব্বার নিকটে অবস্থিত এটিই মুসৌরীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। পর্যটন দপ্তর থেকে ৫ কিমি (৩ মা) দূরে অবস্থিত এই এস্টেটটিতে পাহাড়ী দৃশ্য দেখার বিশেষ সুবিধা আছে।
সমুদ্রতল থেকে ২,০২৪ মি (৬,৬৪০ ফু) উচ্চতায় ও ৩০.৪৯৫৩° উত্তর ৭৮.০৭৪৫° পূর্ব স্থানাঙ্কে অবস্থিত গানহিল মুসৌরীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ।
কেম্পটি ফল্স রোডের ওপর মুসৌরী শহর থেকে ১৫ কিমি (৯.৩ মা) দূরত্বে অবস্থিত উত্তরাখণ্ডের অন্যতম বিখ্যাত কেম্পটি জলপ্রপাত। এই স্থানটি সমুদ্রপৃৃষ্ঠ থেকে ১,৩৬৪ মি (৪,৪৭৫ ফু) উচ্চতায় ৭৮॰ পূর্ব ও ৩০॰ উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত। কেম্পটি মানের উৎপত্তি "ক্যাম্প-টি" থেকে এসেছে বলে অনুমান করা হয়। ঔপনিবেশিককালে এই চা ব্রিটিশদের বিভিন্ন সভায় পানীয় হিসাবে ব্যবহার করা হতো। এই জলপ্রপাতটি মুসৌরীর অন্যতম সন্তরণ ও মাছ ধরার জায়গা বলেও পর্যটকদের কাছে পরিচিত।[9]
কেম্পটি ফল্স রোডের ওপর মুসৌরী থেকে ৫ কিমি (৩ মা) উত্তর দিকে মিস্ট হ্রদটি অবস্থিত। এখান থেকেই কেম্পটি নদী একাধিক ধারায় ছোট ছোট জলপ্রপাত গঠন করেছে। লেক মিস্টের নিকট অবস্থিত রিসর্টগুলিতে বাসস্থান, আহারাদি ও নৌবাইচের সুবন্দোবস্ত রয়েছে।
মুসৌরীর পৌরউদ্যানটিতে একটি কৃত্রিম ছোটো ঝিল ও সেখানে ব্যাডেল নৌকার বন্দোবস্ত আছে। এটি সড়ক পথে মূল শহর থেকে ৪ কিমি (২.৫ মা) দূরে অবস্থিত।
নবনির্মিত মুসৌরী হ্রদটি পৌরবোর্ড ও মুসৌরী দেরাদুন উন্নয়ন সমিতির অধীনে নির্মিত। হ্রদটিতে পদচালিত নৌকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও দুন উপত্যকা ও মুসৌরী- দেরাদুন রোডের ওপর নিকটবর্তী গ্রামগুলির মনোরম দৃশ্যের জন্য হ্রদটি পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
মুসৌরী-দেরাদুন রোডের ওপর মুসৌরী থেকে ৭ কিমি (৪.৫ মা) দূরে ভট্টগ্রামে অবস্থিত ভট্ট জলপ্রপাত।
মুসৌরী থেকে ৮.৫ কিমি (৫.৫ মা) দূরত্বে মুসৌরী- ঝড়িপানি রোডের ওপর ঝড়িপানি জলপ্রপাত অবস্থিত। পাহাড়ী রাস্তায় পায়ে হেঁটে ১.৫ কিমি (১ মা) অতিক্রম করেই এখানে যাওয়া যায়।
মুসৌরী থেকে ৬ কিমি (৩.৫ মা) দূরত্বে কার্ট ম্যাকেঞ্জি রোডে দেরাদুনগামী রোডের ওপর নাগদেবতা তথা শিবকে উদ্দেশ্য করে একটি পুরানো মন্দির রয়েছে। পৌরসভা থেকে এই মন্দিরে যাবার সুবন্দোবস্ত রয়েছে এবং রাস্তা বরাবর দুন উপত্যকার দৃৃৃশ্য অপরূপ।
সমুদ্রতল থেকে ২,২৪০ মি (৭,৩৫০ ফু) উচ্চতায় অবস্থিত জ্বালাদেবীর মন্দিরটি মুসৌরী থেকে ৯ কিমি (৫.৫ মা) পশ্চিমে অবস্থিত। এটি বেনোগ পর্বতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত। এখানে দেবী দুর্গার একটি মূর্তি রয়েছে। মন্দিরটিতে পরিবহনের সুবন্দোবস্ত না থাকলেও মোটর পরিষেবা রয়েছে। এখান থেকে অগলার নদী উপত্যকাটি দৃশ্যমান।
শহরের লাইব্রেরী পয়েন্ট থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বেনোগ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যটি বহু পর্যটককে আকর্ষণ করে। একটি পুরানো দেবদারু গাছ, পাইন গাছের সারি রয়েছে এখানে। প্রচুর ওষধি গাছের চাষ হওয়ায় এটি আঞ্চলিক গবেষণার কেন্দ্রও হয়ে উঠেছে। অভয়ারণ্যটিতে হোয়াইট ক্যাপ্ড ওয়াটার রেডস্টার্ট, রেড বিল্ড ব্লু ম্যাগপাই, চিতাবাঘ, হরিণ, ভাল্লুক ও হিমালয়ান ছাগল রয়েছে।[10]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.