ভক্তি
হিন্দুধর্মে একটি বিশেষ রীতি / From Wikipedia, the free encyclopedia
ভক্তি (সংস্কৃত: भक्ति) হিন্দুধর্মে উপাসনা তথা আরাধনার একটি বিশেষ রীতি । পূজনীয় দেবতা বা ব্যক্তির প্রতি বিশেষ অনুরাগ বা প্রেমকেই ভক্তি বলা হয়।[1] ঈশ্বরের নিকট সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের নামই ভক্তি।[2] ভক্তির পথে যিনি ঈশ্বরোপাসনা করেন, তাকে ভক্ত নামে[3] এবং ভক্তিবাদী দর্শনকে ভক্তিমার্গ নামে অভিহিত করা হয়।[4][5] ভক্তিবাদ হিন্দুধর্মের একাধিক শাখাসম্প্রদায়ের মূলভিত্তি। বিভিন্ন সম্প্রদায় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভক্তিবাদের ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে।[6]
ভক্তিবাদ ঈশ্বরপ্রেমকে প্রথা ও আচার-অনুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়। ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু, পিতামাতা-সন্তান, ও প্রভু-ভৃত্য ইত্যাদি মানবিক সম্পর্ক ভক্তিবাদের প্রধান স্তম্ভ।[7] ঈশ্বরের কোনো নির্দিষ্ট রূপ,[8] ঈশ্বরের নিরাকার রূপ,[9] বা গুরুর প্রতি ভক্তি (গুরুভক্তি) ভক্তিবাদের অঙ্গ।[10][11] হিন্দুধর্মে সম্প্রদায়ভেদে ভক্তিবাদের নির্দিষ্ট রূপ প্রচলিত: শৈবেরা শিব ও শিব-সম্পর্কিত দেবদেবীগণের ভক্ত; বৈষ্ণবেরা বিষ্ণু ও তার অবতারগণের ভক্ত এবং শাক্তেরা মহাশক্তির বিভিন্ন রূপের ভক্ত। তবে কোনো নির্দিষ্ট দেবতার প্রতি ভক্তি থাকলে অন্য কোনো দেবতাকে পূজা করা যাবে না – এমন কোনো বিধান হিন্দুধর্মে নেই।[12]
ভগবদ্গীতা প্রথম ধর্মগ্রন্থ যেখানে "ভক্তি" শব্দটিকে প্রথম ধর্মীয় পথ অর্থে উল্লেখ করা হয়।[13] এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয় ভাগবত পুরাণে।[7] ভক্তি আন্দোলনের কালে দক্ষিণ ভারত থেকে ভক্তিবাদের উত্থান ঘটে। এই ভক্তিবাদের প্রবক্তারা ছিলেন বৈষ্ণব অলবর (খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ থেকে নবম শতাব্দী) ও শৈব নায়নার (খ্রিষ্টীয় পঞ্চম থেকে দশম শতাব্দী) সম্প্রদায়ভুক্ত। ভক্তিবাদ ও ভক্তিবাদী সাহিত্য সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে এঁরাই ছিলেন প্রধান অনুপ্রেরণা। খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে ভক্তি আন্দোলন সমগ্র ভারতেই বিস্তার লাভ করেছিল।[14] ভারতে ভক্তিবাদের প্রভাব অন্যান্য ধর্মগুলির মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।[15][16][17][18] বর্তমানে ভক্তিবাদ ভারতীয় সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ধর্মীয় থেকে ধর্মনিরপেক্ষ – অনেক বিষয়েই আজ ভক্তিবাদের ছায়া সুস্পষ্ট।