বৈশ্য

হিন্দু বর্ণপ্রথার তৃতীয় বর্ণ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

বৈশ্য

বৈশ্য হচ্ছে হিন্দু সমাজকাঠামোর চতুর্বর্ণের মধ্যে তৃতীয় বর্ণ। বর্ণকাঠামো অনুসারে তারা ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়দের তুলনায় নিম্নবর্ণের কিন্তু শূদ্রদের তুলনায় উচ্চবর্ণের। ঐতিহ্যগতভাবেই বৈশ্যরা ব্যবসায়ী, মহাজন অথবা কৃষক। অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পশু পালনই তাদের প্রধান পেশা।[] বৈশ্যরাও ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয়দের পাশাপাশি পবিত্র মৌলির সুতা (যজ্ঞোপবীত) পরিধান করার অধিকার রাখে। এছাড়া তাদের 'দ্বিজ' মর্যাদাও দেওয়া হয়। অন্যদিকে শূদ্রদের পবিত্র সুতো পরিধানের অনুমতি নেই এবং তাদের 'দ্বিজ' মর্যাদা না দেওয়ার মাধ্যমে অন্য তিনটি বর্ণের তুলনায় পৃথক করা হয়।

Thumb
একজন বৈশ্য বর্ণের মানুষ

ভগবদ্গীতায় বৈশ্য ও শূদ্রের স্বভাবজাত কর্ম সম্পর্কে বলা আছে:[]

কৃষিগোরক্ষ্যবাণিজ্যং বৈশ্যকর্ম স্বভাবজম্।

পরিচর্যাত্মকং কর্ম শূদ্রস্যাপি স্বভাবজম্।।

অনুবাদঃ কৃষি, গোরক্ষা ও বাণিজ্য এই কয়েকটি বৈশ্যের স্বভাবজাত কর্ম এবং পরিচর্যাত্মক কর্ম শূদ্রের স্বভাবজাত।

ভগবদ্গীতা (অধ্যায়:১৮, শ্লোক:৪৪)

গতানুগতিক দায়িত্ব

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ সমূহে বৈশ্যদের কৃষিকাজ ও গবাদি-পশুর পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তারা ভূমির মালিক, ব্যবসায়ী এবং মহাজন হয়ে উঠেছে।[] অর্থাৎ, হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে উচ্চবর্ণের (ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়) লোকদের ভরণপোষণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করার দায়িত্ব ছিল তাদের। []

বৈশ্যরা ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয় বর্ণের সদস্যদের সাথে হিন্দু ধর্মতত্ত্ব অনুসারে দীক্ষা নেওয়ার পর দ্বিজ মর্যাদা ("দুইবার জন্মগ্রহণ", দ্বিতীয় জন্ম বা আধ্যাত্মিক জন্ম) লাভ করে।[]

তারাই মূলত দেশের অভ্যন্তরীণ এবং বহির্বাণিজ্য পরিচালনা করত। দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের কাজে সারা ভারতবর্ষে তাদের বিচরণ ছিল। তারাই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করত।[] বহির্বাণিজ্যের কাজে তারা ভারতবর্ষ পেরিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত ভারতীয় সংস্কৃতি বিস্তারের জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ী তথা বৈশ্যদের ব্যাপকভাবে কৃতিত্ব দেওয়া হয়।[]

ঐতিহাসিকভাবে, বৈশ্যরা তাদের ঐতিহ্যগত পশুপালন, ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও অন্য কোনও ভূমিকায় জড়িত ছিল। ইতিহাসবিদ রাম শরণ শর্মার মতে গুপ্ত সাম্রাজ্য ছিল একটি বৈশ্য রাজবংশ যা "অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে"।[]

বর্তমান সম্প্রদায়

বৈশ্য সম্প্রদায় অগ্রহারী,[] অগ্রবাল/আগারওয়াল,[] কেশারওয়ানি, বর্নওয়াল, গাহোই, কসুয়াধন, মাথুর বৈশ্য, নাগর্থ, মুথান, বালিজ, কোঙ্কন এবং গোয়ার বৈশ্য বণিক সহ বেশ কয়েকটি জাতি এবং উপশ্রেণী নিয়ে গঠিত। এছাড়াও আছে মহেশ্বরী, অসোয়াল, খাদেলওয়ালা, পলোয়াল, জশোয়াল ও মহাজন সম্প্রদায়। ভারত গুজরাটের প্যাটেল ও বানিয়া এবং মারওয়ার অঞ্চলের মারওয়ারিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী ও ধনী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। তারা সকলেই নিজেদের বৈশ্য পরিচয় দেয়।[] এই জাতীয় অনেক জাতি এবং উপজাতি সকলেই ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের দ্বারা দীক্ষিত বৈশ্য হিসাবে বিবেচনা করে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বাংলাদেশে বৈশ্য

প্রাচীনকাল থেকেই বাংলায় একশ্রেণীর মানুষ দেশের অভ্যন্তরীণ এবং বহির্বাণিজ্য নিয়োজিত থাকলেও বাংলাদেশে কখনোই তারা 'বৈশ্য' হিসেবে স্বতন্ত্র বর্ণ বিবেচিত হয়নি। তবে বাংলায় স্বর্ণকার এবং তাম্বুলি নামে বহু উপবর্ণের ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত মানুষ আছে। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশের বণিক, মন্ডল, কুন্ডু এবং সাহা গোত্রের লোকেরা নিজেদেরকে 'বৈশ্য' দাবি করে। কিন্তু তারা আর্য বৈশ্য হিসেবে সার্বজনীন স্বীকৃতি পায়নি।[]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.