Loading AI tools
বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কোনো ধারণাকে সমর্থন, খণ্ডন বা যাচাই করার জন্য কার্যপ্রণালীকে পরীক্ষা বলে। পরীক্ষায় কোন নির্দিষ্ট গুনকে প্রভাবিত করে সেটির ফলাফল বর্ণনা করা হয়। এর মাধ্যমে পরীক্ষা কারণ এবং প্রভাবের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করা যায়। উদ্দেশ্য এবং মাত্রার ভিত্তিতে পরীক্ষার পার্থক্য আছে। কিন্তু প্রতিটি পরীক্ষাই ফলাফলের পুনরাবৃত্তিমূলক পদ্ধতি এবং যৌক্তিক বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করে। প্রাকৃতিক পরীক্ষামূলক গবেষণারও অস্তিত্ব রয়েছে।
একজন শিশু মাধ্যাকর্ষণকে বোঝার জন্য কিছু সাধারণ পরীক্ষা করতে পারে, যেথায় বিজ্ঞানীদের দল কয়েক বছর ধরে শৃঙ্খলাবদ্ধ অনুসন্ধানের মাধ্যমে ঘটনাটিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে। পরীক্ষা এবং অন্যোন্য হাতে-কলমে কার্যক্রম শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় অতি গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা ফলাফলের মান বাড়ায় এবং একটি শিক্ষার্থীকে উক্ত বিষয়ে আরও নিয়জিত ও আগ্রহী করে; বিশেষ করে যখন এটি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহৃত হয়। [1] ব্যক্তিগত এবং অনানুষ্ঠানিক প্রাকৃতিক তুলনা(যেমন কিছু চকলেটের স্বাদগ্রহণ করে পছন্দেরটি খুজে নেওয়া) থেকে অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত(যেমন অতিপারমাণবিক কণার সম্পর্কে তথ্য জানতে গবেষণায় অনেক বিজ্ঞানী কর্তৃক নিয়োজিত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি) পর্যন্ত পরীক্ষার ভিন্নতা দেখা যায়। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে এবংসামাজিক বিজ্ঞানের পরীক্ষার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।
পরীক্ষায় সাধারণত নিয়ন্ত্রণাবলি থাকে, যা একমাত্র স্বাধীন চলক বাদে অন্যান্য চলকের প্রভাব হ্রাস করার জন্য তৈরি করা হয়। এটি সচরাচর নিয়ন্ত্রিত পরিমাপ এবং অন্যান্য পরিমাপের মধ্যে তুলনার মাধ্যমে ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। বৈজ্ঞানিক নিয়ন্ত্রণাবলি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অংশ। আদর্শভাবে, একটি পরীক্ষায় সকল চলক নিয়ন্ত্রিত থাকে (নিয়ন্ত্রিত পরিমাপের মাধ্যমে দায়ী) এবং কোন চলকই অনিয়ন্ত্রিত থাকে না। এ ধরনের একটি পরীক্ষায় যদি সকল নিয়ন্ত্রণাবলি আশা অনুযায়ী কাজ করে তাহলে এটি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে, পরীক্ষাটি প্রত্যাশার অনুসরণে কাজ করেছে ও ফলাফল পরীক্ষিত চলকের প্রভাব।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে, পরীক্ষা একটি গবেষণামূলক প্রক্রিয়া যা প্রতিযোগী আদর্শ বা ধারণাগুলোর মধ্যে নিষ্পত্তি করে।[2][3] এছাড়া গবেষকরা পরীক্ষার ব্যবহার করে বিদ্যমান তত্ত্ব বা নতুন ধারণাকে যাচাইয়ের মাধ্যমে সমর্থন করে বা ভুল প্রমাণিত করে।[3][4]
একটি পরীক্ষা সাধারণত একটি ধারণাকে যাচাই করে। ধারণা হল একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া বা ঘটনার কার্যপদ্ধতির প্রত্যাশিত রূপ। যাহোক, একটি পরীক্ষার উদ্দেশ্য "কি হবে যদি" প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হতে পারে। এ ধরনের পরীক্ষায় ফলাফল সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন প্রত্যাশা থাকে না বা আগের কোন ফলাফলকে নিশ্চিত করতে হয় না। যদি একটি পরীক্ষা সতর্কতার সাথে পরিচালিত হয়, তাহলে ফলাফল সাধারণত ধারণাকে সমর্থন বা খণ্ডন করে। কিছু কিছু বিজ্ঞানের দর্শনের মতে, পরীক্ষা কখনো একটি ধারণাকে প্রমাণিত করতে পারবে না, এটি কেবল সমর্থন বাড়াতে পারে। অন্যদিকে, একটি পরীক্ষা অভ্যুদাহরণের মাধ্যমে কোনো তত্ত্ব বা ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করতে পারে। একটি পরীক্ষায় অবশ্যই সম্ভাব্য বিভ্রান্তিকর কারণগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে- কোনো কারণ যা পরীক্ষার যথার্থতা বা পুনরাবৃত্ত ক্ষমতা অথবা ফলাফল ব্যাখ্যা করার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। বিভ্রান্তি সাধারণত বৈজ্ঞানিক নিয়ন্ত্রণাবলীর মাধ্যমে এবং/অথবা দৈব পরীক্ষায় দৈবচয়নভিত্তিতে অর্পিত কাজের মাধ্যমে অপসারিত করা হয়।
