Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
এটি চম্পা বিবির মাজার নামেই বেশি পরিচিত । পুরনো ঢাকার চকবাজার থানার সোয়ারীঘাটের চম্পাতলী এলাকার নামকরণ করা হয় চম্পা বিবির নামানুসারে ।তার পরিচয় সমন্ধে সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় নি ।তিনি ছিলেন শায়েস্তা খাঁর উপপত্নী [1] বা পালিত কন্যা[2]। মুনশী রহমান আলী তায়েশ (গবেষক) তার উর্দু ভাষায় রচিত ‘তাওয়ারিখে ঢাকা’ , ডক্টর আ ম ম শরফুদ্দীন কর্তৃক অনুবাদকৃত বইয়ে সমাধিসৌধটির ধ্বংস সমন্ধে লিখেছেন, "পাদ্রী শেফার্ড ওটা ধ্বংস করে দিয়েছেন। শেফার্ড বোধহয় কবরটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। " এটি ঘটেছিল ১৮১৬ সালে মিশনারি লিওনারদ কর্তৃক ছোট কাটরায় ইংরাজি স্কুল খোলার পর ।
স্থানাঙ্ক | ২৩.৭১৩০° উত্তর ৯০.৩৯৬২° পূর্ব |
---|---|
অবস্থান | পুরনো ঢাকার চকবাজার থানার সোয়ারীঘাটের চম্পাতলী এলাকায় । পূর্বর অবস্থান : বড় কাটরার পূর্বদিকে প্রায় ১৮৩ মিটার পূর্বে , হাকিম হাবিবুর রহমান লেনে বুড়িগঙ্গার তীরে (পুরাতন মুগল ঢাকায়) |
ধরন | মোগল স্থাপনা (এক গম্বুজ বিশিষ্ট সমাধিসৌধ) |
উপাদান | ইট, সুড়কি |
দৈর্ঘ্য | প্রতিপাশে ২৪ ফুট দীর্ঘ ছিল স্মৃতিসৌধটি |
সম্পূর্ণতা তারিখ | ১৬৭১ খ্রিস্টাব্দ |
নিবেদিত | শায়েস্তা খানের স্ত্রী |
বাতিল তারিখ | {{{dismantled}}} |
মুঘল সাম্রাজ্য (উর্দু: مغلیہ سلطنت, Mug̱ẖliyah Salṭanat, ফার্সি: گورکانیان, Gūrkāniyān)), ছিল ভারত উপমহাদেশের একটি সাম্রাজ্য।উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলজুড়ে মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। মুঘল সাম্রাজ্য পারস্যের ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল।ভারত উপমহাদেশে মুঘলরা অনন্য স্থাপত্য শৈলী দান করেছে। এসময়ে নির্মিত অনেক স্থাপত্য নিদর্শন ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। তাজমহল মুঘল স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অন্যান্য বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে হুমায়ুনের মাজার, ফতেহপুর সিক্রি, লালকেল্লা, আগ্রা দুর্গ ও লাহোর দুর্গ।
শায়েস্তা খাঁ মোগল আমলের এক জন বিখ্যাত সুবাদার বা প্রাদেশিক শাসক ছিলেন। তার খ্যাতি মূলত বাংলার সুবাদার হিসাবে। দু'দফায় সর্বমোট ২২ বছর তিনি বাংলা শাসন করেন। প্রথমে ১৬৬৪ থেকে ১৬৭৮ সাল এবং দ্বিতীয় বার ১৬৮০ থেকে ১৬৮৮ সাল। তার শাসনামলে ঢাকায় ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয় এবং এই প্রদেশে মুঘল শাসনের শ্রেষ্ঠ সময় অতিবাহিত হয়।শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ছেড়ে দিল্লিতে ফিরে যাবার আগে ঢাকাকে স্থানীয় বাণিজ্য, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে যান। তার কল্যাণে ঢাকা একটি ছোট দাপ্তরিক কেন্দ্র থেকে বৃহত্ ও উন্নত শহরে পরিণত হয়।শায়েস্তা খাঁ মসজিদটি তার তৈরি একটি সুবৃহত্ কীর্তি যা তার প্রাসাদ সমতলে তৈরি করা হয়েছিল। বাংলা ও মুঘল স্থাপত্য কীর্তির মিশ্রণে তৈরি এই ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত হয়েছে।ঢাকার লালবাগে শায়েস্তা খাঁর সদর দপ্তর ছিল। পুরনো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তার নির্মিত স্থাপত্য তার স্থাপত্যপ্রীতির পরিচায়ক।
কাটরা বা কাটারা এর আরবি ও ফরাসি অর্থ হলো ক্যারাভ্যানসারাই বা অবকাশযাবন কেন্দ্র (মুসাফিরখানা/সরাইখানা)। বাংলাদেশের ঢাকায় মুঘল শাসনামলে দুটি অন্যন্য কাটরা নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে একটি হলো বড় কাটারা ও অপরটি হলো ছোট কাটারা।ইসলামি সংস্কৃতিতে ক্যারাভ্যানসারাই নির্মাণ একটি পূণ্যের কাজ হিসেবে গণ্য করা হতো , তাই সওয়াবের আশায় শাসকরা অনেক সরাইখানা নির্মাণ করেছিলেন বলে ইতিহাসে রয়েছে । এগুলো সাধারণত বাণিজ্য পথের পাশে নির্মাণ করা হতো ।ক্যারাভ্যানসারাই সাধারণত প্রয়োজনীয় প্রাঙ্গণ বিশিষ্ট ইমারত যার খিলান সারিযুক্ত বারান্দা দিয়ে চারদিক থেকে ঘিরে রাখা হতো ।বারান্দার পাশেই থাকতো অতিথিদের কক্ষ যেখানে পরিব্রাজক ও ব্যাবসায়ীরা বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার পথে সাময়িক আশ্রয় নিতেন । বোঝাবহনকারী পশু, গাড়ি ও অন্যান্য সামগ্রি খোলা প্রাঙ্গণে রাখা হতো । কাটরাগুলোতে পরিব্রাজকদের জন্য ঘুমাবার স্থান, রান্নাঘর, গোসলখানা, মসজিদ এমনকি আগত বসবাসকারীদের জন্য হাসপাতালও থাকতো । মুঘল ঢাকার সরাই বা কাটরাগুলো পরবর্তীতে বোর্ডিং হাউজ বা বাজার রূপে পরিবর্তিত হয়েছিল যার অনেকগুলোই এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে । যেমন মৌলভীবাজারে মুকিম কাটরা,বকশীবাজার কাটরা, মুগলটুলী কাটরা, মায়া কাটরা, নবাব কাটরা, নাজির কাটরা, রহমতগঞ্জ কাটরা এবং বাদামতলী কাটরা। কারওয়ান বাজারেও একগুচ্ছ কাটরা ছিল ।এক সময় বড় কাটরার তোরণে ফার্সি ভাষায় শাদুদ্দিন মুহম্মদ সিরাজী লিখিত একটি পাথরের ফলক লাগানো ছিল যার মাধ্যমে এর রক্ষনাবেক্ষনের ব্যয় নির্বাহের উপায় সম্পর্কে জানা যায়।
“ | সুলতান শাহ্ সুজা সব সময় দান-খয়রাতে মশগুল থাকিতেন। তাই খোদার করুণালাভের আশায় আবুল কাসেম তুব্বা হোসায়নি সৌভাগ্যসূচক এই দালানটি নির্মাণ করিলেন। ইহার সঙ্গে ২২টি দোকানঘর যুক্ত হইল যাহাতে এইগুলির আয়ে ইহার মেরামতকার্য চলিতে পারে এবং ইহাতে মুসাফিরদের বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা হইতে পারে। এই বিধি কখনো বাতিল করা যাইবে না। বাতিল করিলে অপরাধী শেষ বিচারের দিনে শাস্তি লাভ করিবে। শাদুদ্দিন মুহম্মদ সিরাজি কর্তৃক এই ফলকটি লিখিত হইল। | ” |
