Loading AI tools
পায়ুপথে যৌন তৃপ্তি লাভে কৃত ক্রিয়া উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পায়ুসঙ্গম বা পায়ুকাম হচ্ছে সাধারণত যৌন-আনন্দ লাভের জন্য উত্থিত শিশ্ন কোনো ব্যক্তির পায়ুপথে প্রবেশকরণ ও সঞ্চালনাকরণ।[1][2][3] পায়ুসম্পর্কিত অন্যান্য যৌনক্রিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে পায়ুপথে অঙ্গুলিসঞ্চালন, পায়ুপথে কৃত্রিম শিশ্ন ঢোকানোসহ পায়ুলেহন এবং পেগিং।[4][5] যদিও পায়ুসঙ্গম বলতে প্রধানত পায়ুপথে শিশ্ন প্রবিষ্টকরণকেই বোঝানো হয়,[3][4][6] এবং পায়ুকাম শব্দটিও মূলত অনুরূপ ক্রিয়া বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে তবে আবার পায়ুকাম শব্দটি পায়ুদ্বারসম্পর্কিত অন্যান্য যৌনক্রিয়া বোঝাতেও ব্যবহৃত হতে পারে শুধু 'স্বপায়ুমেহন' (পায়ুপথে নিজ অঙ্গুলি প্রবেশ) ক্রিয়া ব্যতীত কারণ এটি হস্তমৈথুনের কাতারে পড়ে কিংবা এটাকে স্বপায়ুকামও বলা হতে পারে।[6][7]
পায়ুসঙ্গম সাধারণত পুরুষ-পুরুষ যৌনসংসর্গের জন্য সুপরিচিত যদিও বিষমকামিতায়ও পায়ুসঙ্গম প্রচলিত।[2][8][9] নারী-নারী যৌনসংসর্গেও পায়ুসঙ্গম বন্ধনীযুক্ত কৃত্রিম শিশ্ন দ্বারা করা হয়।[10] যার পায়ুপথে শিশ্ন প্রবেশ করানো হবে তিনি তার পায়ুর স্নায়ুতন্ত্রের কারণে ব্যথা বা কষ্ট পেতে পারেন আবার আনন্দও পেতে পারেন, পুরুষের পায়ুপথে যৌনানন্দ আসতে পারে তাদের প্রোস্টেটের পরোক্ষ উদ্দীপনার মাধ্যমে আর একজন নারীর পায়ুতে যৌনানন্দ আসতে পারে তার ভগাঙ্কুর বা যোনিপথের কোনো একটা জায়গা (জি-স্পট) এর পরোক্ষ উদ্দীপনার মাধ্যমে, এছাড়াও নারীদের আরো সংবেদী স্নায়ুর কারণেও আনন্দ আসতে পারে তবে এসব আনন্দ কারো পায়ুতেই স্থায়ী হয়না।[2][4][11] যদিও, পায়ুসঙ্গম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পায়ুতে ব্যথাদায়ক, কখনো কখনো এই ব্যথা তীব্রও হতে পারে এবং চিকিৎসকরাও পায়ুপথে শিশ্নের প্রবেশকে পায়ুপথের জন্য ব্যথা প্রদায়ক এবং ক্ষতিকারক হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।[12][13][13]
অন্য সব যৌনক্রিয়ার চেয়ে পায়ুসঙ্গমে যৌনবাহিত রোগ হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে, পায়ুসঙ্গমকে অন্যান্য যৌনক্রিয়ার তুলনায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যৌনক্রিয়া বলা হয়; প্রাকৃতিক ভাবেই পায়ুপথ শিশ্ন প্রবেশের জন্য উপযুক্ত পথ নয় কারণ পায়ুপথ প্রাকৃতিক ভাবে যৌনাঙ্গ নয় আর এই জন্যেই পায়ুপথে শিশ্নের প্রবেশ পায়ুপথের ক্ষতি ডেকে আনে। পায়ুপথে যোনিপথের মত প্রাকৃতিক পিচ্ছিলতা থাকেনা। পায়ুপথে শিশ্নের প্রবেশের ফলে পায়ুপথের টিস্যু সহজে ছিঁড়ে যায়, বিশেষ করে তখন যখন পায়ুকাম করার সময় পায়ুপথে লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করা না হয় যদিও লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করলেও পায়ুপথের টিস্যু যে ছিঁড়ে যাবেনা এরকমটা নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যায়না।[2][3][14] যিনি শিশ্ন প্রবেশ করান তার ক্ষেত্রে শিশ্নে কনডম পরিধান ছাড়া পায়ুপথে শিশ্ন প্রবেশ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়,[14][15][16] এবং সেইজন্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাসমূহ যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পায়ুসঙ্গম করার ক্ষেত্রে নিরাপদ যৌনতা অবলম্বন করতে বলে।[17] যদিও যার পায়ুতে শিশ্ন প্রবেশ করানো হয় তার পায়ুর ক্ষতি এড়ানো যায়না; পায়ুসঙ্গমের ফলে পায়ুতে অর্শরোগ হয় এবং পায়ুসঙ্গমের ক্ষেত্রে পায়ুপথের অভ্যন্তরে শিশ্ন প্রবেশের পর সঞ্চালনাকরণের ফলে পায়ুপথে ক্ষত হয়ে যায় এবং এতে পায়ুপথের অভ্যন্তরে ঘা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাছাড়া হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (বা সংক্ষেপে এইচপিভি) পায়ুপথে শিশ্নের প্রবেশের ফলে পায়ুপথের ভেতরে বাসা বাঁধে এবং এতে মানুষের পায়ুপথে ক্যান্সার হয়।[18]