প্রকৌশল এবং ভৌত বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পরীক্ষা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একটি প্রাথমিক উপাদান। নির্দিষ্ট অবস্থায় ভৌত প্রক্রিয়ার কার্যপদ্ধতি পরীক্ষা দ্বারা যাচাই করা হয়(যেমন একটি নির্দিষ্ট প্রকৌশল প্রক্রিয়া কাঙ্ক্ষিত রাসায়নিক যৌগ তৈরি করতে পারে কি না)। এসকল ক্ষেত্রে পরীক্ষা সাধারণত একই প্রক্রিয়ার অনুলিপনকে প্রাধান্য দেয়। এখানে প্রতি অনুলিপনে একই ফলাফলের জন্য আশা করা হয়। দৈব কার্যকলাপ খুব কম প্রযোজ্য।
চিকিৎসা এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুসারে পরীক্ষামূলক গবেষণার ব্যাপকতা নিয়মানুযায়ী বিভিন্নভাবে বিস্তৃত। যদিও পরীক্ষার ব্যবহার করার সময় সাধারণত ক্লিনিকাল ট্রায়ালের গঠন অনুসরণ করা হয়, এখানে পরীক্ষামূলক একক (সাধারণত প্রতিটি মানুষ) কোনো একটি ব্যবস্থা বা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় নিয়জিত হয় এবং এখানে এক বা একাধিক ফলাফল মূল্যায়ন করা হয়।.[5] অন্যদিকে ভৌত বিজ্ঞানে পরীক্ষার মাধ্যমে উৎপাদিত গড় চিকিৎসার প্রভাব(বাবস্থা এবং নিয়ন্ত্রিত দলের মধ্যে ফলাফলের পার্থক্য) বা অন্য পরীক্ষার পরিসংখ্যানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।[6] একটি স্বতন্ত্র গবেষণায় সাধারণত পরীক্ষার অনুলিপন অন্তর্ভুক্ত নয়। কিন্তু পৃথক গবেষণা নিয়মানুগ পর্যালোচনা এবং মেটা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে একত্রিত করা যায়।
বিজ্ঞানের প্রত্যেকটি শাখায় পরিক্ষামুলক চর্চায় বিভিন্ন পার্থক্য রয়েছে। যেমন, কৃষি গবেষণায় প্রায়ই দৈব পরীক্ষা ব্যবহৃত হয়(যেমন, বিভিন্ন সারের তুলনামূলক উপযোগিতা পরীক্ষা করা), এক্ষেত্রে ব্যক্তিপর্যায়ে অর্পিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার উপর বিশ্বাস না রেখেই সচরাচর পরীক্ষামূলক অর্থনীতির পরীক্ষা করা হয়।
বর্তমান ধারণা অনুযায়ী প্রথমবার পরীক্ষার সুশৃঙ্খল ব্যবহারের মধ্যে আরব গণিতজ্ঞ এবং পণ্ডিত ইবনে আল-হাইসামের কাজ প্রকাশিত পায়। তিনি আলোক বিজ্ঞানে পরীক্ষা পরিচালিত করেন- স্ব-নিবিড়তা, পরীক্ষার দৃশ্যমান ফলাফলের উপর নির্ভরতা এবং পূর্বের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে একটি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির মতো উপাদানের দ্বারা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে টলেমির দৃষ্টিসম্পর্কীয় এবং গাণিতিক সমস্যার কাজগুলিতয়ে ফিরে গিয়েছিলেন। তিনি প্রথম বিজ্ঞানী/দার্শনিকের মধ্যে একজন, যিনি ফলাফল লাভের জন্য আবেশক-পরীক্ষামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।[7][8] তাঁর বই "অপটিক্স"-এ তিনি প্রাথমিকভাবে জ্ঞানের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও পরীক্ষামূলক অর্থে গবেষণার বর্ণনা করেন:
“আমাদের উচিত, যে, প্রশ্নকে নিয়মাবলী এবং প্রতিজ্ঞায় পুনরারম্ভ করা, উপস্থিত থাকা বিষয়ের পরিদর্শন এবং দৃশ্যমান বস্তুর অবস্থা নিরীক্ষা করার মাধ্যমে অনুসন্ধান আরম্ভ করা। আমদের উচিত তথ্যাদির বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য করা, এবং আনয়নের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যা দৃষ্টি অবস্থান করার সময় চোখের অধিকারে থাকে এবং যা সংবেদনশীল আচরণ অনুযায়ী অভিন্ন, অপরিবর্তনীয়, স্পষ্ট এবং সন্দেহের বিষয়বস্তু নয়। যার পরে আমাদের তদন্ত ও যুক্তি আহরণ করা উচিত, ধীরে ধীরে ও সুশৃঙ্খলভাবে, পূর্ব ধারণাকে পর্যালোচনা এবং সাবধানতার মাধ্যমে পরিনামে পৌঁছাতে হবে, আমাদের উদ্দেশ্য হল আমরা বিষয়বস্তুটি তদন্ত করবো এবং পর্যালোচনা করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবো, কুসংস্কারকে অমান্য করে, আমাদের সকল বিবেচনার এবং সমালোচনার যত্ন নিয়ে আমরা সেই সত্যটি খুজব এবং মতামত দ্বারা প্রভাবিত হবো না। আমরা এইভাবে এক সময় সত্যে পৌঁছাতে পারব যেটা মনকে আনন্দিত করবে এবং ধীরে ধীরে ও সাবধানে সমাপ্তিতে পৌছাবে যেথায় নিশ্চয়তা আসে; এতে সমালোচনা এবং সাবধানতার মাধ্যমে আমরা সত্যকে পাই যা সকল মতভেদ ধ্বংস করে এবং সন্দেহসূচক বিষয়ের সমাধান করে। এ সকল কিছুতে আমরা মানুষের প্রাকৃতিক মানব আবর্জনা থেকে মুক্ত নই; কিন্তু আমাদের নিজেদের মানব শক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে। সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আমরা সকল কিছুতে সমর্থন পেয়ে থাকি।“[9]
তাঁর বর্ণনা অনুসারে, মানুষের প্রকৃতির কারণে ব্যক্তিবিশেষ এবং ফলাফলের সংবেদনশীলতা জন্য চেতনার সঙ্গে একটি যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা পরিচালনা প্রয়োজনীয়। এছাড়া পূর্ববর্তী পণ্ডিতদের ফলাফল ও পরিণতির প্রতি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ।
“এজন্যই এটি সেই মানুষের কর্তব্য যে বিজ্ঞানীদের লেখা অধ্যায়ন করে, যদি সত্য শেখা তার উদ্দেশ্য হয়, তবে নিজের পঠিত সকল কিছুর শত্রু হতে হবে, এবং, নিজের মনকে বিষয়টির মূল এবং কোনায় কোনায় প্রয়োগ করতে হবে, প্রত্যেক দিক দিয়েই আক্রমণ করতে হবে। এটির জটিল পরীক্ষা পরিচালনার সময় তাকে নিজেকেও সন্দেহ করতে হবে, যাতে সে কুসংস্কার কিংবা উদারতার মধ্য পতিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে।”[10]
এভাবেই পূর্ববর্তী ফলাফলকে পরীক্ষাকৃত ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করা উদ্দেশ্যমূলক পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ- কেননা দ্রষ্টব্য ফলাফল অতি গুরুত্বপূর্ণ। অবশেষে, এমন হতে পারে যে একজন পরীক্ষামূলক গবেষককে প্রচলিত মতামত বা ফলাফল বাতিল করার জন্য যথেষ্ট সাহসী হতে হবে। বিশেষকরে, যখন এই পরীক্ষার বদলে যৌক্তিক/মানসিক বর্ণনা থেকে ফলাফলের প্রাপ্তি হয়। এই জটিল বিবেচনার প্রক্রিয়ায়, মানুষকে মনে রাখতে হবে যে, "কুসংস্কার" এবং "প্রশ্রয়" দ্বারা সে নিজেই ব্যক্তিগত মতামতের প্রতি প্রবণতা প্রদর্শন করে এবং এজন্যই তাকে নিজের ধারণা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে সন্দেহভাজন হতে হবে।
সতের শতাব্দীর ইংরেজ দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস বেকন (১৫৬১-১৬২৬) পরীক্ষা নির্ভর বিজ্ঞানের একজন প্রারম্ভিক ও প্রভাবশালী সমর্থক ছিলেন। ইবনে আল-হাইসামের মতো তিনি অনুমানের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রক্রিয়ার প্রতি দ্বিমত পোষণ করতেন। তিনি বর্ণনা করেছিলেন:"নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রথমে প্রশ্ন নির্ধারিত করে, তারপর মানুষ অভিজ্ঞতা লাভের চেষ্টা করে, ..."[11] বেকন এমন একটি প্রক্রিয়া চাইতেন যা অনুলিপনযোগ্য পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষার উপর নির্ভরশীল। লক্ষণীয়ভাবে, তিনিই প্রথম বর্তমানে প্রচলিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া অনুমদিত করেন।
এখানে সাধারণ অভিজ্ঞতা থাকে, যেটা, যেভাবে আসে যদি সেভাবে গৃহীত হয়, তাকে দুর্ঘটনা বলা হয়, যদি ইচ্ছানুযায়ী হয়, তবে সেটি পরীক্ষা। অভিজ্ঞতার আদর্শ পদ্ধতি প্রথমে মোমবাতি প্রজ্বলিত করে [ধারণা], তারপরে এই মোমবাতি পথ প্রদর্শন করে [পরীক্ষার আয়োজন এবং সীমা নির্ধারণ করা]; যথোপযুক্তভাবে আদেশকৃত এবং জারিত অভিজ্ঞতার সাথে অগ্রসর হতে হবে, অনৈপুণ্য বা অনিশ্চিত না হওয়া এবং সেখান থেকে স্বয়ং প্রমাণিত সত্য অনুমান করা [তত্ত্ব] এবং প্রতিষ্ঠিত উপপাদ্য থেকে পুনরায় পরীক্ষা করা।[12]:১০১
পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে অনেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ করার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এবং আবিষ্কার করেছে। যেমন, গ্যালিলিও গ্যালিলেই (১৫৬৪-১৬৪২) সঠিকভাবে সময় পরিমাপ করেছিলেন এবং পড়ন্ত বস্তুর গতি সম্পর্কে সঠিক পরিমাপ ও ফলাফলের জন্য পরীক্ষা করেছিলেন। ফরাসি রসায়নবিদ অঁতোয়ান লাভোয়াজিয়ে (১৭৪৩-১৭৯৪) পরীক্ষার ব্যবহার করে দহন ও প্রাণরসায়নের মতো নতুন ক্ষেত্র বর্ণনা করেছেন এবং ভরের(পদার্থের) সংরক্ষণশীলতার তত্ত্ব গড়ে তুলেছেন।[13] লুই পাস্তুর (১৮২২-১৮৯৫) বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রজন্মের তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত করেছেন এবং রোগের জীবাণু তত্ত্ব গড়ে তুলেছেন।[14] সম্ভাব্য বিভ্রান্তিকর চলক নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বের কারণে সুগঠিত পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা সম্ভব হলে তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পরীক্ষার গঠন এবং বিশ্লেষণের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। রোনাল্ড ফিশার (১৮৯০-১৯৬২), জেরী নেমেন (১৮৯৪-১৯৮১), অস্কার কাম্পথর্ন (১৯১৯-২০০০), গার্ট্রুড মেরি কক্স (১৯০০-১৯৭৮) এবং উইলিয়াম জেম্ফেল কোচারান (১৯০৯-১৯৮০) মতো পরিসংখ্যানবিদের অবদানে এটি সম্ভব হয়।
গবেষণার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ নিয়ম এবং মানের উপর নির্ভর করে পরীক্ষাকে কয়েকটি মাত্রা অনুযায়ী বিভক্ত করা হয়। কিছু নিয়ম অনুযায়ী, একটি 'আদর্শ পরীক্ষা' সামাজিক গবেষণার একটি প্রক্রিয়া যেটায় দুই ধরনের চলক থাকে। স্বাধীন চলকটি পরীক্ষক দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং পরাধীন চলকটি পরিমাপ করা হয়। একটি আদর্শ পরীক্ষার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হল- এটি গবেষকের পক্ষপাতের নিস্পত্তি করার জন্যে অনির্দিষ্টভাবে বিষয়গুলো বরাদ্দ করা হয় এবং পরীক্ষার বৃহৎ সংখ্যক পুনরাবৃত্তিতেও সকল বিভ্রান্তিকর কারণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হয়।[15]
একটি নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষায় প্রায়ই পরীক্ষামূলক নমুনা এবং নিয়ন্ত্রিত নমুনা থেকে সংগৃহীত ফলাফল তুলনা করা হয়। পরীক্ষামূলক নমুনা এবং নিয়ন্ত্রিত নমুনা কেবল মাত্র পরীক্ষাকৃত দিকটি(স্বাধীন চলক) বাদে কার্যকরীভাবে একই। এক্ষেত্রে ওষুধ পরীক্ষা করা একটি ভালো উদাহরণ। যে নমুনা বা দল ওষুধ গ্রহণ করবে সেটি হবে পরীক্ষামূলক দল (ব্যবস্থার দল); এবং যে দল একটি নকল বা সাধারণ চিকিৎসা গ্রহণ করবে সেটি হবে নিয়ন্ত্রিত দল। অনেক পরীক্ষাগারে পরীক্ষায় অভিক্ষণ পরিচালনার জন্য একাধিক প্রতিরূপ নমুনা এবং অনুকূল নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকূল নিয়ন্ত্রণ উভয় থাকা ভালো। প্রতিরূপ নমুনাগুলোর ফলাফলের গড় করা যায়, অথবা যদি যেকোনো একটি নমুনা সুস্পষ্টভাবে অসঙ্গত হয় তাহলে ভুল পরীক্ষা(হতে পারে পরীক্ষার প্রক্রিয়ায় কিছু পদক্ষেপ ভুলবশত অপসারিত করা হয়েছে) হিসেবে পরীক্ষাটি বাতিল করে দেওয়া হয়। প্রায় সময়, পরীক্ষা অনুলিপি বা প্রতিলিপি করে সংঘঠিত করা হয়। একটি অনুকূল নিয়ন্ত্রণ প্রকৃত পরীক্ষামূলক অভিক্ষনের সদৃশ কিন্তু পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার অনুকূল ফলাফলের উৎপাদন হিসেবে জ্ঞাত। একটি প্রতিকূল নিয়ন্ত্রণ প্রতিকূল ফলাফলের জন্য পরিচিত। অনুকূল নিয়ন্ত্রণে নিশ্চিত থাকে যে পরীক্ষার সাধারণ অবস্থায় এটি অনুকূল ফলাফল উৎপাদনে সক্ষম ছিল, যদিও প্রকৃত পরীক্ষার নমুনাগুলোর মধ্যে কোনটিই অনুকূল ফলাফল দিতে পারেনি। একটি প্রতিকূল নিয়ন্ত্রণ ভুমিরেখা প্রদর্শন করে যখন একটি পরীক্ষা পরিমাপযোগ্য ইতিবাচক ফলাফল তৈরি করতে পারে না। কখনও কখনও ইতিবাচক নিয়ন্ত্রণ মান বক্ররেখার এক-চতুর্থাংশ স্থান অধিকার করে।
