Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পালোয়ানী (Pehlwani)[1] কুস্তি নামেও পরিচিত রেস্টলিং এর একটি সংস্করণ যা ভারতীয় উপমহাদেশ চালু আছে। এটি মুঘল সাম্রাজ্য এ ফারসি কুস্তি পাহলভানি কে দেশীয় ভারতীয় মল্লযুদ্ধ এর সাথে একত্রিত করে তৈরি করা হয়েছিল।[2][3] পালোয়ানী এবং কুস্তি শব্দটি এসেছে ফার্সি শব্দ থেকে যথাক্রমে পাহলভানি (নায়কোচিত) এবং কুস্তি (অর্থ হত্যাকাণ্ড) যার অর্থ নায়কোচিত কুস্তি। সম্ভবত এই শব্দটি ইরানীয় শব্দ "পহ্লভি" (Pehalavi) থেকে এসেছে যা দিয়ে ইরানি বংশোদ্ভূত লোকদের বোঝানো হয়।
অন্য যে নামে পরিচিত | কুস্তি |
---|---|
লক্ষ্য | কুস্তি গ্র্যাপলিং |
উৎপত্তির দেশ | ভারতীয় উপমহাদেশ |
বিখ্যাত অনুশীলনকারী | বাবর দ্য গ্রেট গামা ভোলু পালোয়ান নাথমাল পালোয়ান বান্দা বাহাদুর হরিশচন্দ্র বিরাজদার যতীন্দ্র চরণ গোহ দারা সিং সুশীল কুমার খাশাবা যাদব |
মূল | কুস্তি পাহলভানি মল্লযুদ্ধ |
পরবর্তী আর্ট | ক্যাচ রেসলিং, শুটিং কুস্তি, ফোকস্টাইল কুস্তি, ফ্রিস্টাইল কুস্তি, মিশ্র মার্শাল আর্টস (এমএমএ) |
অলিম্পিক খেলা | না |
এই ক্রীড়ায় একজন খেলোয়াড়কে পালোয়ান (নায়ক এর জন্য ফারসি উৎপন্ন শব্দ) হিসাবে অভিহিত করা হয় এবং শিক্ষক ওস্তাদ নামে পরিচিত হন (শিক্ষক বা মাস্টার এর জন্য ফারসি শব্দ)।[3] পালোয়ানীর অন্যতম বিখ্যাত অনুশীলনকারী ছিলেন দ্য গ্রেট গামা (গোলাম মোহাম্মদ বকশ বাট) যাঁকে সর্বকালের অন্যতম সেরা কুস্তিগির হিসাবে বিবেচনা করা হয়। প্রফেসর রামমূর্তি ছিলেন আর এক জন উদাহরণ।[4] ক্যাচ রেসলিং ব্যাপকভাবে পালোয়ানী দ্বারা প্রভাবিত।[5][6] যার ফলে ফোকস্টাইল কুস্তি, ফ্রিস্টাইল কুস্তি এবং মিশ্র মার্শাল আর্টস (এমএমএ) অনুপ্রাণিত হয়েছিল।[7]
প্রাচীন ভারত কুস্তির এমন রূপকে বলা হয় মল্লযুদ্ধ।[3] কমপক্ষে ৫ম সহস্রাব্দ থেকে এই অনুশীলন শুরু হয়েছিল।[8][9] ত্রয়োদশ শতাব্দীর গ্রন্থ মল্ল পুরাণ বর্ণিত এই ক্রীড়া ছিল আধুনিক কুস্তির পূর্বসূরী।[2]
ষোড়শ শতাব্দীতে মধ্য এশীয় মুঘল জাতি উত্তর ভারত জয় করেছিলেন যাঁরা তুরস্কো-মঙ্গোল বংশোদ্ভূত ছিলেন। ইরানি এবং মঙ্গোলিয়ান কুস্তির প্রভাবে সময় কালে স্থানীয় মল্লযুদ্ধ পার্সিয়ান কুস্তি দ্বারা উপস্থাপিত হয়ে যায়। মজার বিষয় হল মল্লযুদ্ধের আখাদ (কুস্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র) সংস্কৃতি তখনও টিকে ছিল। তাতে শিক্ষার্থীরা হবেন নিরামিষভোজী, রান্না করা, ব্রহ্মচারী হওয়া প্রভৃতির সযত্ন প্রতিপালন তাঁদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা হত।
প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর নিজেই একজন কুস্তিগির ছিলেন এবং জনশ্রুতি আছে তিনি প্রতিটি বাহুর নীচে একজনকে ধরে রেখে দীর্ঘ দূরত্ব খুব দ্রুত চলতে পারতেন। মুঘল-যুগের কুস্তিগিররা কখনও কখনও এক হাতে বাঘনখ পরতেন যা স্থানে স্থানে নখি কা কুস্তি বা "নখওয়ালা কুস্তি" নামে পরিচিত ছিল।
সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে রামদাস হিন্দুদেরকে মহান ভগবান হনুমান এর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শারীরিক ক্রিয়ায় উৎসহিত করে দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। মারাঠা শাসকরা টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নদের জন্য মোটা অঙ্কের পুরষ্কারের টাকা দিয়ে কুস্তিকে সমর্থন করতেন। শোন যায় যে সেই সময়ে প্রতিটি মারাঠা ছেলে কুস্তি করতে পারতেন এবং এমনকি মহিলারাও এই খেলায় অংশ নিতেন। উপনিবেশিক আমলে স্থানীয় রাজকুমাররা ম্যাচ এবং প্রতিযোগিতা আয়োজন করে কুস্তির জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছিলেন। রেসলিং হ'ল রাজপুত এর প্রিয় দর্শক-মনোরঞ্জক খেলা এবং বলা হয় যে তাঁরা "খুব উদ্বেগের সাথে" এই টুর্নামেন্টের প্রত্যাশায় প্রতীক্ষা করেন। প্রত্যেক রাজপুত রাজপুত্র বা প্রধান তাঁর বিনোদনের উদ্দেশ্যে প্রতিযোগিতার জন্য বেশ কয়েক জন কুস্তি চ্যাম্পিয়ন রাখতেন। বলা হয় যে সর্বাধিক কুস্তি কেন্দ্রগুলি ছিল উত্তর প্রদেশ এবং পাঞ্জাবে।
১৯০৯ সালে আব্দুল জব্বার সওদাগর নামে এক বাঙালি ব্যবসায়ী স্থানীয় যুবকদের একত্রিত করার উদ্দেশ্যে এবং কুস্তি টুর্নামেন্টের মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শন ও উপনিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ে তাঁদেরকে অনুপ্রাণিত করার ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। জব্বার-এর বলি খেলা নামে খ্যাত এই প্রতিযোগিতা স্বাধীনতা এবং পরবর্তীকালে (ভারত) বিভাজন এর সময়েও অব্যাহত ছিল। এটি এখনও বাংলাদেশ এ প্রতি বৈশাখী মেলায় (বাংলা নববর্ষ) ঐতিহ্যবাহী সানাই (বাঁশি) এবং দাবর (ড্রাম) বাজিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এবং এই অনুষ্ঠান চট্টগ্রাম এর এক প্রাচীনতম ঐতিহ্যও বটে।
সাম্প্রতিক অতীতে ভারতে গ্রেট গামা (ব্রিটিশ ভারত এবং পরবর্তীকালে দেশ বিভাজিত পাকিস্তানের) এবং গোবর গোহ ছিলেন বিখ্যাত শ্রেনীর কুস্তিগির। পালোয়ানীর দৌলতে ভারত ১৯৬২ সালের চতুর্থ এশিয়ান গেমস (পরে জাকার্তা গেমস নামে পরিচিত) এর গৌরব শীর্ষে পৌঁছেছিল। সেখানে সাতজন কুস্তিগির পদক তালিকায় স্থান পেয়ে ছিলেন য়াঁরা ফ্রিস্টাইল কুস্তি এবং গ্রিক-রোমান কুস্তি মিলিয়ে মোট ১২ টি পদক জিতেছিলেন। একই কৃতিত্বের পুনরাবৃত্তি আবারও প্রত্যক্ষ করা হয়েছিল কিংস্টন এ অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমস এ। সেখানে পাঠানো ৮ জন কুস্তিগিরই দেশের হয়ে পদক পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ৬০ এর দশকে ভারত বিশ্বের প্রথম আট বা নয়টি কুস্তি খেলিয়ে দেশগুলির মধ্যে স্থান পায় এবং ১৯৬৭ সালে নয়াদিল্লিতে বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজক দেশ হয়।
যে সব পালোয়ান আজকাল কুস্তি প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন তাঁদের জুডো এবং জুজুৎসু এর আঁকড়ে ধরার দুরন্ত দিকগুলিতে ক্রস ট্রেন নিতে হয়। কার্ল গোচ এর মতো অতীত যুগের কিংবদন্তি কুস্তিগিররা ভারত এ কুস্তি শিখতে এবং তাঁদের দক্ষতাকে আরও উন্নত করতে ভ্রমণ করেছেন। এমনকি কার্ল গোচকে মুগুর (দক্ষিণ এশিয়ার কুস্তিগিরদের বাহু ও কাঁধের পেশী তৈরির জন্য ভারী কাঠের উপকরণ বিশেষ) উপহার দেওয়া হয়েছিল।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.