পায়ুসঙ্গম সম্পর্কে প্রায়শই শক্ত মতবাদ প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এটি বিতর্কিত বিশেষ করে ধর্মীয় আইনসমূহে। এটা সাধারণত এই কারণে যে পায়ুসঙ্গম বলতে সাধারণত দুইজন পুরুষের যৌনসঙ্গম বোঝায় এবং যৌনতার মূল অর্থ যেখানে শুধুই 'বাচ্চা জন্মদান' এর জন্য - এরকমটা শেখানো হয়।[5][7] এটাকে ট্যাবু বা অপ্রাকৃতিক বলা হতে পারে, এবং কিছু কিছু রাষ্ট্রে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, যেখানে নিতম্বে বেত্রাঘাত কিংবা মৃত্যুদণ্ডের মত বড় ধরনের শাস্তিও দেওয়া হতে পারে।[5][7] অনেক মানুষ পায়ুসঙ্গমকে প্রাকৃতিক এবং যৌনমিলনের অন্যতম একটি আনন্দদায়ক মাধ্যম হিসেবে মনে করেন যদিও যার পায়ুতে শিশ্ন প্রবেশ করানো হয় তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পায়ুতে আনন্দ অনুভব করেন না। অনেকেই পায়ুকামকে তাদের যৌনজীবনের একটি বর্ধিত অংশ হিসেবেও মনে করেন।[5][7]
পায়ুপথের পেশি যোনির পেশির মত না হওয়াতে একজন পুরুষ যখন একজন নারীর পায়ুপথে তার শিশ্ন প্রবেশ করান তখন তার শিশ্ন সহজে ভেতরে প্রবেশ করেনা এবং পুরুষটি তার শিশ্নে একটি চাপ অনুভব করে আনন্দ লাভ করেন।[3][19][20] এছাড়া যে সমাজে পায়ুসঙ্গম গোপন এবং নিষিদ্ধ একটি বিষয় ঐ সমাজে পুরুষেরা পায়ুসঙ্গম করতে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেন এবং পায়ুসঙ্গমকালে মনস্তাত্ত্বিকভাবে অনুভব করতে পারেন যে, একটা নিষিদ্ধ কাজ কতটা উপভোগ্য। অথবা পুরুষেরা শিশ্ন ঢোকানোর একটি বিকল্প পথ মনে করেও এটি উপভোগ করতে পারেন।[5][20]
যেখানে কিছু নারী তাদের পায়ুতে শিশ্নের প্রবেশে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভব করেন অথবা তার পুরুষসঙ্গীকে খুশি করার জন্য তার পায়ুতে শিশ্ন ঢোকাতে দেন আবার কিছু নারী এই যৌনক্রিয়ায় আনন্দ পান অথবা যোনিতে শিশ্ন গ্রহণের বিকল্প হিসেবে পায়ুতে শিশ্ন প্রবেশ করতে দেন তবে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অধিকাংশ নারীই তাদের পায়ুপথে শিশ্নের প্রবেশের পর পায়ুপথে ব্যথা অনুভব করেন।[6][19][21][22]
২০১০ সালে বিষমকামিতার পায়ুসঙ্গম নিয়ে একটি ক্লিনিক্যাল রিভিউ আর্টিকেল বের করা হয়, ওখানে পায়ুসঙ্গম বলতে পায়ুতে শিশ্নের প্রবেশ এবং পায়ুকাম বলতে পায়ু বা মলদ্বারসংক্রান্ত অন্যান্য যৌনক্রিয়া নির্দেশ করা হয়। রিভিউতে বলা হয় যে পায়ুসঙ্গম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যথাদায়ক এবং যেসব যুগল পায়ুসঙ্গম করেন তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে সঙ্গীর পায়ুপথে শিশ্ন প্রবেশ করানো হয় তিনি সাধারণত ব্যথাই পেয়ে থাকেন।[6]
নারীদের ঋতুস্রাবচলাকালীন সময়ে অনেক পুরুষই যোনির পরিবর্তে পায়ুপথে শিশ্ন প্রবেশ করতে চাইতে পারেন।[5] অনেক পুরুষ পায়ুসঙ্গমকে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটি পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করেন কনডমের অনুপস্থিতে।[5][23][24] পায়ুসঙ্গমের দ্বারা গর্ভে বাচ্চা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই কারণ পায়ুতে বীর্য গেলে সেটা জরায়ুতে পৌঁছাতে পারেনা কিন্তু অনেকসময় পায়ু থেকে শিশ্ন বের করার সময় অসাবধানতাবশত শিশ্নের বীর্য বেরিয়ে গড়িয়ে পড়ে যোনিতে লেগে যেতে পারে, এভাবে যোনিপথে একটু বীর্য ঢুকে গেলে সেটা জরায়ুতে চলে যেতে পারে এবং সমস্যা হতে পারে।
