![cover image](https://wikiwandv2-19431.kxcdn.com/_next/image?url=https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/d/da/Hans_Holbein_The_Younger_Portrait_of_the_merchant_Georg_Gisze_1532.jpg/640px-Hans_Holbein_The_Younger_Portrait_of_the_merchant_Georg_Gisze_1532.jpg&w=640&q=50)
বাণিজ্য (ব্যবস্থা)
পণ্য ও সেবার বিনিময় / From Wikipedia, the free encyclopedia
বাণিজ্য (Commerce) বলতে স্থানীয়, আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থাগুলিতে সঠিক সময়ে, সঠিক স্থানে, সঠিক পরিমাণে, সঠিক গুণমানে ও সঠিক দামে নির্বিঘ্নে পণ্য ও সেবা বিভিন্ন প্রণালীর মাধ্যমে আদি উৎপাদক থেকে চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে বিতরণ ও হস্তান্তরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবদান রাখে, এমন সমস্ত কর্মকাণ্ড, পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠানসমূহের একটি বৃহদায়তনিক সুসংগঠিত ব্যবস্থাকে বোঝায়।[1][2] প্রাকৃতিক সম্পদের পৃথিবীব্যাপী বিতরণে বৈচিত্র্য, মানুষের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার মধ্যে বিভেদ, শ্রম বিভাজন ও তুলনামূলক সুবিধা -- এগুলি বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের উদ্ভব হওয়ার মূল কয়েকটি কারণ।[3]
![Thumb image](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/d/da/Hans_Holbein_The_Younger_Portrait_of_the_merchant_Georg_Gisze_1532.jpg/640px-Hans_Holbein_The_Younger_Portrait_of_the_merchant_Georg_Gisze_1532.jpg)
একটি ব্যবস্থা হিসেবে বাণিজ্য দুই ধরনের উপাদান দিয়ে গঠিত: ক্রয়-বিক্রয় (Trade, এটিকেও বাংলায় বাণিজ্য বলা হতে পারে) এবং ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে সম্পর্কিত সহায়ক বাণিজ্যিক কার্যাবলী,[4] যেগুলি একটি সরবরাহ শৃঙ্খলের সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য ধরে সংঘটিত হয়। ক্রয়-বিক্রয় বলতে কোনও ঐতিহ্যবাহী বাজারে (বা অধুনা আন্তর্জালিক বা অনলাইন বাজারে) ভোক্তা (ক্রেতা) এবং বিক্রেতার মধ্যে রফাকৃত মূল্য পরিশোধের বিপরীতে পণ্য (যার মধ্যে মৌলিক দ্রব্য (commodity), অন্তর্বর্তী পণ্য ও চূড়ান্ত পণ্য অন্তর্ভুক্ত) ও সেবা হস্তান্তরের ঘটনাটিকে বোঝায়। ক্রয়-বিক্রয় বাণিজ্যকে দেশজ বাণিজ্য (যার মধ্যে পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য অন্তর্ভুক্ত) ও এর পাশাপাশি স্থানীয়, আঞ্চলিক, আন্তঃআঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক বাণিজ্য (যার মধ্যে আমদানি, রপ্তানি ও পুনঃরপ্তানি বাণিজ্য অন্তর্ভুক্ত) - এই কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। মুদ্রা (বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় বাজারে), কাঁচামাল (কাঁচামাল বাজারে) এবং নিশ্চয়তাপত্র ও উৎপন্ন চুক্তি (derivative) (অংশপত্র বাজারে ও আর্থিক বাজারে) বিশেষায়িত বিনিময় বাজারে হাতবদল হতে পারে, এবং এগুলিকেও ক্রয়-বিক্রয় বাণিজ্যের অন্তর্গত ধরা হয়। অন্যদিকে সহায়ক বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডগুলি ক্রয়-বিক্রয় বাণিজ্য সহজ করতে সহায়তা করে; এগুলির মধ্যে আছে মধ্যস্থতাকারী, ব্যাংকিং, ঋণ লগ্নি, পরিবহন, মোড়কজাতকরণ, গুদামজাতকরণ, যোগাযোগ, বিজ্ঞাপন ও বীমা। এগুলি সরাসরি ব্যক্তিগত সংযোগস্থাপন, মূল্য পরিশোধ, অর্থসঞ্চয়, অর্থলগ্নি, স্থান ও কালের ফারাক, পণ্যের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ, জ্ঞান ও ঝুঁকির সাথে জড়িত বিঘ্নগুলি লাঘব করে।
বাণিজ্যের বৃহত্তর পরিকাঠামোতে অতিরিক্র যে উপাদানগুলি বিদ্যমান, তার মধ্যে আছে বাণিজ্যিক আইন ও প্রবিধিসমূহ (যার মধ্যে মেধাসম্পদ মালিকানা আইন ও যোগসাজশী চক্রবিরোধী আইন অন্তর্ভুক্ত), বাণিজ্যিক নীতি, শুল্ক ও বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা, ভোক্তা ও ভোক্তা আচরণ প্রবণতা, উৎপাদক ও উৎপাদন কৌশল, সরবরাহ শৃঙ্খল ও তার ব্যবস্থাপনা, স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের জন্য আর্থিক লেনদেন, বাজারের গতিশীলতা (যার মধ্যে চাহিদা ও যোগান, প্রযুক্তিগত নবীকরণ, প্রতিযোগিতা ও ব্যবসায়িক উদ্যোক্তাগিরি, বাণিজ্য চুক্তি, বহুজাতিক কর্পোরেশন ও ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক উপাদান (যেমন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা)।
