ব্রাজাভিল
কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী শহর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী শহর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ব্রাজাভিল (ফরাসি উচ্চারণ: [bʁazavil], কঙ্গো: Kintamo, Nkuna, Kintambo, Ntamo, Mavula, Tandala, Mfwa, Mfua; Teke: M'fa, Mfaa, Mfa, Mfoa[3][4][5][6]) কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। শহরটি কঙ্গো নদীর উত্তর দিকে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী, কিনশাসার বিপরীতে অবস্থিত এবং এটি দেশটির অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র।
ব্রাজাভিল আঞ্চলিক নাম : কিনতামো | |
---|---|
স্থানাঙ্ক: ০৪°১৬′১০″ দক্ষিণ ১৫°১৬′১৭″ পূর্ব | |
দেশ | কঙ্গো প্রজাতন্ত্র |
প্রধান অঞ্চল | ব্রাজাভিল |
প্রতিষ্ঠিত | ১৮৮৩ |
প্রতিষ্ঠাতা | পিয়ের সাবোর্গনিয়ান দে ব্রাৎসা |
সরকার | |
• মেয়র | ডিওডোনে বান্টসিমবা |
আয়তন | |
• মোট | ২৬৩.৯ বর্গকিমি (১০১.৯ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৩২০ মিটার (১,০৫০ ফুট) |
জনসংখ্যা (2015)[1] | |
• মোট | ১৬,৯৬,৩৯২ |
• আনুমানিক (2019) | ২৩,০৮,০০০ |
• জনঘনত্ব | ৬,৪০০/বর্গকিমি (১৭,০০০/বর্গমাইল) |
• দাপ্তরিক ভাষা | ফরাশি |
• জাতীয় ভাষা | কিতুবা এবং লিংগালা বিদেশী ভাষা : সিলাডি (লারি) |
এলাকা কোড | ২৪২ |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৮) | ০.৬৬২[2] মধ্যম · ১২ টির মধ্যে ১ম |
ওয়েবসাইট | www |
শহরটির জনসংখ্যা ১,৮ মিলিয়নের অধিক বলে ধারণা করা যায়, যা দেশটির জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের অপেক্ষা বেশি। প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজের সাথে জড়িত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ১৯৪০-১৯৪২ সাল পর্যন্ত শহরটি মুক্ত ফ্রান্সের রাজধানী হিসেবে ছিল।
২০১৩ সালে, শহরটি ইউনেসকো কর্তৃক একটি “সিটি অব মিউজিক” হিসেবে মনোনীত হয়। তারপর থেকে শহরটি ক্রিয়েটিভ সিটিজ নেটওয়ার্কের একটি সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত আছে।[7]
কঙ্গো নদীর উত্তরে মালেবো জলাশয়ের পাদদেশের একটি বড় অংশ জুড়ে ব্রাজাভিল অবস্থিত। মাবামু নামক প্রশস্থ দ্বীপটি কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভূক্ত।
ব্রাজাভিল আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রায় ৪৭৪ (২৯৫ মাইল) দূরে নিরক্ষরেখার দক্ষিণে অবস্থিত। শহরটি দেশটির অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন একটি কমিউন। জলাশয় বিভাগ কর্তৃক শহরটি ঘিরে রাখা হয়েছে। শহরটি ৩১৭ মিটার (১০৪০ ফুট) উচ্চতায় তুলনামূলক সমভূমির উপর অবস্থিত। কঙ্গো নদীর নিকটে লিভিংসটন জলপ্রপাত নামক অনেকগুলো জলপ্রপাত রয়েছে। আর এই কারণে আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে জলপ্রপাতগুলো পর্যন্ত যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হয়।
গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী, কিনশাসা কঙ্গো নদীর দক্ষিণে ব্রাজাভিলের সরাসরি বিপরীতে অবস্থিত। কঙ্গো নামক এ দুটি দেশকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে কখনো কখনো কঙ্গো প্রজাতন্ত্রকে কঙ্গো-ব্রাজাভিল এবং গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রকে কঙ্গো-কিনাশাসা নামেও অভিহিত করা হয়। কিনশাসার জনসংখ্যা ব্রাজাভিলের জনসংখ্যার পাঁচ গুণের বেশি। পৃথিবীতে শুধুমাত্র এ দুটি রাজধানী শহরই একই নদীর বিপরীত দিকে গড়ে উঠেছে এবং একটি শহর থেকে অন্যটি দৃশ্যমান।[8]
২০১৮ সালের মার্চ মাসে, কঙ্গো নদীর অববাহিকায় অবস্থিত (বেশিরভাগ অংশ গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের অন্তুর্ভূক্ত) অঞ্চল, কিভেত সোথাল এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনায় উন্নতি সাধনে মনযোগ আকর্ষণের লক্ষ্যে ব্রাজাভিল বিবৃতি স্বাক্ষরিত হয়। এটি (কিভেত সোথাল) পৃথিবীর বৃহত্তম সামুদ্রিক পিটভূমি, যা জলাভূমির উপর অবস্থিত একটি বনাঞ্চল। স্থানটি সংরক্ষণ করা শুধু স্থানীয় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বেচেঁ থাকার জন্য নয়, বরং পৃথিবীর জলবায়ুর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পিটভূমিটি পোড়ানো হলে, অনেক বেশি পরিমাণ কার্বন উৎপন্ন হবে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর বৃহত্তম কার্বন উৎস হওয়ায়, পিটভূমিগুলো সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং ইন্দোনেশিয়া বিবৃতিটিতে স্বাক্ষর করে।[9]
আফ্রিকা দখলের লড়াই এর সময়ে যখন ইউরোপীয় দেশগুলো আফ্রিকা মহাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করছিল, সে সময়ে ফরাসি ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য স্থানীয় এনকুনা নামক বিটেক জনগোষ্ঠীকে নিয়ে শহরটি গড়ে তোলে।[10] জন্মসূত্রে ইতালীয় (পরবর্তীতে, ১৮৭৪ সালে তিনি ফরাসি নাগরিকত্ত্ব লাভ করেন) অনুসন্ধানকারী, পিয়ের সাবোর্গনিয়ান দে ব্রাৎসা ১৮৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখে শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন, আর তাই শহরটিতে তার নাম স্মরণীয় রয়েছে।[11][3][10]
স্থানীয় টেকে জনগোষ্ঠীর রাজা, মাকোকো পিয়ের সাবোর্গনিয়ান দে ব্রাৎসা এর সাথে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, ফলে ব্রাজাভিল ফরাসি ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়।[10] বেলজিয়ানদের দখলে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে, ১৮৮০ সালের অক্টোবর মাস থেকে ১৮৮২ সাল পর্যন্ত সেনেগালীয় সার্জেন্ট, মালামিন কামাহা শহরটি নিজের দখলে রাখেন। কঙ্গো নদীর দক্ষিণ দিকে তার বাহিনী সক্রিয়া ছিল। অন্যদিকে, একই সময়ে দ্বিতীয় লিওপোল্ড বেলজিয়ামের অধীনে থাকা কঙ্গোর অঞ্চলগুলো ব্যক্তিগতভাবে শাসন করছিল। কঙ্গো নদীর দক্ষিণ দিকে বেলজীয়দের নির্মিত, লিওপোল্ডভিল (বর্তমান কিনশাসা) এর সাথে প্রতিযোগিমূলক মানসিকতা প্রদর্শন করে ব্রাজাভিল প্রতিষ্ঠার চার বছর পর প্রথমবারের মতো সেখানে বড় আকারের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এক্ষেত্রে ফরাশিরা কঙ্গো নদীর দক্ষিণ দিকে অবস্থিত বেলজীয়দের নির্মান করা কিনশাসার সাথে প্রতিযোগিতামূলকভাবে মানসিকতা প্রকাশ করে।[10]