কোনো নারী যদি তার প্রথম যৌনমিলন হিসেবে এই পায়ুসঙ্গম করেন এবং এর আগে যদি কখনো যৌনমিলন (যোনিতে শিশ্ন) না করে থাকেন তাহলে তিনি কুমারী নারী বিবেচিত হবেন কারণ যোনিচ্ছদ শিশ্ন দ্বারা ছেঁড়েনি। এটাকে কখনো কখনো কারিগরী কুমারীত্ব বলা হয়।[25][26][27][28] কিছু কিছু বিষমকামী যুগল পায়ুসঙ্গমকে একটি শৃঙ্গার কর্ম হিসেবে দেখতে পারেন, লরা এম কার্পেন্টার বলেন যে ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে এই ধারণা প্রচলিত হয় যে এটা শৃঙ্গার এবং বিংশ শতাব্দীতে ধারণা সম্পূর্ণ বদলে পায়ুসঙ্গম একটি একক যৌনক্রিয়ার কাতারে পড়ে যায়।[25]
যেহেতু পায়ুসঙ্গমের অধিকাংশ গবেষণাই পুরুষ-পুরুষ যৌনসংসর্গ নির্ভর সেহেতু বিষমকামী যুগলদের পায়ুসঙ্গম সম্পর্কিত তথ্য খুব কমই পাওয়া যায়।[6][29] কিমবার্লি আর ম্যাকব্রাইডের ২০১০ সালের ক্লিনিক্যাল রিভিউ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিষমকামী পুরুষদের অধিকাংশ যারা পায়ুসংক্রান্ত যৌনক্রিয়া তাদের নারীসঙ্গীদের করেছেন তাদের খুব কমই পায়ুপথে শিশ্ন ঢুকিয়েছেন; অধিকাংশ পুরুষই মলদ্বারের গন্ধ শুঁকেছেন বা মলদ্বার চুষেছেন বা পায়ুপথে আঙ্গুল ঢুকিয়েছেন এবং মাত্র ২৩ শতাংশ পুরুষ পায়ুপথে শিশ্ন ঢুকিয়েছেন।[6]
২০১০ সালের 'ন্যাশনাল সার্ভে অব সেক্সুয়াল হেলথ এ্যান্ড বিহেভিয়ার' এর পরিসংখ্যান বলে যে মাত্র ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ পুরুষ তার নারীসঙ্গীর পায়ুতে শিশ্ন ঢুকিয়েছেন।[30][31]
সুদূর অতীতকাল থেকেই পায়ুসঙ্গমকে পুরুষ-পুরুষ যৌনসংসর্গের কাতারে ফেলা হচ্ছে। যদিও সব সমকামী পুরুষ পায়ুসঙ্গমে লিপ্ত হননা।[8][9][32][33] যে পুরুষ শিশ্ন প্রবেশ করান তাকে ইংরেজিতে 'টপ' এবং যার পায়ুপথে ঢোকানো হয় তাকে 'বটম' বলা হয়। যারা এই দুই ধরনের কাজই করেন তাদেরকে বলা হয় 'ভারস্যাটাইল'।[34][35]
যেসব পুরুষ অন্য পুরুষের পায়ুতে তাদের শিশ্ন ঢোকাতে চান তারা এটা নারীর বিকল্প হিসেবেই সাধারণত করে থাকেন।[32][36][37] তারা মনে করেন যে যেহেতু বিষমকামিতায় একটি নারীর যোনি শিশ্ন দ্বারা বিদ্ধ করা হয় সেহেতু পুরুষ-পুরুষ যৌনতায়ও পায়ুপথ বিদ্ধ করা উচিৎ।[37][38] যেসব পুরুষ তাদের পায়ুতে অন্য পুরুষের শিশ্ন নেন তাদের অনেকে আবার নিজেদেরকে পুরুষত্ব হারিয়েছেন বলে মনে করেন।[39][40]
সমকামী পুরুষেরা সাধারণত পায়ুসঙ্গমের পরিবর্তে ফ্রট কর্মে লিপ্ত হন বা পারস্পরিক হস্তমৈথুন করেন যেটাকে তারা পায়ুসঙ্গমের চেয়ে বেশি আনন্দদায়ক বলে মনে করেন,[32][34][41] এবং পায়ুসঙ্গমকে পায়ুর জন্য ব্যথাদায়ক বলে অভিহিত করেন আবার পায়ুতে শিশ্ন প্রবেশ করানো হলেও অনেক পুরুষ শিশ্ন পায়ুর বেশি ভেতরে প্রবেশ করাননা এবং অনেক সমকামী পুরুষই শুধু পায়ুপথের মুখে শিশ্ন ঘর্ষণ করেন সঙ্গীর ব্যথা এড়ানোর জন্য এবং শিশ্ন পায়ুর বেশি অভ্যন্তরে প্রবেশ করান না আর যারা পায়ুর বেশি অভ্যন্তরে শিশ্ন প্রবেশ করান সেই ক্ষেত্রে পায়ুর ক্ষতি হওয়ার পরে এই পায়ুকাম এড়িয়ে চলেন অনেকেই।[38][42]
সমকামী পুরুষযুগলদের মধ্যকার পায়ুকাম এবং অসমকামী কিন্তু পুরুষ-পুরুষ যৌনসংসর্গকারীদের মধ্যে সংঘটিত পায়ুকামের বিভিন্ন পরিসংখ্যান রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৯৪ সালের 'দ্যা এ্যাডভোকেট' ম্যাগাজিনের একটি পরিসংখ্যানের হিসেব অনুযায়ী ৪৬ শতাংশ পুরুষ পায়ুসঙ্গম করেছেন এবং ৪৩ শতাংশ সমকামী পুরুষ তাদের পায়ুতে শিশ্ন নিয়েছেন।[34] আরেকটি পরিসংখ্যানে বলা হয় যে তিন চতুর্থাংশ পুরুষই পায়ুসঙ্গম করেছেন বা করিয়েছেন।[34] ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এনএসএসবি বলে যে, ৮৩ শতাংশ পুরুষ অপর পুরুষের সঙ্গে পায়ুসঙ্গম করেন মাসে অন্তত একবার এবং ৯০ শতাংশ পুরুষ তাদের পায়ুতে শিশ্ন গ্রহণ করেন।[43] যদিও এসব পায়ুসঙ্গমের ক্ষেত্রে অনেক পুরুষই তার শিশ্ন তার সঙ্গীর পায়ুর বেশি অভ্যন্তরে প্রবেশ করান নি এবং পায়ুর বেশি অভ্যন্তরে শিশ্ন প্রবেশ করানোর ফলে পায়ুর ক্ষতি হয়ে যাওয়ার দরুণ অনেকেই পায়ুকাম এড়িয়ে চলেন।