বাণিজ্য হল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চালিকাশক্তি; এটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আন্তঃনির্ভরশীলতার প্রসার ঘটায়, সাংস্কৃতিক বিনিময় লালন করে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, বহু-বিভিন্ন পণ্য ও সেবার যোগানের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করে, এবং নবীকরণ ও প্রতিযোগিতায় উৎসাহদানের মাধ্যমে উৎপন্ন দ্রব্যের মান উন্নয়ন করে। অন্যদিকে বাণিজ্যের কারণে স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তিরহাতে সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও খারাপ আকার ধারণ করতে পারে। বাণিজ্যে দীর্ঘ মেয়াদে দীর্ঘস্থায়িত্ব ও নৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত অনুষঙ্গগুলিকে মাথায় না রেখে স্বল্পমেয়াদি মুনাফাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে, যার ফলে পরিবেশের অবক্ষয়, শ্রমিকদের শোষণ ও ভোক্তা নিরাপত্তা অবহেলার মতো খারাপ পরিণাম হতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত বাণিজ্যের কারণে অতিরিক্ত ভোগ সৃষ্টি হতে পারে (যা অনাকাঙ্ক্ষিত বর্জ্য সৃষ্টি করে) ও সম্পদ কাজে লাগানোর প্রক্রিয়াটি টেকসই হয় না (যার ফলে সম্পদ নিঃশেষণ ঘটতে পারে)। বাণিজ্যের সুবিধাগুলিকে সমাজের জন্য কাজে লাগানো ও একই সাথে এর নেতিবাচক দিকগুলিকে নিরসন করা নীতিনির্ধারণ, ব্যবসা ও অন্যান্য অংশীজনদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আধুনিক বাণিজ্যের শেকড় প্রোথিত প্রাচীন স্থানীয় আঞ্চলিক বিনিময় বা অদল-বদল ব্যবস্থাগুলিতে, যেখান থেকে পর্যায়বৃত্তিক বাজার প্রতিষ্ঠা পায় ও পরবর্তীতে দক্ষ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য মুদ্রার প্রচলন ঘটে। মধ্যযুগে বাণিজ্যপথগুলি (যেমন রেশম পথ) ও এগুলির উপরে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলি (যেমন ভেনিস) অঞ্চল ও মহাদেশগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং এভাবে দীর্ঘ দূরত্বের বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্ভব করে। ১৫শ শতাব্দী থেকে ২০শ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি অভূতপূর্ব মাপে সারা বিশ্বের বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়, যার ফলে একাধিক মহাসামুদ্রিক বাণিজ্য সাম্রাজ্য ও তাদের শক্তিশালী ঔপনিবেশিক বাণিজ্য কোম্পানিগুলির উদ্ভব ঘটে (যেমন ওলন্দাজ ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি)। এগুলি এক অভূতপূর্ব বৈশ্বিক বিনিময়ের সূচনা করে (কলম্বীয় বিনিময় দেখুন)। ১৯শ শতাব্দীতে আধুনিক ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বাজারগুলি ও সমসাময়িক শিল্প বিপ্লব বাণিজ্যের চেহারা বদলে দেয়। ২০শ শতাব্দীতে উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে মুক্ত বাজার নীতিগুলির প্রচলন শুরু হয়, বহুজাতিক কর্পোরেশন ও ভোক্তা অর্থনীতিগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী দেশগুলিতে বিকাশ লাভ করে। অন্যদিকে সাম্যবাদী অর্থনীতিগুলিতে বাণিজ্যে সীমা বেঁধে দেওয়া হয়, ফলে ভোক্তার পছন্দ হ্রাস পায়। অধিকন্তু, ২০শ শতাব্দীর মধ্যভাগে আন্তঃমাধ্যম প্রমিত জাহাজের বাক্স (কন্টেইনার) প্রচলিত হলে আন্তঃমাধ্যম মালামাল পরিবহন আরও দক্ষ ও মসৃণ হয়ে ওঠে ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জমে ওঠে। ২০শ শতাব্দীর শেষে এসে বিশ্ব বাণিজ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলির ভাগ এক-চতুর্থাংস থেকে এক-তৃতীয়াংশে উন্নীত হয়।[5] ২১শ শতাব্দীতে বাণিজ্য উত্তরোত্তর অধিকতর প্রযুক্তিচালিত (বৈদ্যুতিন বাণিজ্য দেখুন), বিশ্বায়িত, সূক্ষ্মভাবে আইন-নিয়ন্ত্রিত, নৈতিকভাবে দায়িত্বশীল ও দীর্ঘস্থায়িত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ সময় বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক সমন্বয় (যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন) ও জোট (যেমন ব্রিকস)[6] এর চেহারা পুনরঙ্কন করছে।