ফার্মি কূটাভাস
From Wikipedia, the free encyclopedia
ফার্মির কূটাভাস হলো বহির্জাগতিক সভ্যতা থাকার উচ্চ সম্ভাবনার বিপরীতে আপাতদৃষ্টিতে এর কোনো নিদর্শন না পাবার, অথবা ভিন্ন কোনো সভ্যতার সাথে মানুষের যোগাযোগ না হবার কূটাভাস (Paradox)।
কার্ল সেগানের মতে, মহাবিশ্বের বয়স এবং এতে অবস্থিত বিপুল পরিমাণ তারকারাজির সংখ্যা নির্দেশ করে যে, পৃথিবীর মতো গ্রহ যদি সাধারণ হয়, তবে বহির্বিশ্বিক প্রাণও তেমনই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।[1] ১৯৫০ সালে পদার্থবিদ এনরিকো ফার্মি সেগানের এই কথায় মন্তব্য করেন, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে প্রাণ যদি এতই সহজলভ্য হবে, তবে কেন এখনো কোন গ্রহান্তরের মহাকাশযান অথবা স্পেসপ্রোব দেখা যায় নি। এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা শুরু হয় যখন ১৯৭৫ সালে মাইকেল হার্ট এর ওপর একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন যা ফার্মি-হার্ট কূটাভাস নামে পরিচিত।[2] এরকম আরো একটি আলোচিত বিষয় হলো "অসীম নিস্তব্ধতা"।[3] এই তত্ত্বটি এটা নির্দেশ করে, যে যদি ভ্রমণ অপেক্ষাকৃত কঠিন হয়ও, কিন্তু প্রাণ তো আছে, তবে কেন মানুষ কখনোই পৃথিবীর বাইরে বুদ্ধিমান প্রাণীদের কোন রেডিও ট্রান্সমিশন ধরতে পারেনি?
বহির্জাগতিক সভ্যতার অস্তিত্ব প্রমাণ করে ফার্মি কূটাভাস সমাধান করার নানান প্রচেষ্টা হয়েছে, আবার মানব জ্ঞানের বাইরে এমন প্রাণের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব, এমনটি ধারণা করা হয়েছে। আবার এর বিপক্ষেও যুক্তি দাঁড় করানো হয় যে, পৃথিবীর বাইরে প্রাণের কোন অস্তিত্ব নেই, অথবা থাকলেও তা সংখ্যায় এতই কম যে মানুষের পক্ষে কখনোই তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে না।
মাইকেল হার্টের মতানুসারে, এখন পর্যন্ত বহির্বিশ্বিক প্রাণ এবং এর সম্ভাব্য বিভিন্ন মডেল নিয়ে প্রচুর বৈজ্ঞানিক ধারণা তৈরি করা হয়েছে, এবং ফার্মি কূটাভাস এই সংক্রান্ত কাজের প্রসঙ্গ কাঠামোয় পরিণত হয়েছে। নানান বুদ্ধিবৃত্তিক গবেষণায় এ কূটাভাস অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, বাস্তুবিজ্ঞান এবং দর্শন ইত্যাদি বহুমুখী শাখায় এ নিয়ে অনুসন্ধান উস্কে দিয়েছে। জ্যোতিঃজীববিজ্ঞান নামক একটি নতুন শাখায় ফার্মি কূটাভাস এবং পৃথিবীর বাইরের প্রাণের সম্ভাবনা সংক্রান্ত আন্তঃবৈষয়িক গবেষণা হচ্ছে।