শিক্ষায় সচরাচর ব্যবহৃত একটি উদাহরণ হল নিয়ন্ত্রিত প্রোটিন পরীক্ষা। শিক্ষার্থীদেরকে একটি অজ্ঞাত পরিমাণ প্রোটিনের তরল নমুনা দেওয়া হয়। তাদের কাজ হল সঠিকভাবে একটি নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা পরিচালিত করে তরল নমুনায় প্রোটিনের ঘনত্ব নির্ণয় করা। শিক্ষণ ল্যাবে একটি জ্ঞাত ঘনত্বের একটি প্রোটিনের মানসম্মত দ্রবণ থাকবে। শিক্ষার্থীরা মানসম্মত প্রোটিনের বিভিন্ন ক্রমের মিশ্রণের কয়েকটি অনুকূল নমুনা তৈরি করতে পারে। প্রতিকূল নিয়ন্ত্রিত নমুনায় প্রোটিন ব্যতীত সকল কিছু বিকারক থাকবে। এই উদাহরণে, সকল নমুনা অনুলিপিতে পরিচালিত হয়। এই পরীক্ষাটি একটি রঙিন পরিমাপ। এটায় স্পেকট্রফটোমিটারের সাহায্যে প্রোটিন অণু এবং সংযোজিত রঙের অনুর মিথষ্ক্রিয়া দ্বারা তৈরি রঙিন যৌগ শনাক্ত করে প্রোটিনের পরিমাণ নির্ণয় করে।
একটি পরীক্ষায় সকল অবস্থা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হলেও নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা করা হয়। এই অবস্থায়, পরীক্ষায় দুটো বা আরও নমুনা দল যারা সম্ভাব্য সমতুল্য হবে, যার অর্থ দলগুলোর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরিমাপ সদৃশ এবং দলগুলো একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থায় একই প্রতিক্রিয়া দেবে। প্রত্যেকের মধ্যকার পার্থক্য এবং প্রত্যেক দলে ব্যক্তির সংখ্যা হিসাব করে পরিসংখ্যানগত পদ্ধতির মাধ্যমে স্যাম্মতা নির্ণয় করা হয়। জীবার্ণুবিজ্ঞান এবং রসায়নের মতো বিষয়ে, প্রত্যেকের মধ্যে খুব কম পার্থক্য থাকে এবং দলের সংখ্যা সহজেই অনেক বেশি হতে পারে। এক্ষেত্রে পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি সচরাচর উপেক্ষা করা হয় এবং সহজভাবে সমান ভাগ করে নেওয়াকেই একই নমুনা দল ধরা হয়।
সমতুল্য দল তৈরি হলে পরীক্ষক নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কেবল একটি চলক বাদে সকল দলের সাথে একইভাবে আচরণ করার চেষ্টা করে। মানুষের পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে প্ল্যাসেবো প্রভাবের মতো বহিরাগত চলকের বিরুদ্ধে বিশেষ সুরক্ষা দিতে হয়। এ ধরনের পরীক্ষা সাধারণত ডবল অন্ধ হয়, অর্থাৎ সকল তথ্য সংগ্রহের আগ পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক এবং পরীক্ষকের মধ্যে কেউই জানে না কোনটি নিয়ন্ত্রিত দল ও কোনটি পরীক্ষামূলক দল। এতে ফলাফলে নিশ্চিত হয় যে স্বেচ্ছাসেবকের উপর যেকোনো প্রভাব চিকিৎসার ফলাফল; বরং এই জ্ঞান নয় যে তাকে চিকিৎসা করা হচ্ছে।
মানুষ সম্পর্কিত পরীক্ষায়, গবেষক একজন ব্যক্তিকে উদ্দীপক বস্তু দিতে পারে যার প্রতি সে প্রতিক্রিয়া করে। পরীক্ষার উদ্দেশ্য হল একটি পরীক্ষার পদ্ধতির মাধ্যমে উদ্দীপকের প্রতি প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করা।
পরীক্ষার নকশায়, ব্যবস্থার গড় প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য দুই বা ততোধিক "ব্যবস্থা" প্রয়োগ করা হয়। যেমন, পাউরুটিতে তাপ দেওয়ার পরীক্ষায় পানি ও ময়দার অনুপাতের মতো মাত্রিক চলক এবং খামিরের জাতের মত গুণগত চলকের সাথে সম্পর্কিত প্রতিক্রিয়াগুলোর হিসাব করা যায়। পরীক্ষা বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার একটি ধাপ যেটি মানুষকে দুই বা ততোধিক প্রতিযোগী ব্যাখ্যা বা ধারণার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সাহায্য করে। এই ধারণাগুলো একটি ঘটনা ব্যাখ্যার জন্য কারণ প্রাস্তাব করে বা কোন কার্যের ফলাফল ভবিষ্যদ্বাণী করে। ধারণার একটি উদাহরণ হল "যদি আমি এই বলটিকে ছেড়ে দেই, তাহলে এটি মাটিতে পরবে": বল ছেড়ে দিয়ে এবং ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে এই প্রস্তাবনাকে পর্যালোচনা করা। আনুষ্ঠানিকভাবে, একটি ধারণাকে তার বিপরীত বা খালি ধারণার("যদি আমি এই বলটিকে ছেড়ে দেই তাহলে এটি মাটিতে পরবে না") সাথে তুলনা করা হয়। খালি ধারণাতে পর্যবেক্ষণকৃত কারণের মাধ্যমে ঘটনাটির কোন বর্ণনা বা ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষমতা নেই। একবার ধারণাগুলো সংজ্ঞায়িত হলে, একটি একটি পরীক্ষা পরিচালনা করা হয় এবং ধারণাগুলোর যথার্থতা নিশ্চিত,খণ্ডিত, অথবা সংজ্ঞায়িত করতে ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়।
"পরীক্ষা" শব্দটি দ্বারা সাধারণত নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা বোঝায়, কিন্তু কখনও কখনও নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার ব্যায়ভার বহন করা কঠিন বা অসম্ভব। এক্ষেত্রে গবেষকরা প্রাকৃতিক পরীক্ষা বা আধা-পরীক্ষার অবলম্বন করে। প্রাকৃতিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার মতো এক বা একাধিক চলকের হস্তক্ষেপের বদলে সুস্পষ্টভাবে গবেষণা প্রক্রিয়ায় চলকের পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল। যে পর্যন্ত সম্ভব, তারা প্রক্রিয়ার এমনভাবে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করে যেন সকল চলকের অবদান নির্ধারণ করা যায়, এবং এখানে নির্দিষ্ট চলকের ভিন্নতার প্রভাব প্রায়ই ধ্রুবক থাকে যাতে অন্যান্য চলকের প্রভাব নির্ধারিত করা যায়। পর্যবেক্ষণকৃত উপাত্তে ব্যাখ্যামূলক চলকগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল। যখন এসকল চলকের পারস্পরিক সম্পর্ক ভালো না, তখন প্রাকৃতিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার ক্ষমতায় পৌঁছাতে পারে। যদিও সাধারণত চলকগুলোর মধ্যে কিছু সম্পর্ক থাকে, এতে প্রাকৃতিক পরীক্ষায় নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার তুলনায় নির্ভরশীলতা কম হয়। আবার, প্রাকৃতিক পরীক্ষা অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সংঘটিত হওয়া কারণে অলক্ষিত উৎসের চলক পরিমাপ করা কিংবা ধুবক হিসেবে ধরা যায় না, এবং এগুলো গবেষণায় চলকগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তিকর সম্পর্ক তৈরি করতে পারে।
অর্থনীতি, রাজনৈতিক বিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, জীবাশ্মবিজ্ঞান, বাস্তুসংস্থান, আবহাওয়াবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যা অন্তর্ভুক্ত কিছু বিজ্ঞানের শাখায় অনেক গবেষণা আধা-পরীক্ষণের উপর নির্ভরশীল। যেমন, জ্যোতির্বিদ্যায় কোন ধারণা যাচাই করায় "নক্ষত্র হাইড্রোজেনের মেঘ থেকে তৈরি", হাইড্রোজেনের বিশাল মেঘ দ্বারা আরম্ভ করা, তারপর পরীক্ষা পরিচালনায় নক্ষত্র তৈরি করতে কয়েক বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করা অসম্ভব। এখানে হাইড্রোজেনের বিভিন্ন মেঘের বিভিন্ন অবস্থা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এবং ধারণার অন্যান্য প্রয়োগের (যেমন, নক্ষত্রের আলোতে বিভিন্ন বর্ণালীর রঙের উপস্থিতি) মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ধারণাটিকে সমর্থন করা যায়। এ ধরনের পরীক্ষার একটি প্রাথমিক উদাহরণ হল ১৭ শতাব্দীর প্রথম প্রতিপাদন যে আলো তৎক্ষণাৎ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায় না, বরং আলোর একটি পরিমাপযোগ্য বেগ আছে। যখন বৃহস্পতি পৃথিবী থেকে দূরে থাকে, তখন বৃহস্পতির উপগ্রহের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণে সামান্য বিলম্ব হয়, যা বৃহস্পতি পৃথিবীর কাছে থাকার বিপরীত। এই ঘটনা ব্যবহার করে বর্ণিত হয়েছে যে, উপগ্রহগুলোর উপস্থিতির সময়ের মধ্যে পার্থক্য একটি পরিমাপযোগ্য বেগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
