Loading AI tools
স্থিরচিত্র বা আলোকচিত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভি-জে ডে ইন টাইমস স্কয়ার আলোকচিত্র শিল্পী আলফ্রেড এসেনস্টেইড এর ধারণ করা একটি আলোকচিত্র বা ছবি। আলোকচিত্রটি ধারণ করা হয়েছিল ১৪ আগস্ট, ১৯৪৫ সালে নিউ ইয়র্ক শহরের টাইমস স্কয়ার থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের বিরুদ্ধে জয় লাভ করে এবং সকল শ্রেণীর মানুষ জয় উদ্যাপন করার জন্য টাইম স্কয়ারে উপস্থিত হয়। ছবিটিতে একজন আমেরিকান নাবিক সাদা পোশাক পরিহিত একজন নারীকে চুম্বন করছেন। লেইকা (Leica IIIa) ক্যামেরা দ্বারা ছবিটি ধারণ করা হয়েছিল এবং ধারণ করার এক সপ্তাহ পর বিজয় উদ্যাপনের আরো অনেক ছবির সাথে লাইফ ম্যাগাজিনের দ্বাদশ পৃষ্ঠায় বিজয় শিরোনামে ছাপা হয়েছিল। ম্যাগাজিনের দুই পৃষ্ঠা জুড়ে এই ছবিটির সাথে আরো ভিন্ন ভিন্ন তিনটি চুম্বন দৃশ্য ছাপা হয়েছিল যেগুলো ওয়াশিংটন, ক্যানসাস ও মায়ামি থেকে ধারণ করা হয়েছিল। সাধারনত যুদ্ধের সময় সংবাদমাধ্যমের আলোকচিত্রীরা সৈন্যদেরকে চুম্বনরত অবস্থায় পোজ দিতে উৎসাহিত করেন কারণ এটি আলোকচিত্র ধারণ করার একটি জনপ্রিয় পন্থা, কিন্তু এসনস্টেইড টাইম স্কয়ারের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যাপনের চিত্র ধারণ করছিলেন। যখন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস. ট্রুম্যান সকাল ৭.০০ টায় জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সমাপ্তি ও বিজয় ঘোষণা করেন তখন মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় বের হয়ে উদ্যাপন শুরু করে। এই খবরের সাথে সাথে বিজয় আনন্দ যুক্তরাষ্ট্রের সব জায়গায় ছড়িয়ে পরে।
আলোকচিত্রটি বিভিন্ন নামে পরিচিত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ভি-জে ডে ইন টাইম্স স্কয়ার, ভি-ডে এবং দ্য কিস।[1][2]
সরকারিভাবে বিজয় উদ্যাপনের তারিখ হল ২ সেপ্টেম্বর কারণ এই দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে জাপান আত্মসমর্পণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।[3] টাইম স্কয়ারের জনস্রোত আস্তে আস্তে বাড়ছিল এবং অনুষ্ঠান দ্রুত পরীবর্তন হচ্ছিল বলে এসেনস্টেইড ছবির ব্যক্তি দুজনের নাম ও অন্যান্য তথ্য নেওয়ার সময় পাননি। আলোকচিত্রটিতে দুজনের কারো চেহারাই স্পষ্ট দেখা যায়না এবং পরবর্তীতে অনেকেই নিজেকে ছবির ব্যক্তি হিসেবে দাবী করে। আলোকচিত্রটি ধারণ করা হয়েছিল দক্ষিণের ৪৫তম স্ট্রিট থেকে উত্তরমুখী হয়ে বর্তমানে যেখানে ব্রডওয়ে ও সেভেন্থ এভিনিউ। ছবিটি ধারণ করার পরপরই সেখানে একদল মানুষ এসে হাজির হন ও পুরু টাইম্স স্কয়ার জনসমুদ্রে পরিনত হয়।
দুটি ভিন্ন বইয়ে আলফ্রেড এসেনস্টেইড আলোকচিত্রটি সম্পর্কে দুটি প্রায় একই উক্তি করেন। উক্তিতে তিনি কীভাবে ছবিটি ধারণ করেছিলেন তার বর্ণনা দিয়েছেন।
