Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উড্ডয়ন পৃথিবীর বেশিরভাগ পাখির চলাফেরা করার সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। খাদ্য সংগ্রহ, প্রজনন, শিকারীর হাত থেকে রক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে পাখির উড্ডয়ন ক্ষমতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পাখির শারীরিক গঠন এমনভাবে অভিযোজিত হয়েছে যাতে উড়ে বেড়াতে সহজ হয়। সামনের দু'টি উপাঙ্গ বহু বছরের বিবর্তনে অভিযোজিত হয়ে ডানায় রূপান্তরিত হয়েছে এবং এই ডানার বিভিন্ন ব্যবহারের ফলেই পাখি আকাশে ভেসে বেড়াতে পারে।
প্রাচীনকাল থেকেই পাখির উড্ডয়নের কলাকৌশল ও তার উৎপত্তি নিয়ে অনুসন্ধান চলে আসছে। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ অব্দে অ্যারিস্টটল সহ কয়েকজন দার্শনিক পাখির উড্ডয়নের গতিপ্রকৃতি ও কলাকৌশল উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেন। পাখিকে কখনও কখনও পালকযুক্ত সরীসৃপ বলা হয়। তবে সরীসৃপের আঁশ থেকে কীভাবে পালকের উদ্ভব ঘটেছে সে সম্পর্কে এখনও নির্ভরযোগ্য কিছু জানা যায় না। আঁশ ও পালকের মধ্যবর্তী গঠন উটপাখি ও মুরগির পায়ে উপস্থিত আছে। ১৫০ বছর পূর্বে বর্তমান পাখিদের পূর্বপুরুষ আর্কিওপ্টেরিক্স-এর জীবাশ্ম আবিষ্কারের পরও পাখিদের উড্ডয়ন-কৌশলের উৎপত্তি নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে। আর্কিওপ্টেরিক্স-এর পূর্বপুরুষ বা তার নিজের পক্ষে কীভাবে উড্ডয়ন সম্ভব হয়েছিল তা এখনও জানা যায় নি। সম্ভবত এর পূর্বপুরুষ অধিক সক্রিয় ও উষ্ণ রক্তের অধিকারী ছিল। আঁশ থেকে পালকের সৃষ্টি হয়েছিল প্রাথমিকভাবে দেহের তাপমাত্রা সংরক্ষণের জন্য। পরবর্তীকালে পালক অগ্রপদে বড় হতে থাকে এবং দ্রুত দৌড়ানোর সময় ভারসাম্য রক্ষা করত। এছাড়া লেজ ডাল থেকে ডালে ঝাঁপ দেওয়ার সময় হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছিল।
উড্ডয়ন-কৌশলের উৎপত্তি সম্পর্কে তিনটি প্রধান মতবাদ পাওয়া যায়। পাউন্সিং প্রোঅ্যাভিস মতবাদ, কার্সোরিয়াল মতবাদ এবং আর্বোরিয়াল মতবাদ। পাউন্সিং প্রোঅ্যাভিস মতবাদ অনুসারে পাখিরা আসলে শিকারী প্রাণী থেকে উদ্ভূত হয়েছে যারা উঁচু স্থান থেকে অ্যাম্বুশ করে শিকার করত। এ সময় তারা তাদের সামনের দুই উপাঙ্গ ব্যবহার করত শিকার আকড়ে ধরার কাজে। প্রথম দিকে তারা শিকারকে টেনে নিয়ে যেত। পরে শিকার বহন করে নিয়ে যেত। শিকার ধরার সময় যে সময়টুকু এরা শুন্যে ভেসে থাকত, সে সময় তাদের সামনের উপাঙ্গের গতি-প্রকৃতি ও গঠনের ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। কার্সোরিয়াল মতবাদ অনুসারে ভূমিতে দ্রুত দৌড়ানোর ফলে পাখির উড্ডয়নের উৎপত্তি ঘটেছে। পাখির পূর্বপুরুষ দীর্ঘ লেজযুক্ত দৌড়বাজ দ্বিপদী প্রাণী ছিল। এরা দ্রুত দৌড়াতে পারত এবং শক্তিশালী পশ্চাদপদের ওপর ভর দিয়ে লাফ দিতে পারত। এরা বাতাসের মধ্যে অগ্রপদ বিস্তৃত করতে পারত। আবার আর্বোরিয়াল মতবাদে বলা হয়েছে, পাখির পূর্বপুরুষ বৃক্ষবাসী প্রাণী ছিল। তারা গাছে চড়ত এবং সেখান থেকে গ্লাইড করে মাটিতে নামত বা অন্য গাছে যেত। এ ধরনের পাখি গাছ বা উঁচু জায়গা থেকে কিছুটা দূরত্বে বাতাসের মধ্যে দিয়ে গ্লাইড করতে বা উড়ে যেতে সক্ষম ছিল। সময়ের ব্যবধানে অগ্রপদ ক্রমশ বড় হয় এবং ডানাতে পরিণত হয়। যা প্রাণীকে উড়বার সময় ভর রক্ষা করতে সহায়তা করত।