১৮৮৪ সালের বার্লিন কনফারেন্সে কঙ্গে ফরাশি নিয়ন্ত্রণ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৪ সালে, ব্রাজাভিল ফ্রান্স নিয়ন্ত্রিত কঙ্গোর রাজধানীতে পরিণত হয়।[12] ১৯১০ সালে, ফরাশি উপনিবেশের অধীনে থাকা অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি ফেডারেশন হিসেবে ফরাশি নিরক্ষীয় আফ্রিকা গঠনের পরও ব্রাজাভিল রাজধানী হিসেবেই থাকে।[12] ১৯১০ সাল থেকে ১৯১৫ সালের মধ্যে একটি বিচারালয়, বোংক দু’লাউয়েফ এবং আন্সিটিটু পাস্তো এর সদর দপ্তর সহ শহরটির গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়।[13]
১৯৩৪ সালে, কঙ্গো-মহাসাগর রেলওয়ে চালু হয়, ফলে আটলান্টিক সমুদ্র বন্দর, পোয়াঁত-নোয়ার এর সাথে কঙ্গো নদীর জলপ্রপাতগুলোর বাধা ছাড়াই ব্রাজাভিলের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত। রেলওয়েটির নির্মান কাজে ১৭,০০০ আফ্রিকান এবং ১৯২৮ সালে যারা ফরাশিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তারা জীবন হারান।[14]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে, ব্রাজাভিল সহ সম্পূর্ণ ফরাসি নিরক্ষীয় আফ্রিকা নাৎসিদের পক্ষে থাকা ভিসি ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রের বাহিরে ছিল। ১৯৪০-১৯৪৩ সাল পর্যন্ত শহরটি মুক্ত ফ্রান্সের রাজধানী ছিল।[13] ১৯৪৪ সালে, ব্রাজাভিলে ফরাশি প্রতিরধী বাহিনী এবং ফ্রান্সের অধীনে থাকা আফ্রিকার অঞ্চলগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি সংলাপ আয়জিত হয়। ফলস্বরূপ, ব্রাজাভিল ঘোষণার মাধ্যমে ফ্রান্স এবং ফ্রান্সের অধীনে থাকা আফ্রিকান অঞ্চলগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করা হয়।[12]
১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত ব্রাজাভিল দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল: ইউরোপীয় (শহরটির কেন্দ্র) এবং আফ্রিকান (পোতোপোতো, বাকঙ্গো এবং মাকেলেকেলে)। ১৯৮০ সালে, শহরটি একটি কমিউরে পরিণত হয় এবং সেটিকে ঘিরে থাকা জলাশয় বিভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একই সাথে ফরাশি প্রশাসনের মডেল অনুসারে, শহরটি নয়টি “আহোডিসমো” (বরো) এ বিভক্ত।
বিংশ শতাব্দি থেকে শহরটিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যকার যুদ্ধ সহ বিভিন্ন যুদ্ধ সংঘটিত হয়। শহরটি কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং অ্যাঙ্গোলার মধ্যে যুদ্ধ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৯০ এর দশকে, গৃহযুদ্ধের কারণে হাজার হাজার বেসামরিক জনগণ নিহত হয় এবং লাখ লাখ জনগণ শহর ত্যাগ করে।
সাম্প্রতিক সময়ে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে হাজার হাজার শরণার্থী ব্রাজাভিলে প্রবেশ করে। ব্রাজাভিল থেকে তাদের হাজারো শরণার্থীকে বের করে দেওয়া হয় বলে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সরকার অভিযোগ দেয়[15]।[16][17]
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে পুলিশ এবং স্থানীয় এবং সৈন্য দলের সংঘর্ষে ১৮ জন নিহত হয়।[15]
বছর | জন. | ±% |
---|---|---|
১৯৮৪ | ৫,৮৫,৮১২ | — |
১৯৯৬ | ৮,৫৬,৪১০ | +৪৬.২% |
২০০৭ | ১৩,৭৩,৩৮২ | +৬০.৪% |
