Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মানুষ বাঘের স্বাভাবিক খাদ্য নয়। শিকারী জিম করবেট এর মতে বাঘ মানুষের রক্তের স্বাদ পেলে ও মানুষ বা অন্যজীব দ্বারা আহত হলে মানুষখেকো হয়ে ওঠে। বেশির ভাগ বাঘের আক্রমণের শিকার গ্রস্থ মানুষের কাছ থেকে জানা গিয়েছে যে বাঘের আক্রমণের সময় তারা বাঘের সীমানা মধ্যে ছিল।[1]। বিশ্বে একাধিক জায়গায় বাঘের আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। মুলত বাংলা বাঘ বেশি নরখাদক হয়।
২০০৪ সালের হিসেব মতে, সুন্দরবন প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের আবাসস্থল যা বাঘের একক বৃহত্তম অংশ।[2] এসব বাঘ উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, গড়ে প্রতি বছরে প্রায় ১০০ থেকে ২৫০ জন, মেরে ফেলার কারণে ব্যপকভাবে পরিচিত। মানুষের বাসস্থানের সীমানার কাছাকাছি থাকা একমাত্র বাঘ নয় এরা। বাঘের অভায়ারণ্যে চারপাশ ঘেরা বান্ধবগড়ে, মানুষের উপর এমন আক্রমণ বিরল। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া স্বত্ত্বেও ভারতীয় অংশেও মাঝেমাঝে মানুষের সাথে বাঘের সংঘর্ষ বাধে।
স্থানীয় লোকজন ও সরকারিভাবে দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা বাঘের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। স্থানীয় জেলেরা বনদেবী বনবিবির প্রার্থনা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে যাত্রা শুরুর আগে। সুন্দরবনে নিরাপদ বিচরণের জন্য বাঘের দেবতা দক্ষিণরায়ের প্রার্থনা করাও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে জরুরি। বাঘ যেহেতু সবসময় পেছন থেকে আক্রমণ করে সেহেতু জেলে এবং কাঠুরেরা মাথার পেছনে মুখোশ পরে। এ ব্যবস্থা স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করলেও পরে বাঘ এ কৌশল বুঝে ফেলে এবং আবারও আক্রমণ হতে থাকে। সরকারি কর্মকর্তারা আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়দের প্যাডের মত শক্ত প্যাড পরেন যা গলার পেছনের অংশ ঢেকে রাখে। এ ব্যবস্থা করা হয় শিরদাঁড়ায় বাঘের কামড় প্রতিরোধ করার জন্য যা তাদের পছন্দের আক্রমণ কৌশল।
এসব বাঘ কেন মানুষকে আক্রমণ করে তার কিছু অনুমিত কারণ এরকমঃ
একজোড়া বাংলা বাঘ , পূর্ব কুমায়াউনের চৌগড় এলাকায় ৫ বছর ধরে ১৫০০ বর্গমাইল জুড়ে ৬৪ মানুষের প্রাণ নেয়। এরা ছিল একটি বাঘিনী ও তার কিশোর শাবক। জিম করবেট এদের শিকার করেন।
এই বাঘ পেন্নাগ্রাম এলাকার সাতজনের প্রাণ নেয়। এই বাঘের কোন শারীরিক সমস্যা ছিল না। এই বাঘকে কেনেথ আ্যন্ডারসন শিকার করেন।
এটি এক যুবা বাঘ ছিল। নীল্গিরি অঞ্চলের মালাবার-উইনাড এলাকায় এই বাঘ শিকার করত। এই বাঘের এক চোখ ছিল না। এই বাঘ মারার মোট ৫বার চেষ্টা করা হয়। কেনেথ আ্যন্ডারসন এর শিকার করেন।[3]
