Loading AI tools
বাংলাদেশ সরকারের একটি মন্ত্রণালয় উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য গঠিত বাংলাদেশ সরকারের একটি মন্ত্রণালয়। বহির্বিশ্বে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রসত্ত্বার যে-প্রকাশ ও ভাবমূর্তি, তার মূল ভিত্তিপ্রস্তর হলো রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি। একটি পরিকল্পিত কাঠামোর মধ্য দিয়ে দেশের পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করা হয়। এ নীতির আলোকে পরিচালিত সকল কূটনৈতিক কার্যক্রম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বহির্বিশ্বে অবস্থিত কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের (দূতাবাস/মিশন) ওপর ন্যস্ত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবিধ কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ এবং এর পশ্চাতে ক্রিয়াশীল নিয়ামক শক্তিকে প্রভাবিত ক’রে থাকে। এই সব কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বৈদেশিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন, আঞ্চলিক সহযোগিতা নিবিড়করণ এবং সর্বোপরি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বসভায় একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সংহত ও সুদৃঢ়করণ।
সংস্থার রূপরেখা | |
---|---|
গঠিত | ১৯৭১ |
যার এখতিয়ারভুক্ত | বাংলাদেশ সরকার |
দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা | |
সংস্থা নির্বাহী |
|
ওয়েবসাইট | পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় |
ঢাকায় অবস্থিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংযুক্ত বিভাগসমূহ এবং তৎসঙ্গে পৃথিবীর ৫৮টি দেশে[1] অবস্থিত ৭৭টি দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এটি একটি পরিপূর্ণ মন্ত্রণালয় যা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত একজন পূর্ণ মন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। নেতৃত্ব জোরদার করার জন্য কখনো কখনো প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং/অথবা উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়ে থাকে তবে সরকারের একজন সচিব (পার্মানেন্ট সেক্রেটারী) মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী তথা প্রিন্সিপাল একাউন্টিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল প্রণীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সুস্পষ্টভাবে জাতিসংঘ সনদের প্রতি বিশ্বস্ততা এবং বিশ্বসম্প্রদায়ভুক্ত একটি জাতি হিসেবে সকল দায়দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।[2] পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সংবিধানে পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতিসমূহ সন্নিবেশিত হয়। সংবিধানের প্রস্তাবনায় “মানবজাতির প্রগতিশীল আশা-আকাঙ্ক্ষার সহিত সঙ্গতি রক্ষা করিয়া আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে পূর্ণ ভূমিকা পালন” করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে। এরই অনুসৃতিতে সংবিধানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির অভিমুখ নির্ধারণ করে ৪টি মূল স্তম্ভ উল্লেখ করা হয়েছেঃ (ক) জাতীয় সমতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা, বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা ; (খ) শক্তি প্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ প্রয়াস ; (গ) নিজস্ব আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনে প্রত্যেক জাতির অধিকারের স্বীকৃতি এবং বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের সমর্থন।[3]
সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও প্রতিনিধিত্বমূলক কার্যক্রম, বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ও সকল প্রকার যোগাযোগ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকা-, কূটনৈতিক পদ প্রদান সহ দূতাবাসের কাঠামো, জনবল, সংস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়াদি এ মন্ত্রণালয়ের কার্যবিধির অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে বাংলাদেশে বিদেশস্থ কূটনৈতিক, কনস্যুলার ও বাণিজ্য মিশন স্থাপন এবং কূটনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণকল্পে তাদের দায়মুক্তি-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের দায়িত্বও এ মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত।[4]
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং এর সিদ্ধান্তবলী সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম এ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্যান্য রাষ্ট্র ও আন্তর্জাাতিক সংস্থার সাথে সম্পাদিত চুক্তিসমূহ পরিপালন, সমন্বয়সাধন, বাস্তবায়ন ও সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। [4]