২০১৯ | ২১,৭৫,০০০ | +৫৮.৪% |
২০০৭ সালের আদমশুমারি অনুসারে, শহরটির জনসংখ্যা ১.৩৭ মিলিয়ন। জাতীয় পরিসংখ্যান কেন্দ্র একটি অভিক্ষেপের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১.৭ মিলিয়ন হবে বলে ধারণা করে, তবে এ অভিক্ষেপটি ২০০৭ সালের আগে তৈরি এবং সেখানে সেই বছরের আদমশুমারির ফলাফলের চেয়ে জনসংখ্যা কম ধরা হয়েছে।[18]
জাতিসংঘ জনসংখ্যা বিভাগের ধারণা অনুযায়ী, ২০১৪ সালে শহরটির জনসংখ্যা ছিল ১.৮৩ মিলিয়ন। ২০১৪ সালে, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের জনসংখ্যা ১০ মিলিয়নের অধিক ছিল।[19]
কিনশাসা সহ কিনশাসা-ব্রাজাভিল পৌরপুঞ্জের জনসংখ্যর ১২ মিলিয়ন। রাজনৈতিক এবং অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যার কারণে শহর দুটি একটি আরেকটির সাথে কোনো কার্যকর সম্পর্ক রেখে কাজ করতে পারছে না।[20][21]
১৯ শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে শহর দুটি বাণিজ্য, ক্রিড়া এবং ক্ষমতার দিক থেকে একে অপরের প্রতিদ্বন্দী।[8] একটি ব্রাজাভিল-কিনশাসা ব্রিজের মাধ্যমে দুটো শহরকে যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে, অঞ্চলটিতে আপেক্ষিক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে, আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আফ্রিকা ৫০ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে দুই দেশের সরকারের সাথে একটি চুক্তিতে সাক্ষর করে।[22]
পোয়াঁত-নোয়ার এর মতো, ব্রাজাভিলও একটি কমিউন (পৌরসভা) এবং বিভাগ। শহরটি একটি পৌরসভা কাউন্সিল এবং একটি বিভাগীয় কাউন্সিল দ্বারা পরিচালনা করা হয়। শহরটির মেয়র পৌরসভা কাউন্সিল এর সভাপতির দায়িত্বেও নিযুক্ত হন।[23]
শহরটি নয়টি “আহোডিসমো” (বরো) এ বিভক্ত[24]:
কঙ্গো নদীর নিকটে অবস্থিত হওয়ায়, ব্রাজাভিলে বিভিন্ন কারখানা, বাণিজ্য এবং সামুদ্রিক বন্দর গড়ে ওঠে। শহরটি জাহাজ এবং নৌকার মাধ্যমে নদীর উৎসের দিকের অঞ্চলগুলোর সাথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ রক্ষা করত, যেখানে ঔপনিবেশিক সময়ের শুরু থেকেই বিভিন্ন কাঁচামাল উৎপাদন করা হয়।[12] শহরটির সাথে পোয়াঁত-নোয়ার এর সংযোগকারী রেলওয়ে নির্মাণের কারণে সমুদ্র বন্দরটিতে ব্যবসায়ীদের পণ্য নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কঙ্গো নদীর প্রধান বন্দরগুলোর একটি হওয়ায় ব্রাজাভিলে রবার, কাঠ এবং কৃষিজ দ্রব্যাদি সরবরাহ করা হয়। ব্রাজাভিল থেকে সাধারণত এ পণ্যগুলো পোয়াঁত-নোয়ারে পাঠানো হয়।
ব্রাজাভিলে বিভিন্ন কোম্পানী, সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থার আঞ্চলিক কার্যালয় আছে এবং এখানে তারা সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে কাজ করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকার আঞ্চলিক কার্যালয় ব্রাজাভিলে অবস্থিত।[25] ব্রাজাভিলে যেসব কোম্পানি সদর দপ্তর অবস্থিত তাদের মধ্যে রয়েছে: নিরক্ষীয় কঙ্গো এয়ারলাইনস এবং ওয়ারিদ কঙ্গো।[26][27]
উল্লেখযোগ্য স্থপতি, রোজার এরেল মুক্ত ফ্রান্সের নেতা হিসেবে থাকাকালীন শার্ল দ্য গোল এর জন্য ব্রাজাভিলে একটি বাসগৃহের নকশা তৈরি করেন। এখানে অবস্থিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে: পিয়ের সাবোর্গনিয়ান দে ব্রাৎসা, সংসদ ভবন এবং নাবেমবা টাওয়ার।