ক্ষেত্রের পরীক্ষা(ইংরেজি: Field experiment) পরীক্ষাগারের পরীক্ষা থেকে ভিন্ন হওয়ার জন্য খ্যাত, যেটা পরীক্ষাগারে কৃত্রিম এবং অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় পর্যালোচনার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক নিয়ন্ত্রণ প্ররোচনা করে। সচরাচর সামাজিক বিজ্ঞানে, এবং বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য বিশেষভাবে ব্যবহৃত ক্ষেত্রের পরীক্ষা লাভজনক কেননা ফলাফলগুলো কল্পিত পরীক্ষাগারের পরিবেশের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ব্যবস্থা থেকে আহরিত। এ কারণে ক্ষেত্রের পরীক্ষাকে নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার তুলনায় বাহিরে অধিক অনুমোদন পেতে দেখা যায়। যদিও, প্রাকৃতিক পরীক্ষার মতো ক্ষেত্রের পরীক্ষা দূষণ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে: পরীক্ষার অবস্থা পরীক্ষাগারে আরও নির্ভুলতা এবং নিশ্চয়তার সাথে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তথাপি কিছু ঘটনা (যেমন একটি নির্বাচনে ভোটারের ভোটাধিকার) সহজে পরীক্ষাগারে গবেষণা করা যায় না।
দৈহিক বা সামাজিক অবস্থা কোন পরীক্ষাগারে প্রয়োগ করা, সকল বিভ্রান্তিকর উপাদান পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা, বা দৈবচয়নভিত্তিতে অর্পিত কাজের প্রয়োগ অগ্রহণীয়, অনৈতিক, খরচ-নিষেধ (কিংবা অপর্যাপ্ত) হলে পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা ব্যবহৃত হয়। আর এটি ব্যবহার করা যায় যখন বিভ্রান্তিকর উপাদানগুলো সীমিত অথবা যথেষ্ট পরিচিত হয় যাতে তাদের আলোকে তথ্য বিশ্লেষণ করা যায় (যদিও পরীক্ষিত সামাজিক ঘটনা সম্পর্কে এটি সচরাচর নাও হতে পারে)। একটি পর্যবেক্ষণমূলক বিজ্ঞান ন্যায্য হতে হলে পরীক্ষককে অবশ্যই বিভ্রান্তিকর উপাদানগুলো সম্পর্কে জানতে হবে এবং কৈফিয়ত দিতে হবে। এ সকল ক্ষেত্রে, পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণার মূল্য আছে কারণ এগুলো সচরাচর এমন ধারণা প্রবর্তন করে যা দৈব পরীক্ষা বা নতুন তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে পরীক্ষা করা সম্ভব।
প্রাথমিকভাবে, পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণাগুলো পরীক্ষা নয়। বর্ণনা অনুসারে, পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় বকোনিয়ান পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কারচুপির অভাব রয়েছে। এর পাশাপাশি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায়(যেমন জৈবিক বা সামাজিক ব্যবস্থা) অন্তর্ভুক্ত চলকগুলো সচরাচর নির্ণয় বা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। দৈব পরীক্ষার পরিসংখ্যানগত বৈশিষ্ট্যের অভাবের জন্য পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা সীমিত। একটি দৈব পরীক্ষায়, পরীক্ষামূলক নিয়মে উল্লেখিত দৈব প্রক্রিয়া পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণকে পথপ্রদর্শন করে, যেটি সাধারণত পরীক্ষামূলক নিয়ম দ্বারাই উল্লেখিত থাকে। উদ্দেশ্যমূলক দৈবচয়ন প্রক্রিয়া জন্য প্রতিফলিত পরিসংখ্যানগত নকশা না থাকলে, পরিসংখ্যান সংক্রান্ত বিশ্লেষণ বিষয়ভিত্তিক মডেলের উপর নির্ভরশীল হয়। উদ্দেশ্যভিত্তিক মডেলের হস্তক্ষেপ তত্ত্ব এবং চর্চার জন্য নির্ভরশীল নয়।[16] এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে সাবধানতার সাথে পরিচালিত পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা অসঙ্গত এবং পরীক্ষার ফলাফল হতে ভিন্ন। যেমন, মলাশয়ের ক্যান্সারের মহামারী সংক্রান্ত গবেষণায় ধারাবাহিকভাবে ব্রোকোলি গ্রহণের সঙ্গে উপকারী সম্পর্ক প্রদর্শন করলেও, পরীক্ষায় কোন উপকার পাওয়া যায়নি। .