এই কুখ্যাত বাঘিনী নেপাল থেকে তাড়া খোয়ার আগে ২০০ মানুষকে শিকার করে। পরে ভারতে এসে মোট ৪৩৬ জনের প্রাণ নেয়। ১৯১১ সালে জিম করবেট এই বাঘিণীকে শিকার করেন।[4] এই বাঘিণী প্রকাশ্য দিবালোকেও গ্রামে হামলা করত।[5]
এই বাঘিনীর শেষ শিকার এক ষোড়শী, যার রক্তচিহ্ন দেখে জিম করবেট এই বাঘিনীকে শিকার করতে স্কষ্ম হন[5] এই বাঘিনীর ডান দিকের শ্বদন্ত ভাঙা ছিল। এই অক্ষ্মতা তাকে নরখাদক বানিয়ে তোলে বলে করবেট দাবী করেন।[6]
জৌলাগিরির বাঘিনী ১৫ জন মানুষকে শিকার করে। এই বঘিনী গুণ্ডালাম এলাকায় জৌলাগিরি গ্রামে আতঙ্ক তৈরি করেছিল। এই বাঘকে কেনেথ আ্যন্ডারসন শিকার করেন।
* লালগড়ের রয়েল বেঙ্গল টাইগার কাহিনী । অমিত মণ্ডল। প: মেদিনীপুর।)
হত্যা করা হল লালগড়ের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। লালগড়ের জঙ্গল দাপিয়ে বেড়ানো অবলা বাঘটি আজ দুপুরে (১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের ধেড়ুয়া ১ নং অঞ্চল ও চাঁদড়া বনবিভাগের (Chandra Forest Range) অন্তর্গত বাঘঘরা জঙ্গলে মারা পড়ল। স্থানীয় মানুষজন আজ বেলা ১ টা নাগাদ বাঘঘরার গভীর জঙ্গলে বাঘটিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, জঙ্গলের একদল শিকারির সম্মিলিত নিষ্ঠুর প্রচেষ্টার শিকার । পশুপ্রেমীদের আছে আজকের দিনটি খুবই কষ্টের। এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পশুপ্রেমীরা ক্ষোভে ফুসছেন। ফেসবুকে এই ঘটনার প্রতিবাদে ঝড় উঠেছে। পশুপ্রেমীদের দাবি– “বন্ধ হোক এই নিষ্ঠুর হত্যা।” সাথে সাথে তাদের প্রশ্ন–“কত আনন্দ আছে এই বন্যপ্রাণ হত্যার বীরত্বে ? তাহলে কে বেশি হিংস্র? নিরীহ বাঘটি না বীর শিকারির দল?”।
আজ ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল থেকেই এই জঙ্গলে বাঘের উপস্থিতির অনেক প্রমাণ মেলে। বাঘটি আগের দিন রাতে একটি প্রায় ১ কুইন্টাল মতো বুনো-শূকরের ৪০ শতাংশ (৪০ কেজি মতো) খেয়ে পাশের জঙ্গলে নির্ভিতে আশ্রয় নিয়েছিল। পায়ের ছাপও দেখা গিয়েছিল কাছাকাছি। সকালে কয়েক জন শিকারি বাঘের কাছাকাছি চলে আসে। প্রান বাঁচাতে বাঘটি দুজনকে আক্রমণ করে। নখের আঁচড়ে আহত দুজন স্থানীয় দেপাড়া গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হয়। বন দফতর অনেক সময় পেয়েও বাঘটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার (rescue) করতে পারলো না।
আজ সকালেই পশ্চিম মেদিনীপুরের এই বাঘঘরার জঙ্গলে স্থানীয় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ জন যুবক জঙ্গলে শিকার করতে গিয়েছিল। সেইসময় তাদের উপর আক্রমণ করে বাঘটি। তার ঘণ্টা খানেক পরে এই জঙ্গলেই স্থানীয় গ্রামবাসীরা দেখতে পেলেন বাঘের দেহ। শিকারিদের আক্রমণেই বাঘটির মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।