এছাড়াও মারিয়েন এনগৌবি সমাধি, ব্রাজাভিল চিড়িয়াখানা এবং পোতো-পোতো চিত্রকলা বিদ্যালয়ও শহরটির বাসিন্দা এবং পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয়।
ফরাশি ঔপনিবেশিক সময়ে কঙ্গোর জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ক্যাথলিক চার্চের অনুসারীতে পরিণত হয়। শহরটিতে খ্রিষ্টান চার্চের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, তবে রোমান ক্যাথলিক চার্চের একটি আর্চডায়োসিস রয়েছে। ফরাশি ঔপনিবেশিক সময় থেকে শহরটিতে আগত প্রবাসীরা এবং প্রতিবাদী মতবাদ প্রচারকগণ বিভিন্ন চার্চ নির্মান করে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে: সান্ত আন দু কঙ্গোর বাজিলিকা, ব্রাজাভিল এবং গাবোনের (প্যাট্রিয়াকেট অব আলেক্সান্দ্রিয়া এন্ড অল আফ্রিকা) গ্রিক অর্থোডক্স আর্চডায়োসিস, ইভেঞ্জিকাল চার্চ অব কঙ্গো (ওয়ার্ল্ড কমিউনিয়ন অব রিফর্মড চার্চেজ) এবং অ্যাসেম্বলিজ অব গড।[28]
মারিয়েন এনগৌডি বিশ্ববিদ্যালয় হলো ব্রাজাভিলে অবস্থিত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। একজন সাবেক নেতার নামানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে।[29] বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশটির স্বাধীনতার পর নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ২৬,০০০ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করে।
আন্তর্জাতিক বিদ্যালয়:
ব্রাজাভিলের জলবায়ু সামুদ্রিক আদ্র এবং শুষ্ক। এখানে আদ্র মৌসূম (অক্টোবর-মে) এবং শুষ্ক মৌসূম (অক্টোবর-মে ব্যতিত বাকি সময়) সমদৈর্ঘ্য। ব্রাজাভিলের সবচেয়ে শুস্ক মাস, জুলাই এবং আগস্টে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না। নিরক্ষরেখার উত্তর দিকে অবস্থিত হওয়ায় শহরটিতে শুস্ক মৌসূম “শীত” অয়নকালের (জুন মাস) দিকে শুরু হয়। শহরটিতে সম্পূর্ণ বছর তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে সংগতিপূর্ণ থাকে।
ব্রাজাভিল (মায়া-মায়া বিমানবন্দর) ১৯৬১-১৯৯০ এবং ১৯৩২-বর্তমান-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ৩৭.৫ (৯৯.৫) |
৩৬.৩ (৯৭.৩) |
৩৭.৫ (৯৯.৫) |
৩৬.৮ (৯৮.২) |
৩৭.৩ (৯৯.১) |
৩৪.৩ (৯৩.৭) |
৩৩.৮ (৯২.৮) |
৪০.২ (১০৪.৪) |
৩৯.৫ (১০৩.১) |
৩৮.৯ (১০২.০) |
৩৫.৮ (৯৬.৪) |
৪০.২ (১০৪.৪) |
৪০.২ (১০৪.৪) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ৩০.৫ (৮৬.৯) |
৩১.৩ (৮৮.৩) |
৩১.৭ (৮৯.১) |
৩১.৮ (৮৯.২) |
৩০.৯ (৮৭.৬) |
২৮.৪ (৮৩.১) |
২৭.০ (৮০.৬) |
২৮.৫ (৮৩.৩) |
৩০.৪ (৮৬.৭) |
৩০.৮ (৮৭.৪) |
৩০.৪ (৮৬.৭) |
৩০.২ (৮৬.৪) |
৩০.২ (৮৬.৪) |
দৈনিক গড় °সে (°ফা) | ২৬.০ (৭৮.৮) |
২৬.৪ (৭৯.৫) |
২৬.৭ (৮০.১) |
২৬.৮ (৮০.২) |
২৬.২ (৭৯.২) |
২৩.৮ (৭৪.৮) |
২২.৪ (৭২.৩) |
২৩.৬ (৭৪.৫) |
২৫.৫ (৭৭.৯) |
২৬.১ (৭৯.০) |
২৫.৯ (৭৮.৬) |
২৫.৮ (৭৮.৪) |
২৫.৪ (৭৭.৭) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ২১.৪ (৭০.৫) |
২১.৫ (৭০.৭) |
২১.৭ (৭১.১) |
২১.৯ (৭১.৪) |
২১.৬ (৭০.৯) |
১৯.৩ (৬৬.৭) |
১৭.৮ (৬৪.০) |
