পাতি চড়ুই (বৈজ্ঞানিক নাম: Passer domesticus) বা চড়াই Passeridae (প্যাসারিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Passer (প্যাসার) গণের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি প্রজাতির একটি।[3][4] অ্যান্টার্কটিকা বাদে সব মহাদেশেই এ পাখিটি কমবেশি দেখা যায়। পাতি চড়ুইয়ের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ গৃহবাসী চড়ুই (লাতিন: passer = চড়ুই, domesticus = গৃহপালিত)।[4] সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত, প্রায় ৩ কোটি ৪৮ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস।[5] বেশ বিস্তৃত ও সংখ্যায় অগণিত হলেও বিগত কয়েক দশক ধরে বেশ কিছু জায়গায় এর সংখ্যা কমে আসছে। তবে এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি বলে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[1] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।[4]

দ্রুত তথ্য পাতি চড়ুই, সংরক্ষণ অবস্থা ...
পাতি চড়ুই
Thumb
পুরুষ, কলকাতা
Thumb
স্ত্রী, কলকাতা
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Passeriformes
পরিবার: Passeridae
গণ: Passer
প্রজাতি: P. domesticus
দ্বিপদী নাম
Passer domesticus
(Linnaeus, 1758)
Thumb
       আদি আবাস
       অবমুক্তকরণ অঞ্চল
প্রতিশব্দ[2]

Fringilla domestica Linnaeus, 1758
Passer domesticus (Linnaeus, 1758) Brisson, 1760
Pyrgita domestica (Linnaeus, 1758) G. Cuvier, 1817
Passer indicus Jardine and Selby, 1835
Passer arboreus Bonaparte, 1850 (দখলীকৃত নাম)
Passer confucius Bonaparte, 1853
Passer rufidorsalis C. L. Brehm, 1855
Passer engimaticus Zarudny, 1903
Passer ahasvar Kleinschmidt, 1904

বন্ধ
Thumb
জলের আশায় স্ত্রী চড়ুইরা

পাতি চড়ুই ছোটখাটো পাখি। সাধারণত দৈর্ঘ্যে মাত্র ১৬ সেমি (৬.৩ ইঞ্চি) ও ওজনে ২৪–৩৯.৫ গ্রাম (০.৮৫–১.৩৯ আউন্স) হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও স্ত্রী চড়ুইের দেহ মন্দা বাদামি ও ধূসরে মেশানো। পুরুষ পাখির দেহ উজ্জ্বল কালো, বাদামি ও ধূসর চিহ্নযুক্ত। পাতি চড়ুইয়ের আদি আবাস ইউরোপ, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলএশিয়ায় হলেও বেশ কিছু অঞ্চলে দুর্ঘটনাবশত অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রজাতিটি ছড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াআফ্রিকায় এভাবেই এ পাখিটির আগমণ ঘটেছে। ফলে পৃথিবীতে বন্য পাখিদের মধ্যে পাতি চড়ুইই সবচেয়ে বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

মানববসতির আশেপাশে সহসাই পাতি চড়ুইয়ের দেখা মেলে। শহরে বা গ্রামে, মানববসতির কাছাকাছি যেকোন পরিবেশে এরা নিজেদের স্বচ্ছন্দে মানিয়ে নিতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশে খাপখাইয়ে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা থাকলেও সাধারণত জনহীন বনভূমি, তৃণভূমি ও মরুভূমিতে এরা বসবাস করে না। শস্যদানা ও আগাছার বীজ এর প্রধান খাদ্য হলেও সুযোগ পেলে পোকামাকড়, উচ্ছিষ্ট ও নানান রকমের খাবার পেলে ছাড়ে না। বিড়াল, বাজ, প্যাঁচাসহ বিভিন্ন প্রজাতির শিকারী পাখি এবং স্তন্যপায়ী এর প্রধান শত্রু।

চড়ুইয়ের প্রাচুর্য ও মানব-সহচার্যের কারণে বিভিন্ন লেখালেখি ও অন্যান্য মাধ্যমে এর উপস্থিতি প্রকট। কোথাও কোথাও এটি ক্ষেতখামারের বালাই হিসেবে চিহ্নিত। তবে এদের সফলভাবে নির্মূল করা বেশ কষ্টসাধ্য। খাদ্য ও পোষা পাখি হিসেবে এর মোটামুটি কদর রয়েছে। পাতি চড়ুই কামনা, যৌনক্ষমতা, যৌনবিকৃতি ও অতি-সাধারণতার প্রতীক।