জাপানের বিরুদ্ধে বিজয়ের দিন টাইম স্কয়ারে আমি দেখলাম, এক নাবিক রাস্তা দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে এবং রাস্তার পাশে যে মহিলাকেই পাচ্ছে আঁকড়ে ধরছে। মহিলাটি হোক মোটা, বৃদ্ধা, যুবতী, লম্বা, স্বাস্থ্যহীন তাকে কোন কিছুতেই আটকাতে পারছেনা। আমি দৌড়ে তার সামনে গেলাম ও আমার লাইকা ক্যামেরা দিয়ে ছবি ধারণ করা শুরু করলাম কিন্তু ধারণকৃত কোন ছবিই আমাকে সন্তোষ্ঠ করতে পারলনা। তারপর হঠাৎ ক্যামেরার ফ্লাশে সাদা কিছু ধরা পড়ল। আমি ঘুরে দাড়ালাম এবং নাবিকের নার্সকে চুমু খাওয়ার মুহুর্তটি ধারণ করলাম। যদি নারীটি কালো কোন পোশাক পড়ে আসত তাহলে আমি কখনোই চিত্রটি ধারণ করতাম না। আবার যদি দুজনেই সাদা পোশাক পড়ে আসত তাহলেও ধারণ করতাম না। আমি কয়েক সেকেন্ডেই দৃশ্যটির চারটি চিত্র ধারণ করেছিলাম। তার মধ্যে একটি সবদিক থেকে ভালো হয়েছিল ও অপর তিনটি কোন না কোন দিক থেকে খারাপ এসেছিল। মানুষ আমাকে বলে, যখন আমি মৃত্যুবরণ করব তখন তারা এই আলোকচিত্রটি মনে রাখবে।
জাপানের বিরুদ্ধে বিজয়ের দিন আমি ভিড়ের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম এবং ছবি ধা্রণের জন্য দৃশ্য খুঁজছিলাম। আমি দেখলাম এক নাবিক যুবতী ও বৃদ্ধা সব নারীকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করছে। তারপর আমি এক নার্সকে দেখতে পাই ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। এরপর আমি যেমনটি আশা করছিলাম, নাবিক নার্সের কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করল। এখন এই নারী যদি নার্স না হত, সে যদি কালো পোশাক পরিহিত থাকত আমি চিত্রটি ধারণ করতাম না। নার্সের সাদা পোশাক ও নাবিকের কালো পোশাক ছবিটিকে আরো প্রানবন্ত করে তুলেছিল।
আলোকচিত্রটির কপিরাইট সত্ত্বের আবেদন সফল হওয়ার পর এসেনস্টেইড খুবই সতর্কতার সাথে এটি ব্যবহারের অনুমতি দিতেন। তিনি কিছু সংখ্যক ছবি পুনরায় ছাপানোর অনুমতি দিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে তার মৃত্যুর পর গ্যাটি জাদুঘর লাইফ সংগ্রহশালার ভিত্তিতে এর কপিরাইট সত্ত্ব পায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর আলোকচিত্র শিল্পী ভিক্টর জোরগেনসেন একই দৃশ্যের অপর একটি আলোকচিত্র ধারণ করেন যা পরের দিন নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।[4] জোরগেনসেন তার ধারণ করা আলোকচিত্রটির নাম দেন কিসিং দ্য ওয়ার গুডবাই। এই ছবিটিতে স্থানটি টাইম স্কয়ার না অন্য কোন জায়গা তা স্পষ্ট বোঝা যায় না। এটি অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ছবির প্রধান বিষয় বস্তুর সাথে কিছু মিল রয়েছে।
এসেনস্টেইডের আলোকচিত্রটির কপিরাইট সত্ত্ব থাকলেও নৌবাহিনীর সদস্যের ধারণ করা এই আলোকচিত্রটি পাবলিক ডোমেইনে প্রকাশ করা হয় কারণ ফেডারেল সরকারের চাকুরীজীবি এই চিত্রটি সরকারি কর্তব্য পালনের সময় ধারণ করেছিলেন।
