পিথাগোরাস
গ্রিক দার্শনিক ও গণিতবিদ / From Wikipedia, the free encyclopedia
সামোসের পিথাগোরাস (প্রাচীন গ্রিক: Πυθαγόρας ὁ Σάμιος Pythagoras the Samian, অথবা শুধু পিথাগোরাস; ৫২৭– ৪৯৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ [1][2]) ছিলেন একজন আয়োনীয় গ্রিক দার্শনিক, গণিতবিদ এবং পিথাগোরাসবাদী ভ্রাতৃত্বের জনক যার প্রকৃতি ধর্মীয় হলেও তা এমন সব নীতির উদ্ভব ঘটিয়েছিল যা পরবর্তীতে প্লেটো এবং এরিস্টটলের মত দার্শনিকদের প্রভাবিত করেছে।[3] তিনি এজিয়ান সাগরের পূর্ব উপকূল অর্থাৎ বর্তমান তুরস্কের কাছাকাছি অবস্থিত সামোস দ্বীপে জন্মেছিলেন। ধারণা করা হয় শৈশবে জ্ঞান অন্বেষণের তাগিদে মিশরসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। ৫৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত গ্রিক কলোনি ক্রোতোনে চলে যান, এবং সেখানে একটি আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক ভ্রাতৃত্বমূলক সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। তার অনুসারীরা তারই নির্ধারিত বিধি-নিষেধ মেনে চলত এবং তার দার্শনিক তত্ত্বসমূহ শিখতো। এই সম্প্রদায় ক্রোতোনের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে যা তাদের নিজেদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাড়ায়। এক সময় তাদের সভাস্থানগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং পিথাগোরাসকে বাধ্য করা হয় ক্রোতোন ছেড়ে যেতে। ধারণা করা হয় জীবনের শেষ দিনগুলো তিনি দক্ষিণ ইতালিরই আরেক স্থান মেতাপোন্তুমে কাটিয়েছিলেন।
পিথাগোরাস (Πυθαγόρας) | |
---|---|
জন্ম | ৫২৭/ ৫৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ সামোস, তুরস্কের উপকূলবর্তী এজিয়ান সাগরের দ্বীপ |
মৃত্যু | ৪৯৭/৪৯৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (৭৫ বছরের কম বয়সে) মেতাপোন্তুম, দক্ষিণ ইতালি |
যুগ | প্রাচীন দর্শন |
অঞ্চল | পাশ্চাত্য দর্শন |
ধারা | পিথাগোরাসবাদ |
প্রধান আগ্রহ | অধিবিদ্যা, সংগীত, গণিত, নীতিশাস্ত্র, রাজনীতি |
উল্লেখযোগ্য অবদান | মুজিকা উনিভের্সালিস, , Pythagorean tuning, পিথাগোরাসের উপপাদ্য |
ভাবগুরু
| |
ভাবশিষ্য | |
পিথাগোরাস কিছু লিখেননি এবং সমসাময়িক কারও রচনাতেও তার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। উপরন্তু ১ম খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে তাকে বেশ অনৈতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হতে থাকে। সে সময় ভাবা হতো পিথাগোরাস একজন স্বর্গীয় সত্তা এবং গ্রিক দর্শনে যা কিছু সত্য (এমনকি প্লেটো এবং এরিস্টটলের অনেক পরিণত চিন্তাধারা) তার সবই তিনি শুরু করেছেন। এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে এমনকি কিছু গ্রন্থ পিথাগোরাস ও পিথাগোরাসবাদীদের নামে জাল করা হয়েছিল। তাই তার সম্পর্কে সত্যটা জানার জন্য মোটামুটি নির্ভেজাল এবং প্রাচীনতম প্রমাণগুলোর দিকে তাকাতে হবে কারণ স্পষ্টতই পরবর্তীরা তার ব্যাপারে তথ্য বিকৃতি ঘটিয়েছিল।
বর্তমানে পিথাগোরাস প্রধাণত গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত হলেও প্রাচীনতম প্রমাণ বলছে, তার সময় বা তার মৃত্যুর দেড় শত বছর পর প্লেটো ও এরিস্টটলের সময়ও তিনি গণিত বা বিজ্ঞানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন না। তখন তিনি পরিচিত ছিলেন, প্রথমত মৃত্যুর পর আত্মার পরিণতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ যিনি ভাবতেন আত্মা অমর এবং ধারাবাহিকভাবে তার অনেকগুলো পুনর্জন্ম ঘটে, দ্বিতীয়ত, ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান বিষয়ে পণ্ডিত, তৃতীয়ত একজন ঐন্দ্রজালিক যার স্বর্ণের ঊরু আছে এবং যিনি একইসাথে দুই স্থানে থাকতে পারেন এবং চতুর্থত, একটি কঠোর জীবন ব্যবস্থা যাতে খাদ্যাভ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং আচারানুষ্ঠান পালন ও শক্ত আত্ম-নিয়ন্ত্রয়ণের নির্দেশ আছে তার জনক হিসেবে।[4]
কোনগুলো পিথাগোরাসের কাজ আর কোনগুলো তার উত্তরসূরিদের কাজ তা নির্ধারণ করা বেশ কষ্টকর। তারপরও ধারণা করা হয় পিথাগোরাস বস্তুজগৎ ও সঙ্গীতে সংখ্যার গুরুত্ব ও কার্যকারিতা বিষয়ক তত্ত্বের জনক।[3] অন্যান্য প্রাক-সক্রেটীয় দার্শনিকের মতো তিনিও বিশ্বতত্ত্ব নিয়ে ভেবেছিলেন কিনা এবং আসলেই তাকে গণিতবিদ বলা যায় কিনা এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে প্রাচীনতম নিদর্শন বলছে, পিথাগোরাস এমন একটি বিশ্বজগতের ধারণা দিয়েছিলেন যা নৈতিক মানদণ্ড এবং সাংখ্যিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গঠিত। প্লেটোর মহাজাগতিক পুরাণে যেসব ধারণা পাওয়া যায় তার সাথে এর বেশ মিল আছে। বিভিন্ন সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তিনি খুব আগ্রহী ছিলেন যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ পিথাগোরাসের উপপাদ্য। যার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে গণিতের ত্রিকোণমিতি নামক একটি শাখা।কিন্তু এই উপপাদ্য তিনি প্রমাণ করেছিলেন বলে মনে হয় না। সম্ভবত পিথাগোরীয় দর্শনের উত্তরসূরিরাই এর প্রকৃত প্রতিপাদক। এই উত্তরসূরিরা তাদের গুরুর বিশ্বতত্ত্বকে দিনদিন আরও বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক দিকে নিয়ে গেছে যাদের মধ্যে ফিলোলাউস এবং Archytas উল্লেখযোগ্য। পিথাগোরাস মৃত্যু-পরবর্তী আত্মার অপেক্ষাকৃত আশাবাদী একটি চিত্র দাঁড় করিয়েছিলেন এবং জীবন যাপনের এমন একটি পদ্ধতি প্রদান করেছিলেন যা দৃঢ়তা ও নিয়মানুবর্তিতার কারণে অনেককে আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছিল।[4] বলা হয়ে থাকে তিনিই প্রথম যে নিজেকে দার্শনিক বা প্রজ্ঞার প্রেমিক হিসেবে দাবি করেছিলেন।[5]