শিশ্নচোষণ এবং পারস্পরিক হস্তমৈথুন সমকামী পুরুষদের মধ্যে পায়ুসঙ্গমের সঙ্গে সঙ্গে বেশ জনপ্রিয়।[1][32][44] উইটেন বলেন যে, বিষমকামী যুগলদের চেয়ে সমকামী যুগলদের মধ্যে পায়ুসঙ্গম বেশি জনপ্রিয়, কিন্তু তাদের কাছেও এটা মুখকাম এবং পারস্পরিক হস্তমৈথুনের চেয়ে কম জনপ্রিয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পায়ুসঙ্গম সমকামী পুরুষরা এড়িয়ে চলেন।[1]
যদি একজন নারী বন্ধনীযুক্ত কৃত্রিম শিশ্ন পরিধান করে একজন পুরুষের পায়ুতে তা ঢোকান তবে সেটা পেগিং বলে গণ্য হবে।[5][45][46] যেসব পুরুষরা এই ধরনের কর্ম তাদের নারীসঙ্গীকে দিয়ে করিয়েছেন তারা এটাকে সাধারণ পায়ুকামের মতোই ব্যথাদায়ক হিসেবেই গণ্য করেন[47]
২০১০ সালের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে যে ৭ শতাংশ পুরুষ এইরূপ পায়ুসঙ্গমে আগ্রহী।[48]
নারী সমকামিতায় নারীরা স্ট্র্যাপ-অন ডিলডো পরিধান করে নারীদের পায়ুপথে পায়ুকাম করে থাকেন।[10][49]
যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার ২০১৪ সালের একটি পরিসংখ্যান বলে যে মাত্র ৭ শতাংশ সমকামী যুগল এহেন ক্রিয়ায় জড়িয়েছেন সপ্তাহে অন্তত একবার, প্রায় ১০ শতাংশ মাসে একবার করেছেন এবং ৭০ শতাংশ একেবারেই কোনো কিছু করেননি।[50]
যে ব্যক্তির পায়ুতে সঙ্গম করা হয় তার দুটি প্রধান ঝুঁকি থাকে; একটি হলো শরীরের কোথাও পাওয়া যায় না, এরূপ উচ্চমাত্রার সংক্রামক অণুজীব দ্বারা সে ব্যক্তির সংক্রমণ হওয়া এবং অপরটি হলো পায়ুপথ ও মলাশয় নাজুক হওয়ার দরুণ সেটার ক্ষতি হওয়া।[14][16]বেয়ারব্যাক নামক অসুরক্ষিত শিশ্ন-পায়ুর মধ্যকার সঙ্গম[51] হলে পায়ুর রন্ধ্রকপেশি (স্ফিংক্টার পেশি) অপেক্ষাকৃত দূর্বল হওয়ায়, সহজে তার টিস্যুকোষ ছিঁড়ে যেতে পারে, ফলে সেজায়গা দিয়ে রোগজীবাণু সহজে প্রবেশে করতে পারে। এর ফলে উক্ত ব্যক্তি উচ্চমাত্রার যৌন সংক্রামক রোগে (এসটিডি) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। [14][16]
পায়ুপথের চারপাশে শ্বেতকণিকার আধিক্যের সাথে এর আবরণী পর্দা ছিঁড়ে যাবার ঝুঁকি, এবং কোলনের তরল শোষণ করার ভূমিকা সব মিলিতভাবে পায়ুসঙ্গমকারীদের যৌনরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কারণ যৌনরোগের জীবাণু শ্বেতকণিকাকে আক্রমণ করতে পারে, এবং এর মাধ্যমে রক্তে বাহিত হতে পারে। কনডম, অ্যাম্পল লুব্রিকেশন তেল পেশিকোষ ছিড়ে যাওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে[2][52] এবং সাধারণভাবে নিরাপদ যৌনতার চর্চা যৌন বাহিত রোগ সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।[16][53] যাইহোক, পায়ুসঙ্গম করার সময়, পায়ুর রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক পেশির (স্ফিংক্টার পেশি) দৃঢ়তার জন্য সঙ্গমজনিত ঘর্ষণের সময় কনডম ভেঙে যেতে পারে। ফলে কনডম পরিধানের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়, তাছাড়া অ্যাম্পল লুব্রিকেশন তেলও পরিপূর্ণ সুরক্ষা দেয়না।[16]
