Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
প্রাণিভূগোল হল ভূগোলের প্রকৃতির সমাজ/মানব-পরিবেশ শাখার একটি উপক্ষেত্র। পাশাপাশি এটি মানব-প্রাণী অধ্যয়ন (এইচএএস) এর বৃহত্তর, আন্তঃবিষয়ক বিভাগের একটি অংশ। প্রাণী ভূগোলকে "ব্যবধান, স্থান, অবস্থান, পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের সাথে মানব-প্রাণীর সম্পর্কের জটিল জড়িয়ে পড়া অধ্যয়ন" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়,[1] অথবা বলা যায় “কোথায়, কখন, কেন এবং কীভাবে অ-মানব প্রাণী মানব সমাজের সাথে মিশে গেল,- তার অধ্যয়ন।”[2] সাম্প্রতিক কাজগুলি এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, যাতে মানুষ এবং প্রাণী সম্পর্কের বাস্তুশাস্ত্র কীভাবে বিজড়িত হয়ে গেছে, তা নিয়ে যুক্তি দ্বারা আলোচনা করা যায়। প্রাণীর বসবাসের স্থান এবং মানব ও অন্যান্য অ-মানব প্রাণীর সাথেও তাদের সংবেদনশীল ব্যবহার গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়।[3] ২০০৯ সালে আমেরিকান ভৌগোলিক সমিতির প্রাণিভূগোল বিশিষ্টতা মণ্ডলী প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা মনিকা ওগ্রা এবং জুলি আরবানিক।
প্রাণী ভূগোলের প্রথম তরঙ্গ, ভূ-প্রাণী- বিস্তার নামে পরিচিত, ১৮০০ শতকের শেষের দিকে থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক পর্যন্ত একটি ভৌগোলিক উপক্ষেত্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিল। এই সময়ে প্রাণীদের অধ্যয়নকে বিষয়েরর মূল অংশ হিসাবে দেখা হত এবং এর মূল লক্ষ্য ছিল "পৃথিবীতে প্রাণী কীভাবে ছড়িয়ে আছে এবং পরিবেশ ও প্রাণীদের পারস্পরিক প্রভাবের প্রসঙ্গে প্রাণীজগতের বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন।"[4] যে প্রাণীগুলি অধ্যয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল তারা সবাই বন্য প্রাণী এবং এবং ভূ-প্রাণীবিশারদগণ বিবর্তন এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের নতুন তত্ত্ব তৈরি করছিলেন। তাঁরা সময় এবং স্থান জুড়ে প্রাণীর প্রজাতির বিবর্তন এবং চলাচলের এক মানচিত্র করেছিলেন। প্রাণীগুলি বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের সাথে কীভাবে খাপ খাইয়েছে তাও বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। "মূল প্রয়াস ছিল, কীভাবে প্রাণীরা পৃথিবী জুড়ে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে বা, আরও ছোট আকারে দেখতে গেলে, প্রাণী এবং অন্যান্য পরিবেশগত কারণের মধ্যে স্থানিক সহ-অবস্থান্তরের নিদর্শন স্থাপন করার সাধারণ নিয়ম খুঁজে বার করা করা"।[5] মূল কাজগুলির মধ্যে ছিল নিউবিগিনের প্রাণী ভূগোল,[6][7] বার্থলোমিউ, ক্লার্ক, এবং গ্রিমশ এর অ্যাটলাস অফ জুজিওগ্রাফি,[8] এবং অ্যালি এবং শ্মিটের ইকোলজিকাল অ্যানিমাল জিওগ্রাফি।