১৮.৮ (৬৫.৮) |
২০.৬ (৬৯.১) |
২১.৪ (৭০.৫) |
২১.৪ (৭০.৫) |
২১.৫ (৭০.৭) |
২০.৭ (৬৯.৩) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | ১৭.০ (৬২.৬) |
১৪.৫ (৫৮.১) |
১৭.৭ (৬৩.৯) |
১৮.৬ (৬৫.৫) |
১৭.০ (৬২.৬) |
১২.৭ (৫৪.৯) |
১০.৫ (৫০.৯) |
১০.৩ (৫০.৫) |
১৫.২ (৫৯.৪) |
১৩.৭ (৫৬.৭) |
১৮.২ (৬৪.৮) |
১৭.৭ (৬৩.৯) |
১০.৩ (৫০.৫) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ১৬০ (৬.৩) |
১৩৭ (৫.৪) |
১৬৭ (৬.৬) |
১৯১ (৭.৫) |
১১৮ (৪.৬) |
৮ (০.৩) |
৩ (০.১) |
৪ (০.২) |
৩৪ (১.৩) |
১৩৯ (৫.৫) |
২৬১ (১০.৩) |
১৭২ (৬.৮) |
১,৩৯৪ (৫৪.৯) |
অধঃক্ষেপণ দিনগুলির গড় (≥ ১.০ mm) | ১০ | ৮ | ১১ | ১২ | ৮ | ১ | ০ | ০ | ৪ | ৯ | ১৪ | ১২ | ৮৯ |
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) | ৮১ | ৮০ | ৭৯ | ৮১ | ৮১ | ৭৯ | ৭৭ | ৭৩ | ৭১ | ৭৬ | ৮১ | ৮২ | ৭৮ |
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় | ১৭১ | ১৬৭ | ১৯২ | ১৮১ | ১৭৭ | ১৪১ | ১২৭ | ১৩৩ | ১৪৫ | ১৫২ | ১৫৭ | ১৫৪ | ১,৮৯৭ |
উৎস ১: ডয়চা ভেটাডিনস্ট (উঞ্চতা, ১৯৫১-১৯৯০)[30][31][lower-alpha 1] | |||||||||||||
উৎস ২: মাটেও ক্লাইমেট (সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন)[32] |
শহরটির কেন্দ্রে মায়া-মায়া বিমানবন্দর অবস্থিত এবং সেখান থেকে পোয়াঁত-নোয়ার এবং আফ্রিকা, ইউরোপ এবং মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন বিমান চলাচল করে। ব্রাজাভিল থেকে একটি বিমান সপ্তাহে দুই বার ব্রাজাভিল এবং কিনশাসা এর মধ্যে যাত্রা করে। এ যাত্রায় সময় লাগে মাত্র পাঁচ মিনিট।[8]
ব্রাজাভিলে কঙ্গো-সমুদ্র রেলসেবার একটি স্টেশন রয়েছে যেখান থেকে ২০১৪ সালে লা গেজেল নামক ট্রেনটি শহরটি থেকে পোয়াঁত-নোয়ার পর্যন্ত এবং তার মধ্যবর্তী স্থানগুলোর মধ্যে যাতায়াত করে।[33]
ব্রাজাভিলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর রয়েছে এবং সেখান থেকে কিনশাসা এবং ইমপফোন্দো হয়ে ব্যাঙ্গিতে খেয়া চলাচল করে।[8] খেয়া এবং দ্রুত গতির ব্যক্তি মালিকাধীন নৌকা ব্রাজাভিল এবং কিনশাসার মধ্যে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম।[8] শহরের বাহিরে জুয়ে নদীর সাথে কঙ্গো নদীর মিলিত হওয়ার স্থানে লিভিংস্টন জলপ্রপাত রয়েছে, ফলে নদীপথে গন্তব্য, সমুদ্র সৈকতে পৌছানো যায় না এবং এ কারণে পোস্টেজ রেলওয়ে ব্যবহার করা হয়।
কোনো সরকারি যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকলেও, ব্রাজাভিলে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস চলাচল করে।[34]
শহরটির প্রতিটি রাস্তায়ই ট্যাক্সি চলাচল করে এবং ট্যাক্সিগুলো দেখে সহজে সনাক্ত করা যায়: ট্যাক্সির বডির রং সবুজ এবং ছাদের রং সাদা। ট্যাক্সিতে কম দূরত্ব ভ্রমণের ভাড়া CF৭০০। ব্রাজাভিলের যানবাহনের ২০ শতাংশ ট্যাক্সি। শহরটিতে সমষ্টিগত ট্যাক্সিও রয়েছে যা নির্দিষ্ট পথে চলে এবং সেগুলোর ভাড়া CF১৫০।
ব্রজাভিল এবং কিনশাসার মধ্যে একটি সড়ক-রেল সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে সেতুটির দৈর্ঘ্য উভয় দিকেই ১০৬৭ মিলিমিটার থাকবে।[35]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.