এডিথ সেইন নামে এক নারী ১৯৭০ এর দশকে এসেনস্টেইডের কাছে চিঠি লিখে নিজেকে ছবিটির নারী বলে দাবি করেন।[5] আগস্ট ১৯৪৫ সালে সেইন নিউইয়র্ক শহরের ডক্টর’স হাসপাতালে সেবিকা হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি ও তার এক বন্ধু মিলে রেডিওতে শুনতে পান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। এরপর তারা টাইম স্কয়ারে যান যেখানে সকলে বিজয় উদ্যাপন করছিল। যখনই তিনি ফুটপাত থেকে রাস্তায় নেমে আসেন তখনই নাবিকটি তাকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতে শুরু করে। সেইন বলেন, “আমি প্রথমে বাঁধা দেওয়ার কথা চিন্তা করেছিলাম পরবর্তীকালে মনে হল, সে তো আমার জন্যই যুদ্ধ করেছে।” আলোকচিত্রটির ধারণের অনেক বছর পর সেইন এই দাবি করেন। এসেনস্টেইড লাইফ ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষকে জানান, এডিথ সেইন নামে এক মহিলা নিজেকে ছবিটির নারী বলে দাবি করেছে।
আলোকচিত্রের নারী বলে দাবি করার পর আগস্ট ১৯৮০ সালের ইস্যুতে লাইফ ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছবির নাবিকে জনসম্মুখে আসার আহবান করেন। আক্টোবর ১৯৮০ সালের ইস্যুতে সম্পাদক লেখেন এগারো জন পুরুষ ও তিন জন নারী নিজেদেরকে আলোকচিত্রের ব্যক্তি বলে দাবি করেছে। নারী চুম্বনকারী দাবি করা এডিথ সেইনের সাথে গ্রিটা ফ্রিডম্যান ও বারবারা সকল নামের দুজন মহিলা নিজেদেরকে চুম্বনকারী বলে দাবি করে।
২০ জুন, ২০১০ সালে সেইন ৯১ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[6] এপ্রিল ২০১২ ইস্যুতে একটি বই বের হয় যেখানে লেখক জর্জ গাল্ডোরিসি ও লরেন্সি ভেরিয়া মন্তব্য করেন, নারী চুম্বনকারী কখনো সেইন হতে পারে না কারণ তার উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি যা আলোকচিত্রের নারীর চেয়ে কমই মনে হয়।[7] চুম্বনকারী নাবিক দাবি করেছিলেন, ডোনাল্ড বোনসেক, জন এডমনসন, ওয়ালসি সি. ফাউলার, ক্লেরেন্সি হাডিং, ওয়াকার ইরভিং, জেমস কার্নি, মার্ভিন কিংসবার্গ, আর্থার লিস্ক, জর্জ মেনডুনকা, জ্যাক রাসেল এবং বিল সুইসগুড।[8]
২০০৫ সালের আগস্টে নাভেল ওয়ার কলেজের একদল স্বেচ্ছাসেবক নিউপুর্ট, রোডি আইল্যান্ডের জর্জ মেনডুনকাকে পুরুষ চুম্বনকারী হিসেবে সনাক্ত করেন। তাকে সনাক্ত করার কারণ, তার শরীরের ক্ষতচিহ্ন ও উল্কি, ছবির ক্ষতচিহ্ন ও উল্কির সাথে মিলে যায়।[5] স্বেচ্ছাসেবকরা পরবর্তীতে তাদের তথ্য উপাত্ত মিতশুবিসি ইলেকট্রিক রিচার্স ল্যাবরেটরিসের কাছে হস্তান্তর করে অধিক গবেষণার জন্য। তারাও আলোকচিত্রটি গবেষণা করে ক্ষতচিহ্ন ও উল্কির মিল খুজেঁ পান। গবেষণাগারে তাদের সাথে গবেষণা করেন, আলোকচিত্র বিশেষঞ্গ, ফটোগ্রাফিক স্টাডিসের অধ্যাপক ও ইয়েলা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ আর্টের সাবেক ডিন রিচার্ড এম. বেনসন। বেনসন বলেন, এটা আমার মতামত যে, “জর্জ মেকডুনাল্ডই এসেনস্টেইডের সেই বিখ্যাত আলোকচিত্রের চুম্বনকারী নাবিক।”[5]