গত ২ রা মার্চ, ২০১৮ লালগড়ের জঙ্গলে প্রথম রয়্যাল বেঙ্গলের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে বন দফতরের বসানো ট্র্যাপ ক্যামেরায়। তারপর বিগত এক-দেড়মাস ধরে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়-লালগড়-শিয়াড়বনী-বাঘঘরা-চাঁদড়া-গুড়গুড়িপাল সংলগ্ন বনাঞ্চলে ঐ বাঘের উপস্থিতির প্রমাণ হিসেবে পায়ের ছাপ পাওয়া যাচ্ছিল। বহু কসরত করেও বন দফতর বাঘকে বাগে আনতে পারেনি। এরপর ৩১ শে মার্চ তিন জন শিকারিকে আক্রমণ করার পর তাদের তাড়া খেয়ে এই বাঘঘরার জঙ্গলের মধ্যে একটি শুকনো ক্যানেলের কার্লভাটের নিচে আশ্রয় নেয় বাঘটি। সেবার বাঘ ধরতে জালও পাতা হয়েছিল বন দফতরের তরফে। কিন্তু বেকায়দায় পড়া বাঘটি বন দফতরের কর্মীদের চোখে ধুলো দিয়ে, তাদের ছোড়া ঘুমপাড়ানি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় শেষমুহূর্তে জাল ছিঁড়ে পালায়। এরপরই এদিন বাঘঘরার জঙ্গল থেকে উদ্ধার হল বাঘের দেহ। বাঘটির শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। বাঘের গলায় বিঁধে রয়েছে বল্লমও। শিকারিদের আক্রমণেই বাঘটির মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মত। এই ঘটনায় বন দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।
প্রায় দেড় মাস আগে লালগড়ের মেলখেরিয়ার জঙ্গলে যার রাজকীয় হাঁটাচলা ক্যামেরাবন্দি হয়েছিল, শুক্রবার দুপুরে সেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মর্মান্তিক পরিনতি হল। ৩১ শে জানুয়ারি লালগড়ের জঙ্গলে বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়ার পর বনকর্মী, বনসুরক্ষা বাহিনীর তৎপরতা, ক্যামেরা, ড্রোন, ছাগল ও শূকরের টোপ দেওয়া ফাঁদ-খাঁচা কোনকিছুই বাঘকে উদ্ধার করতে কাজে এল না। ব্যর্থ হল বন দফতর। অনুমান শিকার উৎসবে জঙ্গলে যাওয়া এক দল শিকারি যুবকদের ছোড়া বল্লমের ঘায়েই ঘটলো এই অনভিপ্রেত ঘটনা। এ দিন বাঘের দেহ পাওয়ার ঘণ্টা খানেক আগেও নখের আঁচড়ে জখম হন দুই আদিবাসী যুবক। স্থানীয়দের মতে, এর পরই একদল শিকারি বাঘের খোঁজ শুরু করে। নাগালে পেয়েও যায়। শিকারিদের কারও ছোড়া বল্লমের ফলা বাঘের ডান কানের নিচে ঢুকে যায় ও ইটের ঘায়ে জখম হয় বাঘের চোখ। বন দফতরের তরফে বাঘটিকে ধরার চেষ্টা হয়েছিল বটে!! তবুও শেষ রক্ষা হলোনা। খুন হতে হলো বিপন্ন প্রজাতির তালিকা ভুক্ত মহার্ঘ্য আমাদের জাতীয় পশু বাঘটিকে, সর্বসাকুল্যে হাজার দুয়েক বাঘ রয়েছে দেশে। সমাপ্ত হল “লালগড় বাঘ আখ্যান”। লালগড়ের বাঘ-পর্বের এমন পরিসমাপ্তি কেউই চাননি। যে পশ্চিম মেদিনীপুর আরাবাড়ি “যৌথ বন সুরক্ষায়”(Joint Forest Management, JFM) দৃষ্টান্ত গড়ে জগৎ খ্যাত হয়েছিল, স্থিতিশীল (sustainable) বন সংরক্ষণের আধুনিক দৃষ্টান্ত গড়ে জুটে ছিল আন্তর্জাতিক “পল গেটি পুরস্কার”। সেখানে মানুষের হাতে এ ভাবে জাতীয় পশুর অকাল মৃত্যু লজ্জায় মেদিনীপুরের মাথা নত করে দিয়েছে। ১৩ ই এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষে বাঘ সংরক্ষণে 'জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ পর্যদের' (National Tiger Conservation Authority) পদক্ষেপে কালো দিন।