কোন এইচআইভি পজিটিভ মানুষের সঙ্গে অসুরক্ষিত পায়ুসঙ্গম করা হলে এইচআইভি সংক্রমণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।[14][15][16] অসুরক্ষিত পায়ুসঙ্গমের মধ্যমে সংক্রমণযোগ্য অন্যান্য সংক্রমণগুলো হল মানব প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি (যা পায়ুপথের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে[54]); টাইফয়েড জ্বর;[55] আমাশয়; ক্ল্যামিডিয়া সংক্রমণ;[15] ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়োসিস; ই কোলি সংক্রমণ; গায়ারডিয়াসিস; গনেরিয়া;[15] হেপাটাইটিস এ; হেপাটাইটিস; হেপাটাইটিস সি; হারপেস সিম্প্লেক্স;[15] কাপেসি'র হারকোমা সম্পর্কিত হারপিসভাইরাস (HHV-8);[56] লিম্ফোগ্র্যানুলোমা ভেনেরিয়াম; মাইকোপ্লাজমা হোমিনিজ; মাইকোপ্লাজমা জেনিটালিয়াম; পিউবিক উকুন;[15] স্যালমনেলোসিস; শেইগেলা; সিফিলিস;[15] যক্ষ্মা; এবং ইউরিপ্লাজমা ইউরিলিটিকাম[57]।
অন্যান্য যৌনক্রিয়ার মত পায়ুসঙ্গমের ফলে কী ধরনের যৌনবাহিত রোগ সংক্রমিত হতে পারে নিয়ে সাধারণ মানুষের খুবই কম ধারণা থাকে। এই ধারণার পেছনে অন্যতম একটি কারণ হলো মানুষ পায়ুসঙ্গমকে প্রকৃতপক্ষে কোনো যৌনাচার ভাবেই না। তারা মনে করে এই যৌনাচরণের ফলে ব্যক্তির কৌমার্য নষ্ট হয় না, গর্ভবতী হয় না। অনেক মানুষ মনে করে যোনিতে সঙ্গম; পায়ুসঙ্গমের তুলনায় অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিশ্বাস করে যৌন বাহিত রোগ কেবল মাত্র যোনিতে সঙ্গমের ফলেই সংক্রমিত হতে পারে।[58][59][60] কনডম পরিধান করে পায়ুসঙ্গম করলেও পায়ুপথের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায় এটা অনেকেই জানেনা।[58]
শুধুমাত্র পায়ুসঙ্গমের ফলে গর্ভধারণ সম্ভব না হলেও পায়ুসঙ্গমের সময়ে গর্ভধারণ হওয়া সম্ভব, যদি পায়ুসঙ্গমের সময় শিশ্ন যোনির কাছে থাকে (যেমনঃ পেছন থেকে ঊরুমৈথুন অথবা পায়ুর মুখে শিশ্ন ঘর্ষণের সময়ে) এবং বীর্য যোনির চারপাশে পড়ে তখন তা যোনির লুব্রিকেটিং ফ্লুইডের মাধ্যমে যোনিতে প্রবেশ করতে পারে। যদি আঙ্গুল বা অন্য কোনো অঙ্গের মাধ্যমে বীর্য যোনির প্রবেশদ্বারের স্পর্শে আসে, তবে শিশ্নের স্পর্শ ছাড়াও গর্ভধারণ সম্ভব।[61][62]
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৬১% সমকামী এবং উভকামীর অতীব বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা হল পায়ুসঙ্গম এবং এটা সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে তাদের সাথে। মাত্র ২৪ শতাংশ সমকামী এবং উভকামীর মতে পায়ুসঙ্গমের সময় কখনো বেশি কখনো কম ব্যথা অনুভব করেন যদিও একেবারে কম ব্যথা অনুভব করেননা[13] এবং ১২ শতাংশ মনে করে তাদের পায়ুতে সঙ্গমের সময় বিষয়টি তীব্র পীড়াদায়ক।[13][63] পায়ুসঙ্গমের সময় পায়ুপথে লিঙ্গের প্রবেশের পর পায়ুতে ব্যথার মাত্রা নিয়ে কিছু কারণকে বিবেচনায় রেখে পূর্বাভাস দেওয়া যায়। এর মধ্যে কিছু কারণ হলো পায়ুতে কৃত্রিম পিচ্ছিল পদার্থের অনুপস্থিতি, উদ্বেগ অনুভব করা, উদ্দীপনার অভাব হওয়া বিষয়গুলোর কারণে পায়ুসঙ্গমের সময় পায়ুপথে ব্যথা করে। গবেষকদের মতে পায়ুসঙ্গমের সময়, ব্যথা যাতে বেশি না হয় তাই শিশ্ন পায়ুপথের বেশি ভেতরে না ঢোকানোই উত্তম।[13][63]
যোনিসঙ্গমের চেয়ে পায়ুসঙ্গমে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি,[3][64][65] যোনিসঙ্গমের তুলনায় পায়ুসঙ্গমের আঘাতপ্রাপ্তির সম্ভাবনা লক্ষণীয়ভাবে বেশি কারণ যোনিপথের টিস্যুর তুলনায় পায়ুপথের টিস্যুর দৃঢ়তা খুবই কম।[3][66][67] পাশাপাশি, কোন পুরুষ যদি পায়ুসঙ্গমের পরপরই কনডম ছাড়া অথবা পূর্বের কনডম পরিবর্তন ছাড়াই যোনিসঙ্গম করে তবে, তবে মলদ্বারে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার কারণে যোনিতে সংক্রমণ হতে পারে; পায়ুপথে অঙ্গুলিচালনা বা যৌনখেলনা চালনা করার পরপর তা যোনিপথে চালনা করার মাধ্যমেও একইভাবে জরায়ুতে সংক্রমণ হতে পারে।[2][3][68]
