হুয়াংহো নদী
চীনের নদী / From Wikipedia, the free encyclopedia
হুয়াংহো নদী (黃河, ফিনিন:Huáng hé, আ-ধ্ব-ব:[xwǎŋ xɤ̌], শুনুনⓘ)[টীকা 1] উত্তর চীনের সর্বপ্রধান নদী। ৫৪৬৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট হুয়াংহো চীনের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী (ছাং চিয়াং তথা ইয়াং ৎসি চিয়াং নদীর পরেই) ও বিশ্বের ৬ষ্ঠ দীর্ঘতম নদী।[1] চীনা ভাষায় হুয়াং হো কথাটির অর্থ "পীত (হলুদ) নদী"। নদীটির পানি কর্দমাক্ত হলুদাভ বলে এই নাম দেওয়া হয়েছে।
হুয়াংহো নদী বা পীত নদী | |
---|---|
স্থানীয় নাম | 黄河 (Huáng Hé) {{স্থানীয় নামের পরীক্ষক}} ত্রুটি: একাধিক নামের জন্য তালিকাযুক্ত মার্কআপ প্রত্যাশিত (সাহায্য) |
অবস্থান | |
দেশ | গণচীন |
প্রদেশ | ছিংহাই, সিছুয়ান, কানসু, নিংশিয়া, অন্তর্দেশীয় মঙ্গোলিয়া, শাআনশি, শানশি, হনান, শানতুং |
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য | |
উৎস | বায়ান হার পর্বতমালা |
• অবস্থান | ইউশু জেলা, ছিংহাই |
• স্থানাঙ্ক | ৩৪°২৯′৩১″ উত্তর ৯৬°২০′২৫″ পূর্ব |
• উচ্চতা | ৪,৮০০ মি (১৫,৭০০ ফু) |
মোহনা | বোহাই সাগর |
• অবস্থান | Kenli District, Dongying, শানতুং |
• স্থানাঙ্ক | ৩৭°৪৫′৪৭″ উত্তর ১১৯°০৯′৪৩″ পূর্ব |
• উচ্চতা | ০ মি (০ ফু) |
দৈর্ঘ্য | ৫,৪৬৪ কিমি (৩,৩৯৫ মা) |
অববাহিকার আকার | ৭,৫২,৫৪৬ কিমি২ (২,৯০,৫৬০ মা২) |
নিষ্কাশন | |
• গড় | ২,৫৭১ মি৩/সে (৯০,৮০০ ঘনফুট/সে) |
• সর্বনিম্ন | ১,০৩০ মি৩/সে (৩৬,০০০ ঘনফুট/সে) |
• সর্বোচ্চ | ৫৮,০০০ মি৩/সে (২০,০০,০০০ ঘনফুট/সে) |
অববাহিকার বৈশিষ্ট্য | |
উপনদী | |
• বামে | ফেন নদী (এবং অনেক ছোট নদী ) |
• ডানে | টাও নদী, Wei River (এবং অনেক ছোট নদী) |
হুয়াংহো নদী | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
চীনা নাম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
সরলীকৃত চীনা | 黄河 | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 黃河 | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
পোস্টাল | Hwang Ho | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||
তিব্বতি নাম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
তিব্বতি | རྨ་ཆུ། | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||
মঙ্গোলীয় নাম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
মঙ্গোলীয় | Хатан гол Ȟatan Gol Шар мөрөн Šar Mörön |
হুয়াংহো নদীটি পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশের বায়ান হার পর্বতমালার উত্তরাংশে উৎপত্তিলাভ করে দ্রুত অনেকগুলি গভীর গিরিখাতে পতিত হয়েছে, এরপর মাঝপথে এটি প্রথমে উত্তর-পূর্ব, তারপরে পূর্ব ও সবশেষে দক্ষিণ দিকে একটি বিশাল প্যাঁচ দিয়ে ঘুরে উত্তর-পশ্চিম চীনের ওর্দোস মরুভূমি ও লোয়েস মালভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে (লোয়েস হল এক ধরনের ভঙ্গুর মাটি, যা দিয়ে ঐ মালভূমিটি গঠিত), ফলে বিপুল পরিমাণ হলুদ-বাদামী পলিমাটি বায়ুবাহিত হয়ে বা ধুয়ে নদীতে পড়ে। এই মাঝপথে ফেন নদী ও সর্বপ্রধান উপনদী ওয়েই নদীটি হুয়াংহোর সাথে যুক্ত হয়েছে। মালভূমি থেকে নিচে পতিত হয়ে নদীটি পূর্বদিকে মোড় নিয়ে (হনান প্রদেশের উত্তর ভাগ থেকে) উত্তর চীন সমভূমির মধ্য দিয়ে ও সব মিলিয়ে নয়টি প্রদেশ অতিক্রম করে শানতুং প্রদেশের তুংইং শহরের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরের পীত সাগরের পোহাই উপসাগরে পতিত হয়েছে। মোহনা থেকে ৮০ কিলমিটার পর্যন্ত নদীটি একটি জলাভূমি গঠন করেছে। হুয়াংহো নদীর অববাহিকা অঞ্চলটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১৯০০ কিলোমিটার প্রশস্ত ও উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটির মোট নিকাশ এলাকার আয়তন প্রায় ৭,৯৫,০০০ বর্গকিলোমিটার (বাংলাদেশের আয়তনের ৫ গুণেরও বেশি)।