বিবরণ

আকৃতি ও পরিমাপ

পাতি চড়ুই সাধারণত দৈর্ঘ্যে মাত্র ১৬ সেমি (৬.৩ ইঞ্চি) হয়। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ১৪ থেকে ১৮ সেমি (৫.৫ থেকে ৭.১ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে পারে।[6] এটি আকৃতিতে বেশ পরিণত এবং মাথা গোলাকার। ঠোঁট মজবুত ও কোণকাকৃতির। ঠোঁটের দৈর্ঘ্য ১.১–১.৫ সেমি (০.৪৩–০.৫৯ ইঞ্চি) এবং বীজ ও শস্যদানা খাওয়ার উপযোগী। লেজ খাটো, দৈর্ঘ্যে ৫.২–৬.৫ সেমি (২.০–২.৬ ইঞ্চি)। ডানার দৈর্ঘ্য ৬.৭–৮.৯ সেমি (২.৬–৩.৫ ইঞ্চি) ও পা ১.৬–২.৫ সেমি (০.৬৩–০.৯৮ ইঞ্চি)[7][8]

পাতি চড়ুইয়ের ওজন কমবেশি ২৪–৩৯.৫ গ্রাম (০.৮৫–১.৩৯ আউন্স)। স্ত্রী চড়ুই পুরুষ চড়ুইয়ের তুলনায় একটু খাটো। ইউরোপে স্ত্রী-পুরুষ দু'জনের গড় ওজন প্রায় ২৪–৩৯.৫ গ্রাম (০.৮৫–১.৩৯ আউন্স), এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় উপপ্রজাতির ক্ষেত্রে গড় ওজন প্রায় ৩০ গ্রাম (১.১ আউন্স)। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিরা আকারে ছোট, পুরুষ চড়ুই শীতকালে বড় ও স্ত্রী চড়ুই প্রজনন মৌসুমে পুরুষ চড়ুইয়ের তুলনায় বেশ বড়সড় হয়ে ওঠে।[9] সম্পূর্ণ প্রজাতি, এমনকি কোন কোন উপপ্রজাতির বেলায় অধিক উচ্চতার ও অধিক শীতপ্রধান দেশের চড়ুইরা বার্গমানের নীতি অনুসারে আকারে ছোটখাটো হয়।[9][10][11][12]

দেহবর্ণ

Thumb
Thumb
প্রজননকালীন (বামে) ও অপ্রজননকালীন (ডানে) পুরুষ চড়ুই

পাতি চড়ুইয়ের দেহে প্রধানত ধূসর ও বাদামি রঙের বিচিত্র সব প্রকরণ লক্ষ্য করা যায়। স্ত্রী ও পুরুষ পাখিতে উল্লেখযোগ্য যৌন দ্বিরূপতা দেখা যায়: স্ত্রী পাখির দেহতল ও উপরিভাগ মূলত মেটেরঙা এবং পুরুষ পাখির মাথার কাছে গাঢ় দাগ থাকে, দেহের উপরিতল লালচে ও দেহতল ধূসর।[11] পুরুষ চড়ুইয়ের ঠোঁটের গোড়া থেকে শুরু করে মাথার চাঁদি পর্যন্ত ধূসর। অধিকাংশ উপপ্রজাতিতে চাঁদির দুই পাশে বাদামি ছোপ দেখা যায়। ঠোঁটের চারপাশ, থুতনি, চোখের চারপাশের কিয়দংশ, চোখের কোণ এবং ঠোঁট ও চোখের মাঝখানের অংশ কালো। ভুরু ও চাঁদির মাঝখানে একটি সাদা সরু দাগ থাকে এবং ঠিক চোখের পেছনে একটি ছোট সাদা ছোপ দেখা যায়। দেহতল হালকা ধূসর বা সাদাটে। গাল, কান-ঢাকনি ও ঘাড়ের গোড়াও একই রঙের। পিঠের উপরের দিকটা বাদামি, তাতে মোটা মোটা কালো দাগ থাকে। পিঠের নিচ, কোমর ও লেজের গোড়া ধূসরাভ-বাদামি।[13]

খাদ্যাভ্যাস

এদের খাদ্যতালিকায় কীটপতঙ্গ থাকে। গাছের ডালে বসে পোকা খুঁজে খুঁজে খেতে এরা অভ্যস্ত। খাদ্যান্বেষণের এই পদ্ধতিকে গ্লিনিং বলা হয়।[14]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.