[4] বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, জীববিজ্ঞান এবং প্রাণিবিজ্ঞানের মতো উদীয়মান শাখাগুলি জৈব প্রজাতি, তাদের বিন্যাস এবং বাস্তুসংস্থানের চিরাচরিত প্রানি-ভূগোলের তালিকাভুক্তকরণের দায়িত্বগ্রহণ করা শুরু করে। আজকের দিনে ভূগোলের মত বিষয়ে প্রানি-ভূগোল হল জীবভূগোলের প্রবলভাবে সক্রিয় একটি উপক্ষেত্র।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে আবার কাজের ঢেউ প্রানি-ভূগোল থেকে সরে (অবশ্য সম্পূর্ণরূপে একে ত্যাগ করা হয়নি) বন্যজীবনের উপর মানুষের প্রভাব এবং প্রাণিসম্পদের সাথে মানুষের সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ নিয়ে খোঁজ শুরু হয়েছিল। প্রাণী ভূগোলের এই তরঙ্গকে রূপদানকারী দুজন মূল ভূগোলবিদ ছিলেন কার্ল সাউর এবং চার্লস বেনেট। সাউরের প্রাকৃতিক দৃশ্য বা সংস্কৃতি বাস্তুশাস্ত্রের প্রতি আগ্রহ - (কীভাবে মানব সংস্কৃতিগুলি আকার পেয়েছিল এবং পরিবেশ কীভাবে সেই আকার দিয়েছিল) - তা অবশ্যই জীবজন্তুর পোষ মানানোর বিষয়ের সাথে জড়িত। সাউরের গবেষণা- বন্য জন্তুকে পোষ মানানোর ইতিহাস এবং কীভাবে প্রাণিসম্পদের ব্যবহারে প্রাকৃতিক দৃশ্য আকার পেয়েছিল (বেড়া, চারণভূমি এবং আশ্রয়ের মাধ্যমে) - এই সব ঘিরে আবর্তিত।[9] বেনেট একটি ‘সাংস্কৃতিক প্রাণী ভূগোল’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন যেখানে মানুষের সংস্কৃতির সাথে জীবজন্তু কীভাবে জড়িত সেটি আলোচিত, যেমন জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রাণি শিকার এবং মৎস্য শিকার। [10] প্রাণি ভূগোলের প্রথম তরঙ্গ থেকে দ্বিতীয় তরঙ্গে স্থানান্তরের বিষয়টি প্রাণির প্রজাতির অধ্যয়নের সাথে সম্পর্কিত। দ্বিতীয় তরঙ্গে পশুর ভূগোল কেবল বন্যজীবের উপরে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে গৃহপালিত পশুসম্পদের ওপরেও নজর দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী কয়েক দশক ধরে প্রাণি ভূগোল, সংস্কৃতি বাস্তুশাস্ত্র হিসাবে, গৃহপালনার উৎস, গৃহপালন ঘিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন প্রাণিসম্পদ সংস্কৃতি (গৃহস্থ বনাম যাযাবর পশুপালন) সম্পর্কে গবেষণায় প্রাধান্য পেয়েছিল। মূল কাজগুলির মধ্যে ছিল সিমুনস এবং সিমুনস এর এ সেরিমোনিয়াল অক্স অফ ইণ্ডিয়া,[11] গ্যাড এর গিনিপিগ নিয়ে কাজ,[12] এবং ক্যানসডেলের অ্যানিম্যালস অ্যাণ্ড ম্যান।[13] বল্ডউইন[14] দ্বিতীয় তরঙ্গ প্রাণি ভূগোল গবেষণার একটি চমৎকার নিরীক্ষণ প্রস্তুত করেছেন।