ঘটনার দিন মেকডুনকা রেডিও সিটি মিউজিক হলে তার বাগদত্তা রিতাকে নিয়ে একটি সিনেমা দেখছিল।[5] হলের দরজা খোলার পর লোকজন যুদ্ধ শেষে, যুদ্ধ শেষ বলে চিৎকার করছিল। জর্জ ও রিতা উদ্যাপনে অংশ নেওয়ার জন্য রাস্তার পাশের বারে ঢুকেছিল কিন্তু বারে জায়গা না থাকায় তার রাস্তায় হাঁটার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর জর্জ দেখতে পান রাস্তার পাশ দিয়ে সাদা পোশাক পরিহিত একজন নারী হেঁটে যাচ্ছে, তখন জর্জ নারীটিকে জড়িয়ে ধরেন ও চুম্বন করেন। জর্জ বলেন, “আসলে আমি সেদিন একটু মাতাল ছিলাম, এবং মহিলাটি ছিল একজন সেবিকা। তিনি আরো বলেন, এসেনস্টেইডের ধারণ করা চারটি আলোকচিত্রের একটিতে পেছনের অংশে রিতাকে দেখা গেছে।”
১৯৮৭ সালে জর্জ মেনডুনকা রোডি আইল্যান্ড কোর্টে টাইম ইন. এর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, টাইম ও লাইফ দুটুই তার ছবি তার অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার করে আইন ভঙ্গ করেছে। টাইম ইন. মামলা ফেডারেল আদালতে উঠালে মেনডুনকা তার মামলা তুলে নেন।[9] আলোকচিত্রের চুম্বনকারী কারা তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকে। মেনডুনকা, ফ্রেইডম্যান ও সেইন দাবি করার পর থেকেই লাইফ, পিবিএস, এনবিসি ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে প্রচুর সাক্ষাৎকার দেন। কিছু স্বাধীন আলোকচিত্র বিশেষঞ্গ মেনডুনকা ও ফ্রেইডম্যানকেই আলোকচিত্রের সম্ভাব্য চুম্বকারী নাবিক ও সেবিকা হিসেবে রায় দেন। অবশ্য মেনডুনকা ফ্রেইডম্যানকেই চুম্বনকারী নারী হিসেবে রায় দেন।
লাইফের অক্টোবর, ১৯৮০ সালের ইস্যুতে গ্লেইন ম্যাকডাফি অথবা কার্ল মাসকারেল্লোর কথা জানা যায়নি।[10] তারা অনেক পরে এই দাবি উত্থাপন করেন। কার্ল মাসকারেল্লো নিউ উয়র্ক শহরের পুলিস প্রশাসনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যিনি বর্তমানে ফ্লোরিডার প্লেনটেশনে বসবাস করছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি নিজেকে আলোকচিত্রের চুম্বনকারী নাবিক হিসেবে দাবি করেন। তিনি দাবি করেন ১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট তিনি টাইমস স্কয়ারে ছিলেন এবং কয়েকজন নারীকে চুম্বন করেন। মাসকারেল্লোর মা মাসকারেল্লোর হাতের একটি জন্মদাগ দেখিয়ে তাকে সনাক্ত করেন। এডিথ সেইন প্রথমদিকে বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি মাসকারেল্লোর দাবিই সঠিক। কিন্তু ২০০৫ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক সাক্ষাতকারে সেইন বলেন, “আমি অস্বীকার করতে পারি না যে সে ছিলনা, এটা সঠিক ভাবে বলাও সম্ভব না।” মাসকারেল্লো পরবর্তীতে প্রায়ই বলতেন তিনি ঘটনার দিন মাতাল ছিলেন এজন্য তার টাইমস স্কয়ারের ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত কোন ধারণা নেই। তিনি মন্তব্য করেন, তার মা আলোকচিত্রটি দেখার পর বলেছিলেন এই নাবিক হল তিনি ও মাসকারেল্লো তার মায়ের কথা বিশ্বাস করেছিলেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.