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বি. সি. এস.) পররাষ্ট্র বিষয়ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কার্যাদি সম্পাদন, কূটনৈতিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান, সাংকেতিক বার্তা সঞ্চালন ও এর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত। তদুপরি, পররাষ্ট্র সংক্রান্তীয় প্রশাসনিক দায়িত্ব এবং আর্থিক বিষয়সহ যাবতীয় সাচিবিক দায়িত্ব এই মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।[4]
এই কার্যসমষ্টির আওতায় প্রধান প্রধান দায়িত্ব হলো : আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ, বিদেশ থেকে বাংলাদেশী নাগরিক প্রত্যাবাসন বিষয়ক নীতিমালা, জলদস্যুতাসহ গভীর সমুদ্রে অথবা আকাশ পথে সংঘটিত অপরাধ, অন্যান্য দেশের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা, বিদেশী শরণার্থীদের পরিপোষণ, বিদেশী সামরিক বা বেসামরিক অনির্ধারিত বিমান চলাচলের ছাড়পত্র প্রদান, জলসীমা ও মহীসোপানসহ দেশের সীমা নির্ধারণ, সমুদ্রে সম্পদ আহরণের আইন ও অধিকার সংশ্লিষ্ট কার্যাবলী, আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য বিষয়সমূহ, কোন বাংলাদেশী নাগরিক বিদেশে সম্মান, খেতাব বা উপাধিতে ভূষিত হলে তদসংশ্লিষ্ট আনুষ্ঠানিকতা ইত্যাদি।[4]
বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের জন্য প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এরই অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শক্রমে বিদেশী সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ সংক্রান্ত ইতিবাচক প্রচারণার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচী গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক পরিষদের মাধ্যমে যথোপযুক্ত কর্মসূচী পরিচালনা করে।[4]
বিদেশের সাথে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের আতিথ্যমূলক সকল কর্মকা- এর অন্তর্ভুক্ত। বিদেশী অভ্যাগতরা আনুষ্ঠানিক তথা প্রতিনিধিত্বমূলক কোন সফরে বাংলাদেশে এলে এর আয়োজন, অভ্যর্থনা ও আতিথ্য প্রদান এবং আনুষঙ্গিক সহায়তার দায়িত্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পালন ক’রে থাকে। একইভাবে, রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের বৈদেশিক ভ্রমণ সংক্রান্ত সকল যোগাযোগ ও আয়োজন, উচ্চপর্যায়ের সকল সাক্ষাৎকার ইত্যাদি রাষ্ট্রাচারের কর্মপরিধিভুক্ত। সমরূপ অন্যান্য কার্যাদির মধ্যে রয়েছে বিদেশ থেকে প্রেরিত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের পরিচয় পত্র উপস্থাপনের আনুষ্ঠানিকতা ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাঁদের সাক্ষাৎ ইত্যাদি আয়োজন।[4]
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও কল্যাণ অনুবিভাগ বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসসমূহ এবং বাংলাদেশী নাগরিকদের বহুমুখী কনস্যুলার সেবা প্রদান ক’রে থাকে। বিদেশে অবস্থানকালে কোন ব্যক্তির যদি কোন প্রকার কনস্যুলার সেবার প্রয়োজন হয়, তাহলে তিনি নিকটস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ ক’রে কিংবা দেশে তাঁর নিকটজন তাঁর পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও কল্যাণ অনুবিভাগের সাথে যোগাযোগপূর্বক কনস্যুলার সেবা গ্রহণ করতে পারেন। কনস্যুলার ও কল্যাণ অনুবিভাগ নিম্নোক্ত সেবাসমূহ প্রদান করেঃ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও কল্যাণ অনুবিভাগ কর্তৃক এই সকল সেবা সম্পূর্ণ বিনামূলে প্রদান করা হয়।
(ক) বিদেশস্থ মিশনসমূহ নিম্নবর্ণিত কনস্যুলার সেবা প্রদান করে থাকে :
(খ) বিদেশে আটক বাংলাদেশীদের দেশে প্রত্যাবাসন
(গ) প্রবাসী বাংলাদেশীরা চাকুরিকালীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে চাকুরির শর্তানুযায়ী তাঁদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ। এছাড়াও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা পঙ্গুত্ববরণকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের ক্ষেত্রেও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
(ঘ) দ্বৈত নাগরিকত্বধারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য কনস্যুলার সেবা প্রদান
(ঙ) প্রবাসে কোন বাংলাদেশী মৃতুবরণ করলে তার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা
(চ) প্রবাসী ব্যক্তিগণ সংশ্লিষ্ট দেশে বসবারত অবস্থায় হঠাৎ কোন জরুরি বা দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার শিকার হলে সে দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। যেমন : প্রাকৃতিক বা অন্য কোন দুর্যোগ আক্রান্ত প্রবাসীদের এক স্থান থেকে অন্য নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা। এছাড়া প্রবাসে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া কোন ব্যক্তির সন্ধান লাভের জন্যও যথাসম্বব চেষ্টা করা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.