১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে প্রাণী এবং মানব-প্রাণী সম্পর্ক নিয়ে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে, যেজন্য ভূগোলবিদেরা প্রাণি ভূগোলের মধ্যে কী কী সম্ভাবনা আছে তা নিয়ে পুনর্বিবেচনা করার প্রতি আগ্রহান্বিত হয়ে ওঠেন। ১৯৮০ এর দশকে এবং ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে বিশ্বব্যাপী প্রাণির অধিকারকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের উত্থান দেখা গিয়েছিল। পোষ্য প্রাণীর সংখ্যা থেকে শুরু করে বিপন্ন প্রজাতির সংরক্ষণ, শিল্প কৃষিতে পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার প্রকাশ (পশু খামার বা কেন্দ্রীভূত পশু খাওয়ানোর ক্রিয়াকলাপ), সার্কাসে পশুর প্রতি ব্যবহার, পশু পশম ব্যবহার, এবং শিকার – এই সমস্তই একটা প্রচেষ্টা ছিল মানুষ কীভাবে মানবেতরদের সঙ্গে আচরণ করে তা সকলের সামনে তুলে ধরার। শিক্ষায়তনে জীববিজ্ঞানী এবং নীতিবিদেরা প্রাণীর আচরণ এবং প্রজাতির ক্ষতি / আবিষ্কার সম্পর্কে মানুষের পাশাপাশি প্রাণীদের পরীক্ষামূলক জীবন ও তাদের বিপদজনক অস্তিত্ব সম্পর্কে সকলের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণা করছিলেন। সমাজ বিজ্ঞানীরা, আলোচ্য বিষয় কোনগুলি, তা পুনর্বিবেচনা করছিলেন এবং প্রকৃতির সযত্নে রক্ষিত তথ্য ভাণ্ডারে খোঁজ করছিলেন। তাঁরা মানুষ এবং গ্রহের বাকী প্রাণির মধ্যে কি সম্পর্ক তা বোঝার চেষ্টা করছিলেন। প্রাণি ভূগোলবিদরা বুঝতে পেরেছিলেন যে মানব-প্রাণী সম্পর্কের পুরো বিস্তার রয়েছে, ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে যার সমাধান করা উচিত। প্রাণী ভূগোলের এই তৃতীয় তরঙ্গের অগ্রভাগে ছিল পোষা প্রাণীর উপর তুয়ানের কাজ ডমিনেন্স অ্যাণ্ড অ্যাফেকশান। [15] এবং ওলচ এবং এমেল সম্পাদিত এনভায়রনমেন্ট অ্যাণ্ড প্ল্যানিং ডি: সোসাইটি অ্যাণ্ড স্পেস জার্নালের একটি বিশেষ সংখ্যা।[16]
প্রাণই ভূগোলের তৃতীয় তরঙ্গের দুটি মূল বৈশিষ্ট্য যা একে পূর্বের তরঙ্গগুলির থেকে পৃথক করেছিল, সেগুলি হল (১) মানব-প্রাণী সম্পর্কের একটি বর্ধিত ধারণা মানব ও পশুর মুখোমুখি হওয়ার সমস্ত সময়কাল এবং অবস্থান এর অন্তর্ভুক্ত (কেবল বন্যজীবন বা খামারের পশুপাখি নয়), এবং (২) প্রাণীদের নিজেদের আলোচনার বস্তু হিসেবে নিয়ে আসা। ১৯৯৫ সালে প্রকাশনার পর থেকে ঘটনা সমূহ লক্ষ্য করা এবং তার ভিত্তিতে মত গঠন করা বেড়ে গিয়েছিল। তৃতীয় তরঙ্গে প্রাণি ভূগোলকে একত্রিত করেছিল এমন মূল কাজগুলি হ'ল ওলচ এবং এমেলের অ্যানিম্যাল জিওগ্রাফিজ: প্লেস, পলিটিক্স অ্যাণ্ড আইডেন্টিটি ইন দ্য নেচার-কালচার বর্ডারল্যাণ্ডস,[17] ফিলো এবং উইলবার্টের অ্যানিম্যাল স্পেসেস, বিস্টলি প্লেসেস: নিউ জিওগ্রাফিজ অফ হিউম্যান-অ্যানিম্যাল রিলেশনস,[18] আরবানিকের প্লেসিং অ্যানিম্যালস: অ্যান ইনট্রোডাকশান টু দ্য জিওগ্রাফি অফ হিউম্যান-অ্যানিম্যাল রিলেশনস,[19] গিলস্পি এবং কোলার্ডের ক্রিটিক্যাল অ্যানিম্যাল জিওগ্রাফিজ: পলিটিক্স, ইন্টারসেকশান অ্যাণ্ড হায়ারারকিজ ইন এ মাল্টিস্পেসিস ওয়ার্ল্ড,[20] এবং উইলকক্স ও রাদারফোর্ডের হিস্টরিক্যাল অ্যানিম্যাল জিওগ্রাফিজ।[21]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.