[17] মানুষ অন্তর্ভুক্ত পর্যবেক্ষণমূলক পরীক্ষায় একটি নির্দিষ্ট সমস্যা হল চিকিৎসার(বা উন্মুক্তের) মধ্যে ন্যায্য তুলনা লাভের জটিলতা, কারণ এরকম গবেষণা নির্বাচন পক্ষপাতের প্রতি প্রবণ, এবং বিভিন্ন চিকিৎসা প্রাপ্ত দলের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় অনুযায়ী(বয়স, উচ্চতা, ওজন, ঔষধ, ব্যায়াম, পুষ্টির অবস্থা, জাতিসত্তা, পারিবারিক চিকিৎসা ইতিহাস ইত্যাদি) বিশাল পার্থক্য হতে পারে। এর বিপরীতে দৈবচয়ন প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রত্যেক বিষয়ের জন্য, প্রত্যেক দলের গড় একই প্রত্যাশা করা হয়। যেকোনো দৈব পরীক্ষায়, গড়ের কিছু ভিন্নতা আশা করা যায়, কিন্তু দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় সীমা উপপাদ্য এবং মার্কভের বৈষম্যের জন্য পরীক্ষামূলক দলগুলোর গড় কাছাকাছি হওয়া নিশ্চিত। অপর্যাপ্ত দৈবচয়ন প্রক্রিয়া বা নিম্ন আকৃতির নমুনার জন্য দলগুলোর মধ্যে বিষয়ের নিয়মানুযায়ী ভিন্নতার জন্য চিকিৎসার দলে (বা উন্মুক্তের দল) চিকিৎসার (উন্মুক্ত) প্রভাব এবং অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব পার্থক্য করা কঠিন, যার মধ্যে বেশিরভাগ পরিমাপ করা হয়নি। এ ধরনের উপাত্তে বিশ্লেষণে ব্যবহৃত গাণিতিক নকশায় অবশ্যই প্রত্যেকটি ভিন্ন বিষয় (যদি পরিমাপ করা হয়) বিবেচনা করতে হবে, এবং যদি একটি বিষয় দৈবচয়ন কিংবা নকশায় অন্তর্ভুক্ত না করা হলে ফলাফল অর্থপূর্ণ হবে না।
যে অবস্থাগুলোর জন্য একটি পরীক্ষা অতি অল্প সার্থক হয় তা প্রতিরোধের জন্য চিকিৎসক দ্বারা পরিচালিত চিকিৎসাবিদ্যা বিষয়ক পরীক্ষা - যেমন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য এবং ঔষধ প্রশাসন অনুমোদিত- পরিচিত বিষয়গুলোর পরিমাণ নির্ণয় এবং এলোমেলো করতে হবে। গবেষকেরা প্রবণতা সূচক পদ্ধতির মতো জটিল পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণার মাধ্যমে বিরুপতা কমানো হয়। প্রবণতা সূচক পদ্ধতিতে বিশাল পরিমাণ প্রসঙ্গ ও বিষয়গুলো সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য প্রয়োজন হয়। সম্ভব হলে ফলাফলগুলো পরিমাপ করা হয় (হাড়ের ঘনত্ব, কিছু কোষ বা রক্তের পদার্থ, শারীরিক শক্তি বা সহনশীলতা ইত্যাদি) কিন্তু প্রসঙ্গের বা একজন দক্ষ পর্যবেক্ষকের মতামতের উপর নির্ভর করে পরিমাপ করা হয় না। এভাবে, পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণার নকশা দ্বারা ফলাফলসমূহ আরও বৈষয়িক এবং আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়।
গবেষকের নিয়ন্ত্রণে স্বতন্ত্র চলকের বণ্টন স্থাপন করার মাধ্যমে, একটি পরীক্ষায়- যখন মানুষ ব্যবহৃত হয়- তখন সম্ভাব্য নৈতিক বিবেচনার প্রবর্তন দেখা যায়। যেমন, সুবিধা ও ক্ষতির সামঞ্জস্যতা, ন্যায্যভাবে হস্তক্ষেপ হস্তান্তর (যেমন, একটি রোগের জন্য চিকিৎসা), এবং জ্ঞাত সম্মতি ইত্যাদি। যেমন, মনোবিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য সেবায় রোগীদের নিকৃষ্ট মানের চিকিৎসা প্রদান করা অনৈতিক। অতএব, নৈতিক পর্যালোচনার বোর্ডসমূহের ক্লিনিকাল ট্রায়াল ও অন্যান্য পরীক্ষা বন্ধ করা যথার্থ যদিনা নতুন চিকিৎসায় বর্তমানের শ্রেষ্ঠ মানের চিকিৎসার সমান উপযোগিতা থাকে।[18] নিম্ন মানের বা ক্ষতিকর চিকিৎসার প্রভাবের উপর পরীক্ষা করা সাধারণত অনৈতিক (এবং প্রায়ই বেআইনি); যেমন মানব দেহে আর্সেনিক গ্রহণ করার প্রভাব। এসকল উন্মুক্তের প্রভাব এবং কারণের প্রভাব জানতে বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণার ব্যবহার করেন।
এমনকি পরীক্ষামূলক গবেষণা সরাসরি মানুষকে অন্তর্ভুক্ত না করলেও পরীক্ষায় নৈতিক আশঙ্কা থাকতে পারে। যেমন, ম্যানহাটন প্রকল্পে সংগঠিত পারমাণবিক বোমার পরীক্ষাসমূহে পারমাণবিক বিক্রিয়ার ব্যবহার মানুষের ক্ষতিটি ঊহ্য থাকে যদিও এতে সরাসরি মানুষের প্রয়োগ হয় না।
বিচারকসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে পরীক্ষামূলক পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে।[19]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.