পাখির ওড়ার সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হচ্ছে ডানা ঝাপটানো। এ পদ্ধতিতে পাখি ডানা উপর-নিচে ঝাঁপটে ওড়ে। প্রত্যেক ঝাপটায় ডানার সক্রিয় নিম্নমুখী আঘাত এবং সাথে সাথে তার বিপরীতমুখী ঊর্ধ্ব আঘাত দ্বারা ঘটে। শুরুতে পাখি ডানা উল্লম্বভাবে ধরে রাখে এবং সম্পূর্ণ বিস্তৃত করে। নিম্নমুখী আঘাতে পাখি তীর্যকভাবে সামনের দিকে, নিচের দিকে এবং পেছন দিকে যায়। ডানার প্রান্তীয় অংশ তখন ঊর্ধ্বমুখী থাকে। ঊর্ধ্বমুখী আঘাতে ডানা আংশিক ভাঁজ করা থাকে এবং তাদের প্রাথমিক পালক বাতাসের মধ্যে বিস্তৃত হয় পেছনে যাওয়ার জন্য। এভাবে উপরে ওঠা সহজ হয়। এ সময় পাখিরা তাদের ওজন কাজে লাগিয়ে উপরের দিকে ঠেলা দেয়। এসব কাজের সম্মিলিত ফলাফলে পাখি বাতাসে ভেসে থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
পাখির সরলতম এবং সম্ভবত আদিমতম উড্ডয়ন পদ্ধতি হল অনায়াসে ভেসে ওড়া। এ ব্যবস্থায় পাখি গতিহীনভাবে তার ডানা বিস্তার করে এবং কিছু দূর ডানা না ঝাপটিয়ে বাতাসে ভেসে চলে। অনায়াসে ভেসে ওড়ার শক্তি পূর্ববর্তী ডানার ঝাপটা থেকে আসে। আবার বাতাসের উপর থেকে নিচের স্তরে আসার ফলেও বাতাসের শক্তিকে ব্যবহার করে অনায়াসে ভেসে ওড়া ঘটে। এ ধরনের উড্ডয়ন সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ঘটে। কারণ পাখি শীঘ্র্রই তার গতি ও উচ্চতা হারায়। অনায়াসে ভেসে ওড়ার ধারণা অনুকরণ করেই আধুনিক গ্লাইডার-জাতীয় উড়োযানগুলির রূপায়ন ঘটেছে।
উপকূলীয় পাখিদের মধ্যে অনায়াসে ভেসে ওড়ার ব্যবহার বেশি দেখা যায়। হাঁস, জলকবুতর, বক প্রভৃতি পাখি অনায়াসে ভেসে উড়ে মসৃণভাবে পানিতে নামে। আবাবিল অধিকাংশ সময়ে বাতাসে অনায়াসে ভেসে ওড়ে। কবুতর মাটিতে নামার সময় অনায়াসে ভেসে ওড়ে। বেশিরভাগ শিকারী পাখি শিকার ধরার সময় অনায়াসে ভেসে উড়ে নেমে আসে।
পাখা না নাড়িয়ে উঁচুতে ওড়া পাখির উড্ডয়নের একটি বিশেষ পদ্ধতি। যেসব প্রজাতির ডানা বড়, যেমন-আলবাট্রস, শকুন, শাহিন, মানিকজোড়, হাড়গিলা ইত্যাদি পাখি পাখা না নাড়িয়ে উঁচুতে ওড়ে। এসব পাখি আকাশে অনেক উঁচুতে উড়ে এবং ডানা না নাড়িয়ে বৃত্তাকারে ঘোরে। এ পদ্ধতিতে পাখি উপরে উঠে, কিন্তু কোন শক্তি ব্যয় হয় না।
স্থির হয়ে ভাসা একটি ভিন্ন ধরনের ডানা ঝাপটিয়ে উড়বার পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে পাখি খুব দ্রুত ডানা ঝাপটিয়ে এক জায়গায় স্থির ভেসে থাকে; অনেকটা হেলিকপ্টারের মত। পাখি উল্লম্বভাবে খুব দ্রুত ডানা ঝাপটায় বলে এভাবে ভেসে থাকতে পারে। সাধারণত আকারে ছোট পাখিরা স্থির হয়ে ভাসার কৌশল ব্যবহার করে উড়তে পারে। মাছরাঙা ও মৌপায়ী পাখিরা স্থির হয়ে ভাসতে পারে। গুঞ্জনপাখি (হামিংবার্ড) স্থির হয়ে ভেসে ফুলে ফুলে মধু খেয়ে বেড়ায়। মাছরাঙা পানির উপরের তলে স্থির হয়ে ভেসে ভেসে নিচে ঘুরে বেড়ানো শিকার শনাক্ত করে। পাকড়া মাছরাঙা হল সবচেয়ে বড় পাখি যেটি স্থির হয়ে ভাসতে পারে।
এছাড়া আরও কয়েকটি পদ্ধতিতে পাখি উড়তে পারে। উত্তোলন পদ্ধতিতে পাখি ডানার সূক্ষ্ম নাড়াচাড়ার মাধ্যমে দিক বদল করে এবং আরও উপরে উঠে যায়। এ পদ্ধতিতে ডানার আলুলা ব্যবহৃত হয়। উত্তোলন পদ্ধতি অনেকটা উড়োজাহাজের উড্ডয়নের অনুরূপ। আরেকটি পদ্ধতি হল টানা পদ্ধতি। এটি আসলে প্রকৃত উড়বার পদ্ধতি নয়। কোন একটি উড্ডয়নের সময় তার অনুঘটক হিসেবে এই পদ্ধতিটি ব্যবহৃত হয়।
আকাশে ওড়ার সুবিধার জন্য পাখির অঙ্গ ও তন্ত্রগুলো সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোজিত হয়েছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.