হুয়াংহো নদীর পানি অত্যন্ত পলিবহুল, প্রতি ঘনফুট পানিতে প্রায় ১ কিলোগ্রাম পলিমাটি থাকে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। পলি জমে জমে নদীর তলদেশ ক্রমাগত উত্তোলিত হবার কারণে (কখনও কখনও নদীর তীরের চেয়েও বেশি উঁচু হয়ে যায়) নদীটি এর নিম্নভূমি পর্যায়ে প্রায়শই গতিপথ পরিবর্তন করে (এ পর্যন্ত ২৬ বার) ও বাঁধ উপচে বন্যা ঘটায় (এ পর্যন্ত ১৬০০ বারের বেশি)। বন্যার কারণে দুর্ভিক্ষ-মহামারী হয়ে প্রতিবার বহু লক্ষ চীনা মারা যেত। এ কারণে হুয়াংহোকে "চীনের দুঃখ" বা "অশ্রুর নদী" নামেও ডাকা হয়। হুয়াংহো নদীর প্লাবনের ফলে উর্বর পলিমাটি উত্তর চীনের সমভূমিতে জমা হয়, যার ফলে সেখানে চাষাবাদ অনেক ভালো হয়। এ কারণে বহু হাজার বছর ধরে চীনারা উত্তর চীন সমভূমিতে কৃষিকাজ করে আসছে। হুয়াংহো নদীর তীরে খ্রিস্টপূর্ব ১৭শ শতক নাগাদ একটি বিরাট চীনা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকের আগে থাকেই চীনারা হুয়াংহোর বন্যা থেকে রক্ষা পাবার জন্য তীর ঘেঁষে বাঁধ নির্মাণ করা শুরু করে, কিন্তু বাঁধ ভেঙে গেলে বিরাট দুর্যোগের সৃষ্টি হয়। ১৯৫০-এর দশক থেকে চীনা সরকার নদীটির উপরে অনেক বড় বড় বাঁধ বসানো শুরু করে, ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য পানি ধরে রাখার মতো কাজগুলি সম্ভব হয়েছে।
হুয়াংহো নদীর অববাহিকা প্রাচীন চীনা সভ্যতা এবং এর সূত্র ধরে দূরপ্রাচ্য সভ্যতার আঁতুড়ঘর।[2] একে চীনের মাতৃনদী নামেও ডাকা হয়। এটি চীনের ইতিহাসের প্রথম দিকের সবচেয়ে সমৃদ্ধ অঞ্চল ছিল। চীনের শাআনশি প্রদেশের লানথিয়েন উপজেলাতে হোমো ইরেক্টাস নামের আদি মানবের ফসিল পাওয়া গেছে, যারা আজ থেকে ১১ লক্ষ বছর আগে হুয়াংহো নদীর অববাহিকা অঞ্চলে বাস করত বলে ধারণা করা হয়। চীনা কিংবদন্তি অনুযায়ী চীনা জাতির অন্যতম পূর্বপুরুষ পীত সম্রাট আজ থেকে ৪ হাজার বছর আগে এই নদীর অববাহিকায় হনান প্রদেশের শিনচেং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর তিন হাজার বছর ধরে চীনের ইতিহাসের বেশ কিছু প্রধান রাজবংশ তাদের রাজধানীগুলিকে (বিশেষ করে আন-ইয়াং ও লুও-ইয়াং) এই অববাহিকায় স্থাপন করে, ফলে অঞ্চলটি চীনদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়। এখানেই প্রাচীন চীনের চারটি বিরাট উদ্ভাবন ঘটেছিল: মুদ্রণকৌশল, কাগজ প্রস্তুতি, বারুদ ও দিকনির্ণয় যন্ত্র। সব মিলিয়ে এই নদী ৫ হাজার বছরের পুরনো চীনা সংস্কৃতি ও সভ্যতার জন্মস্থল। নদীশাসনের ফলে যে খাদ্যশস্যের বিরাট বাড়তি হয়, সেটিকে ব্যবহার করে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে ছিন রাজবংশ চীনের সামরিক ও রাজনৈতিক সম্প্রসারণ শুরু করে।
বর্তমানে চীনে নদীটির গুরুত্ব অপরিসীম। নদীটি চীনের ছিংহাই, সিছুয়ান, কানসু , নিংশিয়া, অন্তর্দেশীয় মঙ্গোলিয়া, শাআনশি, শানশি, হনান ও শানতুং প্রদেশগুলির ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। লানচৌ, ইনছুয়ান, উহাই, পাওথৌ, লুও-ইয়াং, চেংচৌ, খাইফেং ও চিনান নদীর উপরে অবস্থিত কিছু প্রধান নগরী। এটি চীনের প্রায় ১২% জনসংখ্যা ও ৬০টি শহরে পানি সরবরাহ করে, চীনের প্রায় ১৫% আবাদী জমিতে সেচের পানির যোগান দেয় এবং চীনের মোট জাতীয় উৎপাদনের ১৪% এই নদীর উপর নির্ভরশীল।