বাস্তব সংখ্যা
From Wikipedia, the free encyclopedia
গণিতে, বাস্তব সংখ্যা((ইংরেজি:Real number)) হলো একটি অবিচ্ছিন্ন পরিমাণের মান যা একটি রেখা বরাবর দূরত্ব উপস্থাপন করে বা প্রদর্শন করে। অন্যভাবে বলা যায়, বাস্তব সংখ্যা হলো একটি পরিমাণ যাকে একটি অসীম সংখ্যক দশমিক প্রসারণ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। সপ্তদশ শতাব্দীতে, রেনে দেকার্ত, সর্বপ্রথম বহুপদী সমীকরণের বাস্তব এবং কাল্পনিক মূল বা বীজ এর পার্থক্য নির্দেশ করতে রিয়েল বা বাস্তব বিশেষণটি ব্যবহার করেন।[1] বাস্তব সংখ্যা বলতে সকল মূলদ সংখ্যা যেমন: পূর্ণ সংখ্যা (–৫) এবং ভগ্নাংশ বা ৪/৩ এবং সকল অমূলদ সংখ্যা যেমন- ২ এর বর্গমূল বা (১.৪১৪২১৩৫৬. . .) যা একটি বীজগাণিতিক সংখ্যা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া, সকল ট্রান্সেডেন্টাল বা তুরীয় সংখ্যা যেমন- π (৩.১৪১৫৯২৬৫...)।[2] বাস্তব সংখ্যা প্রায়শ পর্যবেক্ষণযোগ্য ভৌত বিষয় যেমন- সময়, ভর, শক্তি এবং একক মাত্রা, দূরত্ব, গতিবেগ, ত্বরণ, বল, ভরবেগ প্রভৃতি পরিমাপকরণে ব্যবহৃত হয়। বাস্তব সংখ্যার সেটকে R অথবা এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।[3] বাস্তব সংখ্যাগুলোকে একটি অসীম দৈর্ঘ্যের সরলরেখায় অবস্থিত পরস্পর সমদূরবর্তী অসংখ্য বিন্দু দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এই রেখাকে বলা হয়, সংখ্যারেখা বা বাস্তব সংখ্যা রেখা। যেকোনো বাস্তব সংখ্যা একটি সম্ভাব্য অসীম দশমিক উপস্থাপনা দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে, যেমন- ৮.৬৩২ যেখানে প্রতিটি ক্রমিক অঙ্ক পূর্ববর্তী সংখ্যার এক দশমাংশের একক হিসেবে পরিমাপ করা হয়। [4] বাস্তব সংখ্যারেখাকে একটি জটিল সমতলের অংশ ধরা হয় এবং বাস্তব সংখ্যাগুলো হলো ঐ সমতলে অবস্থিত জটিল সংখ্যার অংশ।
বিশুদ্ধ গণিতের আধুনিক মান অনুযায়ী, বাস্তব সংখ্যার উপরিউক্ত বিবরণ যথেষ্ট সুসংজ্ঞায়িত নয়। প্রকৃতপক্ষে, উনবিংশ শতকের গণিতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিকাশগুলোর মধ্যে একটি হলো- বাস্তব সংখ্যার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ণয় ও তা অনুধাবন। বর্তমান আদর্শ স্বতঃসিদ্ধ সংজ্ঞা হলো যে, বাস্তব সংখ্যাগুলো আইসোমরফিজম পর্যন্ত একটি অনন্য ডিডেকাইন্ড-কমপ্লিট অর্ডারড ক্ষেত্র ( ; + ; · ; <), তৈরি করে। অন্যদিকে, বাস্তব সংখ্যার জনপ্রিয় গঠনমূলক সংজ্ঞা হলো- (মূলদ সংখ্যার) কচি অনুক্রম, ডিডেকাইন্ড কাট, ও অসীম দশমিক প্রসারণ এর গাণিতিক প্রক্রিয়া এবং ক্রম সম্পর্ক সহ একত্রে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা অন্তর্ভুক্ত করে। এসব সংজ্ঞা, স্বতঃসিদ্ধ সংজ্ঞার সমার্থক ও সমতুল্য। বাস্তব সংখ্যার সেট অসংখ্য সেট। এই অর্থে যে, সমস্ত স্বাভাবিক সংখ্যার সেট এবং সব বাস্তব সংখ্যার সেট উভয়ই অসীম সেট, বাস্তব সংখ্যা থেকে স্বাভাবিক সংখ্যা পর্যন্ত কোনো এক-এক অপেক্ষক হতে পারে না।
প্রকৃতপক্ষে, সকল বাস্তব সংখ্যার অঙ্কবাচকতা প্রকাশ করা হয় "" এই প্রতীক দিয়ে এবং একে কনটিয়ামের অঙ্কবাচকতা বলা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, এটি অবশ্যই সকল স্বাভাবিক সংখ্যার সেট (যাকে , 'আলেফ-নট' বলা হয়) এর থেকে বৃহত্তম হবে। বাস্তব সংখ্যার অঙ্কবাচকতার এমন কোনো উপসেট নেই, যা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে থেকে বৃহত্তর এবং সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে থেকে ক্ষুদ্রতর।— এমন বিবৃতিকে কনটিনিয়াম হাইপোথিসিস বলা হয়। আধুনিক গণিতশাস্ত্রের আদর্শ সংস্থা এর মতে— জারমেলো-ফ্রেংকেল সেট তত্ত্ব এবং নির্বাচন স্বতঃসিদ্ধ বা (জেএফসি) অনুযায়ী উপরিউক্ত বিবৃতিটি প্রমাণযোগ্যও নয়, আবার, খণ্ডনযোগ্যও নয়। বস্তুত, জেএফসি-এর কিছু মডেল কনটিনিয়াম হাইপোথিসিস এর শর্ত পূরণ করলেও, অন্যগুলো তা লঙ্ঘন করে।[5]