গত ৩০ শে মার্চ বাঘঘরার জঙ্গলে জালে ঘেরাও হওয়ার পর সুন্দরবন থেকে আসা বনকর্মীদের ছোড়া ঘুমপাড়ানি গুলি (ট্র্যাঙ্কুলাইজেসান প্রসেস) যদি লক্ষ্যভ্রষ্ট না হত, তাহলে আজ তার ঠিকানা নিশ্চিত ভাবে 'সুন্দরবনের ঝড়খালি টাইগার রিহ্যাবিটেসান সেন্টার' বা কোন অভয়ারণ্যে হত।
জঙ্গলে পড়ে রয়েছে ৭ ফুট দীর্ঘ ও ২৩০ কিলোগ্রাম ওজনের নধর ডোরাকাটা দেহটা। কানের কাছে দগদগে রক্ত ঝরিয়ে গেঁথে রয়েছে বল্লমের ফলা, শিকারিদের ছোড়া ইটের আঘাতে রক্ত ঝরছে একটা চোখ দিয়েও। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে অচেনা এলাকায় এসে এমনিতেই ভীত সন্ত্রস্ত ছিল বাঘটি। প্রায় দেড় দু-মাস ধরে বাঘটা এই জঙ্গলে একটা নিভৃত আশ্রয় খুঁজে গেল ৮-১০ কিলোমিটার অঞ্চল বা পরিধি (peripheries) জুড়ে। বনকর্মীরা গভীর জঙ্গলে তার একটা নিশ্চিন্ত ঠিকানা খুঁজে দেওয়ার বদলে গ্রামবাসীদের অযথা ভয় পাইয়ে দিলেন: 'জঙ্গলে হিংস্র পশুর আবির্ভাব হয়েছে, জঙ্গলে যাবেন না’ বলে। বাঘের গতিবিধির উপর নজর রাখা দূরে থাক, বরং লালগড়ের এক বন থেকে অন্য বনে, হাতি তাড়ানোর ঢঙে তাকে শুধু তাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন বনকর্মীরা। নতুন বাসভূমিতে (habitat) মানিয়ে নেওয়ার অদম্য চেষ্টা চালাচ্ছিল। নিজের প্রাণ বাঁচাতে নিভৃত বাসস্থান ও খাবারের খোঁজে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে মাঝে মধ্যে তার কাছাকাছি চলে আসা শিকারিদের উপর আক্রমণ করেছে ঠিকই, তা ছিল কেবল নিজের আত্মরক্ষার তাগিদে। আত্মরক্ষা ছাড়া তার আর কোনও উদ্দেশ্যই ছিল না। ফলে বাঘটি সেরকম প্রতিরোধ করতে পারলো না। এ দিন যখন শিকারিদের মুখোমুখি হয় লালগড়ের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, তখন সে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিল। হঠাৎ সামনে এক দল মানুষ দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে, প্রথমে দু’জনকে জখম করলেও পরে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। তাই বল্লমের মুখে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। খাদ্য ও আশ্রয়ের খোঁজে এসে তাই গুম খুন হয়ে গেল ভিন্ দেশি অতিথি। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বাঘটা কিন্তু কাউকে মারেনি। অথচ আমাদেরই সভ্য সমাজের কেউ ওকে মেরে ফেলল। তাই এই ঘটনায় মন খারাপ আপামর জনসাধারণের।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.