সুবেদার শায়েস্তা খান ছোট কাটারা নির্মাণ করেছিলেন। আনুমানিক ১৬৬৩ - ১৬৬৪ সালের দিকে এ ইমারতটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং এটি ১৬৭১ সালে শেষ হয়েছিল। এটির অবস্থান ছিল বড় কাটারার পূর্বদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। ইমারতটি দেখতে অনেকটা বড় কাটারার মত হলেও এটি আকৃতিতে বড় কাটারার চেয়ে ছোট এবং এ কারণেই হয়তো এর নাম হয়েছিল ছোট কাটারা। তবে ইংরেজ আমলে এতে বেশ কিছু সংযোজন করা হয়েছিল।[3] শায়েস্তা খানের আমলে ছোট কাটরা নির্মিত হয়েছিল সরাইখানা বা প্রশাসনিক কাজে ব্যবহারের জন্য।বড় কাটরার মতো এটিতেও ছিল দুটো তোরণ, একটি উত্তরে ও অপরটি দক্ষিণে। দক্ষিণের তোরণটিই ছিল প্রধান তোরণ। আয়তাকার কাটরার দক্ষিণ বাহুর দুই কোণায় দুটো আটকোণা বুরুজ বা টাওয়ার ছিল। উভয় তোরণেরই অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। মুগল রীতিতে নির্মিত ত্রিতলবিশিষ্ট দক্ষিণ তোরণ এবং তিন জানালাযুক্ত সুউচ্চ কোণার টাওয়ারগুলোর সাথে পরবর্তী ইংরেজ আমলের সংস্কাররীতি মিশে এগুলো ঔপনিবেশিক চিহ্নও ধারণ করেছে।
১৬৭১ খ্রিষ্টাব্দ শায়েস্তা খাঁ ছোট কাটরার ভেতরে চম্পা বিবির সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন । ১৭১৬ সালে মুঘল রাজধানী পরিবর্তনের পর থেকে ছোট কাটরা ও মুঘল ঢাকা এর গুরুত্ব হারাতে থাকে । ১৮২২সালের চার্লস ডয়েল এর বর্ণনাও কাটরার সৌন্দর্যের সাক্ষ্য দেয় । এবং তখনও এর বাসিন্দারা ;ছিল দরিদ্র ।
১৮১৬ সালে লিওনারদ (একজন মিশনারি ) ছোট কাটরায় ঢাকার প্রথম ইংরাজি স্কুল খুলেছিলেন । ১৮৫৭ সালে, এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঢাকার প্রথম নরমাল স্কুল। উনিশ শতকের শেষ দিকে অথবা বিশ শতকের প্রথম দিকে ছোট কাটরা ছিল নবাব পরিবারের দখলে। এবং তাতে তখন ' কয়লা ও চুণার কারখানার কাজ' চলত। [4][5][6][7][8][9]
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের '''অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজে'''র মতে চম্পা বিবি হলেন শায়েস্তা খাঁর পালিত কন্যা ।বেশিরভাগ ঐতিহাসিকের ও ঢাকা বিশেষজ্ঞ "ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী" গ্রন্থের লেখক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের মতে চম্পা বিবি হলেন শায়েস্তা খানের 'উপপত্নী' । তারা যুক্তি দিয়েছেন যে , যেহেতু চম্পা বিবি ছোট কাটরায় বাস করতেন এবং পরী বিবি শায়েস্তা খাঁর কন্যা তাই এটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ।[5] এই যুক্তিটা গ্রহণ করা হয়, কারণ ছোট কাটরা নির্মিত হয় ১৬৬৪ সালে এবং সমাধিসৌধটির শিলালিপি কর্তৃক জানা যায়, এর নির্মাণ হয় ১৬৭১ সালে।