লুব্রিক্যান্ট বা জেলি ব্যবহার করা না হলে পায়ু এবং মলপথের টিস্যু স্বাভাবিকভাবে ভগাঙ্কুরীয় তৈলাক্ততা প্রদান করেনা।[2][3][14] ফলে যোনিতে যত সহজে শিশ্ন প্রবেশ করা যায়, বা যোনির ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে, তার চেয়ে অধিক পরিমাণ ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে পায়ুসঙ্গম করা হলে। কনডম ব্যবহার ব্যতীত পায়ুসঙ্গম সর্বাপেক্ষা ঝুঁকিপূর্ণ যৌন কার্যকলাপ হিসেবে বিবেচিত,[14][15][16] এবং এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পায়ুসঙ্গম চর্চার জন্য নিরাপদ যৌনতার প্রস্তাব করে যদিও পায়ুসঙ্গমকে এরপরেও ক্ষতিকর যৌনতার কাতারেই ফেলা হয়।[17]
কিন্তু পায়ুসঙ্গমের সময় জেলির ব্যবহারও যৌনবাহিত রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। ২০১০ সালে সহস্রাধিক অণুজীববিজ্ঞানী একটি সম্মেলনে যে প্রতিবেদন পেশ করেন, তার সারমর্ম হল, পায়ুসঙ্গমে জেলি বা লুব্রিক্যান্ট ব্যবহারে এইডসের ঝুঁকি বাড়ে। বাল্টিমোর ও লস অ্যাঞ্জেলেসের ৯০০ পুরুষ ও মহিলার তথ্য উপাত্ত নেওয়া হয়; গবেষকগণ দেখেন, যারা জেলি ব্যবহার করে তারা ৩ গুণ বেশি যৌনবাহিত রোগের (ইংরেজিঃ rectal sexually transmitted infections) ঝুঁকিতে আছে।[69] আরেকটি প্রতিবেদন অনুসারে জনপ্রিয় জেলিগুলোকে ল্যাবে নিয়ে দেখা যায়, সেগুলোর অনেকগুলো মলপথে কোষের জন্য মরণঘাতী (toxic)। যার ফলে এগুলো ব্যবহারে এইডস ভাইরাসের প্রবেশ হয় আরও সহজ। এমনকি পুরুষ না কি নারী, এইডস আছে না কি নেই, কোন শহরে থাকে, কনডম ব্যবহার করে কি না, গত মাসে কতজন যৌনসঙ্গীর সাথে মিলিত হয়েছে— এই সবগুলো বিষয়কে সমান সমান নিয়েও দেখা গেছে, পায়ুমৈথুনের (receptive rectal intercourse) আগে জেলি বা লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করার সাথে পায়ুর যৌনবাহিত রোগের সম্পর্ক জোরালোই রয়ে গেছে।[70] আরেকটা গবেষণার প্রতিবেদন অনুসারে বহুল প্রচলিত ৬টা জেলি নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, - এতে অনেক বেশি পরিমাণে লবণ ও সুগার থাকে যা কোষের পানি টেনে নেয়। ডিহাইড্রেশান হয়ে মারা যায় আবরণী কোষ। ইনফেকশনের জায়গা করে দেয়। - আবার কোনো কোনো জেলি পায়ুর ভালো ব্যাকটেরিয়ার পুরো বসতিই জ্বালিয়ে দেয়। ফলে খারাপ ব্যাকটেরিয়া আসার সুযোগ পায়। [71]
ব্যক্তির পায়ুতে অসুরক্ষিত পায়ু সঙ্গমের ফলে তার উক্ত স্থানে বীর্যপ্রতিরোধী অ্যান্টিবডি (বীএডি) গড়ে উঠতে পারে। কিছু কিছু ব্যক্তিতে এর ফলে অটোইমিউন অনুর্বরতা গড়ে উঠতে পারে।[72] বীএডি নিষেকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, ইমপ্ল্যান্টেশনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং ভ্রুণের ক্রমবিকাশে নানা বিপত্তির সৃষ্টি করে।[72][73]
পায়ুসঙ্গমের ফলে পায়ুপথের শিরা-উপশিরা ছিঁড়ে যেতে পারে এবং ফলশ্রুতিতে রক্তপাত হতে পারে; এছাড়াও, পায়ুসঙ্গম অর্শ্বরোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।[3][74] পায়ুসঙ্গমের ফলে পায়ু-কলা বা রেক্টাল টিস্যু ছিঁড়ে (পায়ু বিদার/ইংরেজি: anal fissure) যাওয়া অথবা বৃহদন্ত্রে ছিদ্রের জন্য যদি রক্তপাত হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা নিলে সমস্যার প্রশমন হতে পারে তাও পায়ুকাম করা উচিৎ নয় যদি একবার পায়ুতে পায়ু বিদার হয়।[3][74] মলদ্বারে নমনীয়তা বা সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতার অভাব, পায়ুর শ্লেষ্মা ঝিল্লি পাতলা হওয়া এবং মিউকাস পর্দার ঠিক নিচেই ছোট ছোট রক্তনালিকা অবস্থান করার কারণে, অন্তর্ভেদী পায়ুসঙ্গমে সাধারণত মলদ্বারের চামড়া ছিঁড়ে যায় এবং রক্তপাত হয়, যদিও এই রক্তপাত সাধারণত ছোট আকারে হওয়ার ফলে তা বাহির থেকে দেখা যায় না।[16]