ইতিহাস থেকে তার সমন্ধে খুবই কম জানা যায় । যেহেতু ছোট কাটরা অবকাশযাপন কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হত তাই এতে সুবা বাংলার অনেক কর্মচারী,ব্যবসায়ী,আগন্তুক অতিথি,ও আত্মীয়স্বজনরা থাকতেন এবং শায়েস্তা খানও অবসর সময় কাটাতেন । তার সেবাযত্নের জন্য সেবিকা ও উপপত্নীরাও থাকতেন ।ধারণা করা হয় সেই উপপত্নীদের ভেতরই একজন হলেন চম্পা বিবি , যাকে তিনি অন্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি পছন্দ করতেন। সমাধিসৌধটি নির্মাণের এটিই কারণ । এটা জানা যায় যে , শায়েস্তা খানের বাঙ্গালী বংশধররা চম্পা বিবির পর দীর্ঘ দিন ছোট কাটারায় বসবাস করেছিলেন ।
ছোট কাটরা ভবনটি আয়তাকৃতির এবং এর বাইরে থেকে পরিমাপ ১০১.২০ মি উ ৯২.০৫ মি এবং ভেতরে ৮১.০৭ মি উ ৬৯.১৯ মি। বাইরের প্রাচীর ০.৯১ মি থেকে ১ মি পুরু এবং এর প্রতিরক্ষা বুরুজের দেয়াল যেখানে সব চেয়ে পুরু সেখানে ১.২২ মিটার। এটি বড় কাটরার পরিকল্পনা অনুসারে তৈরী তবে আকৃতিতে অপেক্ষাকৃত ছোট। শায়েস্তা খাঁ পরবর্তীতে এর চত্বরেই চম্পা বিবির সমাধিসৌধটি নির্মাণ করেছিলেন ।
ভেতরে চম্পা বিবির মাজার রয়েছে । সমাধিসৌধটির একটি গম্বুজ , চারটি কোনা ও প্রতিপাশে ২৪ ফুট দৈর্ঘ্য ছিল । পূর্বে একটি ছোট মসজিদ ও এক গম্বুজ বিশিষ্ট চম্পা বিবির সমাধিসৌধ ছিল । পাদ্রী শেফার্ড মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন।। এটি পরবর্তীতে প্রত্নতত্ত্ববিদ দের দ্বারা পুনর্গঠন করা হয়েছিল , কিন্তু এখন চম্পাতলী এলাকার ঘিঞ্জি দোকান গুলোর মধ্যে হারিয়ে গেছে । ১৮১৭ সালে চার্লস ডয়েলের অঙ্কিত চিত্র থেকে বোঝা যায় এটি ছিল কয়েক তবক ওয়ালা সসার আকৃতির গম্বুজওয়ালা সমাধিসৌধ ।
বর্তমানে ছোট কাটারা বা চম্পা বিবির সমাধিসৌধ বলতে এখন কিছুই বাকি নেই , শুধু একটি ভাঙা ইমারত ছাড়া। যা শুধু বিশাল তোরণের মত সরু গলির উপর দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে অসংখ্য দোকান এমন ভাবে ঘিরে ধরেছে যে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখানে মুঘল আমলের এমন একটি স্থাপত্য ছিল। এখানে পর্যটকরা তেমন একটা আসেন না ; কারণ সমাধিসৌধটি এখন নেই এবং মাজার চত্বরটি দখল হয়ে গেছে ।ছোট কাটরার প্রবেশদ্বারের দুই পাশের দেয়াল ও প্রধান সড়কটি দখল হয়েছে এবং বহুতল ভবন নির্মাণ হয়ে গেছে । সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা তেমন কোন ভুমিকা নেয়নি ।রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এর মানচিত্রে কাটরা দুটি বিশেষ অঞ্চলের মর্যাদা পায়নি । তবে মাজারের মূল স্থানটি রয়েছে ।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.