অন্যান্য পায়ু সঙ্গমের নেতিবাচক ফলাফলের তুলনায় পায়ু বিদারের দরুন বেশি ক্ষতি হয়৷ পায়ু এবং রেক্টাল টিস্যুকে (মলাশয়স্থ কলা) ইচ্ছাকৃতভাবে প্রসারণের ফলে পায়ুর রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক পেশি (স্ফিংটার পেশি) এবং সিগমান্ত্রতে (ইংরেজি: sigmoid colon) ছিদ্র হলে তার দরুণ এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।[5][75]
পায়ুতে অবস্থিত রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক পেশি বা স্ফিংক্টার পেশির অন্যতম কাজ হলো, মলত্যাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। যদি পায়ুতে পুনঃপুন সঙ্গম করা হয়, তবে রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এতে করে ব্যক্তির মলত্যাগের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না৷ এরফলে হারিশ (rectal prolapse) হতে পারে।[3][74] পায়ুকামের এটা অন্যতম একটা নেতিবাচক দিক।[76][77] পায়ুর রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক পেশি এবং পেলভিক ফ্লোরকে সুদৃঢ় করতে কেগেল ব্যায়াম করা যায়, যার ফলে মলত্যাগে নিয়ন্ত্রণ হারানোর মত বিষয়টিকে প্রতিরোধ করা যায় অথবা এ জটিলতার সৃষ্টি হলে এ ব্যায়াম প্রতিকার হিসেবে সাহায্য করতে পারে যদিও কোনো পূর্ণ নিশ্চয়তা নেই।[3][78]
পায়ু কর্কটের (অ্যানাল ক্যান্সার) বেশিরভাগ কারণগুলোই হয় মানব প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) কারণে। পায়ু সঙ্গম করলেই যে পায়ু কর্কট হবে তা নয়, যদি কোনো প্রকার সুরক্ষা না নিয়ে (সঙ্গম করার সময়, পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা না নিলে) পায়ু সঙ্গম করা হয়, তবে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় যদিও কনডম বা জেলি বা লুব্রিক্যান্ট পায়ুপথের ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রকৃতপক্ষে কমায়না।[54] বৃহদান্ত্র এবং মলাশয় ক্যান্সারের তুলনায় পায়ুতে ক্যান্সার আক্রান্ত হবার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম কিন্তু তারপরেও পায়ুকামে ঝুঁকি থেকেই যায়। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি বিবৃতিতে বলেছে, প্রায় ৭০৬০ জন ব্যক্তি (৪৪৩০ জন নারী এবং ২৬৩০ জন পুরুষ) এরোগে আক্রান্ত হয় যাদের মধ্যে ৮৩০ জন ব্যক্তি (৫৫০ জন নারী এবং ৩৩০ জন পুরুষ) মারা যায় এবং যদিও পায়ুপথের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, এটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রেই বেশি শনাক্ত করা যায় এবং প্রায়ঃশই দেখা যায়, যাদের পায়ুতে শিশ্ন প্রবেশ করানো হয় তারাই বেশি আক্রান্ত হয়।[54] যদিও পায়ু কর্কট খুবই গুরুতর একটি সমস্যা কিন্তু চিকিৎসা করলে এটি থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য হওয়া যায় অনেক ক্ষেত্রে; আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি মনে করে, "বারবার পায়ু সঙ্গম করলে নারী এবং পুরুষ উভয়তেই পায়ুপথে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এইসব কারণেই বলা যায়, যেসব পুরুষ অন্য পুরুষের সাথে পায়ুসঙ্গম করে তাদের পায়ুকর্কট হবার সম্ভাবনা উচ্চহারে থাকে।"[54]
মানব ইতিহাসে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে পায়ুসঙ্গমের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রচলিত রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে, পায়ুসঙ্গম নিষিদ্ধ বা গর্হিত হিসেবে বিবেচিত, বিশেষত ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে, পাশাপাশি একে বলপ্রয়োগের একটি ধরন হিসেবেও ব্যবহার করা হয়, যেখানে সাধারণত সক্রিয় সঙ্গী পুরুষত্বের প্রতিনিধি এবং কর্মসঙ্গী নারীত্বের প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য হয়। কিছু সংস্কৃতিতে পুরুষদের মধ্যে পায়ুসঙ্গমের চর্চাকে বিশেষভাবে শনাক্ত করা হয়, এবং একে বিশেষভাবে নিন্দা করা হয় ও শাস্তি দেওয়া হয়। কিছু সমাজে, এ কর্মে জড়িত ব্যক্তিদের বিভিন্নভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যেমন শিরশ্ছেদ, জীবন্ত দাহ বা অঙ্গহানিকরণ। বর্তমান যুগে, কিছু মানুষ, বিশেষত পুরুষ, পায়ুকামে আগ্রহী, যার অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয় যে, আধুনিক সময়ে পর্নোগ্রাফিতে পায়ুকামকে যৌনরসাত্মক হিসেবে দেখানো হচ্ছে। পাশাপাশি, আধুনিক সময়ে কিছু সমাজব্যবস্থায় পায়ুসঙ্গম শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রচলিত আছে। উদাহরণস্বরূপ, ইরানের পেনাল কোডের ১০৩ ধারায় বলা আছে, "সমলিঙ্গ পায়ুসঙ্গম বা অন্য সকল সঙ্গমের জন্য সংশ্লিষ্ট উভয় পুরুষ দণ্ডিত হবে।" এবং ১০৩ ধারায বলা আছে, "পায়ুসঙ্গমে জড়িত আসামিগণ মৃত্যুূদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিবেচনার বিষয় বিচারকের এখতিয়ারে থাকবে।"।[79][80]
খ্রিষ্টান ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী পায়ুকাম একটি প্রকৃতিবিরোধী কর্ম এবং আইন অনুযায়ী পুরুষ পায়ুকাম বা স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে পুংলিঙ্গ প্রবেশ করানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যার মাধ্যমে পুরুষটিকে একঘরে রাখা হয়। তাছাড়া পরকালে কোনো ক্ষমা নেই।[81]
ইসলামী বিধান অনুযায়ী মানবদেহে পায়ুতে লিঙ্গ প্রবেশ হারাম বা নিষিদ্ধ।[82] নিজ স্ত্রীর সঙ্গেও পায়ূমৈথুন হারাম।[83][84] কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে পায়ুসঙ্গমের প্রস্তাব স্ত্রীর কর্তব্য হল তা বাধা দেয়া, এবং স্বামী যদি জোর করে তবে স্ত্রী চাইলে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করতে পারে।[85] স্বামী স্ত্রীর পায়ুসঙ্গমে বিবাহ বাতিল না হলেও স্ত্রী যদি চায় এ অভিযোগে তালাকের আবেদন করতে পারবে।[86] ইসলামী বিধান অনুসারে, পায়ুসঙ্গম কবিরা গুনাহ বা সর্বোচ্চ পাপসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে, কিছু মুসলিম দেশে পায়ুমৈথুন বা সডোমি মৃত্যুদণ্ড-যোগ্য অপরাধ, যাদের অন্যতম হল সৌদি আরব, ইয়েমেন ও নাইজেরিয়ার শরিয়া আদালত।[87]
মিশনেহ তোরাহ, কট্টর ইহুদি সম্প্রদায়ের দ্বারা প্রামাণিক হিসাবে বিবেচিত একটি পাঠ্য[88] বলে, "যেহেতু একজন পুরুষকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে তার স্ত্রীকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ দেখার, সে তার সাথে যে কোনো উপায়ে যৌন আচরণ করতে পারে। সে যখনই ইচ্ছা তার সাথে সঙ্গম করতে পারে এবং তার যে কোনো অঙ্গে চুম্বন করতে পারে। তার ইচ্ছামত শরীর ভোগ করতে পারে, এবং সে তার সাথে স্বাভাবিকভাবে বা অপ্রাকৃতিকভাবে সহবাস করতে পারে ঐতিহ্যগতভাবে, অপ্রাকৃতিকভাবে বলতে মলদ্বারে সহবাস এবং মুখমৈথুনকে বোঝায়, তবে শর্ত থাকবে যে সে যেনো কোনো উদ্দেশ্যহীন ভাবে বীর্য ব্যয় না করে। আরও বলা হয় যে, পায়ুকাম একটি নেতিবাচক কর্ম যা একজন পুরুষের তার স্ত্রীর সাথে করা উচিৎ নয়। সঙ্গমের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে কোনোভাবেই কষ্ট দেওয়া যাবেনা।"[89]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.